Tuesday 7 April 2020

মধ্য যুগ ভারতের ইতিহাস দিল্লির সুলতানি ইতিহাস

Short Notes on Delhi Sultanate (দিল্লির সুলতানি ইতিহাস)

কুতুবউদ্দিন আইবক

  • মহম্মদ ঘুরীর সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী রূপে কুতুবউদ্দিন আইবক দিল্লির সিংহাসনে বসেন ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে। সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি নিজেকে “মালিক” ও “সিপাহশালার” উপাধিতে পরিচয় দিতেন।
  • ১২০৮ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরির উত্তরাধিকারী গিয়াসউদ্দিন ঘুর তাঁকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে “সুলতান” উপাধিতে ভূষিত করেন। ১২১০ খ্রিস্টাব্দে চৌগান খেলার সময় ঘোড়ার পিঠ ঠেকে পরে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।তাঁর দানশীলতার জন্য তিনি ইতিহাসে “লাখবক্স” নামে পরিচিত।
  • বিখ্যাত ঐতিহাসিক হাসান নিজামি এবং ফকর – ই – মুদাব্বির তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। দিল্লির মসজিদ টি “কোয়াত – উল – ইসলাম” নামে পরিচিত। দিল্লির বিখ্যাত “কুতুব মিনার” তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি। বিখ্যাত সুফি সাধক কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকীর নাম অনুসারে এই মিনারটির নামকরণ করা হয়।
  • অবশ্য এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য হলো কুতুবুদ্দিন কুতুব মিনার এর কাজ শুরু করেছিলেন শেষ করে যেতে পারেন নি। শেষ করেছিলেন তাঁর জামাতা ইলতুতমিস।

ইলতুতমিস

  • কুতুবুদ্দিন এর মৃত্যুর পর লাহোরের ওমরাহগণ তাঁর পালিত পুত্র আরাম শাহ কে লাহোরের সিংহাসনে বসান। কিন্তু তাঁর অকর্মন্যতার সুযোগে সাম্রাজ্যের সর্বত্র বিশৃঙ্খলা দেখা দে়য়।
  • দিল্লির আমির ওমরাহগণ কুতুবুদ্দিন এর জামাতা তথা বদাউন প্রদেশের শাসনকর্তা ইলতুতমিস কে সিংহাসনে বসার আমন্ত্রণ জানান। তিনি ছিলেন তুর্কি স্থানের ইলবারি গোষ্ঠীভুক্ত এক অভিজাত পরিবারের সন্তান। কিন্তু তাঁর ভাইরা ইর্ষাবশত তাঁকে দাস হিসাবে বিক্রি করে দেন। দিল্লিতে কুতুবুদ্দিন এর হাতে তিনি বিক্রিত হন।
  • কুতুবুদ্দিন নিজ কন্যার সাথে ইলতুতমিস এর বিবাহ দেন এবং ধীরে ধীরে তাঁর পদোন্নতি হতে থাকে।
  • ১২১১ খ্রিস্টাব্দে তিনি দিল্লির সিংহাসনে বসেন। কুতুবুদ্দিন এর মৃত্যুর পর যে সমস্ত অঞ্চলে বিক্ষোভ শুরু হয় সেইসব তিনি দমন করেন এবং নতুন কিছু অঞ্চলেও দিল্লি সুলতানির আধিপত্য সম্প্রসারিত করেন।
  • ১২২৯ খ্রিস্টাব্দে খলিফা তাঁকে “সুলতান – ই – আজম” বা প্রধান সুলতান উপাধিতে ভূষিত করেন। ইলতুতমিস খলিফার নামাঙ্কিত মুদ্রা প্রচলন করেন এবং মুদ্রায় নিজেকে ” খলিফার সেনাপতি ” বলে উল্লেখ করেন।
  • ঐতিহাসিক লেনপুল তাঁকে “দাস বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা” বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ ১২২১ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গোল নায়ক চেঙ্গিস খাঁ খিবার অধিপতি জালালউদ্দিন মঙ্গবর্ণীর পিছু ধাওয়া করলে মঙ্গবর্ণী ইলতুতমিসের সাহায্য প্রার্থনা করেন।
  • ইলতুতমিস চেঙ্গিস খাঁর আক্রমণ থেকে নব প্রতিষ্ঠিত সুলতানী সাম্রাজ্য কে রক্ষা করার জন্য জালালউদ্দিনকে সহযোগিতা না করে তাঁর বাস্তব বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছিলেন।
  • তিনি কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা কে শক্তিশালী করার জন্য তিনটি ব্যবস্থা অবলম্বন করেন:- ইক্তা প্রথার প্রবর্তন, একটি কেন্দ্রীভূত স্থায়ী সামরিক বাহিনী গঠন এবং একটি নতুন মুদ্রানীতি প্রবর্তন।
  • রূপার তৈরি মুদ্রা ছাড়াও তামা ও পিতলের মুদ্রাও তাঁর সময় প্রবর্তিত হয়েছিলো। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ভারতের আধুনিক টাকার আদিম পূর্বপুরুষ হলো ইলতুতমিস প্রবর্তিত ‘তঙ্কা’।
  • ভারত কে তিনি “দার – উল – ইসলাম” এ রূপান্তরিত করার কোনো চেষ্টা করেন নি। রাজপুত দের নিয়েও তাঁর মনে কোনো সংসয় ছিলো না।
  • নিজ কন্যা রাজিয়াকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করার ব্যাপারে উলেমাদের পরামর্শও গ্রহণ করেন নি। তাঁর জীবদ্দশাতেই তাঁর জেষ্ঠ্য-পুত্র নাসিরুদ্দিনের মৃত্যু হলে তিনি অন্য কোনো পুত্র কেই তাঁর সিংহাসনের উপযুক্ত মনে করেন নি। তাই তিনি তাঁর নামের সঙ্গে রাজিয়ার নামাঙ্কিত রৌপ মুদ্রা প্রচার করে রাজিয়ার মনোনয়নের কথা সরকারি ভাবে ঘোষণা করেন।
  • দিল্লির আমির ওমরাহরা প্রাথমিক ভাবে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও ইলতুতমিসের মৃত্যুর পর তাঁর অন্য পুত্র রুকুনুদ্দিন ফিরোজ সিংহাসনে বসেন। কিন্তু তিনি মাত্র সাত মাস রাজত্ব করেন। তিনি এবং তাঁর মাতা শাহ তুর্কান এর অত্যাচারে সাম্রাজ্যের সর্বত্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
  • দিল্লির জনসাধারণ ও সামরিক বাহিনীর সমর্থন নিয়ে রাজিয়া সিংহাসনে বসেন। রাজিয়া অতি সুদক্ষা নারী ছিলেন। শাসনকার্য পরিচালনা, যুদ্ধবিদ্যা, দয়া দাক্ষিণ্য সব দিক দিয়েই তিনি কৃতী ছিলেন। তিনি পুরুষের মত পোষাক পরতেন এবং একজন সম্রাটের মত প্রকাশ্য দরবারে উপস্থিত হতেন।
  • মধ্য যুগের গোঁড়া মৌলবি এবং অভিজাতদের কাছে এসব ছিলো ব্যভিচারীর সামিল ফলে তাঁরা রাজিয়া কে সিংহাসন চ্যুত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। মাত্র তিন বছরের মধ্যেই তাঁকে সিংহাসন হারাতে হয়।
  • রাজিয়ার পর দিল্লির আমির ওমরাহরা ইলতুতমিসের তৃতীয় পুত্র মুইজ উদ্দিন বাহরাম শাহ কে সিংহাসনে বসায়। কিন্তু কিছুদিন পর তিনিও সিংহাসনচ্যুত হন।
  • এরপর আলাউদ্দিন মাসুদ শাহ দিল্লির সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন আরামপ্রিয়, অযোগ্য শাসক। তাঁর অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে দিল্লির আমিররা তাঁকে সিংহাসন চ্যুত ও হত্যা করে ইলতুতমিসের জেষ্ঠ্য পুত্র নাসিরুদ্দিনের পুত্র নাসিরউদ্দিন মামুদ শাহ-কে সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি পরিপূর্ণ ভাবে তুর্কি দাস কর্মচারীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
  • এই সময় চল্লিশ চক্রের নেতা বাহাউদ্দিন দুর্বলচিত্ত সুলতানের সঙ্গে নিজ কন্যার বিয়ে দিয়ে “নায়েব – ই – মামলিকাত” বা সুলতানের প্রতিনিধি পদ গ্রহণ করেন । রাষ্ট্রের সকল গুরুত্ত্বপূর্ণ পদে তিনি নিজের আত্মীয় স্বজন ও বিশ্বস্ত ব্যাক্তিদের নিয়োগ করে সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন।

উলুগ খাঁ

  • ১২৬৬ খ্রিস্টাব্দে নাসিরুদ্দিনের মৃত্যু হলে তাঁর প্রধানমন্ত্রী ও শ্বশুর উলুগ খাঁ সিংহাসনে বসেন। সিংহাসনে বসে তাঁকে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তিনি এই সব সমস্যার সমাধান হিসাবে দুটি ব্যাবস্থা গ্রহণ করেন।
  • তিনি নতুন রাজকীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠা ও চল্লিশ চক্রের উচ্ছেদ সাধন করেন। নিজেকে ” নায়েব – ই – খুদাই ” বা ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে ঘোষণা করেন এবং ঈশ্বরের ছায়া বা “জিলিল্লাহ” উপাধি গ্রহণ করেন।
  • পারসিক দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে তিনি দরবারে ” পাইবস ” ও ” সিজদা ” প্রথা চালু করেন। নিজেকে তিনি পৌরাণিক তুর্কি বীর আফ্রাসিয়াবের বংশধর বলে দাবি করেন। তিনি দরবারে গাম্ভীর্য ভাব বজায় রাখতেন। আমোদ প্রমোদ , হাস্যকৌতুক , মদ্যপান সম্পূর্ণ নিষেধ ছিল।
  • তিনি একমাত্র উজির ছাড়া আর কারও সাথে কথা বলতেন না। তাঁর একচ্ছত্র ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠায় গুপ্তচর ব্যাবস্থা ছিলো অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। তিনি প্রচুর পরিমাণে “বারিদ” বা গুপ্তচর নিয়োগ করেন।
  • সামরিক সংস্কার প্রবর্তন করে শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তুলতেও তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি মেওয়াটি দস্যুদের বিরুদ্ধেও উপযুক্ত ব্যাবস্থা গ্রহণ করেন। মঙ্গোল আক্রমণ থেকে দেশের নিরাপত্তা বিধান করা বলবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি।
  • তিনি উত্তর পশ্চিম সীমান্তে বহু দুর্গ নির্মাণ করেন এবং পুরোনো দূর্গোগুলি মেরামত করেন।
  • ১২৮৬ খ্রিস্টাব্দে মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ করতে গিয়ে তাঁর পুত্র মহম্মদের মৃত্যু হয়। পুত্র শোক ভুলতে না পেরে ১২৮৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়।
  • মৃত্যুর পূর্বে কনিষ্ঠ পুত্র বুঘরা খান কে তিনি তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। বুঘরা খান অসম্মত হলে মহম্মদের পুত্র কাইখসরু কে উত্তরাধিকারী মনোনীত করা হয়।
  • তিনি বিদ্যা ও বিদ্দ্বানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। মোঙ্গল দের দ্বারা বিতাড়িত মধ্য এশিয়ার বহু সাহিত্যিক ও নরপতি কে তিনি দিল্লিতে আশ্রয় দেন। “ভারতের তোতাপাখি ” নামে পরিচিত আমির খসরু এবং ঐতিহাসিক হাসান নিজামি তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা অর্জন করেন।
  • তাঁর রাজসভা ইসলামীয় শিক্ষা সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। কিন্তু এত কিছু সত্বেও তিনি যে একদম ত্রুটিমুক্ত শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন তা নয়।
  • তিনি সেনাদলে কোনো ভারতীয়দের নিয়োগ করেন নি। এর ফলে তাঁর সেনাবাহিনী দুর্বলই থেকে যায়।
  • তিনি মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে বিশেষ সাফল্য ও অর্জন করতে পারেন নি।
  • গিয়াসউদ্দিন বলবন তাঁর দ্বিতীয় পুত্র বুঘরা খান কে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। কিন্তু বুঘরা খান অস্বীকৃত হলে তাঁর সতেরো বছর বয়স্ক পুত্র মুইজুদ্দিন কায়কোবাদ কে সিংহাসনে বসান। কায়কোবাদ ছিলেন অপদার্থ ও সুরাসক্ত। বুঘরা খান তাঁর পুত্রকে অনেক বার পথে অনার চেষ্টা করলেও তিনি ব্যর্থ হন।

