Tuesday, 7 April 2020

জাতীয়তাবাদ, জাতি ও রাষ্ট্র সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

জাতীয়তাবাদ, জাতি ও রাষ্ট্র
প্রশ্ন ১। আন্তর্জাতিকতাবাদ কাকে বলে?
উত্তর: বিশ্বের বিভিন্ন জাতিগুলি পারস্পরিক অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এক বিস্তৃত আনুগত্যবােধের মধ্য দিয়ে যে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববােধ গড়ে তােলে, তাকে আন্তর্জাতিকতাবাদ বলে। গােল্ডস্মিথের মতে, A Feeling that the individual is a citizen of the world.
প্রশ্ন ২। এক জাতি এক রাষ্ট্র বলতে কী বােঝ?
উত্তর: প্রতিটি জাতির জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের নীতিকে এক জাতি এক রাষ্ট্র বা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বলে (One Nation-One State)
প্রশ্ন ৩। ‘জাতীয়তাবাদ’ বলতে কী বােঝায়?
উত্তর: ‘জাতীয়তাবাদ’ বলতে একটি ভাবগত ও মানসিক ধারণাকে বােঝায়। জাতীয়তাবাদ হল জনসমাজের মধ্যে এক গভীর ঐক্যবােধ বা স্বাতন্ত্র্যবােধ। কোনাে জনসমাজ ভাবগত ঐক্যবােধের ভিত্তিতে একাত্ম হলে এবং নিজেদের স্বতন্ত্রসত্তা সম্বন্ধে সচেতন হলে জাতীয়তাবােধের সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন ৪। জাতীয় জনসমাজ কাকে বলে?
উত্তর: ‘জাতীয় জনসমাজ’ হল একটি নির্দিষ্ট ভৌগােলিক সীমার মধ্যে বসবাসকারী এমন এক জনসমাজ যাদের মধ্যে বংশ, ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য ও বিভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও ইতিহাসগত ও রাজনৈতিক স্মৃতিগত এক দৃঢ় ঐক্যের বন্ধন গড়ে উঠেছে এবং যারা অন্যান্য জনসমাজ থেকে নিজেদের স্বতন্ত্র বলে মনে করে।
প্রশ্ন ৫। জনসমাজ ও জাতীয় জনসমাজের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
উত্তর: জনসমাজ ও জাতীয় জনসমাজের মধ্যে পার্থক্য হল এই যে, জনসমাজের মধ্যে রাষ্ট্রনৈতিক চেতনা জাগ্রত হলে তা জাতীয় জনসমাজে পরিণত হয়। জাতীয় জনসমাজকে রাষ্ট্রনৈতিক চেতনাসম্পন্ন জনসমাজ বলে গণ্য করা যায়।
প্রশ্ন ৬। আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে লেনিনের বক্তব্য কী?
উত্তর : লেনিন জাতিগত সমস্যাকে শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লবের সঙ্গে সংযুক্ত করেন। সাম্রাজ্যবাদীর বিরুদ্ধে পরাধীন জাতিগুলির মুক্তি আন্দোলন হল গণতান্ত্রিক আন্দোলন। এর ফলে শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে আন্তর্জাতিকতাবাদ সৃষ্টি হবে।
প্রশ্ন ৭। জাতি কাকে বলে?
উত্তর: স্বাধীন রাষ্ট্রে বসবাসকারী অথবা স্বাধীনতার জন্য সচেষ্ট রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ জনসমাজকে জাতি বলে। রাষ্টবিজ্ঞানী বার্জেস বলেছেন, “পরস্পর সন্নিহিত কোনাে ভৌগােলিক অঞ্চলের বসবাসকারী এক জনসমাজ যদি একই ভাষা ও সাহিত্য, একই ইতিহাস ও ঐতিহ্য, একই আচার-ব্যবহার, একই ধরনের ন্যায়-অন্যায় ও সুখ-দুঃখের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয় তখন তাকে জাতি বলে।
প্রশ্ন ৮। জাতি ও জাতীয় জনসমাজের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
উত্তর: জাতি ও জাতীয় জনসমাজের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করেছেন লর্ড ব্রাইস। জাতীয় জনসমাজ হল ভাষা, সাহিত্য, ধ্যানধারণা, রীতিনীতি ও ঐতিহ্য প্রভৃতির বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ এমন একটি জনসমষ্টি যা অনুরূপভাবে ঐক্যবদ্ধ জনসমষ্টি থেকে নিজেকে পৃথক বলে মনে করে না। অপরদিকে জাতি হল রাষ্ট্রনৈতিকভাবে সংগঠিত এক জনসমাজ যা বহিঃশােষণ থেকে মুক্ত হবার চেষ্টা করছে।
প্রশ্ন ৯। আন্তর্জাতিকতাবাদ’ বলতে কী বােঝ?
