তাইপিং বিদ্রোহ :
চিনে মাঞ্চু রাজবংশের অপশাসনের বিরুদ্ধে যে সমস্ত বিদ্রোহ সংগঠিত হয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল তাইপিং বিদ্রোহ। তাইপিং কথার অর্থ হল স্বর্গীয় শান্তি বা মহান শান্তি।
খ্রিষ্টীয় প্রোটেস্ট্যান্ট চিন্তাধারার প্রভাবে এক ধরণের সমাজতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো তৈরী করাই তাইপিং বিদ্রোহীদের মূল উদ্দেশ্য।
তাইপিং বিদ্রোহের কারণ :
তবে এই বিদ্রোহের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ লক্ষ্য করা যায়।
দেশবাসীর দুর্দশা : উনিশ শতকের মাঝামাঝি চিনের সাধারণ মানুষ চরম দুর্দশার শিকার হন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মুদ্রাসংকট, বেকারত্ব প্রভৃতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
সরকারের অপদার্থতা : চিনের দুর্বল ও অপদার্থ মাঞ্চু সরকারের সময়ে দেশে ব্যাপক অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এই সরকারের প্রতি জনগনের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়।
নানকিংএর অপমানজনক সন্ধি : প্রথম অহিফেন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মাঞ্চু সরকার বিদেশী শক্তির সাথে নানকিংএর অপমানজনক সন্ধি করতে বাধ্য হয়। এই ঘটনা জনগনের জনগনের মধ্যে মাঞ্চু সরকারের প্রতি অসন্তুষ্ট করে তোলে।
কর্মচারীদের দুর্নীতি : মাঞ্চু সরকারের কর্মচারীরা ছিল সীমাহীন দুর্নীতিগ্রস্থ লোভী ও অত্যাচারী। তারা কৃষকদের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে তা আদায়ে তীব্র অত্যাচার শুরু করে।
বিদেশিদের আধিপত্য : চিনে বিদেশিদের আধিপত্যের ফলে চিনারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বিদেশিরা চিনে অর্থনৈতিক লুন্ঠন চালায়। বিদেশি পণ্যের দাপটে চিনা শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংসের মুখে পড়ে। চিনারা কর্মহীন হয়ে পড়ে।
ধর্ম জগতে সংকট : বৌদ্ধ ধর্মের সংসার বৈরাগ্য, তাও ধর্মের নানা কুসংস্কার, কনফুসীয়দের প্রাচীন বিদ্যায় পাণ্ডিত্যাতিমান এই তিন ভিন্ন প্রকৃতির ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য চীনাদের দিশেহারা করে তোলে। সেই সঙ্গে খৃষ্ট ধর্মের প্রচার দেশের ধর্মীয় অবস্থাকে অধিকতর জটিল করে তোলে।
সমাজের দরিদ্র্য শ্রেণীর উপর নিপীড়ণ : মাঞ্চু শাসনকালে চিনা সমাজে কৃষক, শ্রমিক, কারিগর, মিস্ত্রিসহ দরিদ্র্য সাধারণ জনগোষ্ঠী ছিল নিপীড়িত ও নির্যাতিত। ফলে তারা এই সমাজব্যবস্থার প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল।
এই সমস্ত পরিস্থিতি ও তৎজনিত অসন্তোষ বিদ্রোহের আকারে আত্মপ্রকাশ করে। এর মূল লক্ষ্য ছিল, পুরাতন শাসন ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিয়ে নতুন শাসন ও সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
তাইপিং বিদ্রোহের সূচনা :
এই বিদ্রোহের প্রাণপুরুষ ছিলেন হ্যাং-শিউ-চুয়ান। মূলত এই সমস্ত কারণকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজেকে ঈশ্বরের সন্তান বলে ঘোষণা করেন। ১৮৪৪ সালে ঈশ্বর সেবকদের সংস্থা গঠন করে নতুন ধর্মপ্রচার শুরু করেন। তিনি মাঞ্চু শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। তাঁর ডাকে হাজার হাজার সাধারণ কৃষক, শ্রমিক, ও বেকার মানুষ তাঁর দলে যোগ দেয়। ১৮৫০ সালে শুরু হয়ে যায় ঐতিহাসিক তাইপিং বিদ্রোহ বা আন্দোলন।
