নতুন বিশ্ব :
পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত পৃথিবীর মানচিত্র সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না। ইউরোপীয় নবজাগরণের সূত্র ধরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার অভূতপূর্ব অগ্রগতি ইউরোপীয়দের মধ্যে পৃথিবী সম্পর্কে আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। এই সময় জলপথে প্রাচ্যের দেশগুলিতে পৌঁছানোর তাগিদে তারা সামুদ্রিক অভিযান শুরু করে। পৃথিবী গোলাকার, বিজ্ঞানের এই আবিষ্কারকে কাজে লাগিয়ে তারা পশ্চিম দিকে যাত্রা করে। উদ্দেশ্য প্রাচ্যের দেশগুলিতে পৌঁছানো।
এমনই উদ্দেশ্য নিয়ে ইতালীয় নাবিক কলম্বাস স্পেন সরকারের (রাণী ইসাবেলার) সহযোগিতায় ভারতে আসার জন্য অভিযান শুরু করেন। ১৪৯২ সালের ১২ ই অক্টোবর কলম্বাস আমেরিকায় পৌঁছান। মজার কথা হল তিনি ভেবেছিলেন, যে তিনি ভারতে পৌঁছেছেন।
কিন্তু ১৪৯৭ সালে আমেরিগো ভেসপুচি নামে আরও এক ইতালীয় নাবিক আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে পৌঁছান। তিনিই প্রথম বুঝতে পারেন এই দেশটি ইন্ডিয়া নয়। ১৫০৩ সালে তিনি লরেঞ্জো দ্য মেডিচিকে লেখা চিঠিতে এই নতুন ভূখন্ডকে 'Mundus Novus' বা 'New World' বলে উল্লেখ করেন। মূলত সেই থেকেই সমগ্র আমেরিকা মহাদেশ 'নতুন বিশ্ব' বা 'New World' নামে পরিচিত।
ঔপনিবেশিক অভিযানের কারণ (উদ্দেশ্য) :
পঞ্চদশ শতকের শেষার্ধ থেকে ষোড়শ শতকের মধ্যে কলম্বাস, আমেরিগো ভেসপুচি, সেবার্টিয়ান ক্যাবট, পেড্রো আলভারেজ, কেব্র্যাল প্রমুখের অভিযানগুলি নতুন বিশ্বে ইউরোপীয়দের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই আধিপত্য প্রতিষ্ঠার (উপনিবেশ স্থাপনের) পিছনে কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যেশ্য (কারণ) লক্ষ্য করা যায়।
সম্পদ সংগ্রহ : উপনিবেশগুলি থেকে সোনা, রুপা, খনিজ সম্পদ ইত্যাদি সংগ্রহ করা।
খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার : এই অঞ্চলগুলিতে খ্রিষ্টান ধর্মের প্রচারও অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।
বাণিজ্যের প্রসার : কানাডার ফার, ভার্জিনিয়ার তামাক ও তুলো, ব্রাজিলের চিনি সহ নানা রকম অর্থকরী ফসলের ইউরোপে প্রচুর চাহিদা ছিল। আমেরিকা থেকে এসব দ্রব্যগুলো ইউরোপে রপ্তানি করাও উপনিবেশ স্থাপনের একটি উদ্দেশ্য।
বাজার দখল : ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের ফলে চাহিদার তুলনায় পণ্য উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলে এই উদ্বৃত্ত পণ্যের বিক্রির জন্য বাজার দখলের প্রয়োজন দেখা দেয়। এটাও উপনিবেশ স্থাপনের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।
বর্ধিত জনসংখ্যার বাসস্থান : নবজাগরণ পরবর্তী সময়ে ইউরোপে জনসংখ্যার অসম্ভব বৃদ্ধি পায়। এই বর্ধিত জনসংখ্যার বসবাসের জন্য জায়গার সংস্থান করাও একটা উদ্দেশ্য।
কর্মসংস্থান : বর্ধিত জনসংখ্যার জীবিকার সংস্থানও নতুন বিশ্বে উপনিবেশ গড়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
আসলে নতুন বিশ্বের অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রচুর জমিজায়গা, বিপুল পরিমাণ সোনা-রুপার সঞ্চিত থাকার সম্ভাবনা, জীবন-জীবিকার সুবিধা প্রভৃতির আকর্ষণে ইউরোপীয়রা ঔপনিবেশিক অভিযান চালান।
উপনিবেশ স্থাপনের ফলাফল :
