জাতীয়তাবাদ, জাতি ও রাষ্ট্র
প্রশ্ন ১) জাতির সংজ্ঞা দাও। জাতির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে।
উত্তর : মানবসমাজের বিবর্তনের ইতিহাসে জনসমাজ, জাতীয় জনসমাজ এবং জাতি নির্দিষ্ট রূপকে সূচিত করে। একটি জনসমাজের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটলে তাকে জাতীয় জনসমাজ বলে। রাজনৈতিক চেতনা সম্বন্ধে জনসমাজ যখন নিজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষার জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তােলার জন্য সচেষ্ট হয় অথবা স্বাধীন রাষ্ট্রে বসবাস করে, তখন এই সংগঠিত জাতীয় জনসমাজকে জাতি বলে। অধ্যাপক গিলকাইস্টের মতে একটি রাষ্টের অধীনে সুগঠিত জনসমাজকে জাতি বলা হয়।
উদাহরণস্বরুপ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের আগে ভারত একটি জাতীয় জনসমাজ ছিল। পরবর্তীকালে ভারতীয়দের মধ্যে সক্রিয় রাজনৈতিক চেতনা আবির্ভাবের ফলে ভারতীয়গণ সংগঠিত জাতিতে রপান্তরিত হয়। সুতরাং জাতীয় জনসমাজের সঙ্গে রাজনৈতিক সংগঠন যুক্ত হলেই জাতি সৃষ্টি হল।
এর বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করা হল—(i) একটি সরকার সম্পর্কে ধারণা। (ii) সব জনগােষ্ঠীর মধ্যে গভীর সম্পর্ক। (iii) মােটামুটিভাবে একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড। (iv) ভাষা, বর্ণ, ধর্ম ও জাতীয় চরিত্রগত ঐক্যবােধ। (v) বিভিন্ন জনগােষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা করা এবং জনগণের মধ্যে জাতীয় মনােভাবের উপস্থিতি।
উদাহরণস্বরুপ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের আগে ভারত একটি জাতীয় জনসমাজ ছিল। পরবর্তীকালে ভারতীয়দের মধ্যে সক্রিয় রাজনৈতিক চেতনা আবির্ভাবের ফলে ভারতীয়গণ সংগঠিত জাতিতে রপান্তরিত হয়। সুতরাং জাতীয় জনসমাজের সঙ্গে রাজনৈতিক সংগঠন যুক্ত হলেই জাতি সৃষ্টি হল।
এর বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করা হল—(i) একটি সরকার সম্পর্কে ধারণা। (ii) সব জনগােষ্ঠীর মধ্যে গভীর সম্পর্ক। (iii) মােটামুটিভাবে একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড। (iv) ভাষা, বর্ণ, ধর্ম ও জাতীয় চরিত্রগত ঐক্যবােধ। (v) বিভিন্ন জনগােষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা করা এবং জনগণের মধ্যে জাতীয় মনােভাবের উপস্থিতি।
প্রশ্ন ২) “এক জাতি এক রাষ্ট্র”– এই তত্ত্বটির সমালােচনা উল্লেখ করাে।
উত্তর : লর্ড অ্যাক্টন, লর্ড কার্জন প্রভৃতি চিন্তাবিদরা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নীতির বিভিন্ন দিক দিয়ে সমালােচনা করেছেন। কারণ-
প্রথমত, এই অধিকার স্বীকৃত হলে বড়াে বড়াে রাষ্ট্র ভেঙে অনেক ছােটো ছােটো রাষ্ট্র তৈরি হবে। ছােটো দেশ সুইজারল্যান্ড তিনটি রাষ্ট্রে পরিণত হবে। ইউরােপের আঠাশটি দেশ ভেঙে আটষট্টিটি হবে। এতে সীমানা নিয়ে আরও বেশি বিরােধ দেখা যাবে। বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত হবে। এছাড়া, বড়াে রাষ্ট্রের নাগরিকরা যা মর্যাদা পায়, ছােটো রাষ্ট্রের নাগরিকরা তা পাবে না।
দ্বিতীয়ত, “এক জাতি, এক রাষ্ট” নীতি কার্যকর হলে, অনেক ছােটো রাষ্ট্র গড়ে উঠবে। তারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হতে পারবে না। ফলে শক্তিশালী রাষ্ট্রের তাঁবেদার হিসাবে তাদের থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে তাদের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হবে।
তৃতীয়ত, এই নীতিকে বাস্তবে রূপ দেওয়া খুব শক্ত। কারণ, একই ভৌগােলিক পরিবেশে বিভিন্ন জাতি দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করায়, তারা এমনভাবে মিশে গেছে যে তাদের পৃথক করা প্রায় অসম্ভব।
চতুর্থত, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সব সময় কোনাে জাতির পক্ষে আশীর্বাদ নাও হতে পারে। লর্ড অ্যাক্টন বলেছেন—“অনুন্নত জাতি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের দাবি না জানিয়ে, যদি উন্নত জাতির সঙ্গে বসবাস করে, তাহলে উন্নত জাতির সংস্পর্শে এসে তারা বরং উন্নত হতে পারবে।”
পঞ্চমত, “এক জাতি, এক রাষ্ট্র” নীতি একটা জাতির পক্ষে আশীর্বাদ নাও হতে পারে। বিশেষ করে ছােটো ছােটো রাষ্ট্রগুলি অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত হতে পারে। যেমন, ভারত ও পাকিস্তান ভাগ হলে পশ্চিমবঙ্গের পাটশিল্পের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
ষষ্ঠত, এই দাবি স্বীকৃত হলে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি জন্ম নেবে। তাতে জাতীয় সংহতি বিনষ্ট হবে।
সপ্তমত, এই নীতি একবার স্বীকৃত হলে বড়াে রাষ্ট্র ভাঙতে ভাঙতে তা শেষ পর্যন্ত এমন পর্যায়ে পৌঁছােবে যে তার পরিণতি ভয়ংকর হতে পারে। শেষ পর্যন্ত হয়তাে দেখা যাবে, সেই ভাঙনের ঢেউ গ্রামের সীমানায় এসে পৌঁছে গেছে।
অষ্টমত, বলা হয় একাধিক জাতি নিয়ে গঠিত রাষ্ট্র দুর্বল হবে, ঐক্য থাকবে না। কিন্তু একথা সত্য নয়। সুইজারল্যান্ড বহু জাতিভিত্তিক দেশ। তথাপি সে ঐক্যবদ্ধ। অনেক জাতি নিয়ে গঠিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী।
