Monday 6 April 2020

সামাজিক গোষ্ঠী বলতে কী বোঝো? এর প্রকৃতি আলোচনা কর। সামাজিক গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগ কর।

উত্তর:
       সামাজিক গোষ্ঠী এবং তার স্বরূপ: কোন একটি বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংগবদ্ধ জনসমষ্টিকে সামাজিক গোষ্ঠী বলা হয়। এ প্রসঙ্গে গিসবার্ট বলেন,  সামাজিক গোষ্ঠী হলো জনসমষ্টি, যাঁরা একটি স্বীকৃত সংগঠনের মধ্যে থেকে পরস্পরের উপর কার্য করে। যেমন পরিবার, ক্লাব বা কোন রাজনৈতিক দল ইত্যাদি।

     ম্যাকাইভার ও পেজ এর মতে, "গোষ্ঠী বলতে আমরা বুঝি কোন সামাজিক ব্যক্তির সমষ্টি, যারা পরস্পরের সঙ্গে নির্দিষ্ট সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত।"

       অবশ্য কতগুলি ব্যক্তির সমষ্টি মাত্রকেই গোষ্ঠী বলা যায়না। সমাজবিজ্ঞানের দিক থেকে এই জাতীয় সমষ্টির সঙ্গে কোন দ্রব্যের সমষ্টির তফাৎ নেই; কারণ গোষ্ঠীর সভ্যদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক নেই।
সামাজিক গোষ্ঠীর কোন প্রকার অস্তিত্ব থাকে না যদি না ব্যক্তিদের পারস্পরিক সম্পর্ক থাকে। সামাজিক গোষ্ঠী আবির্ভাব তখনি হয় যখন সামগ্রীর বিভিন্ন অংশের মধ্যে সুস্পষ্ট সামাজিক সম্পর্ক থাকে এবং কোন একটা স্বীকৃত সংগঠনের মধ্যে থেকে কোনো সাধারণ স্বার্থ বা লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে পরস্পরের উপর কার্য করে। মানসিক, সামাজিক, ঐক্য এবং যান্ত্রিক সমষ্টি থেকে সম্পূর্ণরূপে স্বতন্ত্র হলো সামাজিক গোষ্ঠী।

      সামাজিক গোষ্ঠী এবং সমাজ এক নয়, কারণ যেকোনো সামাজিক গোষ্ঠীই সমাজ নয়। এছাড়া সামাজিক গোষ্ঠী অপেক্ষা সমাজ অনেক কম স্থায়ী।
আবার আপাত গোষ্ঠীকে সামাজিক গোষ্ঠীর সঙ্গে এক করে ফেললে ভুল হবে। আপাত গোষ্ঠীর কোনো স্বীকৃত সংগঠন নেই, কিন্তু সামাজিক গোষ্ঠীর একটি স্বীকৃত সংগঠন আছে। এটা স্বীকার করতেই হয় যে, আপাত গোষ্ঠীর ব্যক্তিদের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য বর্তমান। উদাহরণস্বরূপ, 1 ওই দলের অন্তর্ভুক্ত যেকোনো জনসমষ্টি, যাদের উদ্দেশ্য একসঙ্গে মিলেমিশে হরিনাম করা--কিন্তু এদের নির্দিষ্ট কোন সংগঠন নেই। একই ব্যবসায়ে নিযুক্ত যে জনসমষ্টি, যাদের পেশাগত উদ্দেশ্য এক কিন্তু তাদের কোনো নির্দিষ্ট সংগঠন নেই।
অবশ্য এইসব গোষ্ঠী যদি সংগঠনের মাধ্যমে নিজেকে সংগঠিত করে তবে আপাত গোষ্ঠী সামাজিক গোষ্ঠী তে রূপান্তরিত হয়ে যায়।

           সামাজিক গোষ্ঠী কিভাবে সৃষ্টি হয়?

         এর উত্তরে বলা যায় যে, অনেক সময় ব্যবসায়ীরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে একটি দৃঢ় সংগঠনের দ্বারা নিজেদের দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে, এর মাধ্যমেই সামাজিক গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে।

    সামাজিক গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগ: বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে  সামাজিক গোষ্ঠীগুলির শ্রেণীবিভাগ করা হয়। কয়েকটি মুখ্য বিভাগের উল্লেখ করা হলো--

     ১। সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কের গভীরতার ভিত্তিতে গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগ: সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কের গভীরতার ভিত্তিতে সমাজতাত্ত্বিক কুলি দুই প্রকার সামাজিক গোষ্ঠীর উল্লেখ করেছেন। যথা-