কলম্বাসের পদার্পণের পূর্বে আমেরিকা মহাদেশে রেড ইন্ডিয়ান নামে স্থানীয় বাসিন্দারা বসবাস করত। সমুদ্র-অভিযানের সূত্র ধরে ইউরোপীয়রা দলে দলে এখানে আসে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। ক্রমে রেড ইন্ডিয়ানদের হত্যা ও বিতাড়িত করে সমগ্র মহাদেশটার দখল নিয়ে নেয়। এর ফলে নতুন বিশ্বের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এমনকি সেখানকার সংস্কৃতির ওপর গুরুতর প্রভাব পড়ে।
প্রথমত : প্রাচীন সভ্যতার অবলুপ্তি। ইউরোপীয়দের উপনিবেশ গড়ে ওঠার আগে নতুন বিশ্বে মায়া, আজটেক, ইনকা, ইত্যাদির মত প্রাচীন সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু উপনিবেশ স্থাপনের পর এই সভ্যতার ধংস হয়ে গেছে।
দ্বিতীয়ত : ক্রীতদাস আমদানি। নতুন বিশ্বে কৃষি উৎপাদন সচল রাখতে প্রচুর সংখ্যক কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এই প্রয়োজন মেটাতে আফ্রিকা থেকে এখানে ক্রীতদাস রপ্তানি করা হোত। এই ব্যবসা 'আটল্যান্টিক ক্রীতদাস ব্যবসা' নামে পরিচিত।
তৃতীয়ত : শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাস নতুন বিশ্বে আমদানি করার ফলে দ্রুত কৃষ্ণাঙ্গরা সংখ্যা গরিষ্ঠ হয়ে পড়ে। কিন্তু খামার মালিক কিংবা বণিকরা সংখ্যালঘু হলেও অর্থের জোরে তারা কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।
চতুর্থত : ইউরোপীয় আইন ও প্রশাসন প্রতিষ্ঠা। সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও অর্থ ও আধিপত্যের জোরে শেতাঙ্গরা ইউরোপীয়দের আইন, প্রশাসন ইত্যাদি নতুন বিশ্বে প্রতিষ্ঠা করে।
পঞ্চমত : ইউরোপ সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। নতুন বিশ্বে নিজেদের উপনিবেশগুলিতে শোষণ চালিয়ে ইউরোপের দেশগুলি সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে।
এইভাবে, ভৌগোলিক আবিষ্কারের পরবর্তীকালে আমেরিকায় সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিক শোষণের সূত্রপাত হয়।
পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত পৃথিবীর মানচিত্র সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না। ইউরোপীয় নবজাগরণের সূত্র ধরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার অভূতপূর্ব অগ্রগতি ইউরোপীয়দের মধ্যে পৃথিবী সম্পর্কে আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। এই সময় জলপথে প্রাচ্যের দেশগুলিতে পৌঁছানোর তাগিদে তারা সামুদ্রিক অভিযান শুরু করে। পৃথিবী গোলাকার, বিজ্ঞানের এই আবিষ্কারকে কাজে লাগিয়ে তারা পশ্চিম দিকে যাত্রা করে। উদ্দেশ্য প্রাচ্যের দেশগুলিতে পৌঁছানো।
এমনই উদ্দেশ্য নিয়ে ইতালীয় নাবিক কলম্বাস স্পেন সরকারের (রাণী ইসাবেলার) সহযোগিতায় ভারতে আসার জন্য অভিযান শুরু করেন। ১৪৯২ সালের ১২ ই অক্টোবর কলম্বাস আমেরিকায় পৌঁছান। মজার কথা হল তিনি ভেবেছিলেন, যে তিনি ভারতে পৌঁছেছেন।
কিন্তু ১৪৯৭ সালে আমেরিগো ভেসপুচি নামে আরও এক ইতালীয় নাবিক আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে পৌঁছান। তিনিই প্রথম বুঝতে পারেন এই দেশটি ইন্ডিয়া নয়। ১৫০৩ সালে তিনি লরেঞ্জো দ্য মেডিচিকে লেখা চিঠিতে এই নতুন ভূখন্ডকে 'Mundus Novus' বা 'New World' বলে উল্লেখ করেন। মূলত সেই থেকেই সমগ্র আমেরিকা মহাদেশ 'নতুন বিশ্ব' বা 'New World' নামে পরিচিত।
ঔপনিবেশিক অভিযানের কারণ (উদ্দেশ্য) :
পঞ্চদশ শতকের শেষার্ধ থেকে ষোড়শ শতকের মধ্যে কলম্বাস, আমেরিগো ভেসপুচি, সেবার্টিয়ান ক্যাবট, পেড্রো আলভারেজ, কেব্র্যাল প্রমুখের অভিযানগুলি নতুন বিশ্বে ইউরোপীয়দের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই আধিপত্য প্রতিষ্ঠার (উপনিবেশ স্থাপনের) পিছনে কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যেশ্য (কারণ) লক্ষ্য করা যায়।