নবমত, উইলসন বলেছেন,—এই নীতি স্বীকৃত হলে সংখ্যালঘুদের সমস্যা মিটবে। শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের ভিত্তিতে পাকিস্তান গঠিত হলেও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং উপমহাদেশে অশান্তি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রথমত, এই অধিকার স্বীকৃত হলে বড়াে বড়াে রাষ্ট্র ভেঙে অনেক ছােটো ছােটো রাষ্ট্র তৈরি হবে। ছােটো দেশ সুইজারল্যান্ড তিনটি রাষ্ট্রে পরিণত হবে। ইউরােপের আঠাশটি দেশ ভেঙে আটষট্টিটি হবে। এতে সীমানা নিয়ে আরও বেশি বিরােধ দেখা যাবে। বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত হবে। এছাড়া, বড়াে রাষ্ট্রের নাগরিকরা যা মর্যাদা পায়, ছােটো রাষ্ট্রের নাগরিকরা তা পাবে না।
দ্বিতীয়ত, “এক জাতি, এক রাষ্ট” নীতি কার্যকর হলে, অনেক ছােটো রাষ্ট্র গড়ে উঠবে। তারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হতে পারবে না। ফলে শক্তিশালী রাষ্ট্রের তাঁবেদার হিসাবে তাদের থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে তাদের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হবে।
তৃতীয়ত, এই নীতিকে বাস্তবে রূপ দেওয়া খুব শক্ত। কারণ, একই ভৌগােলিক পরিবেশে বিভিন্ন জাতি দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করায়, তারা এমনভাবে মিশে গেছে যে তাদের পৃথক করা প্রায় অসম্ভব।
চতুর্থত, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সব সময় কোনাে জাতির পক্ষে আশীর্বাদ নাও হতে পারে। লর্ড অ্যাক্টন বলেছেন—“অনুন্নত জাতি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের দাবি না জানিয়ে, যদি উন্নত জাতির সঙ্গে বসবাস করে, তাহলে উন্নত জাতির সংস্পর্শে এসে তারা বরং উন্নত হতে পারবে।”
পঞ্চমত, “এক জাতি, এক রাষ্ট্র” নীতি একটা জাতির পক্ষে আশীর্বাদ নাও হতে পারে। বিশেষ করে ছােটো ছােটো রাষ্ট্রগুলি অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত হতে পারে। যেমন, ভারত ও পাকিস্তান ভাগ হলে পশ্চিমবঙ্গের পাটশিল্পের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
ষষ্ঠত, এই দাবি স্বীকৃত হলে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি জন্ম নেবে। তাতে জাতীয় সংহতি বিনষ্ট হবে।
সপ্তমত, এই নীতি একবার স্বীকৃত হলে বড়াে রাষ্ট্র ভাঙতে ভাঙতে তা শেষ পর্যন্ত এমন পর্যায়ে পৌঁছােবে যে তার পরিণতি ভয়ংকর হতে পারে। শেষ পর্যন্ত হয়তাে দেখা যাবে, সেই ভাঙনের ঢেউ গ্রামের সীমানায় এসে পৌঁছে গেছে।
অষ্টমত, বলা হয় একাধিক জাতি নিয়ে গঠিত রাষ্ট্র দুর্বল হবে, ঐক্য থাকবে না। কিন্তু একথা সত্য নয়। সুইজারল্যান্ড বহু জাতিভিত্তিক দেশ। তথাপি সে ঐক্যবদ্ধ। অনেক জাতি নিয়ে গঠিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী।
নবমত, উইলসন বলেছেন,—এই নীতি স্বীকৃত হলে সংখ্যালঘুদের সমস্যা মিটবে। শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের ভিত্তিতে পাকিস্তান গঠিত হলেও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং উপমহাদেশে অশান্তি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রশ্ন ৩) জাতীয় জনসমাজ বলতে কী বােঝ? এর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে।
উত্তর : জাতীয় জনসমাজ হল জনসমাজের এক উন্নত স্তর বিশেষ। জনসমাজের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা জাগ্রত হলে জাতীয় জনসমাজের উদ্ভব হয়। ইংরেজি Nationality শব্দটির দ্বারা জাতীয় ঐক্যের চেতনা বা জাতীয় ভাবকেও বােঝানাে হয়। জনসমাজের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা জাগ্রত হলে তারা নিজেদের সরকার গঠন করতে চায় এবং জাতীয় জনসমাজে রূপান্তরিত হয়।
যেসব কারণে একটি জনসমষ্টি জাতীয় জনসমাজে উন্নীত হয়, সেই ঐক্যের উপাদানগুলিকে জাতীয় জনসমাজের উপাদান বলে। এই উপাদানগুলিকে দুভাগে ভাগ করা যায়। (ক) বাহ্যিক উপাদান এবং (খ) ভাবগত উপাদান।
জাতীয় জনসমাজের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল-(i) ঐক্যবদ্ধ সমাজচেতনা সম্পন্ন জনসমাজ। (ii) লর্ড ব্রাইসের মতে, নিজেদের মধ্যে ঐক্য এবং অপরাপর জনগােষ্ঠী থেকে পার্থক্যবােধ জাতীয় জনসমাজের বৈশিষ্ট্য। (iii) এখানে আছে সামাজিক ঐক্যবােধ, রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন মানুষ। (iv) উন্নত মানসিকতা —এই মানসিকতার পরিচয় না দিলে তাদের জাতীয় জনসমাজ বলে গণ্য করা যায় না।
যেসব কারণে একটি জনসমষ্টি জাতীয় জনসমাজে উন্নীত হয়, সেই ঐক্যের উপাদানগুলিকে জাতীয় জনসমাজের উপাদান বলে। এই উপাদানগুলিকে দুভাগে ভাগ করা যায়। (ক) বাহ্যিক উপাদান এবং (খ) ভাবগত উপাদান।
জাতীয় জনসমাজের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল-(i) ঐক্যবদ্ধ সমাজচেতনা সম্পন্ন জনসমাজ। (ii) লর্ড ব্রাইসের মতে, নিজেদের মধ্যে ঐক্য এবং অপরাপর জনগােষ্ঠী থেকে পার্থক্যবােধ জাতীয় জনসমাজের বৈশিষ্ট্য। (iii) এখানে আছে সামাজিক ঐক্যবােধ, রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন মানুষ। (iv) উন্নত মানসিকতা —এই মানসিকতার পরিচয় না দিলে তাদের জাতীয় জনসমাজ বলে গণ্য করা যায় না।
প্রশ্ন ৪) জাতীয়তাবাদ কাকে বলে? জাতীয়তাবাদের কী কী বৈশিষ্ট্য আছে?
