Short Notes on Mauryan Empire (মৌর্য বংশের উত্থান ও পতন)
মগধের সিংহাসনে মৌর্য বংশ প্রতিষ্ঠিত হয় (৩২৪ খ্রীষ্ট পূর্ব)।
চন্দ্রগুপ্ত এর অপর উল্লেখযোগ্য কীর্তি হলো উত্তর পশ্চিম ভারত থেকে গ্রীক শাসনের অবসান ঘটানো।
আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তাঁর বিশাল সাম্রাজ্য তার সেনাপতিদের মধ্যে বিভক্ত হয়। সিরিয়া ও ভারতবর্ষ- সহ পশ্চিম এশিয়া তার সেনাপতি সেলুকাস এর ভাগে পরে। ফলে তাকে চন্দ্রগুপ্ত র মুখোমুখি হতে হয়।
দুই পক্ষের আদৌ কোনো যুদ্ধ হয়েছিল কিনা বা যুদ্ধ হলে তার ফলাফল কি হয়েছিলো সেই সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। অবশ্য তাদের মধ্যে একটা সন্ধির কথা উল্লেখ আছে। সন্ধির শর্ত অনুযায়ী সেলুকাস অনেক জায়গা চন্দ্রগুপ্ত কে ছেড়ে দেন এবং নিজ কন্যা হেলেনের সঙ্গে বিবাহ দেন।
সেলুকাস চন্দ্রগুপ্ত র রাজসভায় মেগাস্থিনিস নামে একজন গ্রীক দূতকে পাঠান। তিনি ৩০৪ খ্রীষ্ট পূর্ব থেকে ২৯৯ খ্রীষ্ট পূর্ব পর্যন্ত পাটলিপুত্রে ছিলেন।
শক রাজা রুদ্রদামণের জুনাগড় শিলালিপি থেকে জানা যায় যে তিনি পশ্চিম ভারতের সৌরাষ্ট্র বা গুজরাট জয় করেন। এখানে তার শাসনকর্তা পুষ্যগুপ্ত জলসচের জন্য সুদর্শন হ্রদ খনন করেন।
এছাড়া তিনি দক্ষিণ ভারত ও জয় করেন বলে জৈন গ্রন্থ থেকে জানতে পারি।
চন্দ্রগুপ্তের সিংহাসন ছেড়ে দেবার পর তাঁর পুত্র বিন্দুসার সিংহাসনে বসেন।
তার উপাধি ছিল আমিত্রাঘাত বা শত্রুনিধনকারি। তার রাজত্বকাল এর কোনও বিশদ বিবরণ পাওয়া যায় না।
পিতার মতো তিনিও গ্রীকদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখেন। সিরিয়ার রাজা সেলুকাস এর পুত্র প্রথম অন্টিওকাস তার রাজসভায় ডেইমেকস নামে এক দূত পাঠান।
মিশর রাজা টলেমি ফিলা- ডেলফাস তার রাজসভায় ডাইওনিসাস নামে জনৈক দূত পাঠান।
বিন্দুসারের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র অশোক মগধের সিংহাসনে বসেন।
পালি ভাষায় রচিত দুটি সিংহলী গ্রন্থ মহাবংশ ও দীপবংশ এবং সংস্কৃত ভাষায় রচিত বৌদ্ধ গ্রন্থ দিব্যবদান থেকেও তার রাজত্বকাল সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায়।
পিতার রাজত্বকালে তিনি উজ্জয়িনি ও তক্ষশিলার শাসনকর্তা ছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর অশোক তার নিরানব্বই জন ভ্রাতা কে হত্যা করে সিংহাসনে বসেন।
২৭৩ খ্রীষ্ট পূর্ব অশোক মগধের সিংহাসনে বসেন। কিন্তু তাঁর রাজ্য অভিষেক হয় চার বছর পর ২৬৯ খ্রীষ্ট পূর্বাবদে।
সম্রাট অশোক রাজ্য অভিষেকের নবম বর্ষে ২৬০ খ্রীষ্ট পুর্বাবদে তিনি বাংলার সুবর্ণরেখা নদী থেকে গোদাবরী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানে অবস্থিত বর্তমান উড়িষ্যা ও অন্ধ্রের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত কলিঙ্গ রাজ্য জয় করেন।
