দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তেল সম্পদের সংকোচনের ফলে আমেরিকার পরিবহন ও শিল্পক্ষেত্রে সংকট দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের উপর প্রাধান্য বিস্তারের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার মার্কিন পদক্ষেপকে 'তেল কূটনীতি' (OIL DIPLOMACY) বলে।
তেল কূটনীতির লক্ষ্য :
আমেরিকা সহ অন্য ইউরোপীয় দেশগুলির তেল কূটনীতির লক্ষ্য ছিল মূলত তিনটি :
১) তেল-সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে নিরঙ্কুশ নিজের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করা।
২) তেল কূটনীতি ও তেল-বাণিজ্য নিজ নিয়ন্ত্রণে রেখে সমগ্র বিশ্বরাজনীতিতে নিজের প্রাধান্য বজায় রাখা।
৩) তেল-বাণিজ্য থেকে প্রাপ্ত মুনাফার দ্বারা নিজের অর্থনীতিকে মজবুত করা।
উপসাগরীয় সংকট :
প্রকৃতপক্ষে তেল কূটনীতির সূচনা হয় বিশ শতকের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্যে বিপুল পরিমাণ তেলের ভান্ডার খুঁজে পাওয়ার পরপরই। প্রথমে ব্রিটেন ও রাশিয়া এবং পরে আমেরিকা এই সম্পদের ওপর নিজের আধিপত্য কায়েম করতে গেলে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ফলে উপসাগরীয় অঞ্চলে গভীর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এই ঘটনা উপসাগরীয় সংকট নামে পরিচিত।
উপসাগরীয় সংকটের (প্রকৃতি) পটভূমি :
উপসাগরীয় সংকটের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই এর প্রকৃতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ব্রিটেনের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ব্রিটেন মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। ১৯০৮ সালে অ্যাংলো-ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানি গড়ে তোলার মাধ্যমে তার সূচনা হয়।
রুশ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা : এই সময় রাশিয়াও ইরানের উত্তরাংশে তেল সম্পদের ওপর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে। ১৯১৭ সালে রাশিয়া এই বিশেষ অধিকার ছেড়ে দেয়। কিন্তু ১৯৪৪ সালে সেই অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে।
আমেরিকার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা : তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদের দিকে হাত বাড়ালে সংকট গভীরতর আকার নেয়। তেল কূটনীতি নতুন মাত্রা পায়।
তৈলখনির জাতীয়করণ : আমেরিকা ও ব্রিটেনের প্ররোচনায় ইরান তার তৈলখনিগুলিকে জাতীয়করণ করলে (১৯৫১) রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয়।
ইরান ও কুয়েত আক্রমণ : মার্কিন সাহায্য নিয়ে ইরাকের ইরান আক্রমণ ও পরবর্তীকালে মার্কিন শক্তিকে উপেক্ষা করে কুয়েত আক্রমণের ঘটনা উপসাগরীয় সংকটকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
মূলত এই অঞ্চলে ইউরোপ ও বিশেষ করে আমেরিকা নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়েই উপসাগরীয় সংকটের জন্ম দেয় এবং এই অঞ্চলে ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রসার ঘটায়। আর এই সূত্রেই পরপর তিনটি যুদ্ধ সংঘটিত হয় - ১) ইরান-ইরাক যুদ্ধ (১৯৮০-৮৮) ২) ইরাক-কুয়েত যুদ্ধ (১৯৯০-৯১) ৩) দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ (২০০৩)।
মূল্যায়ন (প্রভাব) :
সুতরাং দেখা যাচ্ছে আমেরিকার উদ্যোগে তেল কূটনীতির নতুন বিন্যাস উপসাগরীয় সংকটের জন্য অনেকাংশেই দায়ী। এই অঞ্চলে আমেরিকার আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মরিয়া চেষ্টাই উপসাগরীয় সংকটকে গভীর করে তুলেছিল। ইরাকের রাষ্ট্রপতি সাদ্দম হোসেনের কুয়েত আক্রমণের মত অবিবেচনাপ্রসূত, হটকারী সিদ্ধান্তও এক্ষেত্রে পরক্ষে সহায়ক ভূমিকা নিয়েছিল।