সম্পদ সংগ্রহ : উপনিবেশগুলি থেকে সোনা, রুপা, খনিজ সম্পদ ইত্যাদি সংগ্রহ করা।
খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার : এই অঞ্চলগুলিতে খ্রিষ্টান ধর্মের প্রচারও অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।
বাণিজ্যের প্রসার : কানাডার ফার, ভার্জিনিয়ার তামাক ও তুলো, ব্রাজিলের চিনি সহ নানা রকম অর্থকরী ফসলের ইউরোপে প্রচুর চাহিদা ছিল। আমেরিকা থেকে এসব দ্রব্যগুলো ইউরোপে রপ্তানি করাও উপনিবেশ স্থাপনের একটি উদ্দেশ্য।
বাজার দখল : ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের ফলে চাহিদার তুলনায় পণ্য উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলে এই উদ্বৃত্ত পণ্যের বিক্রির জন্য বাজার দখলের প্রয়োজন দেখা দেয়। এটাও উপনিবেশ স্থাপনের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।
বর্ধিত জনসংখ্যার বাসস্থান : নবজাগরণ পরবর্তী সময়ে ইউরোপে জনসংখ্যার অসম্ভব বৃদ্ধি পায়। এই বর্ধিত জনসংখ্যার বসবাসের জন্য জায়গার সংস্থান করাও একটা উদ্দেশ্য।
কর্মসংস্থান : বর্ধিত জনসংখ্যার জীবিকার সংস্থানও নতুন বিশ্বে উপনিবেশ গড়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
আসলে নতুন বিশ্বের অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রচুর জমিজায়গা, বিপুল পরিমাণ সোনা-রুপার সঞ্চিত থাকার সম্ভাবনা, জীবন-জীবিকার সুবিধা প্রভৃতির আকর্ষণে ইউরোপীয়রা ঔপনিবেশিক অভিযান চালান।
উপনিবেশ স্থাপনের ফলাফল :
কলম্বাসের পদার্পণের পূর্বে আমেরিকা মহাদেশে রেড ইন্ডিয়ান নামে স্থানীয় বাসিন্দারা বসবাস করত। সমুদ্র-অভিযানের সূত্র ধরে ইউরোপীয়রা দলে দলে এখানে আসে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। ক্রমে রেড ইন্ডিয়ানদের হত্যা ও বিতাড়িত করে সমগ্র মহাদেশটার দখল নিয়ে নেয়। এর ফলে নতুন বিশ্বের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এমনকি সেখানকার সংস্কৃতির ওপর গুরুতর প্রভাব পড়ে।
প্রথমত : প্রাচীন সভ্যতার অবলুপ্তি। ইউরোপীয়দের উপনিবেশ গড়ে ওঠার আগে নতুন বিশ্বে মায়া, আজটেক, ইনকা, ইত্যাদির মত প্রাচীন সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু উপনিবেশ স্থাপনের পর এই সভ্যতার ধংস হয়ে গেছে।
দ্বিতীয়ত : ক্রীতদাস আমদানি। নতুন বিশ্বে কৃষি উৎপাদন সচল রাখতে প্রচুর সংখ্যক কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এই প্রয়োজন মেটাতে আফ্রিকা থেকে এখানে ক্রীতদাস রপ্তানি করা হোত। এই ব্যবসা 'আটল্যান্টিক ক্রীতদাস ব্যবসা' নামে পরিচিত।
তৃতীয়ত : শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাস নতুন বিশ্বে আমদানি করার ফলে দ্রুত কৃষ্ণাঙ্গরা সংখ্যা গরিষ্ঠ হয়ে পড়ে। কিন্তু খামার মালিক কিংবা বণিকরা সংখ্যালঘু হলেও অর্থের জোরে তারা কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।
চতুর্থত : ইউরোপীয় আইন ও প্রশাসন প্রতিষ্ঠা। সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও অর্থ ও আধিপত্যের জোরে শেতাঙ্গরা ইউরোপীয়দের আইন, প্রশাসন ইত্যাদি নতুন বিশ্বে প্রতিষ্ঠা করে।
পঞ্চমত : ইউরোপ সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। নতুন বিশ্বে নিজেদের উপনিবেশগুলিতে শোষণ চালিয়ে ইউরোপের দেশগুলি সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে।
এইভাবে, ভৌগোলিক আবিষ্কারের পরবর্তীকালে আমেরিকায় সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিক শোষণের সূত্রপাত হয়।