খলজী বংশ

  • অতঃপর দিল্লীর মসনদ ঘিরে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে সম্রাটের আফগান আমির জালালউদ্দিন কলিঘিরির প্রাসাদে ঢুকে কায়কোবাদ কে হত্যা করেন এবং নিজেকে দিল্লীর সুলতান বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনা “খলজি বিপ্লব” নামে পরিচিত।
  • এই খলজি সম্পর্কে জানতে গেলে জানা যায়, এরা ছিল আসলে তুর্কি। মোঙ্গল নায়ক চেঙ্গিস খাঁর জামাতা কুলিজ খাঁর বংশধর ছিলেন এরা। লোকমুখে পরিবর্তিত হোয়ে কুলিজ, কালিজ থেকে খলজি হয়ে যায় এই বংশধরেরা।
  • খলজি বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে ইলবারি তুর্কি দের একচেটিয়া আধিপত্যের অবসান ঘটে এবং হিন্দুস্তানি মুসলিমদের উত্থান হয়।
  • জালালউদ্দিন এর সিংহাসন লাভের মধ্যে দিয়ে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, সিংহাসনের সার্বভৌম অধিকার বিশেষ কোনও সম্প্রদায় বা জাতিগোষ্ঠীর একচেটিয়া নয়। যোগ্যতা সম্পন্ন যে কোনও ব্যাক্তি এই অধিকার লাভ করতে পারে।
  • কায়কোবাদ ও তাঁর শিশুপুত্র কায়ুমার্স কে হত্যা করে জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজি যখন নিজেকে দিল্লির সুলতান বলে ঘোষণা করেন, তখন তাঁর বয়স সত্তর বছর। তাঁর রাজত্ব কাল ছিল 1290 – 1296 A.D. এই ছয় বছরের রাজত্বকালে তিনি দুটি অভিযান প্রেরণ করেন কিন্তু কোনোটাই সফলতা পায় নি।
  • ভ্রাতুষ্পুত্র তথা কারা ও মানিকপুরের শাসনকর্তা আলিগুরসাস্প এর প্রতি ছিল তাঁর অন্ধ স্নেহ। তিনি নিজ কন্যার বিবাহ দেন আলিগুর্সাস্প এর সঙ্গে।
  • দরবারের আমির ওমরাহর রা সুলতানকে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র এর উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে বারংবার সতর্ক করলেও তিনি অন্ধস্নেহে আচ্ছন্ন ছিলেন। তিনি সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় কারায় উপস্থিত হলে আলাউদ্দিন তাকে আলিঙ্গন অবস্থায় হত্যা করেন। মৃত জালালউদ্দিন এর মুণ্ড নিয়ে তিনি রাজপথে শোভাযাত্রা বের করে নিজেকে দিল্লীর পরবর্তী সুলতান বলে ঘোষণা করেন।
  • জালালউদ্দিন এর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শিহাবউদ্দিন এর পুত্র আলাউদ্দিন সিংহাসনে বসার পর ” আলাউদ্দিন মহম্মদ শাহ উস সুলতান” উপাধি ধারণ করেন। তিনি তাঁর সিংহাসন কে নিষ্কণ্টক করতে জালালউদ্দিন এর সমস্ত বংশধরদের হত্যা করেন এবং বিশ্বাস ঘাতক আমিরদের অনেককেই হত্যা করেন আবার অনেককে অন্ধ করে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করেন।
  • স্বৈরতন্ত্রের আদর্শে বিশ্বাসী আলাউদ্দিন ব্যাক্তিগত মর্যাদা ও দৈবস্বত্যে বিশ্বাসী ছিলেন।
  • আলাউদ্দিন নিজেকে খলিফার সহকারী (ইয়াসিন – উল- খিলাফত) বা সমমর্যাদার অধিকারী বলে মনে করতেন। আলাউদ্দিন ই প্রথম সুলতান যিনি উলেমাদে র কাজের সময় নির্দিষ্ট করে দিয়ে তাদের ক্ষমতা খর্ব করেন।
  • আলাউদ্দিন তাঁর সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন করার জন্য প্রায় ত্রিশ হাজার নব মুসলমানকে হত্যা করেন। ‘ বারিদ’ , ‘মুনহি’ প্রভৃতি নানা শ্রেণীর গুপ্তচরদের নিযুক্ত করা হয়।
  • জিয়াউদ্দিন বরনি-র মতে গুপ্তচরদের ভয়ে অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে মানুষ প্রকাশ্যে কথাবলা বন্ধ করে দেয়। তিনি কর সংগ্রহ কারীদের যে কোনও অজুহাতে কর সংগ্রহের নির্দেশ দেন। দোয়াব অঞ্চলে উৎপাদিত শস্যে র অর্ধাংশ ভূমিরাজস্য হিসাবে নির্ধারিত হয়।
  • মদ্যপান নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়। তিনি নিজে মদ্যপান ত্যাগ করেন। তিনি জুয়ো খেলা ও ভাং খাওয়ার উপর-ও নিষেধাজ্ঞা জারী করেন।
  • এতদিন সুলতানদের কোনও স্থায়ী সেনাবাহিনী ছিল না। কিন্তু তিনিই প্রথম সম্রাট যিনি একটি স্থায়ী সেনাদল গঠন করেন। দিল্লিতে সব সময়ের জন্য একটি সেনাবাহিনী প্রস্তুত করে রাখা হতো।
  • সেনাবাহিনীর দূর্নীতি বন্ধ করার জন্য তিনি “হুলিয়া ও দাগ” ব্যবস্থা চালু করেন। “হুলিয়া” হলো প্রতিটি সেনার দৈহিক বৈশিষ্ট্য লিপিবদ্ধ করা আর “দাগ” হলো ঘোড়ার চিনহিত করণ।
  • সেনাবিভাগের দায়িত্ব অর্পিত হয় “আর্জ ই মামালিক” নামক সমর মন্ত্রীর উপর।
  • ভারতের তুর্কি শাসকদের মধ্যে আলাউদ্দিন খলজিই প্রথম দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের দিকে নজর দেন। তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কারের দুটি দিক ছিল রাজস্ব সংস্কার এবং বাজার দর নিয়ন্ত্রণ। তাঁর এই অর্থনৈতিক সংস্কার সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানা যায় জিয়াউদ্দিন রচিত “তারিখ ই ফিরোজ – শাহি” ও “ফতোয়া – ই – জাহান্দারি” এবং আমির খসরু রচিত “খাজাইন – উল – ফুতুহা” থেকে।
  • তিনি সকল প্রকার জমি বাজেয়াপ্ত করে “খালিসা” বা সরকারের খাস জমিতে পরিণত করেন। খালিসা জমির মাধ্যমে কৃষকদের সঙ্গে সরকারের সরাসরি সম্পর্ক স্থাপিত হয়। “আমিল” নামক সরকারি কর্মচারীরা এইসব জমি থেকে সরাসরি রাজস্ব আদায় করতো।
  • তিনি খুৎ, মুকাদ্দম , চৌধুরী নামক হিন্দু রাজস্ব আদায় করিডর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
  • আলাউদ্দিন যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন তাঁর মধ্যে অন্যতম হলো জমি জরিপ। তাঁর পূর্বে কেউ এই ব্যবস্থা প্রচলিত করেন নি। এছাড়াও তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কার গুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ।
  • আলাউদ্দিন সাম্রাজ্য পরিচালনা, রাজ্যজয়, মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ প্রভৃতির উদ্দ্যেশ্যে এক বিশাল সেনাবাহিনী পোষণ করতেন। কিন্তু তখন ভূমি রাজস্ব এর পরিমাণ কম হওয়ায় তাঁর পক্ষে এই বিশাল সেনাদলের ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই তিনি সেনাদের বার্ষিক বেতন ২৩৪ তঙ্কা রেখে বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করেন, যাতে সেনাবাহিনীর জীবন ধারণের কোনো অসুবিধা না হয়।
  • খাদ্যদ্রব্য ও বস্ত্র থেকে শুরু করে গবাদি পশু এমনকি দাস ক্রয় বিক্রয় কে পর্যন্ত তিনি সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