বানিজ্যিক সার্থের তাগিদে মগধের পক্ষে কলিঙ্গ জয় অপরিহার্য ছিল। অশোকের ত্রয়োদশ শিলালিপি থেকে কলিঙ্গ যুদ্ধের বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। এই যুদ্ধে এক লক্ষ লোক নিহত, দেড় লক্ষ লোক বন্দী এবং বহু সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান।
কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতা অশোকের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। তিনি অনুশোচনায় ভোগেন এবং মানসিক শান্তি লাভের আশায় তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন।
তিনি রাজ্য বিজয় এর পরিবর্তে ধম্মবিজয় নীতি গ্রহণ করেন। রাজ্যের সর্বত্র প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ হয়। এমনকি রাজকীয় রন্ধন শালা তেও প্রাণী হত্যা রদ করা হয়। তিনি ঘোষণা করেন যে সকল প্রজাই তার সন্তান।
শুধু মাত্র নিজ রাজ্যেই নয়, তিনি বিভিন্ন দেশেও ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ধর্ম দূতদের পাঠান।
মহারাষ্ট্রে মহাধর্মরক্ষিত, উত্তর কানাডায় রক্ষিত, ব্রহ্ম দেশ ও তার দক্ষিণ পূর্বে শোন ও উত্তর এবং সিংহল এ যান তার পুত্র ও কন্যা মহেন্দ্র ও সংঘমিত্রা।
অশোকের প্রচারের ফলে ভারতীয় স্থাপত্য ও ভাস্কর্য ও যথেষ্ট প্রভাবিত হয়। শিল্পকর্মে তিনি কাঠের পরিবর্তে পাথরের ব্যবহার শুরু করেন।এর ফলে তক্ষন শিল্পে বিবর্তন আসে।
তিনি ৮৪ হাজার স্তূপ নির্মাণ করেন। ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি পালি ভাষা ও ব্রাহ্মী লিপি ব্যবহার করেন।
পৃথিবীর রাজতন্ত্রের ইতিহাসে রাজ কর্তব্যের এমন মহান আদর্শ আর কেউ স্থাপন করেছিলেন বলে জানা যায় না। তাই তাকে রাজর্ষি বলা হয়।
সম্রাট অশোকের মৃত্যু হয় আনুমানিক ২৩২ খ্রিস্ট পূর্বে। তার মৃত্যুর পঞ্চাশ বছরের মধ্যে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
পুরাণ ও বানভট্ট এর হর্ষচরিত এ মগধের শেষ মৌর্য সম্রাট বৃহদ্রথ এর উল্লেখ আছে। তার শুঙ্গ বংশীয় সেনাপতি পুষ্যমিত্র তাকে হত্যা করে মগধের সিংহাসনে বসেন।
এইভাবে মগধের সিংহাসনে মৌর্য বংশের অবসান হয় এবং শুঙ্গ বংশের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
Short Question-Answer on Mauryan Empire (মৌর্য বংশের উত্থান ও পতন)
মৌর্য বংশ কে প্রতিষ্ঠা করেন? উঃ মৌর্য বংশের প্রতিষ্ঠা করেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য।
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য কখন সিংহাসনে আরােহণ করেন ? উঃ চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য খ্রিঃ পূঃ ৩২৪ অব্দে সিংহাসনে আরােহণ করেন।
কোন মৌর্য সম্রাটকে ‘ভারতের প্রথম ঐতিহাসিক সার্বভৌম সম্রাট’ বলা হয় ? উঃ মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে ‘ভারতের প্রথম ঐতিহাসিক সার্বভৌম সম্রাট’ বলা হয়।
মেগাস্থিনিস কে ছিলেন? উঃ মেগাস্থিনিস ছিলেন চন্দ্রগুপ্তের রাজসভায় সেলুকাস প্রেরিত গ্রিক দূত।
ইন্ডিকার লেখক কে? উঃ ইন্ডিকার লেখক হলেন মেগাস্থিনিস।
অর্থশাস্ত্র কে রচনা করেন? উঃ অর্থশাস্ত্র রচনা করেন চাণক্য বা কৌটিল্য।
