পুরো নাম তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়/Tarasankar Bandyopadhyay
জন্ম ২৩শে জুলাই, ১৮৯৮
জন্মস্থান
লাভপুর,বীরভূম জেলা
বাবার নাম হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
মায়ের নাম প্রভাবতী দেবী
স্ত্রীয়ের নাম উমাশশী দেবী
পেশা কথাসাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক
জাতীয়তা ভারতীয়
ধর্ম হিন্দু
মৃত্যু ১৪ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
বন্ধু, তুমি যদি গল্পের বই আর উপন্যাস পড়তে ভালোবাসো; তাহলে আশা করি তুমি বাংলার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশ্চই চেনো | তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর একজন অন্যতম সেরা সাহিত্যিক তথা ঔপন্যাসিক |
তিনি তাঁর সম্পূর্ণ জীবনকালে প্রায় ৬৫টা উপন্যাস, ৫৩টা ছোটগল্প, ৪টে আত্মজীবনী মূলক গল্প ও দুটো ভ্রমন কাহিনী লিখেছিলেন |
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ২৩শে জুলাই, ১৮৯৮ সালের বর্তমান বীরভূম জেলার লাভপুর অঞ্চলে হয়েছিলো | তাঁর বাবা ছিলেন হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় আর মা ছিলেন প্রভাবতী দেবী |
Tarasankar’s House
ছোটবেলা থেকেই তারাশঙ্কর পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিলেন | তিনি তাঁর শিক্ষাজীবন গ্রামের একটা প্রাথমিক স্কুল থেকে শুরু করেছিলেন | পরে ১৯১৬ সালে, তিনি লাভপুর যাদবলাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উর্ত্তীর্ণ হন | আর তারপরই তিনি ভর্তি হন কোলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে, ঠিক একই বছরে |
সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি আবার ভর্তি হন সাউথ সোবার্বান কলেজে, যেটার আজ বর্তমানে নাম আশুতোষ কলেজ |
তুমি হয়তো জানোনা, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কোলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়তেন, সেইসময় তিনি গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন | তখন যেহেতু ভারতে অনেক স্বাধীনতা আন্দোলন হচ্ছিল, তাই একজন আদর্শবাদী দেশপ্রেমীক হওয়ায় তিনিও সেইসব আন্দোলনে একে একে যোগ দিতে থাকেন |
পরে শারীরিক অসুস্থতা ও ক্রমাগত স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে, তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনাকে সম্পূর্ণ করতে ব্যর্থ হন |
শোনা যায়, কলেজে পড়ার সময়ই তিনি একটা যুব আন্দোলনকারী সংঘের সাথে যুক্ত হন এবং তাদের সাথে মিলে তিনি দেশের আইন অমান্য করে অনেক রাজনৈতিক কাজকর্ম করতে শুরু করেন | যারফলে তাঁকে একসময় ব্রিটিশ পুলিশরা গ্রেপ্তারও করেন |
গ্রেপ্তার করার পর তাঁকে এক বছরের জন্য জেল হেফাজতে রাখা হয় | জেল থেকে বেরিয়ে তিনি কিছু বছর তাঁর গ্রামেই কাটান এবং সেখানেই অনেক ছোটগল্প লেখা শুরু করেন | অবশেষে ১৯৩৯ সালে প্রথমবারের জন্য তাঁর লেখা ছোটগল্প “রসকলি”, বাংলার সেইসময়কার বিখ্যাত মাসিক পত্রিকা “কল্লোলে” প্রকাশিত হয় |
এবার তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৯৪০ সালে স্থায়ীভাবে কোলকাতায় বসবাস শুরু করেন এবং এখানে এসেই তিনি পুরোপুরি ভাবে নিজের সাহিত্যচর্চায় মন দেন |