  • দোয়াব অঞ্চলের কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব হিসাবে একমাত্র শস্যই নেওয়া হতো। এই সব শস্য মজুত করা হতো দিল্লীর বিভিন্ন গুদামে। এর ফলে দুর্ভিক্ষ হলেও শস্যে র দাম বৃদ্ধি পেত নাএবং দুর্ভিক্ষ হলে প্রতি পরিবারকে আধ মন করে খাদ্য শস্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা হতো। মূলতঃ রেশনিং ব্যাবস্থার মূল প্রচলন এই আলাউদ্দিন খলজিই করে গেছেন। কোনো ব্যাবসায়ীর অধিক মূল্য নেওয়া নিষিদ্ধ ছিল। কোনও ব্যাবসায়ী ওজনে কম নিলে তাঁর অধিক পরিমাণ মাংস সেই ব্যবসায়ীর দেহ থেকে কেটে নেওয়া হতো। মূল্য ব্যবস্থা কে কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তিনি চারটি বিশেষ ধরনের বাজার গড়ে তোলেন।
  • মাণ্ডি — যেখান থেকে গম, ডাল, বার্লি প্রভৃতি সরকার নিয়ন্ত্রিত মূল্যে পাওয়া যেত। সেরা – ই – আদল—- এই বাজার থেকে বস্ত্র, চিনি, ফল, ওষুধপত্র পাওয়া যেত।
  • ঘোড়া, গবাদি পশু, ক্রীতদাসদের বিক্রির জন্য একটি বাজার ছিল। সমগ্র দিল্লি শহর জুড়ে ছোটোখাটো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রচুর বাজার ছিল। এখানে মাছ, মাংস, তরকারি, টুপি ইত্যাদি বিক্রি হতো।
  • অবশ্য এই ব্যবস্থা কেবলমাত্র দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না বাইরের প্রদেশ গুলোতেও সম্প্রসারিত হয়েছিলো সে সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা একমত নন।
  • আলাউদ্দিনের সময়কালে আলি বেগ,তার তাগ, কুবাক ইকবালমন্দ প্রভৃতি মঙ্গোল নেতা বারবার ভারত আক্রমণের চেষ্টা করলেও আলাউদ্দিনের বর্বরতার কাছে হার মানে। ফলে এই সময় তাঁরা আর আলাউদ্দিনের মুখোমুখি হওয়ার সাহস করেনি।
  • আলাউদ্দিনের প্রধান চার সেনাপতি ছিল। তাঁরা হলেন উলুগ খাঁ, নসরত খাঁ, জাফর খাঁ ও আলাপ খাঁ। তিনি এই চার সেনাপতি র সাহায্যে নতুন ধর্ম প্রবর্তন ও বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক বিজ্ঞ কোতোয়াল এর পরামর্শে তিনি বিস্বজয়ের পরিকল্পনা ত্যাগ করেন এবং ভারত জয়ে মনোনিবেশ করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি সুলতানী সাম্রাজ্যের নিরাপত্তার তাগিদে একে একে রাজপুত রাজ্য দখল করার চেষ্টা শুরু করেন।
  • সিংহাসনে আরোহণের পর আলাউদ্দিন ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম গুজরাটের বিরুদ্ধে অভিযান পাঠান। এই সময় গুজরাটের সিংহাসনে ছিলেন বাঘেলা রাজপুত বংশীয় কর্ণদেব। সুলতানী সেনাবাহিনী কোনরকম যুদ্ধ না করেই রাজধানী দখল করেন। গুজরাটের রাজা কর্ণদেবের পত্নী রানী কমলা দেবী ধরা পড়েন। কর্ণদেব তাঁর কন্যা দেবলাদেবী সহ দাক্ষিনাত্যের দেবগিরি রাজ্যে আশ্রয় লাভ করেন।
  • তবে এই অভিযানের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মালিক কাফুরের আবিষ্কার। এই মালিক কাফুর ই পরবর্তী কালে আলাউদ্দিনের সেনাপতি ও প্রধানমন্ত্রী র পদে উন্নীত হন।
  • এরপর আলাউদ্দিন রাজপুত রাজ্য রনথম্বোর এর বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। তখন এই রাজ্যের অধিপতি ছিলেন চৌহান বংশীয় তৃতীয় পৃথ্বীরাজ এর বংশধর হামিরদেব। হামিরদেব সপরিবারে নিহত হন।
  • এরপর ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চাশ হাজার সেনা নিয়ে আলাউদ্দিন খলজি মেবারের রাজধানী চিতোর এর বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। তখন মেবারের অধিপতি ছিলেন শিশোদিয়া রাজবংশের রানা রতন সিংহ। আলাউদ্দিনের গুজরাট অভিযানকালে রানা রতন সিংহ তাঁর রাজ্যের উপর দিয়ে সুলতানী সেনাবাহিনী কে যেতে দেন নি। গুজরাট অভিযানের সময় এই রতন সিংহ আলাউদ্দিন কে বাধা দেন তাই তিনি গুজরাট দখল করে মেবার আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। মেবার আক্রমণের পিছনে আবার কেউ কেউ অন্য কারনের কথা বলে থাকেন। তাঁরা বলেন যে রানা রতন সিংহ এর পরমা সুন্দরী রানী পদ্মিনী কে লাভ করার জন্যই তিনি মেবার আক্রমণ করেন। অবশ্য এই সম্পর্কে ঐতিহাসিক দের মধ্যে মতবিরোধ আছে। কারণ আলাউদ্দিনের সমসাময়িক ঐতিহাসিকরা যেমন আমির খসরু, ইসামি বা বরনির লেখায় এর কোনো উল্লেখ নেই। চিতোর জয়ের ২৩৭ বছর পর মালিক মোহাম্মদ জয়সী তাঁর “পদ্মাবৎ” কাব্যে এই ঘটনার কথা তুলে ধরেছেন।
  • যাই হোক চিতোর জয়ের পর তিনি তাঁর নাবালক পুত্র খিজির খাঁ এর উপর সমস্ত দায়িত্ব অর্পণ করে দিল্লি ফিরে যান। রাজপুত রা কিছুদিনের মধ্যেই তাকে বিতাড়িত করেন এবং মালদেব নামে জনৈক রাজপুত সামন্ত রাজা চিতোর এর শাসনভার দখল করে।
  • এরপর আলাউদ্দিন একে একে চান্দেরী , উজ্জয়নী প্রভৃতি স্থান দখল করেন।
  • ১২৯৬ থেকে ১৩১৬ এর এই রাজত্ব কালে আলাউদ্দিন অনেক নিষ্ঠুরতা ও অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে ছিলেন সে সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তাঁর এই আগ্রাসী নীতির জন্যই কাশ্মীর, নেপাল, উড়িষ্যা, আসাম বাদে বাকি সমস্ত উত্তর ভারত তাঁর সাম্রাজ্য ভুক্ত হয়।
  • “ভারতের তোতাপাখি ” নামে পরিচিত আমির খসরু এবং ” ভারতের সাজি ” নামে পরিচিত আমির হাসান তাঁর রাজসভা অলংকৃত করেন। তাঁর স্থাপত্যের মধ্যে “আলাই দুর্গ” উল্লেখযোগ্য। দিল্লির উপকন্ঠে তিনি “সিরি” নামে একটি শহর স্থাপন করেন।
  • ব্যাক্তিগত যোগ্যতাই আলাউদ্দিনের স্বৈরশাসনের ভিত্তি ছিল। তাঁর কোনো যোগ্য উত্তরাধিকারী ছিল না এবং তিনি কোনো সুদৃঢ় আমলাতন্ত্রও গঠন করে যেতে পারেন নি। তাই তিনি শেষ জীবনে সম্পূর্ণ ভাবে মালিক কাফুরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।
  • আলাউদ্দিনের রাজত্ব কাল ছিল ১২৯৬ থেকে ১৩১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।
  • মালিক কাফুর আলাউদ্দিনের নাবালক পুত্র শিহাবউদ্দিন ওমর কে সিংহাসনে বিসিয়ে নিজে সকল ক্ষমতা দখল করেন। মালিক কাফুরের অত্যাচারে অতিষ্ট আমির ওমরাহ রা তাঁকে হত্যা করে। এইভাবে মাত্র ৩৫ দিনের মাথাতেই তাঁর রাজত্ব শেষ হয়। মালিক কাফুর এর হত্যার পর আলাউদ্দিনের আরেক পুত্র কুতুবুদ্দিন মুবারক শাহ দিল্লির মসনদে বসেন। তাঁর সময়কাল ছিল ১৩১৬ থেকে ১৩২০ খ্রিস্টাব্দ। ১৩২০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই খলজি বংশের অবসান ঘটে।

