Saturday, 17 August 2019

মাদার টেরেসার জীবনী Mother Teresa Short Biography.pdf

নাম মাদার টেরেসা / Mother Teresa অভিভাবক নিকল বোজাঝিউ (বাবা) দ্রানাফিল বোজাঝিউ (মা)
জন্ম ২৬ আগস্ট ১৯১০ জন্মস্থান আলবেনিয়া,স্কোপজে,ম্যাসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্র জাতিসত্তা আলবেনিয়ান জাতীয়তা ভারতীয় নাগরিকত্ব ভারত (১৯৪৭-১৯৯৭) পেশা ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী, ধর্মপ্রচারক সংস্থা মিশনারীস অব চ্যারিটি  মৃত্যু ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ (৮৭ বছর)



গরীব-আর্ত ও সর্বহারাদের সেবায় যিনি নিজেকে শেষ দিন পর্যন্ত নিয়োজিত করেছিলেন সেই অ্যাগনিস গঞ্জা বোজাঝিউকে সকলে স্বয়ং ঈশ্বরের দূত মনে করতেন | যাদের সমাজে কোনো স্থান ছিলোনা,তাদের সযত্নে নিজের কোলে আশ্রয় দিয়েছিলেন আলবেনিয়া থেকে ভারতে আসা এই মহিয়সী নারী |

দেখতে দেখতে তিনি পরে হয়ে ওঠেন সকলের প্রিয় মাদার টেরেসা | নিজের ছোটবেলা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন সন্যাস নিয়ে গরীব-আর্তদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন | আর সেটা ভেবেই সুদূর আলবানিয়া ছেড়ে মানুষের সেবার টানে তিনি ভারতের কোলকাতায় চলে আসেন |

এই শহরকে তিনি গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেন আর এখানে আমৃত্যু থেকে গিয়ে কোলকাতাকে বিশ্বের বুকে উপরে তুলেও ধরেন তিনি |

Early life of Mother Teresa:

১৯১০ সালে, আলবেনিয়ার স্কোপ্জে শহরে ২৬শে অগাস্ট জন্মগ্রহণ করেন মাদার টেরেসা | বর্তমানে এই শহরটা আজ মেসিডোনিয়া রিপাবলিকের অন্তর্গত | আর সেই সময় এই শহরটা ছিলো অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনে |

জন্মের সময় তাঁর নাম ছিলো অ্যাগনিস | ছোট্ট অ্যাগনিস মাত্র আট বছর বয়সে তাঁর বাবাকে হারায় | বাবার মৃত্যুর পর তাঁর মা তাঁকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে লালন-পালন করেন |

জোয়ান ক্রাফট লুকাস রচিত টেরেসার জীবনী থেকে জানা যায়, ছোট্ট অ্যাগনিস মিশনারীদের জীবন ও কাজকর্মের গল্প শুনতে বেশ ভালোবাসতেন | মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি ধর্মীয় জীবন-যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন এবং ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে একজন মিশনারী হিসাবে যোগদান করেন  সিস্টার্স অব লোরেটো সংস্থায় |

ব্যাস, সেদিন থেকে অ্যাগনিসের মা আর দিদিদের সাথে তাঁর আর কোনোদিন দেখা হয়নি |

১৯২৯ সালে ভারতের দার্জিলিংয়ে এসে নব দীক্ষিত হিসাবে তিনি সেখানকার একটি মিশনারীতে কাজ শুরু করেন এবং ১৯৩১ সালের ২৪শে মে, তিনি সন্যাসিনী হিসাবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন | সেইসময় তিনি মিশনারীদের পৃষ্টপোষক সন্ত টেরেসা দি লিসিয়াক্সের নামানুসারে টেরেসা নামটা গ্রহণ করেন |

১৯৩৭ সালের ১৪ই মে, পূর্ব কোলকাতার লরেটো কনভেন্ট স্কুলে পড়ানোর সময় তিনি নিজের মনে চূড়ান্ত শপথ গ্রহণ করেন এখানকার দীন-দরিদ্র মানুষদের বাকিটা জীবন সেবা করবেন | তাই স্কুলে পড়াতে তাঁর ভালো লাগলেও কোলকাতার দারিদ্রে তিনি ভীতর ভীতর বেশ উদ্বিগ্ন হতে লাগলেন |

১৯৫০-এর মন্নন্তরে শহরে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুঃখ আর মৃত্যু | তাছাড়া এর আগে ১৯৪৬ সালের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গাতেও ভারতের বহু নিরীহ মানুষ মারা যান | সেই থেকে এইসব ঘটনা টেরেসার মনে এক গভীর প্রভাব বিস্তার করে |



পড়ানোর ফাঁকে সিস্টার মাদার টেরেসা শহরের আর্তদের সেবা চালিয়ে যেতে থাকেন | কোলকাতা সহ আশপাশের শহরের দরিদ্র ও অনাথ শিশুদের তিনি নিজ কাছে টেনে নেন এবং তাদের সেবা করতে থাকেন স্নেহের সাথে |
মাদার টেরেসার জীবনী | Mother Teresa Short Biography in Bengali
image source: wikipedia