ধীরে ধীরে তাঁর লেখা বিভিন্ন ছোটগল্প, কোলকাতার সব নামী পত্রিকায় স্থান পেতে শুরু করে | তিনি তাঁর পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রায় অনেক ছোটগল্পই পত্রিকায় প্রকাশিত করেছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম কিছু হলো – কালিকলম,বঙ্গশ্রী,শনিবারের চিঠি,প্রবাসী,পরিচয় ইত্যাদি |
দেখতে দেখতে, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাঙালী পাঠকদের কাছে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন | আর তাঁর লেখা প্রত্যেকটা ছোটগল্প ও উপন্যাস, বাঙালী পাঠকদের মন একের পর এক জয় করতে থাকে |
সাহিত্যিক হিসাবে তাঁর জায়গা পাকাপাকি হয়ে যাওয়ার পরও, তিনি কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে তখনও যুক্ত ছিলেন | একবার তিনি ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসাবেও নির্বাচিত হন | এছাড়াও তিনি প্রায় ৮ বছর পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন |
১৯৭০ সালে তাঁকে আবার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি হিসাবেও নির্বাচন করা হয় | সেখানেও তিনি তাঁর দায়িত্ব, একদম সুষ্ঠুভাবে পালন করেন |
তোমার এটা জেনে রাখা দরকার যে, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত প্রথম উপন্যাসের নাম ছিলো “চৈতালী ঘূর্ণি”; যেটা ১৯৩২ সালে প্রকাশিত হয় | এছাড়াও তাঁর লেখা কিছু বিখ্যাত উপন্যাস হলো – হাসুলী বাঁকের উপকথা, আরোগ্য নিকেতন, রাই কমল, ধাত্রী দেবতা প্রভৃতি |
সাহিত্যিক তারাশঙ্করের জীবনী | Tarasankar Bandyopadhyay Biography in BengaliPhoto of Tarasankar Bandyopadhyay
তাঁর লেখা বেশিরভাগ উপন্যাসেরই বিষয়বস্তু ছিলো বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের জীবনচিত্র, স্বাধীনতা আন্দোলন, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, অর্থনৈতিক বৈষম্য,বিদ্রোহ, গ্রাম্য অঞ্চলের মাটি ও মানুষ ইত্যাদি নিয়ে |
এইরকমের বিভিন্ন বৈচিত্রময় বিষয়বস্তু থাকার জন্যই হয়তো তাঁর লেখা প্রত্যেকটা উপন্যাস, আজও সকল বাঙালী পাঠকদের কাছে ঠিক ততটাই জনপ্রিয় যেমনটা আগে ছিলো |
তারাশঙ্করের রচনার আরও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি তাঁর প্রত্যেকটা লেখার মধ্যে মানুষের মহত্ত্বকে পরম যত্নের সঙ্গে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন । সেইজন্যই তো শরৎচন্দ্রের রচিত কথাসাহিত্যের পর, তাঁরই রচিত কথাসাহিত্যই বাঙালী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলো |
অনেকে বিশিষ্ট লেখকেরা মনে করেন, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ই ছিলেন প্রথম একজন লেখক; যিনি ঊনবিংশ শতাব্দীতে উপন্যাস লেখার চিরাচরিত রীতিকে ভেঙ্গে ফেলেন এবং একটু অন্য কায়দায় নিজের উপন্যাস গুলো লেখেন |
তাঁর এই অন্যরকম ভাবে উপন্যাস লেখার কায়দা, সেইসময়ের বাঙালী পাঠকদের পুরোপুরি মুগ্ধ করে তোলে |
তারাশঙ্করের লিখিত অনেক রোম্যান্টিক উপন্যাস সেইসময়ের অনেক যুবক-যুবতীদের মনে প্রেমের আলোড়ন সৃষ্টি করে | তাঁর সেইসব উপন্যাস অবশ্য তখনকার অনেক কনজারভেটিভ মানুসিকতা সম্পন্ন মানুষদের ভালো লাগেনি, কিন্তু তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর লেখার মাধ্যমে অনেক বাঙালীদের মনে রোমান্টিকতার ছোঁয়া নিশ্চই লাগাতে পেরেছিলেন |