উত্তর : জাতীয়তাবাদ হল স্বজাতির প্রতি ভালােবাসা। দেশের মানুষকে আপন করে নেবার মানসিকতা। এটি একটি মহৎ রাজনৈতিক আদর্শ। পরাধীন জাতিকে শৃঙ্খলিমােচনের সংগ্রামে এই আদর্শ প্রেরণা দিয়েছে। জাতীয় ঐক্যসাধনের ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদের কোনাে বিকল্প নেই।
যখন কোনাে জনসমষ্টি বংশ, ভাষা, ধর্ম প্রভৃতি কারণে ঐক্যবদ্ধ হয় তখন তাদের বলা হয় জনসমাজ। যখন এই জনসমাজের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা জাগে, তখন তাদের বলা হয় জাতীয় জনসমাজ। জাতীয় জনসমাজের মানুষেরা প্রত্যেকে অপরের সুখ-দুঃখে সমান অংশীদার বলে মনে করে। অন্য জনসমাজ থেকে নিজেদের পৃথক বলে ভাবতে শেখে। প্রত্যেকে নিজেদের ভাষা, ধর্ম,
সাহিত্য ইত্যাদির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়। এগুলিকে সংরক্ষণ করার জন্য তাদের মধ্যে পৃথক রাষ্ট্র গঠনের ইচ্ছা জাগে। এই চেতনা তাদের ঐক্যবােধকে গভীরতর করে। জাতির প্রতি এই ভালােবাসা ও একাত্ববােধের নাম হল জাতীয়তাবাদ। তাই রাসেল (Russell) বলেছেন, “জাতীয়তাবাদ হল ঐক্যের অনুভূতি।”
জাতীয়তাবাদের বৈশিষ্টগুলি আলােচনা করা হল-(i) নিজেদের মধ্যে গভীর ঐক্যবােধ গড়ে তােলে। (ii) অন্যান্য জনসমাজ থেকে স্বাতন্ত্র্যবােধের জন্ম দেয়। (iii) ভিন্ন ভিন্ন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির জাতীয়তাবাদ, যেমন— উপ-জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি করে। (iv) অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে, জাতীয়তাবাদের ভিত্তি হল মানুষের সত্তা পাবার ইচ্ছা যা থেকে স্বাতন্ত্রশাসন প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা গড়ে ওঠে।
যখন কোনাে জনসমষ্টি বংশ, ভাষা, ধর্ম প্রভৃতি কারণে ঐক্যবদ্ধ হয় তখন তাদের বলা হয় জনসমাজ। যখন এই জনসমাজের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা জাগে, তখন তাদের বলা হয় জাতীয় জনসমাজ। জাতীয় জনসমাজের মানুষেরা প্রত্যেকে অপরের সুখ-দুঃখে সমান অংশীদার বলে মনে করে। অন্য জনসমাজ থেকে নিজেদের পৃথক বলে ভাবতে শেখে। প্রত্যেকে নিজেদের ভাষা, ধর্ম,
সাহিত্য ইত্যাদির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়। এগুলিকে সংরক্ষণ করার জন্য তাদের মধ্যে পৃথক রাষ্ট্র গঠনের ইচ্ছা জাগে। এই চেতনা তাদের ঐক্যবােধকে গভীরতর করে। জাতির প্রতি এই ভালােবাসা ও একাত্ববােধের নাম হল জাতীয়তাবাদ। তাই রাসেল (Russell) বলেছেন, “জাতীয়তাবাদ হল ঐক্যের অনুভূতি।”
জাতীয়তাবাদের বৈশিষ্টগুলি আলােচনা করা হল-(i) নিজেদের মধ্যে গভীর ঐক্যবােধ গড়ে তােলে। (ii) অন্যান্য জনসমাজ থেকে স্বাতন্ত্র্যবােধের জন্ম দেয়। (iii) ভিন্ন ভিন্ন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির জাতীয়তাবাদ, যেমন— উপ-জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি করে। (iv) অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে, জাতীয়তাবাদের ভিত্তি হল মানুষের সত্তা পাবার ইচ্ছা যা থেকে স্বাতন্ত্রশাসন প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা গড়ে ওঠে।
প্রশ্ন ৫) “প্রকৃত জাতীয়তাবাদ সভ্যতার শত্রু নয়” ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : জাতীয়তাবাদ হল জাতির প্রতি ভালােবাসা। দেশের মানুষকে আপন করে নেবার মানসিকতা। এটি একটি মহৎ রাজনৈতিক আদর্শ। পরাধীন জাতিকে শৃঙ্খলমােচনের সংগ্রামে এই আদর্শ প্রেরণা দিয়েছে। জাতীয় ঐক্য সাধনের ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদের কোনাে বিকল্প নেই। প্রকৃত জাতীয়তাবাদ সভ্যতার শত্রু নয়। কারণ-
প্রথমত, প্রকৃত জাতীয়তাবাদের নীতি হল,—নিজে বাঁচ ও অপরকে বাঁচতে দাও। এর উদ্দেশ্য হল, —বিভিন্ন জাতির মধ্যে সহযােগিতার সম্পর্ক গড়ে তােলা। একমাত্র এরই মাধ্যমে বিশ্বসভ্যতা সমৃদ্ধ হতে পারে। তাই এটি আন্তর্জাতিকতার বিরােধী নয়।।
দ্বিতীয়ত, প্রকৃত জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত হলে জাতি নিজস্ব রাষ্ট্র গঠন করে নিজেদের বৈশিষ্ট্যকে বিকাশ করতে পারবে। এইভাবে প্রত্যেক জাতি বিকশিত হলে বিশ্বের সভ্যতার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। ম্যাৎসিনি যথার্থই বলেছেন, “প্রত্যেক জাতির কতকগুলি গুণ থাকে এবং সেগুলি একত্রে মানবজাতির অমূল্য সম্পদ।”
তৃতীয়ত, সাম্রাজ্যবাদ অপর জাতিকে শােষণ করে। বিশ্বের সভ্যতাকে ধ্বংস করে। বিভিন্ন দেশের মানুষেরা জাতীয়তাবাদের মন্ত্রে অনুপ্রাণিত হলে আন্দোলনের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংস হবে। তাতে বিশ্বের সভ্যতা বাঁচবে।