তাইপিং বিপ্লবের ফলাফল :
১. চীনাদের প্রশাসনিক পদলাভ: তাইপিং আন্দোলন শেষে মাঞ্চু সরকার কার্যত গদিচ্যুত হন।
২. প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ শুরু: তাইপিং বিপ্লবের অভিজ্ঞতা মাঞ্চু শাসকদেরকে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণে উৎসাহিত করে। পূর্বে প্রাদেশিক শাসকগণ কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারতো না। কিন্তু বিদ্রোহের প্রদেশের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কোন জাতীয় সমস্যা সমাধানে মাঞ্চু সরকার প্রাদেশিক কর্মচারীদের সাথে পরামর্শ করা যুক্তিসংগত মনে করে।
৩. বেসরকারী সেনাবাহিনীর অগ্রদূত: বিদ্রোহ দমনে নিয়োজিত হিউনান যুগে বেসরকারী সেনাবাহিনীর অগ্রগামী হিসাবে গণ্য হয়।
৪. বিপ্লবের পরিবেশ বজায় রাখা: আন্দোলন দমনের পর অবশিষ্ট তাইপিংগণ আত্মগোপন করে এবং Heverand Earth Society তে যোগদান করে বিপ্লবের পরিবেশ সঞ্জীবিত করে রাখে।
৫. পরবর্তী বিপ্লবীদের উপর প্রভাব সৃষ্টি: তাইপিং বিপ্লব পরবর্তী বিপ্লবীদের উপর প্রভাব সৃষ্টি করে।
চীনা প্রজাতন্ত্রের জনক সান ইয়াৎ সেন তার রাজনৈতিক অনুপ্রেরণার জন্য তাইপিংদের নিকট বহুলাংশে ঋণী। তার তৃতীয় নীতি সাম্যবাদ তাইপিংদের ভূমি ব্যবস্থা সম্পর্কিত নীতি দ্বারা প্রভান্বিত হয়।
সাম্যবাদী নেতৃবৃন্দ এই আন্দোলনের আদার্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় এবং সাম্যবাদী আন্দোলন জোরদার করেন।
তাইপিং আন্দোলন একদিকে যেমন সাম্যবাদী চীনের উত্থানের পশ্চাতে আদর্শগত প্রেরণা যোগায়। তেমনি অন্যদিকে ১৯১১ সালের প্রজাতন্ত্র আন্দোলনের পথও প্রস্তুত করে।
চিনে মাঞ্চু রাজবংশের অপশাসনের বিরুদ্ধে যে সমস্ত বিদ্রোহ সংগঠিত হয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল তাইপিং বিদ্রোহ। তাইপিং কথার অর্থ হল স্বর্গীয় শান্তি বা মহান শান্তি।
খ্রিষ্টীয় প্রোটেস্ট্যান্ট চিন্তাধারার প্রভাবে এক ধরণের সমাজতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো তৈরী করাই তাইপিং বিদ্রোহীদের মূল উদ্দেশ্য।
তাইপিং বিদ্রোহের কারণ :
তবে এই বিদ্রোহের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ লক্ষ্য করা যায়।
দেশবাসীর দুর্দশা : উনিশ শতকের মাঝামাঝি চিনের সাধারণ মানুষ চরম দুর্দশার শিকার হন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মুদ্রাসংকট, বেকারত্ব প্রভৃতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
সরকারের অপদার্থতা : চিনের দুর্বল ও অপদার্থ মাঞ্চু সরকারের সময়ে দেশে ব্যাপক অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এই সরকারের প্রতি জনগনের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়।
নানকিংএর অপমানজনক সন্ধি : প্রথম অহিফেন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মাঞ্চু সরকার বিদেশী শক্তির সাথে নানকিংএর অপমানজনক সন্ধি করতে বাধ্য হয়। এই ঘটনা জনগনের জনগনের মধ্যে মাঞ্চু সরকারের প্রতি অসন্তুষ্ট করে তোলে।
কর্মচারীদের দুর্নীতি : মাঞ্চু সরকারের কর্মচারীরা ছিল সীমাহীন দুর্নীতিগ্রস্থ লোভী ও অত্যাচারী। তারা কৃষকদের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে তা আদায়ে তীব্র অত্যাচার শুরু করে।