তিনি তাঁর জীবনকালে, অনেক পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হন | তা চলো এবার জেনে নেওয়া যাক, তাঁর সেইসব কৃতিত্ব গুলোর সম্বন্ধে:
Honor & Achievements:-
*১৯৫২ সালে তিনি বিধানসভার সদস্য হিসাবে প্রথমবারের জন্য নির্বাচিত হন |
*১৯৫২-১৯৬০ সাল পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদের সদস্য হিসাবে ছিলেন |
*১৯৫৫ সালে তিনি “আরোগ্য নিকেতন উপন্যাস” লেখার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক রবীন্দ্র পুরস্কার পান |
*১৯৫৬ সালে তিনি সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার দ্বারা সম্মানিত হন |
*১৯৫৯ সালে তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক জগত্তারিণী গোল্ড মেডেল দ্বারা সম্মানিত হন |
*১৯৬০ সালে তিনি মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত, সর্বভারতীয় লেখক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন |
*১৯৬২ সালে তিনি পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন |
*১৯৬০-১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভার এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন |
*১৯৬৬ সালে তিনি তাঁর উপন্যাস “গনদেবতা” লেখার জন্য জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে সম্মানিত হন |
*১৯৬৯ সালে তিনি পদ্ম ভূষন পুরস্কারেও ভূষিত হন |
অবশেষে এই মহান লেখক তথা ঔপন্যাসিক; ১৪ই সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে, প্রায় ৭৩ বছর বয়সে তাঁর কোলকাতার বাড়িতে মারা যান এবং তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়, উত্তর কোলকাতার নিমতলা শ্মশান ঘাটে |
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্টিসমূহ
Short Story Collections of Tarasankar Bandyopadhyay:
ছলনাময়ী (১৯৩৭)
জলসা ঘর (১৯৩৮)
রসকলি (১৯৩৯)
তিন শূন্য (১৯৪২)
প্রতিধ্বনি (১৯৪৩)
বেদেনী (১৯৪৩)
দিল্লিকা লাড্ডু (১৯৪৩)
জাদুকরী (১৯৪8)
স্থলপদ্ম (১৯৪8)
তেরশো পঞ্চাশ (১৯৪8)
প্রসাদ মালা (১৯৪৫)
হারানো সুর (১৯৪৫)ইমারত (১৯৪৭)
রামধনু (১৯৪৭)
শ্রী পঞ্চমী (১৯৪৮)
কামধেনু (১৯৪৯)
মাটি (১৯৫০)
শিলাসন (১৯৫২)
স্ব-নির্বাচিত গল্প (১৯৫৪)
গল্প সঞ্চয়ন (১৯৫৫)
বিস্ফোরণ (১৯৫৫)
কালান্তর (১৯৫৬)
একটি প্রেমের গল্প (১৯৬৫)
কিশোর সঞ্চয়ন (১৯৬৬)
নারী রহস্যময়ী (১৯৬৭)
পঞ্চকন্যা (১৯৬৭)
শিবানীর অদৃষ্ট (১৯৬৭)
গবিন সিংহের ঘর (১৯৬৮)
জয়া (১৯৬৮)
এক পশলা বৃষ্টি (১৯৬৯)
মিছিল (১৯৬৯)
উনিশশো একাত্তর (১৯৭১)
Novel’s of Tarasankar Bandyopadhyay:
চৈতালী ঘূর্ণি (১৯৩২)
পাষানপুরী (১৯৩৩)
নীলকন্ঠ (১৯৩৩)
রাই কমল (১৯৩৫)
প্রেম ও প্রয়োজন (১৯৩৬)
আগুন (১৯৩৮)
ধাত্রী দেবতা (১৯৩৯)
কালিন্দী (১৯৪০)
গণদেবতা (১৯৪৩)
পঞ্চগ্রাম (১৯৪৪)
কবি (১৯৪৪)
বিংশ শতাব্দী (১৯৪৫)
সন্দীপন পাঠশালা (১৯৪৬)
হাসুলী বাঁকের উপকথা (১৯৫১)
নাগিনী কন্যার কাহিনী (১৯৫২)
আরোগ্য নিকেতন (১৯৫৩)
বিপাশা (১৯৫৯)
মহাশ্বেতা (১৯৬১)
মণি বৌদি (১৯৬৯)
ছায়াপথ (১৯৬৯)
কালরাত্রি (১৯৭০)
রূপসী বিহঙ্গিনী (১৯৭০)
অভিনেত্রী (১৯৭০)
ফরিয়াদ (১৯৭০)
শতাব্দীর মৃত্যু (১৯৭০)
Drama’s of Tarasankar Bandyopadhyay:
কালিন্দী (১৯৪২)
দুই পুরুষ (১৯৪৩)
পথের ডাক (১৯৪৩)
দ্বীপান্তর (১৯৪৫) যুগ বিপ্লব (১৯৫১)