তুঘলক বংশ

  • কুতুবুদ্দিন মুবারক শাহ এর মৃত্যুর পর নাসিরউদ্দিন খসরু শাহ সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন ধর্মান্তরিত ভারতীয় মুসলিম। তাই তুর্কি ও খলজি কোনো
    গোষ্ঠীই তাঁকে মেনে নিতে পারেন নি। এই সময় পাঞ্জাবের শাসন কর্তা গাজি মালিক খসরু কে পরাজিত ও নিহত করেন এবং ১৩২০ খ্রিস্টাব্দে গিয়াসউদ্দিন “তুঘলক শাহ গাজি” উপাধি ধারণ করে দিল্লীর সিংহাসনে বসেন। এই ঘটনার মধ্যে দিয়েই “তুঘলক” বংশের শাসন শুরু হয়।
  • দিল্লির সুলতানদের মধ্যে তিনিই প্রথম তাঁর নামের সঙ্গে “গাজি” উপাধিটি যোগ করেছিলেন। গিয়াসউদ্দিন তুঘলক এর সিংহাসন লাভের আরেকটি বিশেষ গুরুত্ব হলো যে , এই প্রথম একজন সুলতান সর্বসম্মত ভাবে নির্বাচিত হলেন দিল্লির তুর্কি আমিরদের দ্বারা।
  • গিয়াসউদ্দিন তুঘলক ছিলেন বাস্তববাদী শাসক। তাই তিনি আলাউদ্দিন খলজির মত “রক্ত ও লৌহ” নীতি ত্যাগ করে “মধ্যপন্থা” নীতি অবলম্বন করেন।
  • তাঁর গঠনমূলক পরিকল্পনাগুলো র মধ্যে অন্যতম ছিল কৃষি ও কৃষকের উন্নতির দিকে নজর দেওয়া। তিনি বহু পতিত জমি পুনরুদ্ধার করেন। সেচ ব্যাবস্থার উন্নতির দিকে নজর দেন। বহু গভীর ও দীর্ঘ খাল খননের ব্যবস্থা করেন।
  • তিনি রাজস্ব বিভাগের কর্মচারীদের আবার বেতনের পরিবর্তে জায়গীর দেওয়ার প্রথা পুনঃ প্রবর্তন করেন। আলাউদ্দিন যে ” হুকুম – ই – মাসাহাত” বা জমি জরিপের ভিত্তিতে রাজস্ব নির্ধারণ প্রথা চালু করেছিলেন তিনি তা বাতিল করে ” হুকুম – ই – হাসিল ” বা রাজস্ব কর্মীর উপস্থিতিতে উৎপন্ন শস্য ভাগ করার ব্যাবস্থা চালু করেন।
  • ৫০ শতাংশ ভূমি রাজস্ব এর বদলে এক দশমাংশ ভূমি রাজস্ব ধার্য করেন।
  • আলাউদ্দিন কর্তৃক নিযুক্ত খুৎ, মুকাদ্দম , চৌধুরী সকলের অধিকার খর্ব করে তাদের কৃষকদের সঙ্গে সমহারে করদানে বাধ্য করেন। অনাবৃষ্টির সময় কৃষক দের “তকাভি” ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
  • তিনি পুলিশ বিভাগ, বিচার বিভাগে নানা ধরনের প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করেন।
  • সেতু, রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন। ডাক বিভাগের উন্নতি বিধান করেন এবং “ঘোড়ার ডাক” চালু করেন।
  • আলাউদ্দিনের ” দাগ ” ও ” হুলিয়া” ব্যাবস্থা এবং মদ্যপান সংক্রান্ত বিধিনিষেধের উপর সম্মান জানিয়ে সেগুলো পুনঃ প্রবর্তন করেন।
  • নিছক এক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। অনেকে এই দুর্ঘটনা ঘটানোর পিছনে তাঁর পুত্র জুনা খাঁ র হাত দেখতে পান। যদিও বিষয়টি এখনও বিতর্কিত।
  • তিনি শিল্প ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি দিল্লির অদূরে তুঘলকাবাদ নামে একটি নতুন শহরের পত্তন করেন।
  • তিনি ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
  • পিতা গিয়াস উদ্দিন তুঘলকের মৃত্যুর তিনদিন পর তাঁর জেষ্ঠ্য পুত্র জুনা খাঁ মহম্মদ বিন তুঘলক নাম ধারণ করে সিংহাসনে বসেন। জিয়াউদ্দিন বরনি লিখিত ” তারিখ – ই – ফিরোজ শাহি “, মহম্মদ ইসামি রচিত ” ফুতুহ উস সালাতিন ” এবং ইবন বতুতা রচিত ” রেহেলা” এইসব গ্রন্থ থেকে তাঁর আমলের ইতিহাস জানা যায়। তাঁর রাজত্বকাল ছিল ১৩২৫ – ১৩৫১ খ্রিস্টাব্দ।
  • ডক্টর কে. এ. নিজামি বলেন যে, সম্রাট অশোকের পর মহম্মদ বিন তুঘলক ছাড়া আর কোনো শাসকই রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক দিক থেকে ভারতকে একটি দেশ হিসাবে দেখেন নি।
  • তাঁর দৃষ্টি ভারতের বাইরেও প্রসারিত ছিল। তিনি চিন, ইরাক, ইরান, সিরিয়া, মিশর প্রভৃতি দেশে দূত পাঠান।
  • মহম্মদ বিন তুঘলক রাজার দৈবস্বত্যে বিশ্বাসী ছিলেন। আলাউদ্দিন খলজি’র মত তিনিও সিংহাসন কে উলেমাদের প্রভাব মুক্ত করার চেষ্টা করেন। বংশ গৌরব অপেক্ষা তিনি যোগ্যতার উপরই বেশি গুরুত্ব আরোপ করেন।
  • ইসলামীয় ধর্ম ও দর্শন -এ সুপণ্ডিত মহম্মদ বিন তুঘলক যুক্তিবাদের উপর ভিত্তি করে ভারতে একটি ধর্মনিরপেক্ষ শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন। বহু হিন্দু কে তিনি উচ্চ রাজপদে নিয়োগ করেন। তিনি হিন্দু দের হোলি উৎসবে যোগ দিতেন।
  • দাক্ষিনাত্যের একটি যুদ্ধে কল্যাণের হিন্দু মন্দির ধ্বংস হলে তিনি তা পুনঃনির্মাণ করেন।
  • রাজশেখর ও জিন প্রভাসুরী নামে দুজন জৈন পণ্ডিত সুলতানের পৃষ্ঠপোষকতা অর্জন করেন।
  • জিয়াউদ্দিন বরনি তাঁর ” তারিখ ই ফিরোজ শাহি ” এ ধরনের পাঁচটি পরিকল্পনার উল্লেখ করেছেন:-
    ১- দোয়াবে ভূমিরাজস্ব বৃদ্ধি
    ২- দিল্লি থেকে দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর
    ৩- তামার নোট প্রচলন
    ৪- খোরাসন অভিযান
    ৫- কারাচল অভিযান
  • সাম্রাজ্যের আয় বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সুলতান গঙ্গা যমুনার দোয়াব অঞ্চলে রাজস্ব এর হার বহুগুণ বৃদ্ধি করেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে অনাবৃষ্টির ফলে সেইসময় কৃষকদের অবস্থা খুব শোচনীয় হোয়ে পড়ে। কৃষকরা এই বর্ধিত কর দিতে না পেরে বন জঙ্গলে পলায়ন করে ও দস্যুবৃত্তি গ্রহণ করে। এরফলে কৃষিকাজ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।
  • জনসাধারণের দুর্দশার সংবাদ পাওয়ার পরে পরেই সুলতান তাদের অর্থ, খাদ্য এবং বলদ সাহায্য দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার চেষ্টা করেন। সরকারি খরচে বহু কূপ ও খনন করেন। 
  • কৃষি উন্নয়ন এর ব্যাপারে মহম্মদের যে আন্তরিকতা ছিল তাঁর একটি দৃষ্টান্ত হলো “দেওয়ান – ই – কোহ” নামে স্বতন্ত্র কৃষি দপ্তরস্থাপন করা। কিন্তু মহম্মদের এই দপ্তর আগাগোড়ায় এই কাজে উদাসীন ছিল। এইসব কারনের জন্যই শেষ পর্যন্ত তুঘলক-এর এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। দোয়াব অঞ্চলের কর বৃদ্ধির সময়কাল ছিল ১৩২৬- ১৩২৭ সময়কাল। 
  • সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক এর শাসন তান্ত্রিক পরীক্ষা নিরীক্ষার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল দিল্লি থেকে দৌলতাবাদে রাজধানী স্থানান্তর। পর্বতময় ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই স্থানটির আদি নাম ছিলো দেবগিরি। রাজধানী প্রতিষ্ঠার পূর্বে তিনি এর নাম রাখেন “দৌলতাবাদ”। রাজধানী স্থানান্তরের সময়কাল ছিল ১৩২৮- ১৩২৯ খ্রিস্টাব্দ।
  • এই পরিকল্পনা (রাজধানী স্থানান্তর) গ্রহণের পিছনে কতগুলি কারণ ছিল। যেমন- দেবগিরি সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ছিল। দিল্লি উত্তর পশ্চিম সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় সর্বদাই মোঙ্গল আক্রমণের সম্ভাবনা ছিল। দেবগিরি এই সব আশঙ্কা থেকে মুক্ত ছিল। দক্ষিণ ভারতে সুলতানী শাসন কে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সেখানে একটি কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন ছিল। এছাড়া আর্থিক দিক থেকেও দক্ষিণ ভারত ছিল সমৃদ্ধশালী।
  • মহম্মদ বিন তুঘলক এর পরীক্ষা মূলক সংস্কার কর্মসূচির আর একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন ছিল প্রতীক মুদ্রার প্রচলন। ১৩২৯- ১৩৩০ খ্রিস্টাব্দে সুলতান প্রতীক মুদ্রার প্রবর্তন করেছিলেন।
  • জিয়াউদ্দিন বরনি বলেন যে, সুলতানের অপরিমিত দান খয়রাত, রাজধানী পরিবর্তন, বিদ্রোহ দমন, বিশ্বজয়ের পরিকল্পনা প্রভৃতি কারণে রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে। এই অর্থ সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই তিনি রৌপ মুদ্রার পরিবর্তে স্বল্প মূল্যের ধাতু ব্যাবহার করে একধরনের “প্রতীক মুদ্রা” প্রচলন করেন। এই নতুন মুদ্রায় ব্যাবহৃত ধাতু সম্পর্কে প্রথম দিকে কিছুটা মতভেদ থাকলেও জাদুঘরে সংরক্ষিত তাঁর মুদ্রা পরীক্ষা করে তর্ক বিশারদরা এটিকে ব্রোঞ্জ বলেই স্বীকার করেছেন। সুলতানের এই সংস্কার নীতিও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। সহজলভ্য ধাতু দ্বারা মুদ্রা তৈরি হওয়ার ফলে দেশ জাল মুদ্রায় ভরে যায়।
  • বিদেশি বণিকরা এই মুদ্রা নিতে অস্বীকার করে। ব্যাবসা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। তিন বছর চলার পর শেষ পর্যন্ত তিনি এই মুদ্রা প্রত্যাহার করে নেন। বিনিময়ে জন সাধারণ কে রৌপ্য ও স্বর্ণ মুদ্রা প্রদান করেন। এরফলে রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে।
  • সিংহাসনে বসার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি এক উচ্চাকাঙ্খী প্রকল্প গ্রহণ করেন। সেটি হলো মধ্য এশিয়ার খোরাসান ও ইরাক জয়ের পরিকল্পনা। এজন্য সুলতান প্রায় ৩ লক্ষ ৭০ হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী গঠন করে এক বছর ধরে তা পোষণ করেন । কিন্তু পরবর্তী কালে পথের দূর্গমতার কথা চিন্তা করে তিনি এই পরিকল্পনা ত্যাগ করেন। এরফলে তাঁর মর্যদা হানি ঘটে, দিল্লির জনসাধারণ তাঁর প্রতিটি কার্য কলাপ কে সন্দেহের চোখে দেখতে লাগে।
  • ১৩৩৭ – ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি হিমালয়ের কোলে অবস্থিত কুমায়ুন বা গা গাড়োয়াল রাজ্য জয়ের জন্য একটি অভিযান পাঠান। মহম্মদ তুঘলক এর ভাগ্নে খসরু মালিকের নেতৃত্বে এই অভিযান প্রেরিত হয়। ঝড়, বৃষ্টি, তুষারপাত এবং পার্বত্য জাতির আক্রমণে তাঁর এই অভিযান শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। অবশ্য সামরিক অভিযান ব্যর্থ হলেও পার্বত্য উপজাতিরা সুলতান কে কর প্রদানে সম্মত হয় এবং সমতলে লুণ্ঠন বন্ধ করে দেয়।
  • মহম্মদ বিন তুঘলক সিংহাসনে আসীন ছিলেন ২৫ বছরেরও বেশি কিছু দিন, কিন্তু এই সময়ের মধ্যেই তাঁকে প্রায় ২২ টিরও বেশি বিদ্রোহের সম্মুখীন হতে হয়।