বিদেশিদের আধিপত্য : চিনে বিদেশিদের আধিপত্যের ফলে চিনারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বিদেশিরা চিনে অর্থনৈতিক লুন্ঠন চালায়। বিদেশি পণ্যের দাপটে চিনা শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংসের মুখে পড়ে। চিনারা কর্মহীন হয়ে পড়ে।
ধর্ম জগতে সংকট : বৌদ্ধ ধর্মের সংসার বৈরাগ্য, তাও ধর্মের নানা কুসংস্কার, কনফুসীয়দের প্রাচীন বিদ্যায় পাণ্ডিত্যাতিমান এই তিন ভিন্ন প্রকৃতির ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য চীনাদের দিশেহারা করে তোলে। সেই সঙ্গে খৃষ্ট ধর্মের প্রচার দেশের ধর্মীয় অবস্থাকে অধিকতর জটিল করে তোলে।
সমাজের দরিদ্র্য শ্রেণীর উপর নিপীড়ণ : মাঞ্চু শাসনকালে চিনা সমাজে কৃষক, শ্রমিক, কারিগর, মিস্ত্রিসহ দরিদ্র্য সাধারণ জনগোষ্ঠী ছিল নিপীড়িত ও নির্যাতিত। ফলে তারা এই সমাজব্যবস্থার প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল।
এই সমস্ত পরিস্থিতি ও তৎজনিত অসন্তোষ বিদ্রোহের আকারে আত্মপ্রকাশ করে। এর মূল লক্ষ্য ছিল, পুরাতন শাসন ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিয়ে নতুন শাসন ও সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
তাইপিং বিদ্রোহের সূচনা :
এই বিদ্রোহের প্রাণপুরুষ ছিলেন হ্যাং-শিউ-চুয়ান। মূলত এই সমস্ত কারণকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজেকে ঈশ্বরের সন্তান বলে ঘোষণা করেন। ১৮৪৪ সালে ঈশ্বর সেবকদের সংস্থা গঠন করে নতুন ধর্মপ্রচার শুরু করেন। তিনি মাঞ্চু শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। তাঁর ডাকে হাজার হাজার সাধারণ কৃষক, শ্রমিক, ও বেকার মানুষ তাঁর দলে যোগ দেয়। ১৮৫০ সালে শুরু হয়ে যায় ঐতিহাসিক তাইপিং বিদ্রোহ বা আন্দোলন।
তাইপিং বিপ্লবের ফলাফল :
১. চীনাদের প্রশাসনিক পদলাভ: তাইপিং আন্দোলন শেষে মাঞ্চু সরকার কার্যত গদিচ্যুত হন।
২. প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ শুরু: তাইপিং বিপ্লবের অভিজ্ঞতা মাঞ্চু শাসকদেরকে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণে উৎসাহিত করে। পূর্বে প্রাদেশিক শাসকগণ কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারতো না। কিন্তু বিদ্রোহের প্রদেশের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কোন জাতীয় সমস্যা সমাধানে মাঞ্চু সরকার প্রাদেশিক কর্মচারীদের সাথে পরামর্শ করা যুক্তিসংগত মনে করে।
৩. বেসরকারী সেনাবাহিনীর অগ্রদূত: বিদ্রোহ দমনে নিয়োজিত হিউনান যুগে বেসরকারী সেনাবাহিনীর অগ্রগামী হিসাবে গণ্য হয়।
৪. বিপ্লবের পরিবেশ বজায় রাখা: আন্দোলন দমনের পর অবশিষ্ট তাইপিংগণ আত্মগোপন করে এবং Heverand Earth Society তে যোগদান করে বিপ্লবের পরিবেশ সঞ্জীবিত করে রাখে।
৫. পরবর্তী বিপ্লবীদের উপর প্রভাব সৃষ্টি: তাইপিং বিপ্লব পরবর্তী বিপ্লবীদের উপর প্রভাব সৃষ্টি করে।
চীনা প্রজাতন্ত্রের জনক সান ইয়াৎ সেন তার রাজনৈতিক অনুপ্রেরণার জন্য তাইপিংদের নিকট বহুলাংশে ঋণী। তার তৃতীয় নীতি সাম্যবাদ তাইপিংদের ভূমি ব্যবস্থা সম্পর্কিত নীতি দ্বারা প্রভান্বিত হয়।
সাম্যবাদী নেতৃবৃন্দ এই আন্দোলনের আদার্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় এবং সাম্যবাদী আন্দোলন জোরদার করেন।
তাইপিং আন্দোলন একদিকে যেমন সাম্যবাদী চীনের উত্থানের পশ্চাতে আদর্শগত প্রেরণা যোগায়। তেমনি অন্যদিকে ১৯১১ সালের প্রজাতন্ত্র আন্দোলনের পথও প্রস্তুত করে।