সংঘাত (১৯৬২)
আরোগ্য নিকেতন (১৯৬৮)
Source: Wikipedia
জন্ম ২৩শে জুলাই, ১৮৯৮
জন্মস্থান
লাভপুর,বীরভূম জেলা
বাবার নাম হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
মায়ের নাম প্রভাবতী দেবী
স্ত্রীয়ের নাম উমাশশী দেবী
পেশা কথাসাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক
জাতীয়তা ভারতীয়
ধর্ম হিন্দু
মৃত্যু ১৪ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
বন্ধু, তুমি যদি গল্পের বই আর উপন্যাস পড়তে ভালোবাসো; তাহলে আশা করি তুমি বাংলার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশ্চই চেনো | তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর একজন অন্যতম সেরা সাহিত্যিক তথা ঔপন্যাসিক |
তিনি তাঁর সম্পূর্ণ জীবনকালে প্রায় ৬৫টা উপন্যাস, ৫৩টা ছোটগল্প, ৪টে আত্মজীবনী মূলক গল্প ও দুটো ভ্রমন কাহিনী লিখেছিলেন |
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ২৩শে জুলাই, ১৮৯৮ সালের বর্তমান বীরভূম জেলার লাভপুর অঞ্চলে হয়েছিলো | তাঁর বাবা ছিলেন হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় আর মা ছিলেন প্রভাবতী দেবী |
Tarasankar’s House
ছোটবেলা থেকেই তারাশঙ্কর পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিলেন | তিনি তাঁর শিক্ষাজীবন গ্রামের একটা প্রাথমিক স্কুল থেকে শুরু করেছিলেন | পরে ১৯১৬ সালে, তিনি লাভপুর যাদবলাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উর্ত্তীর্ণ হন | আর তারপরই তিনি ভর্তি হন কোলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে, ঠিক একই বছরে |
সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি আবার ভর্তি হন সাউথ সোবার্বান কলেজে, যেটার আজ বর্তমানে নাম আশুতোষ কলেজ |
তুমি হয়তো জানোনা, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কোলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়তেন, সেইসময় তিনি গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন | তখন যেহেতু ভারতে অনেক স্বাধীনতা আন্দোলন হচ্ছিল, তাই একজন আদর্শবাদী দেশপ্রেমীক হওয়ায় তিনিও সেইসব আন্দোলনে একে একে যোগ দিতে থাকেন |
পরে শারীরিক অসুস্থতা ও ক্রমাগত স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে, তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনাকে সম্পূর্ণ করতে ব্যর্থ হন |
শোনা যায়, কলেজে পড়ার সময়ই তিনি একটা যুব আন্দোলনকারী সংঘের সাথে যুক্ত হন এবং তাদের সাথে মিলে তিনি দেশের আইন অমান্য করে অনেক রাজনৈতিক কাজকর্ম করতে শুরু করেন | যারফলে তাঁকে একসময় ব্রিটিশ পুলিশরা গ্রেপ্তারও করেন |
গ্রেপ্তার করার পর তাঁকে এক বছরের জন্য জেল হেফাজতে রাখা হয় | জেল থেকে বেরিয়ে তিনি কিছু বছর তাঁর গ্রামেই কাটান এবং সেখানেই অনেক ছোটগল্প লেখা শুরু করেন | অবশেষে ১৯৩৯ সালে প্রথমবারের জন্য তাঁর লেখা ছোটগল্প “রসকলি”, বাংলার সেইসময়কার বিখ্যাত মাসিক পত্রিকা “কল্লোলে” প্রকাশিত হয় |
এবার তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৯৪০ সালে স্থায়ীভাবে কোলকাতায় বসবাস শুরু করেন এবং এখানে এসেই তিনি পুরোপুরি ভাবে নিজের সাহিত্যচর্চায় মন দেন |