অবশেষে ১৯৪৮ সালে লরেটো কনভেন্ট স্কুলের সাধারণ পোশাক ছেড়ে দিয়ে নীলপার সাদা শাড়িতে নিজেকে সারাজীবনের জন্য বদলে ফেলেন মাদার টেরেসা | আর সেই বছরই ভারতের নাগিরিকত্বও পেয়ে যান তিনি | ১৯৫০ সালে ৭ই অক্টোবর, ভ্যাটিকানের অনুমতি নিয়ে কোলকাতায় স্থাপন করেন “মিশনারীস অব চ্যারিটি” নামক সংস্থা |

ক্ষুদার্থ,নগ্ন,গৃহহীন,আত্ম-নিপীড়িত, সর্বহারা ও সমাজ বর্জিত সকল মানুষদের পাশে তিনি দাড়ান পরম মমতাময় স্নেহের সাথে | কোলকাতায় মাত্র ১৩ জন সিস্টার নিয়ে যে মিশনারী হিসাবে তাঁর পথ চলা শুরু আজ সেটা বিশ্বের ১৩৩টি দেশে চড়িয়ে পড়েছে |

অবশেষে ১৯৯৭ সালের ১৩ই মার্চ, “মিশনারীস অব চ্যারিটি” সংস্থার প্রধানের পদ থেকে তিনি স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ান | কারণ অসুস্থতা তাঁকে ততদিনে একদম গ্রাস করে ফেলেছিলো |

বহুদিন রোগে ভোগার পর মাদার টেরেসা শেষমেষ নিজের দেহত্যাগ করেন ১৯৯৭ সালের ৫ই
সেপ্টেম্বর |

শেষ পর্যন্ত এত বছর মানুষের সেবা করার পর ২০১৬ সালে অর্থ্যাৎ তাঁর মৃত্যুর অনেক বছর পর পোপ ফ্রান্সিস আমাদের সকলের প্রিয় মাদার টেরেসাকে “সন্ত” হিসাবে ভূষিত করেন |

Achievements of Mother Teresa:

১. ১৯৬২ সাল: পদ্মশ্রী পুরস্কার
            রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার

২. ১৯৬৯ সাল: জওহরলাল নেহেরু পুরস্কার

৩. ১৯৭১ সাল: পোপ জন ২৩ শান্তি পুরস্কার

৪. ১৯৭৩ সাল: টেমপ্লেটন পুরস্কার

৫. ১৯৭৫ সাল: আলবার্ট সেটজার আন্তর্জাতিক পুরস্কার

৬. ১৯৭৬ সাল: পাসিম ইন টেররিস পুরস্কার

৭. ১৯৭৮ সাল: বালজান পুরস্কার

৮. ১৯৭৯ সাল: প্যাট্রনাল মেডেল
            নোবেল শান্তি পুরস্কার          

৯. ১৯৮০ সাল: ভারতরত্ন পুরস্কার

১০. ১৯৮৫ সাল: রাষ্ট্রপতি পদক

১১. ১৯৯৪ সাল: রাষ্ট্রীয় স্বর্ণপদক

১২. ১৯৯৭ সাল: কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল

সবশেষে একটাই কথা, সিস্টার মাদার টেরেসার অবদান কলকাতাবাসী সহ সমগ্র ভারতের কেউ কোনদিনই ভুলতে পারবেনা | তিনি সকল নিপীড়িত মানুষদের জন্য নিস্বার্থ ভাবে যা করে গেছিলেন তা সত্যিই প্রশংসনীয় |



তবুও এতসব কিছু করার পরও, অনেকে তাঁর আচরণকে নিয়ে নিন্দাও করেছিলেন | বিশ্ববিখ্যাত চিন্তাবিদ জার্মেইন গ্রেয়ার, টেরেসাকে ‘ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদী’  হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন | শুধু তিনি নন, এরকম অনেক সমালোচকদের মতে, তিনি ছিলেন একজন উগ্রবাদী, মৌলবাদী তথা ভণ্ড মানুষ যিনি কিনা ধর্মীয় আদর্শ তথা ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নিপীড়িত মানুষদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতেন |


তিনি আসলে কেমন ধরনের মানুষ ছিলেন এই সম্বন্ধে আমাদের কারোরই জানা নেই | তাই, যে যাই বলুক না কেন তিনি সত্যিই কোলকাতাবাসীদের কাছে ছিলেন একজন মহিয়সী নারী, যার মাতৃত্বের ছোয়ায় অনেকই নিজেদের জীবনে আশার আলো দেখেছিলেন | তাই তাঁর অবদানকে আমরা সবাই সারাজীবন ধরে মনে রাখবো এবং তিনি সর্বদা আমাদের মনের ভীতর অমর হয়ে থাকবেন |
Comment

Class XI Political Science

Class XII Political Science

Class 12 Bangla Books Question& Answers