Thursday 26 March 2020

মার্শাল প্ল্যান কী? কোন পটভূমিতে এই পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়? এই পরিকল্পনার মূলকথা ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর?

মার্শাল পরিকল্পনা ( 'ইউরোপীয় পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা') :
১৯৪৭ সালে ১২ মার্চ মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান নীতি ঘোষণা করেন। এই  নীতিকে কার্যকরী করার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জর্জ সি. মার্শাল ওই বছর ৫ জুন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।  একই সাথে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে সাম্যবাদের প্রসার রোধ করার উদ্দেশ্যে তিনি 'ইউরোপীয় পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা' নামে এক কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই কর্মসূচিই 'মার্শাল পরিকল্পনা' নামে পরিচিত।
পটভূমি / কারণ / উদ্দেশ্য :
এই পরিকল্পনার কারণ বা উদ্দেশ্য নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে এই পরিকল্পনা গ্রহণের পটভূমি ব্যাখ্যা করলে এর কারণ বা উদ্দেশ্যগুলি স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
আর্থিক সংকট : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কৃষিকাজ, শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার ফলে অর্থনৈতিক সংকট তীব্রতর হয়।
কমিউনিস্টদের অগ্রগতি : অর্থনৈতিক সংকটের ফলে ইউরোপে কমিউনিস্ট ভাবাদর্শের দ্রুত প্রসার ঘটে। ফ্রান্সে অন্তত ৮০ শতাংশ শ্রমিক কমিউনিস্ট দলে যোগ দেয়।
রুশ আধিপত্যের প্রসার : পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলিতে রুশ আধিপত্য যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। রাশিয়ার নেতৃত্বে এই দেশগুলিতে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট গড়ে ওঠে।
আমেরিকার উদ্বেগ : এইভাবে সাম্যবাদী ভাবাদর্শ ও রুশ আধিপত্যের ক্রমাগত সম্প্রসারণের ফলে আমেরিকা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কারণ, এর ফলে পশ্চিম ইউরোপে রুশ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার এবং মার্কিন নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে বলে আমেরিকা ভয় পায়।
সাম্যবাদ প্রতিরোধে উদ্যোগ : এই পরিস্থিতিতে মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান ইউরোপে সাম্যবাদ ও রাশিয়ার অগ্রগতি প্রতিরোধ করার উদ্যোগ নেন। এবং এই উদ্যোগকে বাস্তবায়িত করার উদ্যেশ্যেই মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
বাণিজ্যের প্রসার : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ লগ্নে আমেরিকায় মুক্ত আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার প্রসার ঘটে। ইউরোপে বিপুল পরিমাণে ঋণদানের মাধ্যমে ওই অঞ্চলে মার্কিন বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোও মার্শাল পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য।
অনুগত রাষ্ট্রজোট গঠন : ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে অর্থসাহায্যের মাধ্যমে সেখানে একটি অনুগত রাষ্ট্রজোট গঠন ও তাদের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে প্রভাব খাটানোও মার্শাল পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।
পরিকল্পনার মূলকথা :
তবে জর্জ মার্শাল তাঁর ঘোষণায় এই পরিকল্পনার মূলকথা ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে ---
এই পরিকল্পনা কোনো দেশ বা মতাদর্শের বিরুদ্ধে নয়। এই নীতি ক্ষুধা, দারিদ্র, হতাশা ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে।
পশ্চিম ইউরোপের অর্থনৈতিক সংকট দূর করার উদ্দেশ্যে আমেরিকা অর্থ সাহায্য করবে।
কমিউনিস্ট শাসিত রাষ্ট্রগুলিও এই পরিকল্পনা অনুযায়ী মার্কিন অর্থ সাহায্য লাভ করতে পারবে।
সাহায্য গ্রহণকারী দেশকে মূল মার্কিন পরিকল্পনা অনুযায়ী সাহায্যপ্রাপ্ত অর্থ ব্যয় করতে হবে।
সাহায্যপ্রাপ্ত দেশগুলির রাজস্ব মার্কিন পরিকল্পনা অনুযায়ী স্থির করতে হবে।
ফলাফল / প্রভাব / প্রতিক্রিয়া :
মার্শাল পরিকল্পনা যে উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হয়েছিল তা অনেকাংশে সফল হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
ইউরোপের অর্থিক অগ্রগতি : মার্শাল পরিকল্পনার অর্থ সাহায্য পেয়ে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির ভংগুর অর্থনীতির মন্দাভাব কেটে যায়। ইংল্যান্ডের রপ্তানি বৃদ্ধি পায় এবং ফ্রান্সের মুদ্রাস্ফীতি দূর হয়।
মার্কিন বাণিজ্যের প্রসার : সাহায্যপ্রাপ্ত দেশগুলি আমেরিকা থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানি করার ফলে মার্কিন বাণিজ্যের যথেষ্ট প্রসার ঘটে।
কমিউনিস্টদের প্রতিরোধ : মার্কিন অর্থ-সহায়তায় পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলি কমিউনিস্ট ভাবধারা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়।
রুশ প্রতিক্রিয়া : তবে, সোভিয়েত রাশিয়া ও তার প্রভাবিত দেশগুলি এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। তারা অভিযোগ করে, (১) এর ফলে আমেরিকা সাহায্যপ্রাপ্ত দেশগুলির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পাবে, (২) ফলে দেশগুলির সার্বভৌমত্ব নষ্ট হবে, (৩) মার্কিন পুঁজিপতি সংস্থাগুলি দেশগুলিতে অর্থনৈতিক শোষণ চালাবে।
'কমিকন' প্রতিষ্ঠা : রুশ প্রভাবিত পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে পুনর্গঠনের জন্য মার্শাল পরিকল্পনার বিকল্প হিসাবে কমিকন (কমিউনিস্ট ইকনোমিক ইউনিয়ন) গড়ে তোলা হয়।
সর্বপরি মার্শাল পরিকল্পনার ফলে ইউরোপীয় রাজনীতি ও অর্থনীতি পরস্পরবিরোধী দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়। ফলে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের তীব্রতা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।
গুরুত্ব বা তাৎপর্য :
তবে আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন শত্রুপক্ষ পশ্চিম জার্মানিকে মার্শাল পরিকল্পনার আওতায় এনে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এই পরিকল্পনার কল্যাণকামী ফলাফল লক্ষ্য করে ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্নেস্ট বেভিন এই পরিকল্পনাকে 'একজন ডুবন্ত মানুষের জীবন প্রাপ্তি' বলে অভিহিত করেছেন।
Comment

Class XI Political Science

Class XII Political Science

Class 12 Bangla Books Question& Answers