  • শাসনকার্য অপেক্ষা তাঁকে বেশি বিদ্রোহ দমনেই বেশি মনোযোগী হতে হয়। সাম্রাজ্য চরম বিশৃঙ্খলা ও অর্থাভাব দেখা দেয়, যা রোধ করা তাঁর উত্তরাধিকারীদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
  • বিদ্রোহী তাঘীর বিরুদ্ধে অভিযান ই ছিল মহম্মদ বিন তুঘলক – এর জীবনের শেষ সামরিক কর্মসূচি। সুলতান তাঁর পিছন ধাওয়া করতে করতে ধৈর্য্য ও শক্তি হারিয়ে ফেলেন। থাট্টার সন্নিকটে সোন্ডা নামক স্থানে পৌঁছে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
  • তাঁর মৃত্যুর পর আমির – ওমরাহ ও অভিজাত রা সুলতানের খুল্লতাত পুত্র ফিরোজ তুঘলক কে সিংহাসনে বসার অনুরোধ জানান। ফিরোজ তুঘলক ৪৬ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন। ফিরোজ শাহ তুঘলক ছিলেন গিয়াসউদ্দিন তুঘলক – এর কনিষ্ঠ ভ্রাতা রজব এবং ভাট্টি রাজপুত নরপতি রানামলের কন্যা নীলাদেবী । ছয়, সাত বছরে পিতার মৃত্যুর পর তিনি গিয়াসউদ্দিন এর কাছেই লালিত হতে থাকেন।
  • মহম্মদ বিন তুঘলক তাঁর খুল্লতাত পুত্র কে খুবই স্নেহ করতেন। মহম্মদের মৃত্যুর সময়ও তিনি তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
  • ফিরোজের সিংহাসন লাভ প্রমাণ করলো যে পিতার সিংহাসনে পুত্রের অধিকার থাকলেও যোগ্যতাই হলো সবচে়য়ে বড়ো মাপকাঠি।
  • ফিরোজ শাহ তুঘলক রাষ্ট্রীয় কার্যে উলেমা ও শরিয়তের বিধান কে স্বীকৃতি দেন। তিনি খলিফার অনুমোদন অর্জন করেন এবং নিজেকে “খলিফার ভৃত্য” বলে ঘোষণা করেন।
  • যেহেতু অভিজাত দের সমর্থন নিয়ে তিনি সিংহাসনে বসেন তাই তিনি ইক্তাগুলিকে বংশানুক্রমিক জাইগির এ পরিণত করেন। ফিরোজ শাহ তুঘলক ২৪ রকমের “আবওয়াব” বা অবৈধ কর বাতিল করেন এবং কোরানের নির্দেশ অনুযায়ী কেবলমাত্র চারটি কর ধার্য করেন। সেগুলি হলো খারাজ, খামস, জাকাৎ এবং জিজিয়া।
  • জিজিয়া একমাত্র অ- মুসলিমদের কাছ থেকে আদায় করা হত। এর বিনিময়ে একজন অমুসলিম মুসলিম রাষ্ট্র বাস করার অধিকার পেতো।
  • পরবর্তী কালে উলেমা’দের অনুমতি নিয়ে তিনি সেচ কর বা “হক – ই – শার্ব” আদায় করেন।
  • অভ্যন্তরীন ব্যাবসা বাণিজ্য ও শিল্পের উন্নতির জন্য ফিরোজ শাহ তুঘলক আন্ত-প্রাদেশিক শুল্ক দেন। এর ফলে সাম্রাজ্যের সর্বত্র অবাধ বাণিজ্য পরিচালনার সুযোগ হয়।
  • কৃষির উন্নতির দিকে ও তাঁর যথেষ্ট নজর ছিলো। ফিরোজ শাহ তুঘলক বহু জায়গায় খাল খননের নীতি গ্রহণ করেন। তিনি পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ খাল খনন করেন। এ ছাড়া দেড় শতাধিক কূপ খনন করে তিনি সেচ ও পানীয় জলের সুরাহা করেন।
  • ফিরোজ শাহ তুঘলক এক নির্ভরযোগ্য মুদ্রানীতি গ্রহণ করেন। খাঁটি সোনা ও রুপোর মুদ্রা চালু করে সরকারি মুদ্রার উপর জনসাধারণের আস্থা বৃদ্ধি করেন। তাঁর চালু করা মুদ্রা গুলি হলো “জিতল”, অর্ধ জিতল বা “আধা” এবং সিকি জিতল বা “বিখ”।
  • ফিরোজ শাহ তুঘলক সরকারি পরিচালনাধীন ছত্রিশ’টি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। কারখানা গুলো দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল : “রতিবি” ও “গয়ের রতিবি”। রতিবি গুলিতে মানুষ ও পশুর জন্য খাদ্যসামগ্রী তৈরি হতো আর গয়ের রতিবি তে তৈরি হতো পোশাক পরিচ্ছদ ও অন্যান্য সামগ্রী। “মুতাসরিফ” নামে একজন করে কর্মচারী ছিলেন এইসব প্রত্যেক কারখানায়। তাঁর হাতেই এইসব কারখানা পরিচালনার দায়িত্ব ছিলো। এগুলি থেকে সুলতানের প্রচুর আয় হত।
  • শাসনতন্ত্র-কে ফিরোজ এক “প্রজাহিতকর মিশন” বলে গণ্য করতেন।
  • পূর্বপুরুষ দের আমলের সমস্ত দণ্ড দান প্রথা তিনি বাতিল করেন। কোরানের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি বিচারকার্য পরিচালনার নির্দেশ দেন। আলাউদ্দিন খলজি প্রবর্তিত সমস্ত সামরিক কর্মসূচি তিনি বাতিল করেন। যেমন….আলাউদ্দিন খলজি সাম্রাজ্যের যে স্থায়ী সেনাবাহিনী গঠন করেন, তিনি তা ভেঙ্গে দেন। ফলে পুনরায় সুলতান সেনাবাহিনীর জন্য প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও মালিকদের উপর নির্ভরশীল হোয়ে পড়েন। আলাউদ্দিন যে ” দাগ” ও ” হুলিয়া” প্রথা প্রচলন করেন তিনি তাও বাতিল করেন। আলাউদ্দিনের আমলে বৎসরান্তে সৈনিক ও তাঁর বাহন কে সেনাবিভাগ এ যোগ্যতা নির্নায়ক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হতো তিনি তাও বাতিল করেন। সেনাদের বেতনের পরিবর্তে জাইগির দানের রীতি পুনঃপ্রবর্তন করেন।
  • বলার অপেক্ষা রাখে ফিরোজ শাহ তুঘলক এর এই নীতি ই সুলতানী সাম্রাজ্যের ভাঙনের পথ প্রশস্ত করেছিল। অবশ্য কিছু জনহিতকর কাজও তাঁকে বিখ্যাত করেছিল। যেমন তিনি “দার – উল – সিফা” নামে এক চিকিৎসালয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ বিতরণের ব্যাবস্থা করেন। দুঃস্থ পরিবারের বিবাহযোগ্য মেয়েদের বিবাহে অর্থসাহায্য প্রদানের উদ্দেশ্যে সুলতান ” দেওয়ান – ই – খয়রাত ” নামে একটি দপ্তর গঠন করেন। এ ছাড়া দেশের যোগ্য ব্যক্তিদের অর্থ সাহায্য করার জন্য তিনি “দেওয়ান – ই – ইস্তিহক” নামে আরও একটি দপ্তর স্থাপন করেন। বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি দিল্লিতে একটি কর্মসংস্থান সংস্থা ( Employment Bureau) প্রতিষ্ঠা করেন। দিল্লির কোতোয়াল কে বেকার যুবকদের একটি তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন।
  • বিদ্যাচর্চা ও বিদ্বান ব্যাক্তির প্রতি ফিরোজের অনুরাগের অভাব ছিল না। তাঁর আনুকূল্যে জিয়াউদ্দিন বরনি এবং সামস্ – ই – সিরাজ যথাক্রমে “ফুতুহ – ই – জাহান্দারী” ও “তারিখ – ই – ফিরোজশাহি” গ্রন্থ দুটি রচনা করেন। তিনি নিজেও তাঁর আত্মজীবনী “ফুতুহাৎ – ই – ফিরোজ শাহি” রচনা করেন। তাঁর বিদ্যানুরাগের আর একটি প্রমাণ হিসাবে বলা যায় যে, নগরকোট অভিযানের শেষে প্রায় ৩০০ টি (মতান্তরে ১৩০০ টি) সংস্কৃত গ্রন্থ তাঁর দখলে আসে। তিনি তাঁর সভাপতি আজিজউদ্দিন খালেদ কে দিয়ে এর মধ্যে বেশ কিছু পুঁথি ফারসি ভাষায় অনুবাদ করেন। এগুলি ‘দালাল – ই – ফিরোজেশাহি ‘ নামে সংকলিত হয়।
  • সুনির্মাতা হিসাবেও ফিরোজ শাহ তুঘলক কম কৃতিত্বের অধিকারী ছিলেন না। ফেরিস্তার মতে, ফিরোজ ৫০ টি বাঁধ, ৪০ টি মসজিদ, ৩০ টি কলেজ, ২০০ টি শহর, ১৫০ টি সেতু সহ অসংখ্য বাগিচা, বিনোদন গৃহ ইত্যাদি নির্মাণ করেন। ফিরোজ শাহ নির্মিত শহর গুলির মধ্যে অন্যতম হলো ফিরোজাবাদ, ফতেয়াবাদ, হিসার, ফিরোজপুর ইত্যাদি। আফিফ তাঁর রচনায় ফিরোজাবাদ শহরের বিশালতা ও বৈভবের ভূয়শী প্রসংশা করেছেন। বর্তমানে নিউ দিল্লির কোটলা ফিরোজ শাহ’র সেই সমৃদ্ধ নগরের অংশবিশেষ বলে চিহ্নিত হয়।
  • প্রকৃতি গত ভাবে, ফিরোজ শাহ ছিলেন শান্তিপ্রিয় মানুষ। তিনি আলাউদ্দিন বা মহম্মদ বিন তুঘলক এর মত রাজ্য বিস্তার নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। এই কারণে সামরিক অভিযান কর্মসূচি তাঁর আমলে বিশেষ গুরুত্ব পায়নি। রাজধানী থেকে কয়েক টি অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যে সামরিক অভিযান দরকার, তিনি শুধু সেটুকুই করেছিলেন।
  • তিনি যে সমস্ত সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিলেন তাঁর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ হলো বাঙলার বিরুদ্ধে অভিযান। ১৩৫৩ খ্রিস্টাব্দে সুলতান বাংলা জয়ে অগ্রসর হন। বাংলার স্বাধীন সুলতান ইলিয়াস শাহ একডালা দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেন। দীর্ঘ কয়েক মাস অবরোধের পর তিনি অভিযান অসমাপ্ত রেখেই দিল্লি ফিরে আসেন।
  • ইলিয়াস শাহ এর মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র সিকান্দার শাহ সিংহাসনে বসেন। তাঁর সময়ে ফিরোজ আবার দিল্লি আক্রমণ করলে তিনি পিতার মতই একডালা দূর্গে আশ্রয় নেন। শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষই ক্লান্ত হয়ে সন্ধি স্থাপন করে।
  • বাংলা থেকে প্রত্যাবর্তনের পথে তিনি “জাজনগর” আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। রাজা তৃতীয় ভানুদেব দুর্গম জঙ্গলে আত্মগোপন করেন। ফিরোজ শাহ তুঘলক জগন্নাথ মন্দির আক্রমণ করে মূর্তিগুলি কে ভেঙ্গে চুরমার করে দেন। তাঁর হাতে প্রচুর হিন্দু নিহত হয়। শেষ পর্যন্ত উড়িষ্যার রাজা ভানুদেব বশ্যতা স্বীকার করে সন্ধির প্রস্তাব দেন। ফিরোজ শাহ এই সিদ্ধান্ত মেনে নেন এবং রাজধানী প্রত্যাবর্তন করেন।
  • এরপর তিনি নগরকোট অভিযান করেন। তারপর মহম্মদ বিন তুঘলক এর অসমাপ্ত কাজ সিন্ধু বিজয় তিনি সমাপ্ত করেন।
  • ফিরোজ তুঘলক এর শেষ জীবন সুখের ছিল না। প্রিয় পুত্রের মৃত্যু এবং অন্যান্য পুত্রদের সাথে তাঁর মনোমালিন্য তাঁকে ভীষণ ভাবে আঘাত করে। তিনি তাঁর জৈষ্ঠ পুত্র ফতে খানের পুত্র দ্বিতীয় গিয়াসউদ্দিন তুঘলক কে তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। এর কিছুদিন পর ই ফিরোজ শাহ তুঘলক-এর মৃত্যু হয়। এইভাবে ১৩৫১ থেকে ১৩৮৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সুলতানী ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জল অধ্যায়ের অবসান ঘটে।
  • দ্বিতীয় গিয়াসউদ্দিন তুঘলক ছিলেন অনভিজ্ঞ ও অবিবেচক। তিনি অল্পদিনের মধ্যেই প্রাণ হারান।
  • ফিরোজ শাহ তুঘলক এর পুত্র ও পৌত্র দের মধ্যে সিংহাসন নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সিংহাসনে বসেন ফিরোজ তুঘলক এর কনিষ্ঠ পুত্র নাসিরউদ্দিন মহম্মদ শাহ। নাসিরউদ্দিন মহম্মদ শাহ ছিলেন তুঘলক বংশের শেষ সুলতান। তাঁর আমলে গৃহবিবাদ ,ষড়যন্ত্র বিদ্রোহ , হানাহানি তীব্র আকার ধারন করে। ফিরোজ শাহ এর ওপর এক পৌত্র নিজেকে দিল্লির সুলতান বলে ঘোষণা করে।