উত্তর: আন্তর্জাতিকতাবাদ হল একটি ভাবগত বা মানসিক অনুভূতি। এই অনুভূতির জন্য ব্যক্তি নিজেকে নিজ রাষ্ট্রের নাগরিক ভাবার পাশাপাশি বিশ্ব নাগরিক হিসাবেও নিজেকে ভাবতে শেখে। এর মূল উদ্দেশ্য হল সাম্য ও সহযােগিতার ভিত্তিতে এক প্রীতিপূর্ণ বিশ্বসমাজের প্রতিষ্ঠা।
প্রশ্ন ১০। জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নীতির কয়েকজন প্রবক্তার নাম লেখাে।
উত্তর: জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নীতির কয়েকজন প্রবক্তা হলেন প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন, বিখ্যাত ইংরেজ দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল, মার্কসবাদী তাত্ত্বিক লেনিন ও স্তালিন।
প্রশ্ন ১১। জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের সপক্ষে চারটি যুক্তি দাও।
উত্তর: (ক) প্রতিটি জাতিরই নিজস্ব মৌলিক বৈশিষ্ট্যের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বীকৃতি প্রয়ােজন।
(খ) জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের নীতি স্বীকৃত হলে সরকার জনগণের সব অংশের সমর্থনের ভিত্তিতে ক্ষমতাসীন হয়। এর ফলে জনগণ স্বেচ্ছায় আইন মেনে চলে।
(গ) আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নীতিটি জাতীয় গুণাবলির বিকাশে সহায়ক।
(ঘ) ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বার্থে এই অধিকারের স্বীকৃতি প্রয়ােজন।
প্রশ্ন ১২। জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিপক্ষে দুটি যুক্তি দাও।
উত্তর: (ক) এই নীতি কার্যকর করতে গেলে বহুরাষ্ট্রকে ভেঙে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
(খ) বহু জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র গঠিত হলেই যে জাতিগত বিরােধ বা সংঘর্ষের সম্ভাবনা থাকবে না, একথা জোর দিয়ে বলা যায় না।
প্রশ্ন ১৩। আন্তর্জাতিক রাজনীতি কাকে বলে?
উত্তর: মরগেনথাউ-এর মতে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি হল মূলত ক্ষমতার লড়াই। কয়েকজন লেখকের মতে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি মূলত বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে শক্তিগত সংঘর্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আলােচনা করে। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি মূলত আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলােচনা করে।
প্রশ্ন ১৪। ‘জনসমাজ’ বলতে কী বােঝায়?
উত্তর: সংকীর্ণ অর্থে জনসমাজ’ বলতে বােঝায় সেই জনসমষ্টিকে যারা একই ভূখণ্ডে বসবাস করে, যাদের ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস, আচার-আচরণ অভিন্ন এবং যাদের অধিকারবােধ ও অভিযােগে ঐক্যের সন্ধান পাওয়া যায়। ব্যাপক অর্থে ‘জনসমাজ’ বলতে বােঝায় সেই জনসমষ্টিকে যাদের ভাষা, সাহিত্য, প্রথা, ধর্ম ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিভিন্নতা সত্ত্বেও কোনাে একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বহুকাল ধরে বসবাস করে একই রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে এবং তাদের মধ্যে দীর্ঘকালব্যাপী পারস্পরিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপের আদানপ্রদান লক্ষ করা যায়।
প্রশ্ন ১৫। জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: (ক) রাষ্ট্রের প্রধান উপাদান চারটি—জনসমষ্টি, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, সরকার ও সার্বভৌমত্ব। কিন্তু জাতিগঠনের মূল উপাদান জাতীয় জনসমাজের মধ্যে গভীর ঐক্যবােধ ও রাজনৈতিক চেতনা।
(খ) রাষ্ট্রের সীমানা জাতির সীমানার চেয়ে ছােটো। এবং
(গ) রাষ্ট্র একটি আইনগত ধারণা। কিন্তু জাতির ধারণা ভাবগত।
প্রশ্ন ১৬। জাতীয় জনসমাজের প্রধান উপাদানগুলি কী কী?
উত্তর: জাতীয় জনসমাজের প্রধান উপাদানগুলি হল— ভৌগােলিক সান্নিধ্য, বংশগত ঐক্য, ভাষাগত ঐক্য, ধর্মগত ঐক্য, রাজনৈতিক ঐক্য, অর্থনৈতিক সমস্বার্থ ও ভাবগত উপাদান।
