Sunday 5 April 2020

সামাজিক শ্রেণী এবং জাতি বা বর্ণের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর। OR, সামাজিক শ্রেণী ও বর্ণের উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উঃ   সামাজিক শ্রেণী: সামাজিক শ্রেণী প্রসঙ্গে গিন্সবার্গ বলেন, " সামাজিক শ্রেণী বলতে বোঝায়, সম্প্রদায়ের বিশেষ কোন অংশ বা জনগোষ্ঠীকে যারা সমতার ভিত্তিতে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং সমাজস্বীকৃত উঁচু-নিচু মানদণ্ডের দ্বারা এক জনগোষ্ঠি অপরাপর জনগোষ্ঠি থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে"। ম্যাকাইভার ও পেজ্ বলেন, "সামাজিক শ্রেণী বলতে বোঝায় সম্প্রদায়ের এমন এক খন্ডাংশ যা মর্যাদা অনুসারে অন্যান্য অংশ থেকে স্বতন্ত্র। সামাজিক শ্রেণী প্রথমত, মর্যাদা অনুসারে উঁচু-নিচুভাবে অবস্থান করে; দ্বিতীয়ত, শ্রেণীর মর্যাদা সমাজস্বীকৃত হয় এবং শ্রেণী সদস্যরা ওই মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন থাকে; তৃতীয়ত, সামাজিক শ্রেণীর সাংগঠনিক স্থায়িত্ব থাকে"। প্রত্যেক শ্রেণীর অন্তর্গত সদস্যদের মধ্যে সামান্য ব্যাপারে পার্থক্য থাকলেও তা তাদের পারস্পরিক শ্রেণি- সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করে না;  তবে প্রত্যেক শ্রেণি অন্য শ্রেণী থেকে উচ্চতর ভাবে বা নিম্নতর ভাবে সম্বন্ধের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অবস্থান করে।

   জাতি বা বর্ণ: স্যার এডওয়ার্ড ব্লাস্ট তাঁর 'Social Service in India' নামক নিবন্ধ সংকলন গ্রন্থে বলেছেন, 'জাতি হচ্ছে এমন এক জনগোষ্ঠি যাদের মধ্যে অন্তর্বিবাহ প্রথা প্রচলিত, যারা বংশপরম্পরায় এক সাধারণ পদবী গ্রহণ করে, যারা সামাজিক আচার আচরণের ক্ষেত্রে কতগুলি বিধি-নিষেধ অনুসরণ করে, যারা গতানুগতিকভাবে পূর্বপুরুষের বৃত্তি গ্রহণ করে এবং যারা মনে করে যে তাদের আদি পূর্বপুরুষ একই ব্যক্তি এবং এভাবে যারা এক সুসংহত গোষ্ঠী জীবনে বসবাস করে।' জাতি এবং জাতিভেদ প্রথা কেবলমাত্র ভারতে বসবাসকারী হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় -- ভারতের বাইরে শ্রীলঙ্কায় বসবাসকারী হিন্দুদের মধ্যে, এমনকি ভারতের বাইরে অনেক হিন্দুদের মধ্যেও এই প্রথার প্রচলন আছে। প্রাচীনকালের মিশর জাপান প্রভৃতি দেশেও যে এই প্রথার প্রচলন ছিল, ইতিহাসে তার অনেক নজির পাওয়া যায়। বর্তমানে মাসাইদের মধ্যে, পূর্ব-হর্নের সোমালীদের মধ্যে, পলিনেশীয়দের মধ্যে, বর্মীদের মধ্যে, এমনকি ইউরোপ ও আমেরিকার ইহুদি বিদ্বেষ ও বর্ণবিদ্বেষ মানুষের মধ্যে এই প্রথার প্রচলন আছে। তবে, জাতি ও জাতিভেদ প্রথা বলতে বিশেষ করে ভারতীয়দের এবং আরো বিশেষ করে ভারতে বসবাসকারী হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত সামাজিক শ্রেণীভেদ প্রথাকেই বোঝানো হয়, কেননা ভারতীয় সমাজে এই প্রথা অতিপ্রাচীন এবং সুপ্রাচীন হওয়ায় এই প্রথা ভারতীয় জনজীবনে এক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ গ্রহণ করেছে।
       জাত- ব্যবস্থা জন্ম ভিত্তিক। ব্যক্তি যে জাতে জন্মগ্রহণ করে সে জাতির সদস্য হিসেবেই জীবন অতিবাহিত করে। প্রত্যেক জাতভুক্ত ব্যক্তিকে সেই জাতির মধ্যেই বিবাহ করতে হয়। প্রত্যেকটি জাতির একটি পেশা বা বৃত্তি নির্দিষ্ট থাকে।

