মার্কেন্টাইলবাদ ( মার্কেন্টাইল মূলধন / পুঁজি ) :
মার্কেন্টাইলবাদ হল একটি 'সংরক্ষণবাদী' অর্থনৈতিক মতবাদ। ইউরোপীয় নবজাগরণ ও ভৌগোলিক আবিষ্কারের সূত্র ধরে ইউরোপীয়রা নতুন ভুখন্ড আবিষ্কার এবং সেখানে নিজেদের উপনিবেশ গড়ে তোলে। এই সময় এই মতবাদ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। লর্ড অ্যাক্টনের মতে, মার্কেন্টাইলবাদ ছিল জ্ঞানদীপ্তির যুগের স্বৈরতন্ত্রের পরিপূরক অর্থনৈতিক মতবাদ। এই মতবাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলি ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যে তাদের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটায়।
এই মতবাদের মূলকথা হল :
রাষ্ট্রের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ থাকবে রাষ্ট্রের হাতে।
রাষ্ট্রের স্বার্থ ও বণিকের স্বার্থ অভিন্ন।
দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ গিল্ডের পরিবর্তে জাতীয় সরকারের হাতে থাকবে।
সুতরাং রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতিই মার্কেন্টাইল অর্থনীতি। রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ও তার নিয়ন্ত্রিত পুঁজিই মার্কেন্টাইল পুঁজি বা মার্কেন্টাইল মূলধন নাম পরিচিত।
মনে রাখতে হবে, এই মতবাদের কোনো প্রতিষ্ঠাতা নেই। কোনো দেশের সরকার এই মতবাদ নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রয়োগও করেন নি। প্রখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ ১৭৭৬ সালে তাঁর 'Wealth of Nations' গ্রন্থে অবজ্ঞাভরে সর্বপ্রথম 'মার্কেন্টাইলবাদ' কথাটি ব্যবহার করেছেন।
মার্কেন্টাইল মতবাদ ( পুঁজি/মূলধন)-এর বৈশিষ্ট :
এই মতবাদের (পুঁজি / মূলধনের) কতগুলি বৈশিষ্ট লক্ষ্য করা যায়।
অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ : এই মতবাদ জনপ্রিয় হওয়ার ফলে রাষ্ট্রের অর্থনীতি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে পড়ে। দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ গিল্ডের পরিবর্তে জাতীয় সরকারের হাতে চলে যায়। এইভাবে মার্কেন্টাইলবাদ অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের রূপ নেয়।
কৃষি উৎপাদন ব্যাহত : মার্কেন্টাইল মতবাদ অনুসরণকারীদের মতে, দেশের বাইরে খাদ্যশস্য রপ্তানি করলে দেশে খাদ্যসংকট দেখা দেবে। এই কারণে রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে কৃষরা ফসলের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হয়। কৃষকরাও পরিবারের প্রয়োজনের বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন করত না। এই পরিস্থিতে কৃষির উন্নতি ও উৎপাদন বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
আমদানি হ্রাস ও রপ্তানি বৃদ্ধি : এই মতবাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল সম্পদের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার। সেই কারণে এই সময় আমদানি কমিয়ে রপ্তানি ( খাদ্যশস্য ছাড়া) বাড়ানোর কথা বলা হয়।
সোনা ও রুপার গুরুত্ব : মার্কেন্টাইল নীতি অনুসারে সোনা ও রুপার ভান্ডার বাড়ানোর ওপর জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি নির্ভরশীল। এই কারণে যেসকল দেশের এই ভান্ডার কম তাদের তা বাড়ানোর জন্য রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে হবে।
সামুদ্রিক বাণিজ্য বৃদ্ধি : মার্কেন্টাইল মত অনুসারে সোনা-রুপার ভান্ডার বাড়ানোর জন্য সামুদ্রিক বাণিজ্য বাড়ানো ও তার জন্য উপনিবেশ স্থাপনে উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
অবাধ বাণিজ্যের বিরোধিতা : মার্কেন্টাইলবাদীরা অবাধ বাণিজ্যের বিরোধী ছিলেন। তারা মনে করতেন, জাতীয় অর্থনীতির অবনমন রোধ করতে সরকারি হস্তক্ষেপ খুবই জরুরি। এই উদ্দেশ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি, আমদানি শুল্ক চাপানো, শিল্পোদ্যোগে ভর্তুকি ইত্যাদি জরুরি।
