Tuesday 7 April 2020

প্রাচীন যুগ ভারতের ইতিহাস মগধের উত্থান

Short Notes on Magadha Empire (মগধের উত্থান)

  1. খিষ্টপূর্ব ৬ শতকের মাঝামাঝি সময়ে হর্যঙ্ক বংশীয় রাজা বিম্বিসার মগধের সিংহাসন এ বসেন। তিনি ছিলেন মগধের প্রথম উল্লেখযোগ্য নরপতি এবং তার সময় থেকেই মগধের উত্থানের সূচনা হয়। তার শ্রেনিক বা সেনিয় উপাধি নিয়েও পণ্ডিতরা একমত নন।
  2. বিম্বিসার মাত্র পনেরো বছর বয়সে মগধের সিংহাসনে আরোহণ করেন। সেই সময় মগধের সিংহাসন দক্ষিণ বিহারের পাটনা গয়া জেলার মধ্যে সীমিত ছিল। তিনি মগধের সেনাবাহিনী কে নতুন ভাবে সজ্জিত করেন। তিনি সাধারণ মানুষদের নিয়ে সেনাবাহিনী গঠন করেন।
  3. প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব অর্পিত হলো যুবরাজের উপর।
  4. লোহা নির্মিত অস্ত্র দিয়েও সজ্জিত করা হয় সেনাবাহিনীকে।
  5. বিভিন্ন মহাজনপদগুলির সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তিনি মগধের শক্তি বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হন।
  6. বিম্বিসার এর অন্যতম রাজবৈদ্য ছিলেন জীবক।
  7. তার রাজ্যে ৮০ হাজার গ্রাম ছিল এবং তার রাজধানী ছিল গীরিব্রজ বা বর্তমান রাজগীর।
  8. তার সময় উচ্চ শ্রেণীর কর্মচারী রা তিনভাগে বিভক্ত ছিল। সর্বাথক, ব্যাবহারিক এবং সেনানায়ক।
  9. বিম্বিসার জমি জরিপ করে রাজস্ব ধার্য করতেন।
  10. গ্রামগুলি স্বাতত্ত্ব শাসন ভোগ করতে।
  11. ফসলের এক দশমাংশ কর হিসাবে আদায় করা হতো।
  12. তার আমলে বহু রাস্তাঘাট নির্মিত হয়।
  13. মগধ এ অপরাধীদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা ছিল।
  14. বিম্বিসার বৌদ্ধ ও জৈন দুই ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি বৌধসংঘ কে বেনুবন দান করেন।
  15. মগধের পরবর্তী শাসক ছিলেন বিম্বিসার এর দ্বিতীয় পত্নী লিচ্ছবি রাজকন্যা চেল্ল- নার গর্ভজাত পুত্র অজাতশত্রু। সিংহাসনে আরোহণের পূর্বে তিনি ছিলেন চম্পার শাসক। তার উপাধি ছিল কুনিক। তিনি ছিলেন এই বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক।
  16. তিনি প্রথমেই কোশল এর বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। তিনি লিচ্ছবী রাজ্যের বিরুদ্ধেও তার দ্বিতীয় যুদ্ধ ঘোষণা করেন।
  17. যুদ্ধ চালানোর অসুবিধা দেখা দেওয়ায় অজাতশত্রু গঙ্গা ও শোন নদীর সঙ্গমস্থলে পাটলি গ্রামে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে এখানে মগধের রাজধানী পাটলিপূত্র নগরী গড়ে ওঠে।
  18. অজাতশত্রু যুদ্ধে মহা -শিলা- কণ্টক ও রথমুসল নামে দুটি নতুন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেন। প্রথম টি ছিল একটি উৎক্ষেপণ যন্ত্র,আর দ্বিতীয় টি হলো তীক্ষ্ম লৌহ ফলকযুক্ত এবং ধাতুনির্মিত একধরনের দুর্ভেদ্য রথ।
  19. প্রথম জীবনে বৌদ্ধ বিদ্বেষী হলেও পরবর্তীকালে অজাতশত্রু র মনোভাবে পরিবর্তন আসে এবং তিনি বুদ্ধ দেবের শরণাপন্ন হন। বুদ্ধ দেবের তিরোধানের পর রাজগৃহে যে প্রথম বৌদ্ধ সঙ্গিতির অনুষ্ঠান হয় তাতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।
  20. জৈন ধর্মের প্রতিও তিনি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং মহাবীরের সঙ্গে তার একাধিকবার সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা হয়।
  21. অজাতশত্রু র পর কে বা কারা সিংহাসনে বসেন এই নিয়ে পুরাণ এবং বৌদ্ধ ও জৈন গ্রন্থাদি তে নানা মতপার্থক্য আছে। অজাতশত্রু র পর উদয়ভদ্র বা উদইন , অনিরুদ্ধ, মুণ্ড ও নাগদশক পরপর চারজন রাজা মগধের সিংহাসনে বসেন।
  22. উদয়ভদ্র বা উদয়িন এর প্রধান কৃতিত্ব হলো গঙ্গা ও শোন নদীর সঙ্গম স্থলে পাটলিগ্রমকে কেন্দ্র করে পাটলিপুত্র নগরীর নির্মাণ এবং সেখানে মগধের রাজধানী স্থানান্তর।
  23. তবে অজাতশত্রু র পর পর যারা যারা সিংহাসনে বসেছিলেন তারা সকলেই ছিলেন পিতৃহন্তা ও অযোগ্য শাসক।
  24. এই অবস্থায় সভাসদ শিশুনাগ হর্যঙ্ক বংশের শেষ নরপতি নগদশক কে হত্যা করে মগধের সিংহাসন দখল করেন।