চতুর্থত, প্রকৃত জাতীয়তাবাদ দেশের প্রতি ভালােবাসা জাগায়। দেশের প্রতি এই ভালােবাসা দেশের ঐক্য ও সংহতি গড়ে তােলে। তাতে দেশের সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হয়।
প্রথমত, প্রকৃত জাতীয়তাবাদের নীতি হল,—নিজে বাঁচ ও অপরকে বাঁচতে দাও। এর উদ্দেশ্য হল, —বিভিন্ন জাতির মধ্যে সহযােগিতার সম্পর্ক গড়ে তােলা। একমাত্র এরই মাধ্যমে বিশ্বসভ্যতা সমৃদ্ধ হতে পারে। তাই এটি আন্তর্জাতিকতার বিরােধী নয়।।
দ্বিতীয়ত, প্রকৃত জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত হলে জাতি নিজস্ব রাষ্ট্র গঠন করে নিজেদের বৈশিষ্ট্যকে বিকাশ করতে পারবে। এইভাবে প্রত্যেক জাতি বিকশিত হলে বিশ্বের সভ্যতার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। ম্যাৎসিনি যথার্থই বলেছেন, “প্রত্যেক জাতির কতকগুলি গুণ থাকে এবং সেগুলি একত্রে মানবজাতির অমূল্য সম্পদ।”
তৃতীয়ত, সাম্রাজ্যবাদ অপর জাতিকে শােষণ করে। বিশ্বের সভ্যতাকে ধ্বংস করে। বিভিন্ন দেশের মানুষেরা জাতীয়তাবাদের মন্ত্রে অনুপ্রাণিত হলে আন্দোলনের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংস হবে। তাতে বিশ্বের সভ্যতা বাঁচবে।
চতুর্থত, প্রকৃত জাতীয়তাবাদ দেশের প্রতি ভালােবাসা জাগায়। দেশের প্রতি এই ভালােবাসা দেশের ঐক্য ও সংহতি গড়ে তােলে। তাতে দেশের সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হয়।
প্রশ্ন ৬) জাতীয়তাবাদের কী কী ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা আছে?
উত্তর : বিভিন্ন মনীষী ও রাজনীতিবিদ জাতীয়তাবাদের সমালােচনা করেছেন। তাদের যুক্তি হল—
(i) মানবসভ্যতা বিপন্ন করে : জাতীয়তাবাদ যদি অন্ধ আবেগের উপর নির্ভরশীল হয় তবে তার পরিণতি ভয়াবহ হয়। এর ফলে একটি জাতি নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করে এবং অন্যকে অবজ্ঞা করে। জন্ম দেয় বিকৃত জাতীয়তাবাদের। মানবসভ্যতা বিপন্ন হয়।
(ii) অগ্রগতি ব্যাহত হয় : উগ্র জাতীয়তাবাদ জাতিকে কুপমণ্ডুক ও রক্ষণশীল করে তােলে। নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অন্যেরও ক্ষতি করে। দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হয়।
(iii) বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত হয় : বিকৃত জাতীয়তাবাদ যুদ্ধ ডেকে আনে। এর ফলে বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত হয়। স্বৈরতন্ত্র মাথা চাড়া দেয়। সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র উৎসাহিত হয়। সাম্রাজ্যবাদের নিষ্ঠুর আক্রমণে লক্ষ লক্ষ মানুষ অত্যাচারিত হয়।
(iv) অগণতান্ত্রিক : জাতীয়তাবাদের হিংস্র চেহারা গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণার বিরােধী। উগ্র জাতীয়তাবাদ সমস্ত অন্যায় ও অমঙ্গলের উৎস। তবে প্রকৃত দেশপ্রেম জাতীয়তাবাদের আদর্শের মধ্যে মূর্ত হলে অধ্যাপক হায়েসের (Hayes) ভাষায় তা হবে ‘বিশ্ব সভ্যতা এবং মানব সভ্যতার কাছে আশীর্বাদস্বরূপ।
(i) মানবসভ্যতা বিপন্ন করে : জাতীয়তাবাদ যদি অন্ধ আবেগের উপর নির্ভরশীল হয় তবে তার পরিণতি ভয়াবহ হয়। এর ফলে একটি জাতি নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করে এবং অন্যকে অবজ্ঞা করে। জন্ম দেয় বিকৃত জাতীয়তাবাদের। মানবসভ্যতা বিপন্ন হয়।
(ii) অগ্রগতি ব্যাহত হয় : উগ্র জাতীয়তাবাদ জাতিকে কুপমণ্ডুক ও রক্ষণশীল করে তােলে। নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অন্যেরও ক্ষতি করে। দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হয়।
(iii) বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত হয় : বিকৃত জাতীয়তাবাদ যুদ্ধ ডেকে আনে। এর ফলে বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত হয়। স্বৈরতন্ত্র মাথা চাড়া দেয়। সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র উৎসাহিত হয়। সাম্রাজ্যবাদের নিষ্ঠুর আক্রমণে লক্ষ লক্ষ মানুষ অত্যাচারিত হয়।
(iv) অগণতান্ত্রিক : জাতীয়তাবাদের হিংস্র চেহারা গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণার বিরােধী। উগ্র জাতীয়তাবাদ সমস্ত অন্যায় ও অমঙ্গলের উৎস। তবে প্রকৃত দেশপ্রেম জাতীয়তাবাদের আদর্শের মধ্যে মূর্ত হলে অধ্যাপক হায়েসের (Hayes) ভাষায় তা হবে ‘বিশ্ব সভ্যতা এবং মানব সভ্যতার কাছে আশীর্বাদস্বরূপ।
প্রশ্ন ৭) আন্তর্জাতিকতাবাদের সংজ্ঞা দাও। আন্তর্জাতিকতাবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?