কৌটিল্য কে ছিলেন? উঃ কৌটিল্য ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থশাস্ত্রের রচয়িতা।
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য কোথায় দেহত্যাগ করেন? উঃ চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য মহীশুর রাজ্যের শ্রবণবেলগােলায় দেহত্যাগ করেন।
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য কোন ধর্মাবলম্বী ছিলেন ? উঃ চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য জৈন ধর্মাবলম্বী ছিলেন।
অমিত্রাঘাত কার উপাধি ? উঃ বিন্দুসারের উপাধি ছিল অমিত্রাঘাত।
মৌর্যবংশের তৃতীয় সম্রাট কে ছিলেন? উঃ মৌর্যবংশের তৃতীয় সম্রাট ছিলেন সম্রাট অশােক।
দেবানামপ্রিয় ও প্রিয়দর্শী উপাধি কে গ্রহণ করেন ? উঃ অশােক দেবানামপ্রিয় ও প্রিয়দর্শী উপাধি গ্রহণ করেন।
অশােকের প্রধানা মহিষী কে ছিলেন ? উঃ অশােকের প্রধানা মহিষী ছিলেন তিষ্যরক্ষিতা।
অশােকবাদ কী ? উঃ বৌদ্ধ ধর্মের সংশােধিত সংস্করণ রূপে অশােকের ধর্মমতকে অশােবাদ বলা হয়।
‘সব মুনিষে পজা মমা (সকল মানুষই আমার সন্তান)–কার উক্তি ? উঃ সম্রাট অশােকের উক্তি।
কে সর্বপ্রথম অশােকের শিলালিপির পাঠোদ্ধার করেন ? উঃ জেমস প্রিন্সেপ সর্বপ্রথম অশােকের শিলালিপির পাঠোদ্ধার করেন।
ভারতে বিদেশি আক্রমণের সুচনা কে করেন? উঃ পারস্যের আকেমনীয় বংশের রাজা কাইরাস বা কুরুস (খ্রিঃ পূঃ ৫৫৮-৫৩০ অব্দ) ভারতে বিদেশি আক্রমণের সূচনা করেন।
আলেকজান্ডার কখন ভারত আক্রমণ করেন ? উঃ আলেকজান্ডার খ্রিঃ পূঃ ৩২৭ অব্দে ভারত আক্রমণ করেন।
তক্ষশিলার কোন ভারতীয় শাসক প্রথমে আলেকজান্ডারের বশ্যতা স্বীকার করেছিলেন ? উঃ তক্ষশিলার রাজা অন্তি প্রথম আলেকজান্ডারের বশ্যতা স্বীকার করেছিলেন।
আলেকজান্ডার কোন দেশের রাজা ছিলেন ? উঃ আলেকজান্ডার গ্রিস দেশের ম্যাসিডনের রাজা ছিলেন।
রেশম পথ (Silk route) কী ? উঃ চিনের বিখ্যাত রেশম বস্ত্রাদি মধ্য এশিয়ার যে পথ ধরে ইরান ও রােম সাম্রাজ্যে বাণিজ্য হত, তা রেশম পথ নামে ইতিহাসে বিখ্যাত।
মৌর্য বংশের শেষ সম্রাটের নাম কী ? উঃ মৌর্য বংশের শেষ সম্রাট ছিলেন বৃহদ্রথ।
পুষ্যমিত্র শুঙ্গা কে ছিলেন ? উঃ পুষ্যমিত্র শুঙ্গ ছিলেন মগধে শুঙ্গবংশের প্রতিষ্ঠাতা যিনি শেষ মৌর্য সম্রাট বৃহদ্রথকে হত্যা করে মগধের সিংহাসনে আরােহণ করেন।
মৌর্যযুগে সমাজ কীসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল ? উঃ মৌর্যযুগের সমাজ বর্ণাশ্রম ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র ছিল সমাজের চারটি প্রধান বর্ণ। এছাড়া ছিল অনেক নীচ বর্ণের মানুষ।
কীভাবে গ্রিসের সঙ্গে ভারতের প্রত্যক্ষ পরিচয়ের সূত্রপাত ঘটে ? উঃ আলেকজান্ডারের ভারত অভিযানের ফলে গ্রিসের সঙ্গে ভারতের প্রত্যক্ষ পরিচয়ের সূত্রপাত ঘটে।
প্রাক-মৌর্য ও মৌর্যযুগের অর্থনৈতিক জীবনের বৈশিষ্ট্য কী ছিল ? উঃ প্রাক-মৌর্য ও মৌর্যযুগের অর্থনৈতিক জীবনের বৈশিষ্ট্য ছিল নগর জীবন ও বাণিজ্য নির্ভরতা।