Tuesday 7 April 2020

পিরামিড কবে, কিভাবে তৈরি করা হয়েছিল ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর

পিরামিড কবে, কিভাবে তৈরি করা হয়েছিল ?.

 মানবসভ্যতার ইতিহাসের অন্যতম রহস্যময় নিদর্শন হল পিরামিড ।  পিরামিড হল পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তম আশ্চর্যের একটি । এর সুবিশাল উচ্চতা ও শৈলীর সামনে দাঁড়ালে বাকরুদ্ধ হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না । সারা বিশ্বের কাছে মিশরের পরিচিতি আছে তাদের পিরামিড গুলোর জন্য । পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত পিরামিডগুলো মিশরে অবস্থিত । প্রাচীন কালের পৃথিবীর সাত আশ্চর্যের মধ্যে পিরামিডই সবচেয়ে পুরনো এবং অনেকাংশে অক্ষত । প্রাচীন মিশরে নির্মিত সব পিরামিড নীল নদের পশ্চিম তীরে অবস্থিত 



 প্রাচীনকালে মিশরীয়রা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতো যে মৃত্যুর পরও তাদের আত্মা বেঁচে থাকে । মৃতদেহ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে মমি করতো তারা ।  মিশরের প্রাচীন রাজাদের মৃত্যুর পর এসব পিরামিডের ভেতর সমাহিত করা হতো । এসব শরীর মমি করে পিরামিডের ভেতর রাখা হত । ফারাওদের মৃতদেহের সাথে কবরস্থ করা হতো বিপুল ধন-সম্পদ । আত্মার বেঁচে থাকার জন্য চাই প্রয়োজনীয় নানা জিনিস । তাই নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রবিশেষ করে খাবার-দাবার মৃতদেহের সাথে দিয়ে দিতো তারা । সমাজের বিত্তশালীদের কবরেও মূল্যবান সামগ্রী দেয়া হতো ।

 বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো সভ্যতাগুলোর একটি গড়ে উঠেছিল মিশরে ।  মেসোপটেমিয়ার অধিবাসীরা সর্বপ্রথম পিরামিড আকৃতির স্থাপনা তৈরি করেছিল । মিশরের প্রাচীনতম পিরামিডগুলি আবিষ্কৃত হয়েছে মেমফিসের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সাক্কারায় । প্রথম দিকের ইতিহাস অনুসারে মিশরীয় রাজবংশের মানুষদের মৃত্যুর পরে বেঞ্চ-এর মত কাঠামোতে চির শায়িত করা হত ।

 কোনো বহুভূজের উপর অবস্থিত যে ঘনবস্তুর একটি শীর্ষবিন্দু থাকে এবং যার পার্শ্ব তলগুলোর প্রত্যেকটি ত্রিভুজাকার তাকে পিরামিড (Pyramid) বলে । পিরামিড একটি বহুভূজাকৃতি ভূমির উপর অবস্থিত । পিরামিডের দুইটি সন্নিহিত তল অর্থাৎ দুইটি পার্শ্ব তল অথবা একটি পার্শ্ব তল ও ভূমি যে রেখায় মিলিত হয়তাকে পিরামিডের একটি ধার বলে । পিরামিডের পার্শ্ব তলগুলো যে একটি সাধারণ বিন্দুতে মিলিত হয়তাকে পিরামিডের শীর্ষবিন্দু বলে । পিরামিডগুলোর উপরে ছিল আলাবাস্তার চুনাপাথরের আবরণ । তার ফলে অত বড় ইমারতগুলো সব সময়ে চকচক করত ।

 আজ থেকে প্রায় ৪৫০০ বছর আগে নির্মিত হলেও তা বিজ্ঞানীদের মাথাকে ঘোরাচ্ছে এখনওকীভাবে মিশরীয়রা এই অদ্ভুত সুন্দররহস্যময় জিনিস তৈরি করল । প্রতিটি দেশের সম্পদ সীমিত । এত বিশাল পাথরগুলো কীভাবে দূর থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল সেটা বের করতে গিয়ে কিছু গবেষক ধারণা করেন - আদি মিশরীয়রা ওগুলোকে মরুভূমির মধ্য দিয়ে টেনে নিয়ে এসেছে । কিছু পাথর এসেছিল ওই এলাকার খনি থেকেবাকিটা দক্ষিণ মিশরের আসোয়ান থেকে নীলনদ হয়ে । সেই সব পাথর কি ভাবে সাজানো হয়েছিল কিংবা অত উঁচুতে কিভাবে তোলা হয়েছিলতা নিয়ে নিশ্চিত ইতিহাসবিদেরা । তাঁদের কাছে ক্রেন সদৃশ কোনো যন্ত্র ছিল নাছিল না লোহার জিনিস মসৃণ করে সূক্ষ্মভাবে তৈরি করার মত প্রযুক্তি ।