উত্তর : আন্তর্জাতিকতার সংজ্ঞা সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি। কেউ কেউ বলেছেন,—আন্তর্জাতিকতা বলতে বােঝায় জাতীয় রাষ্ট্রের পরিবর্তে বিশ্বরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এই সংজ্ঞা গ্রহণযােগ্য নয়। কারণ, অনেকে মনে করেন, প্রত্যেক জাতির মধ্যে বিশেষ গুণ আছে। সেই গুণগুলি বিকশিত হলে বিশ্বের সভ্যতা সমৃদ্ধ হবে। তাই জিমান বলেছেন, —“জাতীয়তাবাদের
পথ ধরে আন্তর্জাতিকতায় পৌঁছানাে যায়।”
তাই বিশ্বসভ্যতার প্রয়ােজনে প্রকৃত জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিশ্বের মানুষকে ভালােবাসতে হবে। এই ভালােবাসার নাম হল আন্তর্জাতিকতা। এটি একটি মানসিক অনুভূতি। এই অনুভূতির ফলে মানুষ নিজেকে বিশ্বের একজন নাগরিক হিসাবে মনে করে। তাদের সুখ-দুঃখে সমান অংশীদার হিসাবে ভাবতে শেখে। “নিজে বাঁচ এবং অপরকে বাঁচতে দাও”—এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়।
এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে প্রত্যেকের মধ্যে অপর জাতির মানুষকে আপন করে নেবার মানসিকতা জাগে। বিশ্বকবির ভাষায় —“দূরকে করিলে নিকট বন্ধু, পরকে করিলে ভাই”। এইভাবে বিশ্বের সবাইকে আপন করে নেবার চিন্তা-ভাবনার নাম হল আন্তর্জাতিকতা।
নিম্নে আন্তর্জাতিকতাবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করা হল—
(i) আন্তর্জাতিকতার আদর্শ মানবজাতির মধ্যে প্রীতি ও ভালােবাসার সম্পর্ক গড়ে তােলে।
(ii) আন্তর্জাতিকতার লক্ষ্য হল সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা। এর আদর্শ প্রত্যেক জাতিকে আত্মত্যাগ করতে শেখায়।
(iii) আন্তর্জাতিকতাবাদ জাতীয়তাবাদকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর জাতীয়তাবাদ যদি নিয়ন্ত্রিত হয় তাহলে জাতীয়তাবাদ বিকৃত হতে পারে না।
(iv) মার্কসবাদী মতে শ্রমিকশ্রেণির আন্তর্জাতিকতার পথে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ইচ্ছাকে দূর করা যায়। দেশপ্রেমের সঙ্গে দুনিয়ার শ্রমিকশ্রেণির গভীর সম্পর্ক আছে।
(v) ‘নিজে বাঁচ এবং অপরকে বাঁচাও’ —হল আন্তর্জাতিকতার প্রধান বৈশিষ্ট্য।
পথ ধরে আন্তর্জাতিকতায় পৌঁছানাে যায়।”
তাই বিশ্বসভ্যতার প্রয়ােজনে প্রকৃত জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিশ্বের মানুষকে ভালােবাসতে হবে। এই ভালােবাসার নাম হল আন্তর্জাতিকতা। এটি একটি মানসিক অনুভূতি। এই অনুভূতির ফলে মানুষ নিজেকে বিশ্বের একজন নাগরিক হিসাবে মনে করে। তাদের সুখ-দুঃখে সমান অংশীদার হিসাবে ভাবতে শেখে। “নিজে বাঁচ এবং অপরকে বাঁচতে দাও”—এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়।
এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে প্রত্যেকের মধ্যে অপর জাতির মানুষকে আপন করে নেবার মানসিকতা জাগে। বিশ্বকবির ভাষায় —“দূরকে করিলে নিকট বন্ধু, পরকে করিলে ভাই”। এইভাবে বিশ্বের সবাইকে আপন করে নেবার চিন্তা-ভাবনার নাম হল আন্তর্জাতিকতা।
নিম্নে আন্তর্জাতিকতাবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করা হল—
(i) আন্তর্জাতিকতার আদর্শ মানবজাতির মধ্যে প্রীতি ও ভালােবাসার সম্পর্ক গড়ে তােলে।
(ii) আন্তর্জাতিকতার লক্ষ্য হল সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা। এর আদর্শ প্রত্যেক জাতিকে আত্মত্যাগ করতে শেখায়।
(iii) আন্তর্জাতিকতাবাদ জাতীয়তাবাদকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর জাতীয়তাবাদ যদি নিয়ন্ত্রিত হয় তাহলে জাতীয়তাবাদ বিকৃত হতে পারে না।
(iv) মার্কসবাদী মতে শ্রমিকশ্রেণির আন্তর্জাতিকতার পথে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ইচ্ছাকে দূর করা যায়। দেশপ্রেমের সঙ্গে দুনিয়ার শ্রমিকশ্রেণির গভীর সম্পর্ক আছে।
(v) ‘নিজে বাঁচ এবং অপরকে বাঁচাও’ —হল আন্তর্জাতিকতার প্রধান বৈশিষ্ট্য।
প্রশ্ন ৮) আন্তর্জাতিকতাবাদের গুরুত্ব কী?
উত্তর : আন্তর্জাতিকতাবাদের অর্থ হল,—বিশ্বের প্রতি ভালােবাসা। এটি একটি মানসিক অনুভূতি। এই অনুভূতির ফলে মানুষ নিজেকে বিশ্বের একজন নাগরিক হিসাবে মনে করে। তার চিন্তাভাবনা নিজের রাষ্ট্রের সীমানা অতিক্রম করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়ােগ করতে উদ্বুদ্ধ হয়। পৃথিবীর প্রত্যেক জাতির মানুষকে আপন করে নেবার মানসিকতা জাগে। বিশ্বকবির ভাষায়, —“দূরকে করিলে নিকট বন্ধু, পরকে করিলে ভাই”। আন্তর্জাতিকতাবাদের গুরুত্বগুলি হল নিম্নরূপ-
(i) বর্তমান যুগ আন্তর্জাতিকতাবাদের যুগ। পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলি নানা কারণে আন্তর্জাতিকতাবাদের উপর দাঁড়িয়ে আছে।।
(ii) কোনাে জাতিই এককভাবে উন্নতি করতে পারে না। কোনাে রাষ্ট্রই আন্তর্জাতিকতাকে আহ্বান না করে বিশ্বে টিকে থাকতে পারে না।
(iii) আজকের দুনিয়ায় প্রতিটি রাষ্ট্রই ভয়াবহ মারণাস্ত্রে সজ্জিত। সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রজোট ইরাক ও আফগানিস্তানের উপর নগ্নভাবে আক্রমণ চালিয়েছে এবং বর্তমানে ইরানকে হুমকি দিচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকতাবাদ একটি মহান আদর্শ যা রাষ্ট্রগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে।
(iv) আন্তর্জাতিকতাবােধ যত পরিণত হবে যুদ্ধের সম্ভাবনা ততই কমে যাবে। এর আদর্শকে রক্ষা করার জন্য জাতিপুঞ্জ নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এইদিক থেকে বিচার করলে আন্তর্জাতিকতাবাদ আজ এক নতুন সাংগঠনিক মাত্রা লাভ করেছে। জওহরলাল নেহরু বলেছেন : “শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিকল্প হল সম্মিলিত ধ্বংস”। আজকের দিনে এর গুরুত্ব সমস্ত বিরােধ-বিতর্কের ঊর্ধ্বে।
(i) বর্তমান যুগ আন্তর্জাতিকতাবাদের যুগ। পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলি নানা কারণে আন্তর্জাতিকতাবাদের উপর দাঁড়িয়ে আছে।।
(ii) কোনাে জাতিই এককভাবে উন্নতি করতে পারে না। কোনাে রাষ্ট্রই আন্তর্জাতিকতাকে আহ্বান না করে বিশ্বে টিকে থাকতে পারে না।
(iii) আজকের দুনিয়ায় প্রতিটি রাষ্ট্রই ভয়াবহ মারণাস্ত্রে সজ্জিত। সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রজোট ইরাক ও আফগানিস্তানের উপর নগ্নভাবে আক্রমণ চালিয়েছে এবং বর্তমানে ইরানকে হুমকি দিচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকতাবাদ একটি মহান আদর্শ যা রাষ্ট্রগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে।
(iv) আন্তর্জাতিকতাবােধ যত পরিণত হবে যুদ্ধের সম্ভাবনা ততই কমে যাবে। এর আদর্শকে রক্ষা করার জন্য জাতিপুঞ্জ নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এইদিক থেকে বিচার করলে আন্তর্জাতিকতাবাদ আজ এক নতুন সাংগঠনিক মাত্রা লাভ করেছে। জওহরলাল নেহরু বলেছেন : “শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিকল্প হল সম্মিলিত ধ্বংস”। আজকের দিনে এর গুরুত্ব সমস্ত বিরােধ-বিতর্কের ঊর্ধ্বে।
প্রশ্ন ৯) “এক জাতি, এক রাষ্ট্র”—এই তত্ত্বটির পক্ষে কী কী যুক্তি দেওয়া হয়?