তৈমুর লঙ-এর ভারত আক্রমণ

  • এক ডামাডোল পরিস্থিতিতে ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে তৈমুর লঙ ভারত আক্রমণ করেন।
  • আমির তৈমুর ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে মধ্য এশিয়ার সমরখন্দ এর পঞ্চাশ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত “কেচ” শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আমির তার্ঘি ছিলেন চাঘতাই তুর্কি গোষ্ঠীর মানুষ। পিতার মৃত্যুর পর ১৩৬৯ খ্রিস্টাব্দে তৈমুর লঙ সমরখন্দ এর সিংহাসনে বসেন। খুব সাধারণ অবস্থা থেকে উঠে এসে তিনি মধ্য এশিয়া ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তিনি নিজ কর্তৃত্ব স্থাপন করেন। চেঙ্গিস খাঁর সাথে তাঁর রক্তের সম্পর্ক আছে বলে দাবি করতেন।
  • ছোট বয়সে যুদ্ধ করার সময় তাঁর পা তিরবিদ্ধ হয়। তাই তিনি খানিকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতেন। তাই তাঁর নামের সঙ্গে লঙ বা “খোঁড়া” যোগ করা হয়। 
  • তাঁর জীবনীতে তিনি ভারত অভিযানের কারণ হিসাবে পৌত্ত লিকতায় আচ্ছন্ন ভারতীয় দের ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করা, ভারতের ধন সম্পদ লুঠ করাই অন্যতম কারণ হিসাবে তুলে ধরেন।
  • তৈমুরের ভারত আক্রমণ সুলতান নাসিরউদ্দিন মামুদ ও তাঁর মন্ত্রী মল্লু ইকবাল প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো প্রতিরোধই তাঁর গতি রোধ করতে পারেনি। তিনি নির্বিচারে ভারতীয় হিন্দু নরনারীদের হত্যা করেছেন। চরম পাশবিক আচরণ ধরা পড়েছে তাঁর ভারত অভিযানের। ঐতিহাসিক বদাউনি লিখেছেন যে, তৈমুরের আক্রমণে দিল্লির জনসংখ্যা এত কমে গিয়েছিল যে, দিল্লির আকাশে দু’মাস ধরে একটি পাখিকেও উড়তে দেখা যায় নি।
  • ১৩৯৯ খ্রিস্টাব্দে তৈমুর স্বদেশে ফিরে গেলে নাসিরউদ্দিন মহম্মদ শাহ দিল্লির সিংহাসনে বসেন।
  • তাঁর মৃত্যুর পর ১৪১৩ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির ওমরাহ গণ দৌলত খাঁ লোদী নামে জনৈক আফগান ওমরাহ কে সিংহাসনে বসান। এরই সঙ্গে সঙ্গে ভারতে দুশো বছরেরও বেশি সময়ের তুর্কি শাসনের অবসান ঘটে।

সৈয়দ বংশ

  • দিল্লির সিংহাসনে দৌলত খাঁ লোদীর কোনো বৈধ অধিকার ছিল না। কোনো রাজতান্ত্রিক ঐতিহ্যও তাঁর ছিল না। স্বভাবতই অভিজাতদের সার্বিক সমর্থন থেকে তিনি বঞ্চিত হন। দিল্লির অভিজাতদের একাংশ তৈমুরের প্রতিনিধি ও মুলতানের শাসক খিজির খাঁ কে দিল্লি দখলের পরামর্শ দেন। খিজির খাঁ ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে সেনাবাহিনী নিয়ে দিল্লিতে এসে উপস্থিত হন। প্রায় চার মাস অবরুদ্ধ থাকার পর দৌলত খাঁ আত্মসমর্পণ করেন। সিংহাসনে বসেন খিজির খাঁ সৈয়দ।
  • খিজির খাঁ নিজেকে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মহম্মদ এর বংশধর বলে দাবি করতেন। এই কারণে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বংশ সৈয়দ বংশ নামে পরিচিতি লাভ করে। তিনি তৈমুরের পুত্র শাহরুখ খানের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখেন। তিনি কখনোই “সুলতান” উপাধি গ্রহণ করেন নি। নিজেকে “রায়ত – ই – আলা” উপাধিতে ভূষিত করেন। নিজনামে তিনি মুদ্রাও চালু করেন নি।
  • তিনি সিংহাসনে বসেই শাসন সংস্কারে মন দেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি তাঁর বিশ্বস্ত ব্যাক্তিদের বসান। তিনি ১৪১৪ থেকে ১৪২১ খ্রিস্টাব্দ মানে মাত্র সাত বছর রাজত্ব করেন।
  • খিজির খাঁ র মৃত্যুর পর দিল্লির সিংহাসনে বসেন তাঁর পুত্র মুবারক শাহ।
  • মুবারক শাহ ১৪২১ থেকে ১৪৩৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। দেশের ভিতর ও বাইরের একাধিক শক্তি তাঁকে বিব্রত করে। মুবারক অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এই সকল আক্রমণ প্রতিহত করেন। আমির ও মালিকদের একাংশ সুলতানের এই পারদর্শিতা দেখে ভয় পান। তাদেরই চক্রান্তে যমুনা নদীর তীরে নিজ নির্মীয়মান “মুবারকাবাদ” শহর পরিদর্শন কালে আততায়ীর হাতে তিনি নিহত হন।
  • তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় ইয়াহিয়া সিরহিন্দ  “তারিখ – ই – মুবারক শাহি” নামক মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন।
  • নিঃসন্তান মুবারক শাহ এর মৃত্যুর পর তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র মহম্মদ বিন ফরিদ “সুলতান মহম্মদ শাহ” উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন। মহম্মদ শাহ ১৪৩৪ থেকে ১৪৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। মহম্মদ শাহ এর অকর্মণ্যতার সুযোগে দিল্লি ও তাঁর পার্শ্ব বর্তী অঞ্চলে বিদ্রোহ দেখা দিলে সিরহিন্দ ও লাহোরের শাসন কর্তা বহলুল লোদী তাঁকে সামরিক সাহায্য দিয়ে বিপদ মুক্ত করেন। এজন্য তিনি বহলুল কে “খান – ই – খান” উপাধিতে ভূষিত করেন এবং দিপাল পুর ও লাহোরের জায়গীর বহ লুলের হাতে অর্পণ করেন।
  • মহম্মদ শাহ এর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আলাউদ্দিন “আলম শাহ” উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন। নিজের অদক্ষতা সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। তাই তিনি দিল্লির উপর বহলুল এর কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে স্থায়ীভাবে বদাউনে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। এখানেই তাঁর মৃত্যু হয় (১৪৫১ – ১৪৬৪)।

লোদী বংশ

  • বহলুল লোদী ১৪৫১ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন। তিনি চূড়ান্ত স্বৈর শাসনের পরিবর্তে সুলতান ও অভিজাতদের “যৌথ দায়িত্ব” মূলক শাসন নীতি গ্রহণ করেন। চান্দেরী , গোয়ালীয়র, সম্বল প্রভৃতি স্থানের আঞ্চলিক শাসক দের তিনি দমন করে দিল্লির আনুগত্য স্বীকার এ ও করপ্রদানে বাধ্য করেন।
  • তাঁর মধ্যে মানবিক গুণেরও অভাব ছিল না। দরিদ্র ও অসহায় দের প্রতি তিনি ছিলেন দয়াবান ও সহানুভূতিশীল।
  • বহলুল লোদীর রাজত্বকাল ছিল ১৪৫১ থেকে ১৪৮৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।
  • বহলুল লোদীর মৃত্যুর পর আমির ওমরাহ দের সহযোগিতায় তাঁর তৃতীয় পুত্র নিজাম খান “সিকন্দর শাহ লোদি” নাম নিয়ে দিল্লির সিংহাসনে বসেন। আধুনিক ঐতিহাসিক রা তাকেই লোদী বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান বলে উল্লেখ করেছেন।
  • শাসক হিসাবে তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা ও কঠোর। তিনি গুপ্তচর ব্যাবস্থা সুদৃঢ় করেন। তাঁর বিচার ব্যাবস্থা ছিল পক্ষপাতহীন।
  • তিনি একজন সাহিত্যিক ও কাব্যরসিক ও ছিলেন। “গুলরূখ” বা “লালফুল ” ছদ্ম নামে সিকন্দর শাহ লোদি ফারসি কবিতাও লিখতেন। আগ্রা নগরীর গোড়াপত্তনও তাঁর এক উল্লেখযোগ্য কীর্তি।
  • তবে ধর্মীয় সংকীর্ণতা ও অনুদার নীতি তাঁর চরিত্রে কিছুটা কালো দাগ লেপন করেছে। নগর কোটের “জাভালামুখি” মন্দির ধ্বংস করে দেবমূর্তি গুলি কে তিনি টুকরো টুকরো করে কসাই খানায় বাটখারা হিসাবে ব্যাবহারের নির্দেশ দেন। তিনি হিন্দুদের উপর জিজিয়া কর ও তীর্থ কর আরোপ করেন। অন্য ধর্মাবম্বীদের তিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত করার জন্যও চাপ দেন। স্বাভাবিক ভাবেই এর প্রতিক্রিয়া ভালো হয় নি। সিকন্দর শাহ লোদি ১৪৮৯ থেকে ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
  • সিকন্দর লোদির মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ইব্রাহিম লোদি বিনা বাধায় সিংহাসনে বসেন। সামরিক নেতা হিসাবে ইব্রাহিম লোদী মোটামুটি কৃতিত্বের পরিচয় দিলেও সাম্রাজ্যের সংগঠক ও কূটনীতিক হিসাবে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। অভিজাতদের ক্ষমতা হ্রাস করার জন্য কিছু নীতি গ্রহণ করলে অভিজাত রা তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হন । তারা তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা জালাল কে দিল্লির দিল্লির সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেয়। ফলে ইব্রাহিম ও জালালের মধ্যে যুদ্ধ হয়। জালাল খাঁ পরাজিত ও নিহত হন।
  • আফগান আমিরদের নেতা পাঞ্জাবের শাসনকর্তা দৌলত খাঁ লোদি এবং সুলতানের পিতৃব্য ও গুজরাটের শাসনকর্তা আলম খাঁ লোদী কাবুলের অধিপতি বাবরকে ভারত আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে বাবর ইব্রাহিম লোদী’র বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। অন্তর্দ্বন্দ্বে দীর্ণ সুলতানী বাহিনী শক্তিশালী মুঘল দের হাতে বিদ্ধস্ত হয়।
  • এইভাবে ভারতের বুকে তিন শতাব্দীর অধিক কাল স্থায়ী দিল্লি সুলতানির পতন ঘটে। ভারতে মোগল যুগের সূত্রপাত হয়।

Short Question-Answer on Delhi Sultanate (দিল্লির সুলতানি ইতিহাস)