সর্বোপরি উপসাগরীয় যুদ্ধে জয়লাভের ফলে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। আমেরিকা একমেরু বিশ্বের দিকে একধাপ এগিয়ে যায়।
তেল কূটনীতির লক্ষ্য :
আমেরিকা সহ অন্য ইউরোপীয় দেশগুলির তেল কূটনীতির লক্ষ্য ছিল মূলত তিনটি :
১) তেল-সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে নিরঙ্কুশ নিজের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করা।
২) তেল কূটনীতি ও তেল-বাণিজ্য নিজ নিয়ন্ত্রণে রেখে সমগ্র বিশ্বরাজনীতিতে নিজের প্রাধান্য বজায় রাখা।
৩) তেল-বাণিজ্য থেকে প্রাপ্ত মুনাফার দ্বারা নিজের অর্থনীতিকে মজবুত করা।
উপসাগরীয় সংকট :
প্রকৃতপক্ষে তেল কূটনীতির সূচনা হয় বিশ শতকের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্যে বিপুল পরিমাণ তেলের ভান্ডার খুঁজে পাওয়ার পরপরই। প্রথমে ব্রিটেন ও রাশিয়া এবং পরে আমেরিকা এই সম্পদের ওপর নিজের আধিপত্য কায়েম করতে গেলে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ফলে উপসাগরীয় অঞ্চলে গভীর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এই ঘটনা উপসাগরীয় সংকট নামে পরিচিত।
উপসাগরীয় সংকটের (প্রকৃতি) পটভূমি :
উপসাগরীয় সংকটের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই এর প্রকৃতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ব্রিটেনের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ব্রিটেন মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। ১৯০৮ সালে অ্যাংলো-ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানি গড়ে তোলার মাধ্যমে তার সূচনা হয়।
রুশ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা : এই সময় রাশিয়াও ইরানের উত্তরাংশে তেল সম্পদের ওপর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে। ১৯১৭ সালে রাশিয়া এই বিশেষ অধিকার ছেড়ে দেয়। কিন্তু ১৯৪৪ সালে সেই অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে।
আমেরিকার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা : তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদের দিকে হাত বাড়ালে সংকট গভীরতর আকার নেয়। তেল কূটনীতি নতুন মাত্রা পায়।
তৈলখনির জাতীয়করণ : আমেরিকা ও ব্রিটেনের প্ররোচনায় ইরান তার তৈলখনিগুলিকে জাতীয়করণ করলে (১৯৫১) রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয়।
ইরান ও কুয়েত আক্রমণ : মার্কিন সাহায্য নিয়ে ইরাকের ইরান আক্রমণ ও পরবর্তীকালে মার্কিন শক্তিকে উপেক্ষা করে কুয়েত আক্রমণের ঘটনা উপসাগরীয় সংকটকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
মূলত এই অঞ্চলে ইউরোপ ও বিশেষ করে আমেরিকা নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়েই উপসাগরীয় সংকটের জন্ম দেয় এবং এই অঞ্চলে ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রসার ঘটায়। আর এই সূত্রেই পরপর তিনটি যুদ্ধ সংঘটিত হয় - ১) ইরান-ইরাক যুদ্ধ (১৯৮০-৮৮) ২) ইরাক-কুয়েত যুদ্ধ (১৯৯০-৯১) ৩) দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ (২০০৩)।
মূল্যায়ন (প্রভাব) :
সুতরাং দেখা যাচ্ছে আমেরিকার উদ্যোগে তেল কূটনীতির নতুন বিন্যাস উপসাগরীয় সংকটের জন্য অনেকাংশেই দায়ী। এই অঞ্চলে আমেরিকার আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মরিয়া চেষ্টাই উপসাগরীয় সংকটকে গভীর করে তুলেছিল। ইরাকের রাষ্ট্রপতি সাদ্দম হোসেনের কুয়েত আক্রমণের মত অবিবেচনাপ্রসূত, হটকারী সিদ্ধান্তও এক্ষেত্রে পরক্ষে সহায়ক ভূমিকা নিয়েছিল।
সর্বোপরি উপসাগরীয় যুদ্ধে জয়লাভের ফলে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। আমেরিকা একমেরু বিশ্বের দিকে একধাপ এগিয়ে যায়।