ধীরে ধীরে তাঁর লেখা বিভিন্ন ছোটগল্প, কোলকাতার সব নামী পত্রিকায় স্থান পেতে শুরু করে | তিনি তাঁর পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রায় অনেক ছোটগল্পই পত্রিকায় প্রকাশিত করেছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম কিছু হলো – কালিকলম,বঙ্গশ্রী,শনিবারের চিঠি,প্রবাসী,পরিচয় ইত্যাদি |
দেখতে দেখতে, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাঙালী পাঠকদের কাছে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন | আর তাঁর লেখা প্রত্যেকটা ছোটগল্প ও উপন্যাস, বাঙালী পাঠকদের মন একের পর এক জয় করতে থাকে |
সাহিত্যিক হিসাবে তাঁর জায়গা পাকাপাকি হয়ে যাওয়ার পরও, তিনি কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে তখনও যুক্ত ছিলেন | একবার তিনি ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসাবেও নির্বাচিত হন | এছাড়াও তিনি প্রায় ৮ বছর পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন |
১৯৭০ সালে তাঁকে আবার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি হিসাবেও নির্বাচন করা হয় | সেখানেও তিনি তাঁর দায়িত্ব, একদম সুষ্ঠুভাবে পালন করেন |
তোমার এটা জেনে রাখা দরকার যে, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত প্রথম উপন্যাসের নাম ছিলো “চৈতালী ঘূর্ণি”; যেটা ১৯৩২ সালে প্রকাশিত হয় | এছাড়াও তাঁর লেখা কিছু বিখ্যাত উপন্যাস হলো – হাসুলী বাঁকের উপকথা, আরোগ্য নিকেতন, রাই কমল, ধাত্রী দেবতা প্রভৃতি |
সাহিত্যিক তারাশঙ্করের জীবনী | Tarasankar Bandyopadhyay Biography in BengaliPhoto of Tarasankar Bandyopadhyay
তাঁর লেখা বেশিরভাগ উপন্যাসেরই বিষয়বস্তু ছিলো বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের জীবনচিত্র, স্বাধীনতা আন্দোলন, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, অর্থনৈতিক বৈষম্য,বিদ্রোহ, গ্রাম্য অঞ্চলের মাটি ও মানুষ ইত্যাদি নিয়ে |
এইরকমের বিভিন্ন বৈচিত্রময় বিষয়বস্তু থাকার জন্যই হয়তো তাঁর লেখা প্রত্যেকটা উপন্যাস, আজও সকল বাঙালী পাঠকদের কাছে ঠিক ততটাই জনপ্রিয় যেমনটা আগে ছিলো |
তারাশঙ্করের রচনার আরও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি তাঁর প্রত্যেকটা লেখার মধ্যে মানুষের মহত্ত্বকে পরম যত্নের সঙ্গে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন । সেইজন্যই তো শরৎচন্দ্রের রচিত কথাসাহিত্যের পর, তাঁরই রচিত কথাসাহিত্যই বাঙালী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলো |
অনেকে বিশিষ্ট লেখকেরা মনে করেন, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ই ছিলেন প্রথম একজন লেখক; যিনি ঊনবিংশ শতাব্দীতে উপন্যাস লেখার চিরাচরিত রীতিকে ভেঙ্গে ফেলেন এবং একটু অন্য কায়দায় নিজের উপন্যাস গুলো লেখেন |
তাঁর এই অন্যরকম ভাবে উপন্যাস লেখার কায়দা, সেইসময়ের বাঙালী পাঠকদের পুরোপুরি মুগ্ধ করে তোলে |
তারাশঙ্করের লিখিত অনেক রোম্যান্টিক উপন্যাস সেইসময়ের অনেক যুবক-যুবতীদের মনে প্রেমের আলোড়ন সৃষ্টি করে | তাঁর সেইসব উপন্যাস অবশ্য তখনকার অনেক কনজারভেটিভ মানুসিকতা সম্পন্ন মানুষদের ভালো লাগেনি, কিন্তু তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর লেখার মাধ্যমে অনেক বাঙালীদের মনে রোমান্টিকতার ছোঁয়া নিশ্চই লাগাতে পেরেছিলেন |