প্রশ্ন ১৭। জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের অর্থ কী?
উত্তর: প্রত্যেক জাতির পৃথক রাষ্ট্রগঠনের দাবি বা জাতীয় জনসমাজে নিজের রাজনৈতিক ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের দাবিকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বলে। অর্থাৎ জাতীয়তার ভিত্তিকে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের অধিকারকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বলে। এই তত্ত্ব অনুসারে এক একটি জাতি নিয়ে এক একটি রাষ্ট্র গঠিত হবে।
প্রশ্ন ১৮। জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিরােধী দুজন প্রবক্তার নাম লেখাে।
উত্তর: লর্ড অ্যাক্টন, লর্ড কার্জন জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিরােধী।
প্রশ্ন ১৯। জাতীয়তাবাদী ধারণার কয়েকজন মুখ্য প্রবক্তার নাম লেখাে।
উত্তর: চার্লস লয়েড, রাসেল, ল্যাস্কি, ম্যাৎসিনি, জিমান প্রমুখরা জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রবক্তা।
প্রশ্ন ২০। জাতীয়তাবাদের সীমাবদ্ধতা কী?
উত্তর: (ক) উগ্র জাতীয়তাবােধ জাত্যাভিমান সৃষ্টি করে সভ্যতার সংকট ডেকে আনে।
(খ) ল্যাস্কির মতে, ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে জাতীয়তাবাদ সাম্রাজ্যবাদে রূপান্তরিত হয়। এবং
(গ) উগ্র জাতীয়তাবাদ বিশ্বশান্তির বিরােধী ও অন্যায়ের উৎস।
প্রশ্ন ২১। “বিকৃত জাতীয়তাবাদ” বলতে তুমি কী বােঝ?
উত্তর: জাতীয়তাবাদ যখন আদর্শভ্রষ্ট হয়ে সংকীর্ণ স্বাদেশিকতা ও উগ্র জাত্যভিমানে পরিণত হয় তখন তাকে বিকৃত জাতীয়তাবাদ বলা হয়।
প্রশ্ন ২২। আন্তর্জাতিকতাবাদের কয়েকজন প্রবক্তার নাম লেখাে।
উত্তর: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, দান্তে, মার্কস, লেনিন প্রমুখ মনীষীরা আন্তর্জাতিকতাবাদের সমর্থক।
প্রশ্ন ২৩। আন্তর্জাতিকতাবাদের উপযােগিতা কী?
উত্তর (ক) উগ্র জাতীয়তাবাদের হাত থেকে বিশ্বসভ্যতা রক্ষা করে।
(খ) পৃথিবীর সভ্য জাতিসমূহের সমৃদ্ধি ও উন্নতি এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক সহযােগিতা বৃদ্ধি করে। এবং
(গ) বিশ্বশান্তি ও সৌভ্রাতৃত্ব রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রয়ােজন। 
প্রশ্ন ২৪। আন্তর্জাতিকতাবাদের আসল বক্তব্য কী?
উত্তর আন্তর্জাতিকতাবাদের আসল বক্তব্য হল “নিজে বাঁচ এবং অপরকে বাঁচাও’ (Live and Let Live)
প্রশ্ন ২৫। কার্জন আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে দু-দিকে ধার আছে এমন একটি অস্ত্র বলে বর্ণনা করেছেন কেন?
উত্তর: লর্ড কার্জন আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে দু-দিকে ধার আছে এমন একটি অস্ত্র বলে বর্ণনা করেছেন। কারণ, এই নীতিটি যেমন একদিকে রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা জোগায়, অন্যদিকে তেমনি ভিন্ন ভিন্ন জাতিকে বিচ্ছিন্ন করে তাদের সংহতি বিনষ্ট করে এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক ঘৃণা, সন্দেহ, বিদ্বেষ প্রভৃতির জন্ম দেয়। ফলে যুদ্ধের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন ২৬। আদর্শ জাতীয়তাবাদের প্রকৃতি কী?
উত্তর: জাতীয়তাবাদের মহান আদর্শ গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণার অনুপন্থী হিসাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। এই আদর্শ জাতিকে আত্মপ্রত্যয়ের যেমন শিক্ষা দেয়, তেমনি সমস্ত ক্ষুদ্রতা ও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা জোগায়। বস্তুত, আদর্শ জাতীয়তাবাদ ‘নিজে বাঁচ, অপরকে বাঁচতে দাও’—এই সুমহান আদর্শ প্রচার করে বিশ্বসভ্যতার প্রগতির পথ উন্মুক্ত করেছে।
Comment

Class XI Political Science

Class XII Political Science

Class 12 Bangla Books Question& Answers