   (ক) প্রাথমিক গোষ্ঠী বা মুখ্য গোষ্ঠী: যখন সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক প্রত্যক্ষ এবং গভীর হয় এবং মুখোমুখি সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তরঙ্গ 'আমরা' অনুভূতির প্রকাশ পায়, তখন তাকে প্রাথমিক গোষ্ঠী বলে।  যেমন - পরিবার।

   (খ) গৌণ গোষ্ঠী বা মাধ্যমিক গোষ্ঠী: গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক পরোক্ষ বা গৌণ হলে, তখন তাকে গৌণ গোষ্ঠী বলে। যেমন- রাজনৈতিক দল, ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক, বিদ্যালয় ইত্যাদি।

  ২। সদস্যদের অন্তরঙ্গতার ভিত্তিতে গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগ: গোষ্ঠীর অন্তর্গত সদস্যদের অন্তরঙ্গতার ভিত্তিতে গোষ্ঠীকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

   (ক) অন্তর্গোষ্ঠী: যে গোষ্ঠীতে সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের অন্তরঙ্গতা রয়েছে, সেই গোষ্ঠীকে বলা হয় অন্তর্গোষ্ঠী। যেমন- পরিবার, ছেলেদের অথবা মেয়েদের দল অন্তর্গোষ্ঠী।

      (খ) বহির্গোষ্ঠী: ব্যক্তি যে গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত নয় এবং যে গোষ্ঠী সম্পর্কে সে বিরুদ্ধ মনোভাব পোষণ করে, ব্যক্তির কাছে সেই গোষ্ঠী বহির্গোষ্ঠী। যেমন- এক পরিবারের সদস্যদের কাছে অন্য পরিবার, ছেলেদের দলের কাছে মেয়েদের দল বহির্গোষ্ঠী।

     ৩। স্থায়িত্বের পরিপ্রেক্ষিতে: স্থায়িত্বের স্তর অনুসারে গিসবার্ট চার প্রকার গোষ্ঠীর উল্লেখ করেছেন।  যথা-

          (ক) অস্থায়ী গোষ্ঠী: এই সমস্ত গোষ্ঠী সংগঠনের কথা চিন্তা না করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আবির্ভাব ঘটে। যেমন - রাস্তায় কোনো অঘটন ঘটলে কিছু মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেখানে মিলিত হয় আবার কিছু সময় পরে তারা নিজ নিজ গন্তব্য পথে চলে যায়। এ প্রকার গোষ্ঠীকেই বলা হয় অস্থায়ী গোষ্ঠী।

         (খ) স্বল্পকাল স্থায়ী গোষ্ঠী: সংগঠনের দ্বিতীয় স্তরে দেখা যায় এমন এক গোষ্ঠী যার সদস্যরা পূর্বে থেকে চিন্তা করে দলবদ্ধ হয়। যেমন- ছাত্র সংসদ।

      (গ) দীর্ঘকাল স্থায়ী গোষ্ঠী:  এই গোষ্ঠীর উৎপত্তি সদস্যদের ইচ্ছাধীন নয়, তা নির্ভর করে সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের ওপর। যেমন- শ্রমিক সংসদ, শিক্ষক সমিতি।
(ঘ) চিরস্থায়ী গোষ্ঠী: চতুর্থ স্তরে এক বিশেষ ধরনের গোষ্ঠী দেখা যায় যা চিরস্থায়ী গোষ্ঠী নামে পরিচিত। এদের অস্তিত্ব অঘঠন ছাড়া (যেমন ভূমিকম্প, মহামারী, রাষ্ট্রবিপ্লব ইত্যাদি) বিঘ্নিত হয় না। যেমন- রাস্ট্র, গ্রাম সমাজ ইত্যাদি।

    ৪। কর্মপদ্ধতির পরিপ্রেক্ষিতে: কর্মপদ্ধতির পরিপ্রেক্ষিতে গোষ্ঠীকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

        (ক) বিধিবদ্ধ গোষ্ঠী: গোষ্ঠীর সদস্যরা যখন নির্দিষ্ট বা বিধিবদ্ধ নিয়ম অনুসরণ করে গোষ্ঠী পরিচালিত করে তখন তাকে বিধিবদ্ধ গোষ্ঠী বলে। যেমন- শ্রেণিকক্ষ।

         (খ) অবিধিবদ্ধ গোষ্ঠী: যে গোষ্ঠীতে সদস্যদের উপর গোষ্ঠীর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না এবং সদস্যরা কাজকর্মে ও চিন্তা-ভাবনায় সকল প্রকার স্বাধীনতা ভোগ করে তাকে অবিধিবদ্ধ গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেমন - ফুটবল ক্লাব।
Comment

Class XI Political Science

Class XII Political Science

Class 12 Bangla Books Question& Answers