তিনি তাঁর জীবনকালে, অনেক পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হন | তা চলো এবার জেনে নেওয়া যাক, তাঁর সেইসব কৃতিত্ব গুলোর সম্বন্ধে:
Honor & Achievements:-
*১৯৫২ সালে তিনি বিধানসভার সদস্য হিসাবে প্রথমবারের জন্য নির্বাচিত হন |
*১৯৫২-১৯৬০ সাল পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদের সদস্য হিসাবে ছিলেন |
*১৯৫৫ সালে তিনি “আরোগ্য নিকেতন উপন্যাস” লেখার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক রবীন্দ্র পুরস্কার পান |
*১৯৫৬ সালে তিনি সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার দ্বারা সম্মানিত হন |
*১৯৫৯ সালে তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক জগত্তারিণী গোল্ড মেডেল দ্বারা সম্মানিত হন |
*১৯৬০ সালে তিনি মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত, সর্বভারতীয় লেখক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন |
*১৯৬২ সালে তিনি পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন |
*১৯৬০-১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভার এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন |
*১৯৬৬ সালে তিনি তাঁর উপন্যাস “গনদেবতা” লেখার জন্য জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে সম্মানিত হন |
*১৯৬৯ সালে তিনি পদ্ম ভূষন পুরস্কারেও ভূষিত হন |
অবশেষে এই মহান লেখক তথা ঔপন্যাসিক; ১৪ই সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে, প্রায় ৭৩ বছর বয়সে তাঁর কোলকাতার বাড়িতে মারা যান এবং তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়, উত্তর কোলকাতার নিমতলা শ্মশান ঘাটে |
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্টিসমূহ
Short Story Collections of Tarasankar Bandyopadhyay:
ছলনাময়ী (১৯৩৭)
জলসা ঘর (১৯৩৮)
রসকলি (১৯৩৯)
তিন শূন্য (১৯৪২)
প্রতিধ্বনি (১৯৪৩)
বেদেনী (১৯৪৩)
দিল্লিকা লাড্ডু (১৯৪৩)
জাদুকরী (১৯৪8)
স্থলপদ্ম (১৯৪8)
তেরশো পঞ্চাশ (১৯৪8)
প্রসাদ মালা (১৯৪৫)
হারানো সুর (১৯৪৫)ইমারত (১৯৪৭)
রামধনু (১৯৪৭)
শ্রী পঞ্চমী (১৯৪৮)
কামধেনু (১৯৪৯)
মাটি (১৯৫০)
শিলাসন (১৯৫২)
স্ব-নির্বাচিত গল্প (১৯৫৪)
গল্প সঞ্চয়ন (১৯৫৫)
বিস্ফোরণ (১৯৫৫)
কালান্তর (১৯৫৬)
একটি প্রেমের গল্প (১৯৬৫)
কিশোর সঞ্চয়ন (১৯৬৬)
নারী রহস্যময়ী (১৯৬৭)
পঞ্চকন্যা (১৯৬৭)
শিবানীর অদৃষ্ট (১৯৬৭)
গবিন সিংহের ঘর (১৯৬৮)
জয়া (১৯৬৮)
এক পশলা বৃষ্টি (১৯৬৯)
মিছিল (১৯৬৯)
উনিশশো একাত্তর (১৯৭১)
Novel’s of Tarasankar Bandyopadhyay:
চৈতালী ঘূর্ণি (১৯৩২)
পাষানপুরী (১৯৩৩)
নীলকন্ঠ (১৯৩৩)
রাই কমল (১৯৩৫)
প্রেম ও প্রয়োজন (১৯৩৬)
আগুন (১৯৩৮)
ধাত্রী দেবতা (১৯৩৯)
কালিন্দী (১৯৪০)
গণদেবতা (১৯৪৩)
পঞ্চগ্রাম (১৯৪৪)
কবি (১৯৪৪)
বিংশ শতাব্দী (১৯৪৫)
সন্দীপন পাঠশালা (১৯৪৬)
হাসুলী বাঁকের উপকথা (১৯৫১)
নাগিনী কন্যার কাহিনী (১৯৫২)
আরোগ্য নিকেতন (১৯৫৩)
বিপাশা (১৯৫৯)
মহাশ্বেতা (১৯৬১)
মণি বৌদি (১৯৬৯)
ছায়াপথ (১৯৬৯)
কালরাত্রি (১৯৭০)
রূপসী বিহঙ্গিনী (১৯৭০)
অভিনেত্রী (১৯৭০)
ফরিয়াদ (১৯৭০)
শতাব্দীর মৃত্যু (১৯৭০)
Drama’s of Tarasankar Bandyopadhyay:
কালিন্দী (১৯৪২)
দুই পুরুষ (১৯৪৩)
পথের ডাক (১৯৪৩)
দ্বীপান্তর (১৯৪৫) যুগ বিপ্লব (১৯৫১)
সংঘাত (১৯৬২)
আরোগ্য নিকেতন (১৯৬৮)
Source: Wikipedia