উত্তর : উড্রো উইলসন, জে. এস. মিল প্রভৃতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সমর্থন করে নিম্নলিখিত যুক্তিগুলি দিয়েছেন—
প্রথমত, প্রত্যেক জাতির নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আছে। ম্যাৎসিনি বলেছেন, —এগুলি হল মানবজাতির সম্পদ। তাই এগুলির সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য সেই জাতিকে পৃথক রাষ্ট্র গড়তে দেওয়া উচিত। বহুজাতি বা জনগােষ্ঠীকে নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হলে সংখ্যালঘু জাতির দাবি উপেক্ষিত হবে। ফলে তাদের বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টি হবে।
দ্বিতীয়ত, এই অধিকার গণতান্ত্রিক। গণতন্ত্রের অর্থ হল জনগণের শাসন। কোনাে জাতি নিজস্ব রাষ্ট্র গঠন করার সুযােগ পেলে তারা নিজেদের শাসনব্যবস্থায় ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করার সুযােগ পাবে। বিভিন্ন জাতি নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হলে, সংখ্যালঘুরা এই সুযােগ পাবে না।
তৃতীয়ত, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উড্রো উইলসন বলেছেন, —'”ই অধিকার স্বীকৃত হলে, পৃথিবী থেকে যুদ্ধ দূর হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।” কারণ, কোনাে জাতির স্বাধীনতার অধিকার উপেক্ষিত হলে যুদ্ধের মাধ্যমে তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হবে। কিন্তু যুদ্ধ শান্তির পথকে কণ্টকিত করে। তাই তিনি সাবধান করে দিয়ে বলেছেন,—“আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার একটি কথার কথা নয়, এটি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য।”
চতুর্থত, একটি ফুলের বাগানে বিভিন্ন ধরনের ফুল ফুটলে যেমন বাগানের শােভা বৃদ্ধি পায়, তেমনি প্রত্যেক জাতি আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পেয়ে আপন বৈশিষ্ট্যে বিকশিত হলে, বিশ্বসভ্যতার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।
পঞ্চমত, বিভিন্ন জাতি একই রাষ্ট্রে বসবাস করলে তাদের মধ্যে অবিরাম জাতিগত সংঘর্ষ লেগে থাকবে। তাতে রাষ্ট্রের মধ্যে ঐক্য থাকবে না। রাষ্ট্রের ভিত দুর্বল হবে। একটি জাতি নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হলেরাষ্ট্র শক্তিশালী হবে।
ষষ্ঠত, প্রতিটি জাতির জন্যে পৃথক রাষ্ট্র গঠনের অধিকার একটি নীতিসম্মত অধিকার। বিভিন্ন জাতিকে জোর করে এক রাষ্ট্রে বসবাস করতে বাধ্য করা নীতিসম্মত নয়। বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাসেল বলেছেন, কোনাে নারীকে তার ঘৃণা করা পুরুষকে বিয়ে করতে বাধ্য করলে যা অবস্থা হবে, কোনাে জনসমাজকে অন্য জনসমাজের অধীনে থাকতে বাধ্য করলে সেই অবস্থা হবে।”
প্রথমত, প্রত্যেক জাতির নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আছে। ম্যাৎসিনি বলেছেন, —এগুলি হল মানবজাতির সম্পদ। তাই এগুলির সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য সেই জাতিকে পৃথক রাষ্ট্র গড়তে দেওয়া উচিত। বহুজাতি বা জনগােষ্ঠীকে নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হলে সংখ্যালঘু জাতির দাবি উপেক্ষিত হবে। ফলে তাদের বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টি হবে।
দ্বিতীয়ত, এই অধিকার গণতান্ত্রিক। গণতন্ত্রের অর্থ হল জনগণের শাসন। কোনাে জাতি নিজস্ব রাষ্ট্র গঠন করার সুযােগ পেলে তারা নিজেদের শাসনব্যবস্থায় ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করার সুযােগ পাবে। বিভিন্ন জাতি নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হলে, সংখ্যালঘুরা এই সুযােগ পাবে না।
তৃতীয়ত, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উড্রো উইলসন বলেছেন, —'”ই অধিকার স্বীকৃত হলে, পৃথিবী থেকে যুদ্ধ দূর হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।” কারণ, কোনাে জাতির স্বাধীনতার অধিকার উপেক্ষিত হলে যুদ্ধের মাধ্যমে তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হবে। কিন্তু যুদ্ধ শান্তির পথকে কণ্টকিত করে। তাই তিনি সাবধান করে দিয়ে বলেছেন,—“আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার একটি কথার কথা নয়, এটি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য।”
চতুর্থত, একটি ফুলের বাগানে বিভিন্ন ধরনের ফুল ফুটলে যেমন বাগানের শােভা বৃদ্ধি পায়, তেমনি প্রত্যেক জাতি আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পেয়ে আপন বৈশিষ্ট্যে বিকশিত হলে, বিশ্বসভ্যতার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।
পঞ্চমত, বিভিন্ন জাতি একই রাষ্ট্রে বসবাস করলে তাদের মধ্যে অবিরাম জাতিগত সংঘর্ষ লেগে থাকবে। তাতে রাষ্ট্রের মধ্যে ঐক্য থাকবে না। রাষ্ট্রের ভিত দুর্বল হবে। একটি জাতি নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হলেরাষ্ট্র শক্তিশালী হবে।