  1. হজরত মহম্মদ কখন জন্মগ্রহণ করেন ?
    উঃ হজরত মহম্মদ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।
  2. ভারতে কখন মধ্যযুগের সূচনা হয় ?
    উঃ সপ্তম শতকে হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালের সময় থেকে ভারতে মধ্যযুগের সচনা হয়।
  3. ভারতের মধ্যযুগে প্রথম বৈদেশিক মুসলিম আক্রমণ কোনটি ?
    উঃ ভারতের মধ্যযুগে সিন্ধুদেশে আরব আক্রমণ (৭১২ খ্রিঃ) প্রথম বৈদেশিক মুসলিম আক্রমণ।
  4. আরবরা কত খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুদেশ জয় করেন ?
    উঃ আরবরা ৭১২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুদেশ জয় করেন।
  5. চাচনামা গ্রন্থ কোন্ ভাষায় রচিত ? এই গ্রন্থ থেকে কী জানা যায় ?
    উঃ চাচনামা গ্রন্থ আরবি ভাষায় রচিত। এই গ্রন্থ থেকে আরবদের সিন্ধু বিজয় সম্বন্ধে জানা যায়।
  6. তবাক-ই-নাসিরি গ্রন্থের রচয়িতা কে ?
    উঃ তবাক-ই-নাসিরি গ্রন্থের রচয়িতা মিনহাজ-উস-সিরাজ।
  7. তারিখ-ই-ফিরােজশাহি গ্রন্থের রচয়িতা কে ছিলেন ?
    উঃ তারিখ-ই-ফিরােজশাহি গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন জিয়াউদ্দিন বারনি।
  8. ফিরােজ শাহ তুঘলকের আত্মচরিত গ্রন্থের নাম কী ?
    উঃ ফিরােজ শাহ তুঘলকের আত্মচরিত গ্রন্থের নাম ফতুয়াৎ-ই-ফিরােজশাহি।
  9. ‘রাহেলা’ কার লেখা ?
    উঃ ‘রাহেলা’ গ্রন্থের লেখক ইবন বতুতা।
  10. তহকিক-ই-হিন্দ বা কিতাব-উল-হিন্দ গ্রন্থের লেখক কে?
    উঃ তহকিক-ই-হিন্দ বা কিতাব-উল-হিন্দ গ্রন্থের লেখক অল বেরুনি।
  11. মা হুয়ান কে ছিলেন?
    উঃ মা হুয়ান ছিলেন ভারতে আগত চৈনিক পর্যটক।
  12. মার্কোপােলাে কে ছিলেন?
    উঃ মার্কোপােলাে ছিলেন ভারতে আগত ভিনিশীয় পর্যটক।
  13. নিকোলাে কন্টি কে ছিলেন ?
    উঃ নিকোলাে কন্টি ছিলেন একজন ভিনিশীয় পর্যটক।
  14. মােগল যুগের দুজন ফরাসি পর্যটকের নাম করাে।
    উঃ বার্র্নিয়ে ও টার্রভানিয়ে ছিলেন মােগল যুগের দুজন ফরাসি পর্যটক।
  15. সুলতান মামুদ সম্বন্ধে জানা যায় এমন একটি গ্রন্থের নাম করো।
    উঃ আবু নাসের বিন উতবি রচিত কিতাব-উল-ইয়ামিনি গ্রন্থ থেকে গজনির সুলতান মামুদ সম্বন্ধে জানা যায়।
  16. সুলতানি আমলে ভারতে আগত কয়েকজন পর্তুগিজ পর্যটকের নাম করাে।
    উঃ সুলতানি আমলে ভারতে কয়েকজন পর্তুগিজ পর্যটক হলেন পায়াস, বারবোজা, নুনিজ প্রমুখ।
  17. কোন গ্রন্থ থেকে ইলতুৎমিসের রাজত্বকাল সম্বন্ধে জানা যায়।
    উঃ হাসান নিজামি রচিত তাজ-উ-মাসির গ্রন্থ থেকে ইলতুৎমিসের রাজত্বকাল সম্বন্ধে জানা যায়।
  18. সিন্ধু অভিযানে আরব সেনানায়ক কে ছিলেন ?
    উঃ মহম্মদ-বিন-কাশিম ওই অভিযানে আরব সেনানায়ক ছিলেন।
  19. আরবদের সিন্ধু আক্রমণ কালে সিন্ধুদেশের রাজা কে ছিলেন ?
    উঃ ওই সময়ে সিন্ধুদেশের রাজার নাম ছিল দাহির।
  20. ভারতের কোথায় আরব শাসন শুরু হয়েছিল ?
    উঃ ভারতের সিন্ধু ও মুলতান অঞ্চলে আরব শাসন শুরু হয়েছিল।
  21. দশম শতকের ভারতে দুটি বিদেশি রাজ্যের নাম করাে।
    উঃ দশম শতকে মুলতান ও সিন্ধু ছিল ভারতে দুই বিদেশি রাজ্য।
  22. দশম শতকে মুলতান ও সিন্ধুর শাসকদের নাম করাে।
    উঃ মুলতান ছিল মুসলিম কার্মাথিয়দের ও সিন্ধু ছিল আরবদের শাসনাধীন।
  23. পাল সাম্রাজ্যের পতন কখন শুরু হয় ?
    উঃ দেবপালের মৃত্যুর (৮৫০ খ্রিঃ) পর পাল সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়।
  24. গজনি রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে ?
    উঃ পারস্যের প্রাদেশিক শাসনকর্তা আলপ্তগিন সামানিদ গজনি রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা।
  25. আলগিনের পরবর্তী গজনির সুলতান কে ছিলেন?
    উঃ আলপ্তগিনের পরবর্তী গজনির সুলতান ছিলেন সবুক্তগিন।
  26. সবুক্তগিনের পুত্রের নাম কী ?
    উঃ সবুক্তগিনের পুত্র ছিলেন সুলতান মামুদ।
  27. ভারতে প্রথম তুর্কি অভিযানের নায়ক কে ?
    উঃ ভারতে প্রথম তুর্কি অভিযানের নায়ক ছিলেন সুলতান মামুদ।
  28. সুলতান মামুদ কখন প্রথম ভারত আক্রমণ করেন ?
    উঃ সুলতান মামুদ ১০০০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ভারত আক্রমণ করেন।
  29. সুলতান মামুদ প্রথম কোন ভারতীয় রাজাকে পরাজিত করেন?
    উঃ সুলতান মামুদ প্রথমে শাহিরাজ জয়পালকে পরাজিত করেন।
  30. মামুদ কতবার ভারত আক্রমণ করেন?
    উঃ মামুদ সতেরাে বার ভারত আক্রমণ করেন।
  31. ওয়াইহিন্দ-এর যুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল?
    উঃ সুলতান মামুদ ও পাঞ্জাবের শাহিরাজ আনন্দপালের মধ্যে ওয়াইহিন্দ-এর যুদ্ধ হয়েছিল।
  32. সােমনাথের মন্দির কে লুণ্ঠন করেন?
    উঃ সুলতান মামুদ সােমনাথের মন্দির লুণ্ঠন (১০২২ খ্রিঃ) করেন।
  33. সােমনাথের মন্দির কোথায় অবস্থিত ছিল ?
    উঃ গুজরাতের অহিলবাড়ায় (কাথিয়াবাড়ের পশ্চিম উপকূলে) সােমনাথের মন্দির অবস্থিত ছিল।
  34. সুলতান মামুদ ভারতে কখন শেষ অভিযান করেন?
    উঃ সুলতান মামুদ ১০২৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতে শেষ অভিযান করেন।
  35. সুলতান মামুদের সঙ্গে কোন্ তুর্কি পণ্ডিত ভারতে আসেন ?
    উঃ তুর্কি পণ্ডিত অল বেরুনি সুলতান মামুদের সঙ্গে ভারতে আসেন।
  36. ভারত সম্বন্ধে অল বেরুনি লিখিত গ্রন্থটির নাম কী ?
    উঃ অল বেরুনি লিখিত গ্রন্থটির নাম তহকিক-ই-হিন্দ বা কিতাব-উল-হিন্দ (পুস্তকটির বঙ্গানুবাদ “ভারত-অনুসন্ধান”)।
  37. ‘গাজি’ (Victor) ও ‘বাৎ-শিকান’ (Idol-breaker) উপাধি কে গ্রহণ করেন ?
    উঃ সুলতান মামুদ ‘গাজি’ ও ‘বাৎ-শিকান’ উপাধি গ্রহণ করেন।
  38. ঘাের রাজ্যটি কোথায় অবস্থিত ছিল ?
    উঃ ঘাের রাজ্যটি ছিল আফগানিস্তানের গজনি ও হিরাটের মধ্যবর্তী স্থানে।
  39. মহম্মদ ঘােরি কোন্ দেশের সুলতান ছিলেন ?
    উঃ মহম্মদ ঘােরি গজনি রাজ্যের সুলতান ছিলেন (গজনি রাজ্যের ঘাের অঞ্চলে তিনি প্রথমে একজন সামন্ত ছিলেন)।
  40. মহম্মদ ঘােরির প্রকৃত নাম কী ছিল?
    উঃ মহম্মদ ঘােরির প্রকৃত নাম ছিল শাহবুদ্দিন মহম্মদ।
  41. তরাইনের প্রথম যুদ্ধ কাদের মধ্যে ঘটেছিল ?উঃ তরাইনের প্রথম যুদ্ধ ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি ও আজমিরের চৌহান বংশীয় রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহান ও মহম্মদ ঘােরির মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়।
  42. তরাইনের প্রথম যুদ্ধে কে পরাজিত হয়েছিলেন?
    উঃ তরাইনের প্রথম যুদ্ধে মহম্মদ ঘােরি পরাজিত হয়েছিলেন।
  43. তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ কোন্ বছর ঘটেছিল?
    উঃ তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে (পৃথ্বীরাজ চৌহান ও মহম্মদ ঘােরির মধ্যে) ঘটেছিল।
  44. তরাইন স্থানটি কোথায় অবস্থিত? 
    উঃ তরাইন পাঞ্জাবের ভাতিন্দা জেলার সন্নিকটে অবস্থিত।
  45. কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন ?
    উঃ কুতুবউদ্দিন আইবক ছিলেন মহম্মদ ঘােরির একজন সেনাপতি ও দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা।
  46. ভারতে দ্বিতীয় তুর্কি অভিযানের নায়ক কে ছিলেন ?
    উঃ ভারতে দ্বিতীয় তুর্কি অভিযানের নায়ক ছিলেন মহম্মদ ঘােরি।
  47. মহম্মদ ঘােরির অপর দুই সেনাপতির নাম কী কী?
    উঃ মহম্মদ ঘােরির অপর দুই সেনাপতির নাম ছিল যথাক্রমে তাজউদ্দিন ইলদিচ ও নাসিরউদ্দিন কুবাচা।
  48. কোন তুর্কি সেনাপতি বঙ্গাদেশ আক্রমণ করেন?
    উঃ সেনাপতি ইখতিয়ারউদ্দিন বখতিয়ার খলজি বঙ্গাদেশ আক্রমণ করেন।
  49. তুকিরা যখন বঙ্গদেশ আক্রমণ করে, তখন সেখানে শাসক কে ছিলেন?
    উঃ বঙ্গদেশ আক্রমণকালে লক্ষ্মণ সেন সেখানকার শাসক ছিলেন।
  50. কে দিল্লিতে সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন ?
    উঃ কুতুবউদ্দিন আইবক দিল্লিতে সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
  51. কোন বছর থেকে সুলতানি আমল আরম্ভ হয়েছিল?
    উঃ ১২০৬ সাল থেকে সুলতানি আমল আরম্ভ হয়েছিল।
  52. কুতুবউদ্দিন আইবক প্রতিষ্ঠিত রাজবংশকে ‘দাস বংশ’ বলা হয় কেন?
    উঃ কতুবউদ্দিন প্রথম জীবনে মহম্মদ ঘােরির ক্রীতদাস ছিলেন বলে তার প্রতিষ্ঠিত রাজবংশকে ‘দাস বংশ’ বলা হয়।
  53. আইবক কথার অর্থ কী?
    উঃ ‘আইবক’ কথার অর্থ ক্রীতদাস।
  54. ‘লাখ-বখস’ (লক্ষদাতা) নামে কে পরিচিত ছিলেন ?
    উঃ কুতুবউদ্দিন আইবক দানশীলতার জন্য ‘লাখ-বখস’ (লক্ষদাতা) নামে পরিচিত ছিলেন।
  55. কে কুতুবমিনার নির্মাণ করেন?