   সামাজিক শ্রেণী ও জাতি: সামাজিক শ্রেণী ও জাতীয় ক্ষেত্রে উঁচু-নিচু ভাবে স্তর বিভাগ হলেও তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। যথা ----
  
    প্রথমত, সামাজিক শ্রেণী সচল কিন্তু জাতি সাধারণত নিশ্চল। সমাজের নিম্ন স্তর ভুক্ত মানুষ যদি তার দক্ষতা ও যোগ্যতার জন্য অর্থ, বিত্ত ও মান মর্যাদার অধিকারী হয়ে উচ্চস্তর ভুক্ত মানুষের আচার-আচরণ ও জীবনধারা কে অনুসরণ করে, তাহলে সে ক্রমশই উচ্চ স্তরে উন্নীত হয়। তেমনি, উচ্চস্তরের মানুষ যদি তার যোগ্যতার অভাবের জন্য উচ্চস্তরের মানুষের আচার-আচরণ ও জীবনধারন প্রণালীকে অনুসরণ করতে না পারে তাহলে সে নিম্নস্তরে অবনত হয়। কিন্তু জাতিভেদ প্রথার ক্ষেত্রে জাতি-চলাচল, বিশেষ করে নিম্নতর জাতি থেকে উচ্চতর জাতিতে উন্নীত হওয়া সাধারণভাবে সম্ভব হয় না বলে এই প্রথাকে নিশ্চল বলাই সঙ্গত।

    দ্বিতীয়ত,  জাতির ক্ষেত্রে স্বজাতি বিবাহ শাস্ত্রসম্মত, উঁচু জাতির সঙ্গে নিচু জাতির বিবাহ শাস্ত্র নিষিদ্ধ। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে বিবাহাদি সম্পর্ক স্বজাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ব্রাহ্মণ সন্তান যদি শূদ্রের কন্যাকে বিবাহ করে তাহলে শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে তাকে জাতিচ্যুত হতে হয়। সামাজিক শ্রেণীর ক্ষেত্রে এমন কোন শাস্ত্রীয় বিধান নেই। শ্রেণী ব্যবস্থায় উচ্চস্তর ভুক্ত মানুষের নিম্নস্তর ভুক্ত মানুষের সঙ্গে বিবাহাদি সম্পর্ক নিষিদ্ধ নয়।

    তৃতীয়ত, জাতিভেদ বা বর্ণভেদ প্রথার শাস্ত্রীয় বা ধর্মীয় ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও সামাজিক শ্রেণীভেদের কেবল ঐতিহাসিক ব্যাখ্যাই দেওয়া হয়। শাস্ত্রমতে, জাতি বা বর্ণ চারটি। যথা-- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র। অপরদিকে, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ইতিহাসকেই সামাজিক শ্রেণীভেদের কারণরূপে গণ্য করা হয়। সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুসারে শ্রমবিভাগ, বৃত্তি বিভাগ, সম্পত্তির বন্টন ইত্যাদি প্রয়োজনীয়রূপে দেখা দেয় এবং শ্রম, বৃত্তি, সম্পত্তি ইত্যাদির পরিমাণ অনুসারে মানুষ কমবেশি সামাজিক ও রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করে। এভাবে, সমাজের ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ফলেই  সামাজিক স্তর বিভাগ বা শ্রেণীবিভাগের প্রচলন হয়।
Comment

Class XI Political Science

Class XII Political Science

Class 12 Bangla Books Question& Answers