ষষ্ঠত, প্রতিটি জাতির জন্যে পৃথক রাষ্ট্র গঠনের অধিকার একটি নীতিসম্মত অধিকার। বিভিন্ন জাতিকে জোর করে এক রাষ্ট্রে বসবাস করতে বাধ্য করা নীতিসম্মত নয়। বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাসেল বলেছেন, কোনাে নারীকে তার ঘৃণা করা পুরুষকে বিয়ে করতে বাধ্য করলে যা অবস্থা হবে, কোনাে জনসমাজকে অন্য জনসমাজের অধীনে থাকতে বাধ্য করলে সেই অবস্থা হবে।”
প্রশ্ন ১০) ‘ভারত একটি জাতি, এর সমর্থনে যুক্তি দাও।
উত্তর : বর্তমানে ভাষা, ধর্ম, বংশ প্রভৃতি উপাদান জাতি গঠনে অপরিহার্য নয়। সুইজারল্যান্ডের মানুষ বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে। তবুও তারা এক জাতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ বিভিন্ন বংশ থেকে এসেছে। তবুও তারা ঐক্যবদ্ধ একটি জাতি।
প্রকৃতপক্ষে, জাতীয়তাবােধ একটা ভাবগত ধারণা। যদি কোনাে জনসমষ্টি মনে করে তাদের মধ্যে ভাষাগত, ধর্মগত ও বংশগত প্রভৃতি ক্ষেত্রে যতই পার্থক্য থাকুক না কেন, তারা ঐক্যবদ্ধ, তাহলে তারা এক জাতিতে পরিণত হতে পারে।
ভারতের ক্ষেত্রে একথা প্রযােজ্য। এখানে ভাষাগত, ধর্মগত, বংশগত প্রভৃতি ক্ষেত্রে পার্থক্য আছে সত্য। তা সত্ত্বেও ভারতবাসী ভাবগত কারণে ঐক্যবদ্ধ। তাই শক, হুন, পাঠান, মােগল ভারতের দেহে লীন হয়ে ভারতীয় হিসাবে পরিচিত হয়েছে। পাঞ্জাব, গুজরাট, মারাঠা, উল্কল ও বঙ্গের বাসিন্দারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। স্বাধীনতার পরে বিদেশিরা ভারত আক্রমণ করেছে। ভারতবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে তার মােকাবিলা করেছে। দেশপ্রেম ও ঐক্যবদ্ধতা কার্গিল যুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে। এই দেশপ্রেম ও ঐক্যচেতনা ভারতের জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করেছে।
একথা সত্য, ভারতের জাতীয় সংহতি আজ বিপন্ন। সাম্প্রদায়িকতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদের অশুভ শক্তি আত্মপ্রকাশ করেছে। তবে মুষ্টিমেয় স্বার্থান্বেষী গােষ্ঠী বিদেশি মদত পেয়ে এ কাজ করছে। ভারতের জাতীয়তাবাদী মানুষ এই শক্তির বিরুদ্ধে সােচ্চার হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় ভারত এক জাতি।
প্রকৃতপক্ষে, জাতীয়তাবােধ একটা ভাবগত ধারণা। যদি কোনাে জনসমষ্টি মনে করে তাদের মধ্যে ভাষাগত, ধর্মগত ও বংশগত প্রভৃতি ক্ষেত্রে যতই পার্থক্য থাকুক না কেন, তারা ঐক্যবদ্ধ, তাহলে তারা এক জাতিতে পরিণত হতে পারে।
ভারতের ক্ষেত্রে একথা প্রযােজ্য। এখানে ভাষাগত, ধর্মগত, বংশগত প্রভৃতি ক্ষেত্রে পার্থক্য আছে সত্য। তা সত্ত্বেও ভারতবাসী ভাবগত কারণে ঐক্যবদ্ধ। তাই শক, হুন, পাঠান, মােগল ভারতের দেহে লীন হয়ে ভারতীয় হিসাবে পরিচিত হয়েছে। পাঞ্জাব, গুজরাট, মারাঠা, উল্কল ও বঙ্গের বাসিন্দারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। স্বাধীনতার পরে বিদেশিরা ভারত আক্রমণ করেছে। ভারতবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে তার মােকাবিলা করেছে। দেশপ্রেম ও ঐক্যবদ্ধতা কার্গিল যুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে। এই দেশপ্রেম ও ঐক্যচেতনা ভারতের জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করেছে।
একথা সত্য, ভারতের জাতীয় সংহতি আজ বিপন্ন। সাম্প্রদায়িকতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদের অশুভ শক্তি আত্মপ্রকাশ করেছে। তবে মুষ্টিমেয় স্বার্থান্বেষী গােষ্ঠী বিদেশি মদত পেয়ে এ কাজ করছে। ভারতের জাতীয়তাবাদী মানুষ এই শক্তির বিরুদ্ধে সােচ্চার হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় ভারত এক জাতি।
প্রশ্ন ১১) জাতীয়তাবাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিকতাবাদের সম্পর্ক লেখাে।
উত্তর : জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদ হল বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক চিন্তাজগতের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় নিয়ে রাষ্টবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। একদল চিন্তাবিদ মনে করেন আন্তর্জাতিকতার অর্থ হল বিশ্বরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা তথা জাতীয় রাষ্ট্রের অবলুপ্তি। আবার কোনাে কোনাে চিন্তাবিদ মনে করেন জাতীয়তার পথ ধরেই আন্তর্জাতিকতায় পৌঁছানাে যায়। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “জাতীয়তাবাদ মানবতার শত্রু”। প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্রনাথ বিকৃত জাতীয়তাবাদের কথাই বলেছেন; পুঁজিবাদের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয়তাবাদ বিকৃত জাতীয়তাবাদে রুপান্তরিত হয়। বিকৃত জাতীয়তাবাদী ধারণার উন্মাদনায় বৃহৎ পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি দুর্বল রাষ্ট্রগুলিতে প্রথমে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আধিপত্য কায়েম করে এবং তারপর সময়মতাে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সামগ্রিক প্রভুত্বের অধিকারী হয়। উগ্র তথা বিকৃত জাতীয়তাবাদই আন্তর্জাতিকতার শত্রু।
