প্রত্যক্ষ পরামর্শদান: যে পরামর্শদানে পরামর্শগ্রহীতা অপেক্ষা পরামর্শ গ্রহীতার সমস্যার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তা সমাধানের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয় তাকেই প্রত্যক্ষ বা নির্দেশক পরামর্শদান বলে।
অপ্রত্যক্ষ পরামর্শদান: যে পরামর্শদান প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের উপর গুরুত্ব না দিয়ে তার নিজস্ব ব্যক্তিসত্তা উপর বেশি ও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় তাকে অপ্রত্যক্ষ বা ও নির্দেশক পরামর্শদান বলে।
প্রত্যক্ষ পরামর্শদানের বৈশিষ্ট্য: প্রত্যক্ষ পরামর্শদানের বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল---
১) প্রত্যক্ষ পরামর্শদানে সুপরিকল্পিত পথে পরামর্শদান পরিচালিত হয়ে থাকে। এখানে পরামর্শ গ্রহীতার অস্বাভাবিক আচার-আচরণের বিশ্লেষণ, সমস্যার প্রকৃতি, গুরুত্ব ও অবস্থানের নির্ধারণ এবং সমস্যার প্রতিকারমূলক পন্থাপদ্ধতি উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়।
২) এই পরামর্শদানে পরামর্শ গ্রহীতার বৌদ্ধিক এর উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে তার বৌদ্ধিক সংগঠনকে কাজে লাগিয়ে পরামর্শদানের ব্যবস্থা নিতে হয়।
৩) এই জাতীয় পরামর্শদানে একজন অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পরামর্শদাতা ই পরামর্শ গ্রহীতার সমস্যার অনুধাবনে এবং সাবধানে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারেন বলে বিবেচনা করা হয়।
৪) এই জাতীয় পরামর্শদানের পরামর্শ গ্রহীতার সমস্যা উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় বলে প্রদত্ত সমাধানের উপায় পরামর্শ গ্রহীতার পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব কিনা তা বিচার বিবেচনা করা হয় না।
৫) এই জাতীয় পরামর্শদানে পরামর্শ গ্রহীতার ভূমিকা কেবল গ্রাহক হিসাবেই সুনির্দিষ্ট থাকে। যেহেতু এখানে পরামর্শদাতার ভূমিকা সুনিয়ন্ত্রকের, তাই এই জাতীয় পরামর্শদানে তিনিই প্রধান এবং সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁরই ভূমিকা সর্বাধিক।
৬) পরামর্শদাতা পরামর্শদানে বিশেষ ভাবে সকল দিক থেকে সক্রিয় থাকেন এবং তুলনামূলকভাবে পরামর্শ গ্রহীতা এখানে নীরব ভূমিকা নিয়ে থাকেন।
অপ্রত্যক্ষ পরামর্শদান এর বৈশিষ্ট্য: নিম্নে অপ্রত্যক্ষ পরামর্শদানের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করা হল--
১) এই পরামর্শ দানে ব্যক্তির বা পরামর্শ গ্রহীতার ব্যক্তিসত্তা বিকাশের উপর বেশি গুরুত্ব থাকে।
২) এই জাতীয় পরামর্শদানের পরামর্শদাতা পরামর্শ গ্রহীতাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে নিজের বক্তব্য বলতে দেন এবং এতে পরামর্শ গ্রহীতা অনেকাংশে নিজস্ব মানসিক (জট মুক্তির) আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।
৩) এই জাতীয় পরামর্শদানে পরামর্শ গ্রহীতা নিজেই নিজের সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হোন এবং আত্মশক্তি জাগ্রত করে এবং আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাব নিয়ে নিজস্ব সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হন।
৪) যেহেতু এই জাতীয় পরামর্শে পরামর্শ গ্রহীতার সমস্যার প্রকৃতি জানার ও সমস্যা সমাধানের উপর পরামর্শদাতাকে কোন গুরুত্ব দিতে হয় না সেহেতু তাকে পরামর্শ গ্রহীতার অতীত ইতিহাস জানার এবং তার উপর মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষা ব্যবহার করার কোন উদ্যোগ নিতে হয় না।
৫) এই জাতীয় পরামর্শদানের সমর্থকরা ব্যক্তির ব্যক্তিসত্তার উপর আস্থাবান থাকেন এবং প্রতিটি ব্যক্তি নিজেই নিজের সমস্যা সমাধানে সক্ষম এই ধারণা পোষণ করেন। তাই এই জাতীয় পরামর্শদানে পরামর্শদাতা এমন একটি পরামর্শ প্রাপ্তির পরিবেশ রচনা করেন যাতে করে পরামর্শ গ্রহীতার মধ্যে স্বাধীনভাবে স্বেচ্ছায় সকল কাজ সম্পাদনের উৎসাহ দেখা দেয় এবং তিনি আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজস্ব সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের সমস্যা সমাধানে ব্রতী হতে পারেন।
৬) পরামর্শদাতার দ্বারা পরামর্শ গ্রহীতা এমন ভাবে উৎসাহিত হন যে তিনি নিজে থেকে সব রকম সমস্যার কথা ও অন্যান্য বিষয় খোলা মনে প্রকাশ করতে উদ্যত হন।
৭) পরামর্শ গ্রহীতা বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ধারায় পরামর্শদাতার সাহায্য গ্রহণ করলেও চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি নিজেই ব্যবস্থা নেন।
৮) এই জাতীয় পরামর্শদানে পরামর্শদাতার হৃদয়ে সঞ্চারিত আবেগের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়।