 মিশরীয় পিরামিড হল মিশরে অবস্থিত প্রাচীন পিরামিড-আকৃতির প্রস্তর নির্মিত স্থাপনাসমূহ । মিশরীয় পিরামিডগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত পিরামিডগুলি দেখা যায় কায়রো শহরের উপকণ্ঠে গিজায় । গিজার বেশ কয়েকটি স্থাপনাকে বিশ্বের অন্যতম বৃহদাকার স্থাপনা বলে মনে করা হয় । মিসরে ছোটবড় ৭৫টি পিরামিড আছে । সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষণীয় হচ্ছে গিজা'র পিরামিড যা খুফু'র পিরামিড হিসেবে পরিচিত । ফারাও খুফুর পিরামিড আকারে সবচেয়ে বড়তার নাম গ্রেট পিরামিড । এটি তৈরি হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ বছর আগে । এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর এবং শ্রমিক খেটেছিল আনুমানিক ১ লাখ । এর উচ্চতা প্রায় ৪৮১ ফুট । এটি ৭৫৫ বর্গফুট জমির উপর স্থাপিত । খুফু’র পিরামিডের ভেতরে কোন চিত্রলিপি পাওয়া যায় নি  খুফুর জন্য নির্মিত গিজার পিরামিডটির পাশে তার রাণীদের জন্য আরো তিনটি পিরামিড নির্মিত হয়  শহরের রাস্তা ধরে এগোতে থাকলে অনেক দূর থেকেই চোখে পড়ে গিজা পিরামিড কমপ্লেক্স ।

 ইতিহাস থেকে আমরা আরও জানতে পারি  - গিজার গ্রেট পিরামিড তৈরিতে প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাথরের ব্লক ব্যবহার করা হয়েছে যার একেকটির ওজন ২-৭০ টন, আর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৪০ ফুটের মত । পাথরের সাথে পাথর জোড়া দিয়ে পিরামিড তৈরি করা হত । ১৩ একর জায়গা জুড়ে পিরামিডটি বিস্তৃত । নির্মাণের সময় গিজার পিরামিডের বাইরের আবরণ এক বিশেষ পাথর দ্বারা আবৃত করা হয়  ৪৫০০ বছরের ঝড়দুর্যোগ সহ্য করে এখনও টিকে আছে ।

 এই পিরামিড গুলো এতটা সূক্ষ্মভাবে মাপজোখ নিয়ে নির্মিত হয়েছেদেখে মনে হবে বর্তমান সময়ের কোনো কারিগর সেখানে সময় পরিভ্রমণ করে গিয়ে তৈরি করে দিয়ে আসছে । এদের সম্মুখভাগ প্রায়ই বিভিন্ন রঙের প্রলেপ দেয়া থাকতযা জ্যোতির্বিদ্যা-সংক্রান্ত গুরুত্ব বহন করত । ২০০৮ সাল পর্যন্ত মিশরে ১৩৮টি পিরামিড আবিষ্কৃত হয়েছে ।  এগুলির অধিকাংশই নির্মিত হয় প্রাচীন ও মধ্যকালীন ফ্যারাওদের রাজত্বকালে তাদের ও তাদের পত্নীদের সমাধিসৌধ হিসেবে ।

 গিজার পিরামিডের মাঝামাঝিতে খুফুর পুত্র খাফ্রের সমাধি নির্মিত হয়েছে । তার শাসনামলেই দ্য গ্রেট স্ফিংক্স নির্মিত হয় । গ্রেট পিরামিড সামনে স্ফিংক্স হল একটি প্রাণীর মূর্তি যার শরীরটি সিংহের এবং মস্তকটি মানুষের । স্ফিংক্স-টির উচ্চতা ২০ মিটার এবং দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৩.৫ মিটার । সম্ভবত সাড়ে ৪ হাজার বছরেরও আগে বেলে পাথর দ্বারা নির্মিত এই মূর্তি 

 একটা বিষয়ে মিশরীয়রা বরাবরই চুপ থেকেছে । সেটি হল কীভাবে পিরামিড তৈরি হল । এ বিষয়ে কোথাও স্পষ্ট করে কোনো প্রমাণ তাঁরা রেখে যায়নি । সাধারণ মানুষের পক্ষে ১৪৫ মিটার উচ্চতায় কয়েক টন ওজনের পাথর উঠানো সম্ভব ছিল নাকি সেগুলো ছিল জায়ান্টদের কাজ । তাহলে কারা পিরামিড বানিয়েছিল ? কেন এত বড় পাথর ব্যবহার করা হল অনেকেই বলেন -  ভিনগ্রহ বাসীরা এটা তৈরি করেছিল অথবা হাজার হাজার মিশরীয় দাস বছরের পর বছর টন টন পাথর কেটে এনে এই পিরামিডগুলো বানিয়েছিল । বর্তমানকালের বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন হাজার হাজার মানুষ মিলে বছরের পর বছর এত কষ্ট সহ্য করে পিরামিডগুলো বানিয়েছিল । ভিনগ্রহ বাসীরা পিরামিড তৈরি করেছিল এর তেমন শক্ত প্রমাণ নেই । ফারাওদের সময়ে হাজার হাজার ইহুদী মিশরে দাস হিসাবে ছিল । তারা ছিল অত্যাচারিত । অনেকে ভাবেন এই দাসদের দিয়েই পিরামিড তৈরি করা হয়েছিল । এখানে খনন করা হচ্ছেআরো হবে এবং একদিন হয়ত পুরো পিরামিডের রহস্যই আমরা উদঘাটন করে জানতে পারব । পিরামিড দেখার জন্য প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক মিশরে আসেন ।

 আমরা কি বর্তমানের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি পিরামিড বানাতে পারব ? আপনার কি মনে হয় ।

আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । ইতিহাস ও জানা অজানা বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে ইতিহাস ও জানা অজানা লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।  
Comment

Class XI Political Science

Class XII Political Science

Class 12 Bangla Books Question& Answers