Thursday 26 March 2020

ট্রুম্যান নীতি' কী? এই নীতি ঘোষণার পটভূমি ব্যাখ্যা করো। এই নীতির মূল কথা কী ছিল? বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এর গুরুত্ব কী ছিল?

হ্যারি ট্রুম্যান ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি। ১৯৪৭ সালে ১২ মার্চ তিনি ঘোষণা করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন বিশ্বরাজনীতিতে বিচ্ছিন্নতার নীতি ( মনরো নীতি ) অনুসরণ করে আসছে। কিন্তু সোভিয়েত সাম্যবাদের প্রসার রোধ করার উদ্দেশ্যে সেই নীতি থেকে তারা সরে আসবে। তিনি আরও বলেন, যেসব জাতি সশস্ত্র সংখ্যালঘুদের কিংবা কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের আক্রমণের স্বীকার হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের আর্থিক ও সামরিক সাহায্য দেবে। এভাবে বিচ্ছিন্নতার নীতির পরিবর্তে পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে ট্রুম্যান এই যে সামরিক সক্রিয়তার নীতি নিলেন তা-ই ইতিহাসে 'ট্রুম্যান নীতি' ( ট্রুম্যান ডক্ট্রিন ) নামে পরিচিত।
ট্রুম্যান নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :
ট্রুম্যান তাঁর নীতিতে দুর্বল দেশগুলিকে আর্থিক সাহায্যের কথা বললেও এই প্রতিশ্রুতির পিছনে ছিল কিছু গোপন উদ্দেশ্য। যেমন -
দুর্বল দেশগুলিতে মার্কিন অস্ত্র ও শিল্পোৎপাদিত দ্রব্য বিক্রির বাজার দখল করা।
মার্কিন শিল্প ও ব্যবসাবাণিজ্যের পুনরুজ্জীবন ঘটানো।
বিশ্বজুড়ে সোভিয়েত প্রভাব ও প্রতিপত্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
সোভিয়েত শক্তিবলয়ের পাল্টা পুঁজিবাদী জোট গঠন করা।
ট্রুম্যান নীতি ঘোষণার পটভূমি :
ট্রুম্যানের এই নীতি ঘোষণার পিছনে কয়েকটি কারণ লক্ষ্য করা যায়।
কমিউনিস্টদের শক্তি বৃদ্ধি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কমিয়নিস্টদের শক্তি বৃদ্ধি ঘটে। এই ঘটনা আমেরিকা সহ পশ্চিমি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিকে উদ্বিগ্ন করে তোলে।
ইংল্যান্ডের সতর্কবার্তা : ইংল্যান্ড আমেরিকাকে সতর্ক করে যে, ব্রিটিশ সৈন্য গ্রিস থেকে ফিরে আসার পর সেখানে কমিউনিস্টদের প্রাধান্য স্থাপিত হলে সমগ্র ভূমধ্যসাগর ও বলকান অঞ্চল মিত্রশক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এই সতর্কবার্তায় আমেরিকা সচকিত হয়ে পড়ে।
বণিক ও শিল্পপতিদের চাপ : বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মার্কিন বাণিজ্যে মন্দা ও অস্ত্রনির্মাণ সংস্থা উৎপাদন হ্রাস ও কর্মী ছাঁটাইয়ের আশঙ্কায় ভুগতে থাকে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রুম্যান তাঁর সামরিক সক্রিয়তার নীতি গ্রহণ করেন।
বিদেশি বাজার দখল : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের দেশগুলির আর্থিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার বিনিময়ে আমেরিকা এই সব দেশে শিল্পপণ্যের বাজার দখলের পরিকল্পনা করে।
ট্রুম্যান নীতির মূল বক্তব্য :
এই পরিস্থিতিতে হ্যারি ট্রুম্যান মনরো নীতি পরিত্যাগ করেন এবং সামরিক সক্রিয়তার নীতি গ্রহণ করেন যা ট্রুম্যান নীতি নামে পরিচিত। ১৯৪৭ সালের ১২ মার্চের বক্তৃতায় এই নীতির মূল কথা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই বক্তৃতায় তিনি বলেন  -
বিশ্ব এখন দুটি পরস্পর বিরোধী আদর্শ ও জীবনচর্যায় বিভক্ত। একটি হল মুক্ত গণতান্ত্রিক দুনিয়া, অন্যটি হল সাম্যবাদী দুনিয়া।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব হল মুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির অখন্ডতা ও স্বাধীনতা রক্ষা করা।
সাম্যবাদের আদর্শ অতি সক্রিয় ও সম্প্রসারণশীল। এই সাম্যবাদী ভাবধারার প্রধান কার্যালয় মস্কো থেকে সমস্ত নির্দেশ পাঠানো হয়।
বিশ্বের যে-কোনো অংশে কোনো মুক্তগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কোনো সাম্যবাদী রাষ্ট্র বা গোষ্ঠী দ্বারা আক্রান্ত হলে আমেরিকা তাকে সব ধরণের সহায়তা করবে।
প্রভাব বা ফলাফল :
এই নীতি গ্রহণের ফলে -
আমেরিকায় বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে 'নিষ্ক্রিয় ও উদাসীন নীতি'র পরিবর্তে 'সক্রিয় হস্তক্ষেপের নীতি' গৃহীত হতে থাকে।
এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীসময়ে একদিকে যেমন বিশ্বে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি সাফল্য লাভ করে। অন্যদিকে তেমনি আন্তর্জাতিক সংকট বৃদ্ধি পায়।
ধনতান্ত্রিক ও সাম্যবাদী রাষ্ট্রজোটের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়ে যায়।
সোভিয়েত রাশিয়ার প্রসার ও প্রভাবকে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য আমেরিকা আর্থিক ও সামরিক সাহায্যের নীতি গ্রহণ করে। এই নীতি 'বেষ্টনী নীতি' নামে পরিচিত হয়।
এই নীতি গ্রহণের ফলে গ্রিস ও তুরস্কে ( ৪০ কোটি ডলার সাহায্য দিয়ে ) কমিউনিস্টদের প্রতিহত করা সম্ভব হয়।
সমালোচনা বা মূল্যায়ন :
তবে ট্রুম্যান নীতি নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান -এর মতে, কিছু ভ্রান্ত ধারণার ওপর ভিত্তি করে এই নীতি ঘোষিত হয় যার কোনো বাস্তবতা ছিল না। ডি এফ ফ্লেমিং  বলেছেন ট্রুম্যান নীতি ঘোষণার ফলে এমন ধারণার সৃষ্টি হয় যে এখন থেকে আন্তর্জাতিক 'চাপ' ও 'পাল্টা চাপ' ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব নয়। তিনি এই পরিস্থিতিকে যুদ্ধ ঘোষণার সামিল বলে অভিহিত করেছেন। 
Comment

Class XI Political Science

Class XII Political Science

Class 12 Bangla Books Question& Answers