কিন্তু আদর্শ জাতীয়তাবাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিকতাবাদের কোনাে বিরােধ নেই। প্রকৃত জাতীয়তাবাদ হল একটি মহান আদর্শ। এই আদর্শ মানুষের মনে দেশপ্রেম সৃষ্টি করে। দেশপ্রেম মানুষকে যেমন দেশের জন্য আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে, তেমনি দেশ ও জাতির ঊর্ধ্বে উঠে বিশ্ববাসীকে ভালােবাসতেও শিক্ষা দেয়। যে স্বদেশ ও স্বজনকে ভালােবাসে সে বিশ্ববাসীকেও ভালােবাসে। প্রকৃত জাতীয়তাবােধই হল আন্তর্জাতিকতাবােধে উত্তরণের অন্যতম সােপান। জিমার্ন এর ভাষায়, “জাতীয়তাবাদের পথেই আন্তর্জাতিকতায় পৌঁছানাে সম্ভব।” প্রকৃত জাতীয়তাবাদ এবং আন্তর্জাতিকতার মূল কথাই হল- “নিজে বাঁচ এবং অন্যকে বাঁচতে দাও”। আদর্শ জাতীয়তাবাদ একটি প্রগতিশীল শক্তি। এটি আন্তর্জাতিকতার সহায়ক।
কিন্তু আদর্শ জাতীয়তাবাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিকতাবাদের কোনাে বিরােধ নেই। প্রকৃত জাতীয়তাবাদ হল একটি মহান আদর্শ। এই আদর্শ মানুষের মনে দেশপ্রেম সৃষ্টি করে। দেশপ্রেম মানুষকে যেমন দেশের জন্য আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে, তেমনি দেশ ও জাতির ঊর্ধ্বে উঠে বিশ্ববাসীকে ভালােবাসতেও শিক্ষা দেয়। যে স্বদেশ ও স্বজনকে ভালােবাসে সে বিশ্ববাসীকেও ভালােবাসে। প্রকৃত জাতীয়তাবােধই হল আন্তর্জাতিকতাবােধে উত্তরণের অন্যতম সােপান। জিমার্ন এর ভাষায়, “জাতীয়তাবাদের পথেই আন্তর্জাতিকতায় পৌঁছানাে সম্ভব।” প্রকৃত জাতীয়তাবাদ এবং আন্তর্জাতিকতার মূল কথাই হল- “নিজে বাঁচ এবং অন্যকে বাঁচতে দাও”। আদর্শ জাতীয়তাবাদ একটি প্রগতিশীল শক্তি। এটি আন্তর্জাতিকতার সহায়ক।
প্রশ্ন ১২) বিকৃত জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকতার বিরােধী এবং সভ্যতার শত্রু -ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : বিকৃত বা উগ্র জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকতার বিরােধী। এই বিকৃতি দুই ধরনের রাজনৈতিক বিকৃতি ও অর্থনৈতিক বিকৃতি।
• রাজনৈতিক বিকৃতি
রাজনৈতিক বিকৃতির ফলে কোনাে জাতি নিজের বংশ, সাহিত্য, ধর্ম, ভাষা প্রভৃতিকে শ্রেষ্ঠ মনে করে। অপরের ভাষা, ধর্ম প্রভৃতিকে হেয় করার চেষ্টা করে। এমনকি যুদ্ধের মাধ্যমে নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে অপর জাতির উপর চাপাতে চেষ্টা করে। এই উগ্র জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকতার শত্রু। জার্মানির হিটলার এই উগ্র জাতীয়তাবাদের মত্ততায় বিশ্বের সভ্যতাকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছিলেন।
• অর্থনৈতিক বিকৃতি
উগ্র জাতীয়তাবাদ আবার অর্থনৈতিক বিকৃতির মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদকে জন্ম দেয়। শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি নিজেদের উৎপাদিত জিনিস বিক্রি করার জন্য বিদেশের বাজার খোঁজে। বাণিজ্যের সুযােগ নিয়ে ধীরে ধীরে তারা সেই দেশের শাসনক্ষমতা দখল করে তাদের সভ্যতাকে ধ্বংস করে। ইংরেজরা এইভাবে ব্যাবসাবাণিজ্যের নাম করে ভারতে এসে ছলে বলে কৌশলে দেশের শাসনক্ষমতা দখল করে ভারতের সভ্যতাকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছিল।
এই ধরনের বিকৃত জাতীয়তাবাদ সভ্যতার পক্ষে আশীর্বাদ হতে পারে না।
• রাজনৈতিক বিকৃতি
রাজনৈতিক বিকৃতির ফলে কোনাে জাতি নিজের বংশ, সাহিত্য, ধর্ম, ভাষা প্রভৃতিকে শ্রেষ্ঠ মনে করে। অপরের ভাষা, ধর্ম প্রভৃতিকে হেয় করার চেষ্টা করে। এমনকি যুদ্ধের মাধ্যমে নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে অপর জাতির উপর চাপাতে চেষ্টা করে। এই উগ্র জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকতার শত্রু। জার্মানির হিটলার এই উগ্র জাতীয়তাবাদের মত্ততায় বিশ্বের সভ্যতাকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছিলেন।
• অর্থনৈতিক বিকৃতি
উগ্র জাতীয়তাবাদ আবার অর্থনৈতিক বিকৃতির মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদকে জন্ম দেয়। শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি নিজেদের উৎপাদিত জিনিস বিক্রি করার জন্য বিদেশের বাজার খোঁজে। বাণিজ্যের সুযােগ নিয়ে ধীরে ধীরে তারা সেই দেশের শাসনক্ষমতা দখল করে তাদের সভ্যতাকে ধ্বংস করে। ইংরেজরা এইভাবে ব্যাবসাবাণিজ্যের নাম করে ভারতে এসে ছলে বলে কৌশলে দেশের শাসনক্ষমতা দখল করে ভারতের সভ্যতাকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছিল।
এই ধরনের বিকৃত জাতীয়তাবাদ সভ্যতার পক্ষে আশীর্বাদ হতে পারে না।