মার্কেন্টাইলবাদের প্রয়োগ : মার্কেন্টাইলবাদের উল্লেখযোগ্য প্রয়োগ দেখা যায় ইংল্যান্ডের 'নেভিগেশন আইন' ও ফ্রান্সের মন্ত্রী কোলবার্টের 'সরকারি অর্থ নিয়ন্ত্রণ' নীতির মধ্যে।
মার্কেন্টাইল অর্থনীতির অবসান :
অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ থেকে মার্কেন্টাইলবাদ জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে। এর কারণ নিহিত রয়েছে এই মতবাদের কিছু অন্তর্নিহিত ত্রুটির মধ্যে। সেগুলি হল :
১) পুনর্বিনিয়োগের বিরোধী : এই মতবাদ পুনর্বিনিয়োগ বিরোধী। কিন্তু সঞ্চিত অর্থ ও সম্পদের ভান্ডার বৃদ্ধি করে নয়, তা পুনরায় বিনিয়োগের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হতে পারে। বলেছেন ডেভিড হিউম।
২) অযথা সরকারি হস্তক্ষেপ : অ্যাডাম স্মিথ বলেছেন, বাণিজ্যে সংরক্ষণ নীতি বা সরকারি হস্তক্ষেপের দ্বারা নয়, অবাধ বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি মজবুত হতে পারে।
৩) বৈদেশিক বাণিজ্যে ক্ষতি : মার্কেন্টাইলবাদের ফলে, দেশীয় শিল্প বৈদেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার হাত থেকে রক্ষা পায়, কিন্তু শিল্প সংরক্ষণ নীতির ফলে বৈদেশিক বাণিজ্য বাধাপ্রাপ্ত হয়। কারণ প্রতিটি দেশই নিজের দেশের পণ্য রপ্তানি বাড়িয়ে আমদানি কমানোর চেষ্টা চালায়।
৪) সুস্পষ্ট ধারণার অভাব : মার্কেন্টাইলবাদে অর্থনীতি সম্পর্কে সচেতনতা বাস্তবতা, উৎপাদন, বাণিজ্যিক লাভলোকসান প্রভৃতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অভাব ছিল।
এই সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে মার্কেন্টাইলবাদ বিশ্ব অর্থনীতিতে কিছুকালের মধ্যেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।
মার্কেন্টাইলবাদ হল একটি 'সংরক্ষণবাদী' অর্থনৈতিক মতবাদ। ইউরোপীয় নবজাগরণ ও ভৌগোলিক আবিষ্কারের সূত্র ধরে ইউরোপীয়রা নতুন ভুখন্ড আবিষ্কার এবং সেখানে নিজেদের উপনিবেশ গড়ে তোলে। এই সময় এই মতবাদ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। লর্ড অ্যাক্টনের মতে, মার্কেন্টাইলবাদ ছিল জ্ঞানদীপ্তির যুগের স্বৈরতন্ত্রের পরিপূরক অর্থনৈতিক মতবাদ। এই মতবাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলি ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যে তাদের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটায়।
এই মতবাদের মূলকথা হল :
রাষ্ট্রের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ থাকবে রাষ্ট্রের হাতে।
রাষ্ট্রের স্বার্থ ও বণিকের স্বার্থ অভিন্ন।
দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ গিল্ডের পরিবর্তে জাতীয় সরকারের হাতে থাকবে।
সুতরাং রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতিই মার্কেন্টাইল অর্থনীতি। রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ও তার নিয়ন্ত্রিত পুঁজিই মার্কেন্টাইল পুঁজি বা মার্কেন্টাইল মূলধন নাম পরিচিত।
মনে রাখতে হবে, এই মতবাদের কোনো প্রতিষ্ঠাতা নেই। কোনো দেশের সরকার এই মতবাদ নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রয়োগও করেন নি। প্রখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ ১৭৭৬ সালে তাঁর 'Wealth of Nations' গ্রন্থে অবজ্ঞাভরে সর্বপ্রথম 'মার্কেন্টাইলবাদ' কথাটি ব্যবহার করেছেন।
মার্কেন্টাইল মতবাদ ( পুঁজি/মূলধন)-এর বৈশিষ্ট :
এই মতবাদের (পুঁজি / মূলধনের) কতগুলি বৈশিষ্ট লক্ষ্য করা যায়।
অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ : এই মতবাদ জনপ্রিয় হওয়ার ফলে রাষ্ট্রের অর্থনীতি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে পড়ে। দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ গিল্ডের পরিবর্তে জাতীয় সরকারের হাতে চলে যায়। এইভাবে মার্কেন্টাইলবাদ অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের রূপ নেয়।
কৃষি উৎপাদন ব্যাহত : মার্কেন্টাইল মতবাদ অনুসরণকারীদের মতে, দেশের বাইরে খাদ্যশস্য রপ্তানি করলে দেশে খাদ্যসংকট দেখা দেবে। এই কারণে রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে কৃষরা ফসলের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হয়। কৃষকরাও পরিবারের প্রয়োজনের বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন করত না। এই পরিস্থিতে কৃষির উন্নতি ও উৎপাদন বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
আমদানি হ্রাস ও রপ্তানি বৃদ্ধি : এই মতবাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল সম্পদের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার। সেই কারণে এই সময় আমদানি কমিয়ে রপ্তানি ( খাদ্যশস্য ছাড়া) বাড়ানোর কথা বলা হয়।
সোনা ও রুপার গুরুত্ব : মার্কেন্টাইল নীতি অনুসারে সোনা ও রুপার ভান্ডার বাড়ানোর ওপর জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি নির্ভরশীল। এই কারণে যেসকল দেশের এই ভান্ডার কম তাদের তা বাড়ানোর জন্য রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে হবে।
সামুদ্রিক বাণিজ্য বৃদ্ধি : মার্কেন্টাইল মত অনুসারে সোনা-রুপার ভান্ডার বাড়ানোর জন্য সামুদ্রিক বাণিজ্য বাড়ানো ও তার জন্য উপনিবেশ স্থাপনে উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
অবাধ বাণিজ্যের বিরোধিতা : মার্কেন্টাইলবাদীরা অবাধ বাণিজ্যের বিরোধী ছিলেন। তারা মনে করতেন, জাতীয় অর্থনীতির অবনমন রোধ করতে সরকারি হস্তক্ষেপ খুবই জরুরি। এই উদ্দেশ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি, আমদানি শুল্ক চাপানো, শিল্পোদ্যোগে ভর্তুকি ইত্যাদি জরুরি।
মার্কেন্টাইলবাদের প্রয়োগ : মার্কেন্টাইলবাদের উল্লেখযোগ্য প্রয়োগ দেখা যায় ইংল্যান্ডের 'নেভিগেশন আইন' ও ফ্রান্সের মন্ত্রী কোলবার্টের 'সরকারি অর্থ নিয়ন্ত্রণ' নীতির মধ্যে।
মার্কেন্টাইল অর্থনীতির অবসান :
অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ থেকে মার্কেন্টাইলবাদ জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে। এর কারণ নিহিত রয়েছে এই মতবাদের কিছু অন্তর্নিহিত ত্রুটির মধ্যে। সেগুলি হল :
১) পুনর্বিনিয়োগের বিরোধী : এই মতবাদ পুনর্বিনিয়োগ বিরোধী। কিন্তু সঞ্চিত অর্থ ও সম্পদের ভান্ডার বৃদ্ধি করে নয়, তা পুনরায় বিনিয়োগের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হতে পারে। বলেছেন ডেভিড হিউম।
২) অযথা সরকারি হস্তক্ষেপ : অ্যাডাম স্মিথ বলেছেন, বাণিজ্যে সংরক্ষণ নীতি বা সরকারি হস্তক্ষেপের দ্বারা নয়, অবাধ বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি মজবুত হতে পারে।
৩) বৈদেশিক বাণিজ্যে ক্ষতি : মার্কেন্টাইলবাদের ফলে, দেশীয় শিল্প বৈদেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার হাত থেকে রক্ষা পায়, কিন্তু শিল্প সংরক্ষণ নীতির ফলে বৈদেশিক বাণিজ্য বাধাপ্রাপ্ত হয়। কারণ প্রতিটি দেশই নিজের দেশের পণ্য রপ্তানি বাড়িয়ে আমদানি কমানোর চেষ্টা চালায়।
৪) সুস্পষ্ট ধারণার অভাব : মার্কেন্টাইলবাদে অর্থনীতি সম্পর্কে সচেতনতা বাস্তবতা, উৎপাদন, বাণিজ্যিক লাভলোকসান প্রভৃতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অভাব ছিল।
এই সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে মার্কেন্টাইলবাদ বিশ্ব অর্থনীতিতে কিছুকালের মধ্যেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।