    উঃ কুতুবউদ্দিন আইবক কুতুবমিনার নির্মাণ করেন (প্রকৃতপক্ষে আইবক কুতুবমিনারের নির্মাণ কাজ শুরু করেন, ইলতুৎমিস সমাপ্ত করেন)।
  56. কুতুবউদ্দিন আইবকের পরবর্তী দিল্লির শাসক কে ছিলেন ?
    উঃ কুতুবউদ্দিন আইবকের পরবর্তী দিল্লির শাসক ছিলেন তাঁর দত্তকপুত্র আরামশাহ।
  57. প্রথম জীবনে ইলতুৎমিস কী ছিলেন ?
    উঃ প্রথম জীবনে ইলতুৎমিস ছিলেন কুতুবউদ্দিন আইবকের ক্রীতদাস।
  58. ইলতুৎমিস কীভাবে দিল্লির সিংহাসনে উপবেশন করেন ?
    উঃ ইলতুৎমিস ১২১১ খ্রিস্টাব্দে আরামশাহকে সিংহাসনচ্যুত করে দিল্লির সিংহাসনে উপবেশন করেন।
  59. ‘সুলতান-ই-আজম’ কার উপাধি ছিল ?
    উঃ ইলতুৎমিসের উপাধি ছিল ‘সুলতান-ই-আজম’।
  60. দাসবংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান কে ছিলেন?
    উঃ ইলতুৎমিস ছিলেন দাসবংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান।
  61. কোন সুলতান নিজেকে ‘খলিফার সেনাপতি’ রপে উল্লেখ করতেন?
    উঃ সুলতান ইলতুৎমিস নিজেকে ‘খলিফার সেনাপতি’ রুপে উল্লেখ করতেন।
  62. ইলতুৎমিসের রাজত্বকালে কোন মােঙ্গল নেতা ভারতের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হন?
    উঃ ইলতুৎমিসের রাজত্বকালে মােঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খান ভারতের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হন (১২২১ খ্রিঃ)।
  63. খিবার কোন শাসক মােঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খার তাড়া খেয়ে ইলতুৎমিসের আশ্রয়প্রার্থী হন?
    উঃ খিবার শাসক জালালউদ্দিন মােঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খার তাড়া খেয়ে ইলতুৎমিসের আশ্রয়প্রার্থী হন।
  64. ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর কে দিল্লির সিংহাসনে বসেছিলেন ?
    উঃ ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর রুকনউদ্দিল ফিরােজ দিল্লির সিংহাসনে বসেছিলেন।
  65. দিল্লির (ভারতের) প্রথম মহিলা শাসিকা কে ছিলেন?
    উঃ ইলতুৎমিস কন্যা রাজিয়া ছিলেন দিল্লির (ভারতের) প্রথম মহিলা শাসক।
  66. চল্লিশ চক্র (বন্দেগান-ই-চিহালগনি বা তাকান-ই-চিহালগনি) কী ?
    উঃ দিল্লির সুলতানির প্রথমাবস্থায় (রাজিয়ার আমলে) সাম্রাজ্যের কর্তৃত্বপরায়ণ চল্লিশজন ক্রীতদাসের সমিতি গড়ে ওঠে। এঁরাই চল্লিশ চক্র নামে পরিচিত।
  67. চল্লিশ চক্রের প্রধান নেতা কে ছিলেন ?
    উঃ গিয়াসুদ্দিন বলবন ছিলেন চল্লিশ চক্রের প্রধান নেতা।
  68. রাজিয়া পরবর্তী দিল্লির উল্লেখযােগ্য সুলতান কে ছিলেন ?
    উঃ ইলতুৎমিসের কনিষ্ঠ পুত্র নাসিরুন ছিলেন রাজিয়া,পরবর্তী দিল্লির উল্লেখযােগ্য সুলতান।
  69. গিয়াসুদ্দিন বলবনের প্রকৃত নাম কী ছিল ?
    উঃ গিয়াসুদ্দিন বলবনের প্রকৃত নাম ছিল উলুগ খা।
  70. সুলতানি আমলে ‘রক্ত ও লৌহ নীতি’-র অনুবর্তী কে ছিলেন ?
    উঃ গিয়াসুদ্দিন বলবন ছিলেন ‘রক্ত ও লৌহ নীতি’র অনুবর্তী।
  71. রক্ত ও লৌহ নীতি কী ?
    উঃ যুদ্ধের দ্বারা কঠোরভাবে রাজ্য জয় করাই হল ‘রক্ত ও লৌহ নীতি’।
  72. গিয়াসুদ্দিন বলবনের আমলে বাংলায় কে বিদ্রোহ ঘােষণা করেন ?
    উঃ গিয়াসুদ্দিন বলবনের আমলে বাংলায় তুড্রিল খাঁ বিদ্রোহ ঘােষণা করেন।
  73. গিয়াসুদ্দিন বলবনের পরবর্তী দিল্লির সুলতান কে ছিলেন ?
    উঃ গিয়াসুদ্দিন বলবনের পরবর্তী সুলতান ছিলেন কায়কোবাদ।
  74. কায়কোবাদের পরবর্তী দিল্লির সুলতান কে ছিলেন ?
    উঃ কায়কোবাদের পরবর্তী দিল্লির সুলতান ছিলেন তাঁর নাবালক পুত্র কামার্স।
  75. কায়ুমার্সকে কে হত্যা করেন ?
    উঃ কায়ুমার্সকে হত্যা করেন তাঁদেরই এক উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী জালালউদ্দিন ফিরােজ খলজি।
  76. খলজি বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ?
    উঃ খলজি বংশের প্রতিষ্ঠাতা জালালউদ্দিন ফিরােজ খলজি।
  77. জালালউদ্দিন খলজি কোন সময়ে দিল্লির সুলতান ছিলেন ?
    উঃ ১২৯০ থেকে ১২৯৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জালালউদ্দিন দিল্লির সুলতান ছিলেন।
  78. জালালউদ্দিন খলজির সঙ্গে আলাউদ্দিন খলজির কী সম্পর্ক ছিল ?
    উঃ জালালউদ্দিনের ভ্রাতুপুত্র ও জামাতা ছিলেন আলাউদ্দিন খলজি।
  79. আলাউদ্দিন খলজি কখন দিল্লির সিংহাসনে আরােহণ করেন?
    উঃ আলাউদ্দিন খলজি ১২৯৬ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সিংহাসনে আরােহণ করেন।
  80. আলাউদ্দিন খলজি কত বছর রাজত্ব করেন ?
    উঃ আলাউদ্দিন খলজি কুড়ি বছর রাজত্ব করেন।
  81. ‘নব মুসলমান’ কারা ছিল?
    উঃ দিল্লির কাছে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত মােঙ্গলদের একাংশ।
  82. আলাউদ্দিন খলজির পুত্রের নাম কী ?
    উঃ আলাউদ্দিন খলজির পুত্রের নাম খিজির খা।
  83. আলাউদ্দিন খলজি গুজরাতের কোন রাজাকে পরাজিত করেন ?
    উঃ আলাউদ্দিন খলজি গুজরাতরাজ কর্ণদেবকে পরাজিত ও নিহত করেন।
  84. মালিক কাফুর কে ছিলেন?
    উঃ মালিক কাফুর ছিলেন আলাউদ্দিনের সেনাপতি যাকে আলাউদ্দিন গুজরাত জয় করার সময় বন্দি করে দিল্লিতে নিয়ে আসেন ও মুসলমান ধর্মে দীক্ষিত করেন।
  85. আমির খসর কে ছিলেন?
    উঃ আমির খসরু ছিলেন আলাউদ্দিন খলজির সভাকবি।
  86. ভারতের তােতাপাখি কাকে বলা হয়?
    উঃ আমির খসরুকে ভারতের তােতাপাখি বলা হয়
  87. আমির খসরকে কেন ‘ভারতের তােতাপাখি’ বলা হয় ?
    উঃ আমির খসরুর কবিত্বশক্তির জন্য তাঁকে ‘ভারতের তােতাপাখি’ বলা হয়।
  88. আলাউদ্দিন খলজির মেবার আক্রমণকালে সেখানে কে রাজত্ব করতেন?
    উঃ আলাউদ্দিন খলজির মেবার আক্রমণকালে সেখানে রানা রতন সিংহ রাজত্ব করতেন।
  89. পদ্মিনী কে ছিলেন?
    উঃ মেবারের রানা রতন সিংহের স্ত্রী ছিলেন পদ্মিনী।
  90. জহরব্রত কী ?
    উঃ অসম্মান এড়াবার জন্য রাজপুত রমণীরা জ্বলন্ত চিতায় ঝাপ দিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিত। তাদের আত্মাহুতির ব্রত ‘জহরব্রত’ নামে পরিচিত।
  91. আলাউদ্দিন খলজির প্রকৃত নাম কী ছিল?
    উঃ আলাউদ্দিন খলজির প্রকৃত নাম ছিল আলি গুরশাশপ।
  92. দিল্লির কোন সুলতান সর্বপ্রথম দক্ষিণ ভারত অভিযান করেন ?
    উঃ আলাউদ্দিন খলজি সর্বপ্রথম দক্ষিণ ভারত অভিযান করেন।
  93. কোন সুলতান ‘রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেছিলেন ?
    উঃ আলাউদ্দিন খলজি ‘রেশনিং’ (Rationing) ব্যবস্থা চালু করেছিলেন।
  94. “আলাই দরওয়াজা কে নির্মাণ করেন?
    উঃ আলাউদ্দিন খলজি “আলাই দরওয়াজা” নির্মাণ করেন।
  95. খলজি বংশের শেষ সুলতান কে ছিলেন?
    উঃ কুতুবউদ্দিন মুবারক (১৩১৬-১৩২০) ছিলেন খলজি বংশের শেষ সুলতান।
  96. তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতার নাম করাে।
    উঃ তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা গিয়াসউদ্দিন তুঘলক।
  97. গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের প্রকৃত নাম কী ছিল?
    উঃ গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের প্রকৃত নাম ছিল গাজি মালিক।
  98. গিয়াসুদ্দিন তুঘলকের পরবর্তী দিল্লির সুলতান কে ছিলেন?
    উঃ গিয়াসুদ্দিন তুঘলকের পরবর্তী দিল্লির সুলতান ছিলেন মহম্মদ বিন তুঘলক।
  99. মহম্মদ বিন তুঘলকের প্রকৃত নাম কী ছিল?
    উঃ মহম্মদ বিন তুঘলকের প্রকৃত নাম ছিল জুনা খাঁ।
  100. দোয়াব অঞলটি কোথায় ?
    উঃ দোয়াব অঞ্চলটি গঙ্গা যমুনার মধ্যবর্তী উর্বরা স্থানটি।
  101. কোন সুলতান দিল্লি থেকে দেবগিরি (দৌলতাবাদ)-তে রাজধানী পরিবর্তন করেন?
    উঃ মহম্মদ বিন তুঘলক দিল্লি থেকে দেবগিরি  দৌলতাবাদ)-তে রাজধানী পরিবর্তন করেন।
  102. ইবন বতুতা কোন্ সুলতানের সময়ে ভারতে আসেন?
    উঃ সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালে আফ্রিকার মরক্কো থেকে ইবন বতুতা পর্যটকরূপে ভারতে আসেন।
  103. তুঘলক বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান কে ছিলেন?
    উঃ মহম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন তুঘলক বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান।
  104. মহম্মদ বিন তুঘলকের আমলে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ ভারতের স্বাধীন হিন্দু রাজ্যটির নাম কী ?
    উঃ মহম্মদ বিন তুঘলকের আমলে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ ভারতের স্বাধীন হিন্দু রাজ্যটি ছিলো বিজয়নগর রাজ্য।
Comment

Class XI Political Science

Class XII Political Science

Class 12 Bangla Books Question& Answers