  25. শিশুনাগের পর সিংহাসনে বসেন তার পুত্র কালাশোক বা কাকবর্ণ। তার আমলে মগধ উত্তর ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিতে পরিণত হয়। তিনি স্থায়ী ভাবে মগধের রাজধানী স্থানান্তর করেন পাটলিপূত্রে।
  26. তার আমলে বৈশালি তে দ্বিতীয় বৌদ্ধ সংগীত অনুষ্ঠিত হয়।
  27. হর্ষ চরিত এবং গ্রীক লেখকদের রচনা থেকে জানা যায় যে মহাপদ্ম নন্দ নামে জনৈক শুদ্র বংশীয় ব্যাক্তি কালা- শোক ও তার দশ পুত্র কে ছুরি কা ঘাতে হত্যা করে মগধের সিংহাসনে বসেন। এইভাবে মগধের সিংহাসনে নন্দ বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
  28. নন্দ বংশের রাজত্বকাল ছিল ৩৬৪ থেকে ৩২৪ খ্রিস্ট পূর্ব।
  29. মহাপদ্মনন্দ বিখ্যাত নন্দ বংশের প্রতিষ্ঠাতা।
  30. পুরাণ এবং জৈন ও বৌদ্ধ শাস্ত্র গ্রন্থে তাকে নীচ বংশ সম্ভূত বা শুদ্র বলা হয়েছে।
  31. পুরাণের মতে মহা -পদ্ম নন্দ হলেন শিশুনাগ বংশের শেষ সম্রাট ও এক শুদ্র রমণীর সন্তান।বৌদ্ধ গ্রন্থে তাকে উগ্রসেন অর্থাৎ বিশাল বাহিনীর সেনাপতি বলা হয়েছে।
  32. মহা পদ্মের পূর্বে আর কোনও ভারতীয় নরপতি এত বড়ো সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হতে পারেননি।
  33. পুরাণে তাকে এক -রাট, দ্বিতীয় পরশুরাম বলা হয়েছে।
  34. ডক্টর রধাকুমুদ মুখোপাধ্যায় এর মতে” মহাপদ্ম নন্দ ছিলেন উত্তর ভারতের প্রথম ঐতিহাসিক সম্রাট।”
  35. মহা -পদ্ম -নন্দ এর পর তার আট পুত্র একে একে মগধের সিংহাসনে বসেন। এদের সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
  36. মহা – পদ্ম – নন্দ এবং তার আট জন উত্তরাধিকারী কে একসঙ্গে নবনন্দ বলা হয়।
  37. এই বংশের শেষ রাজা ধননন্দ গ্রীক বীর আলেকজান্ডারে সমসাময়িক ছিলেন। তিনি এক সুবিশাল সাম্রাজ্য ও শক্তিশালী সেনাবাহিনীর অধিপতি ছিলেন। তার সামরিক বলের ভয় এই গ্রীক বীর আলেকজান্ডারের বিশ্ব জয়ী সেনাদল মগধের উপর আক্রমণ হানতে সাহস পায় নি।
  38. বিশাল সেনাবাহিনী পোষণ করার জন্য তিনি জনসাধারণের উপর করের বোঝা চাপিয়ে দেন। এরফলে প্রজাদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। যা চন্দ্রগুপ্ত এর মৌর্য বংশের উত্থানের সহায়ক হয়।
  39. চন্দ্রগুপ্ত র বংশ পরিচয় নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে নানা মতভেদ আছে। কেউ তাকে ক্ষত্রিয় বংশজাত,আবার কেউ তাকে কুল- হীন বলেছেন। আবার বৌধগ্রন্থে তাকে মোরীয় গোষ্ঠীর নেতা র পুত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
  40. চন্দ্রগুপ্ত এর উত্থানের সবথেকে বড় সহায় ছিলেন নন্দ শাসন বিদ্বেষী জনৈক বিচক্ষণ ব্রাহ্মণ চানক্য, কৌটিল্য বা বিষ্ণুগুপ্ত।
  41. চন্দ্রগুপ্ত নন্দ দের উচ্ছেদের জন্য গ্রীক বীর আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ কালে তার সহযোগিতা চান। আলেকজান্ডার তার নির্ভীক আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হত্যার আদেশ দেন। চন্দ্রগুপ্ত কোনরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে বিন্ধের ঘন অরণ্যে আশ্রয় নেন। অরণ্যের যবন, কিরাত, কম্বোজ প্রভৃতি জাতির মানুষ দের নিয়ে তিনি একটি সেনাদল গড়ে তোলেন। অর্থশাস্ত্রে এদের আয়ুধ- জীবিন অর্থাৎ যারা অস্ত্রের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করে বলে বলা হয়েছে।
  42. চন্দ্রগুপ্ত প্রথম বার যখন পাটলিপুত্র র উপর আক্রমণ হানেন, তখন তিনি পরাজিত হন। দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় তিনি জয়ী হন এবং ধননন্দ নিহত হন।

Short Question-Answer on Magadha Empire (মগধের উত্থান)

  1. মৌর্যদের আগে প্রাচীন ভারতের অর্থনীতি কীরপ ছিল ?
    উঃ মৌর্যদের আগে প্রাচীন ভারতের অর্থনীতি ছিল কৃষি ও কুটিরশিল্পভিত্তিক।
  2. হিদম্পিসের যুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল ?
    উঃ হিদম্পিসের যুদ্ধ আলেকজান্ডার ও পুরুরাজের মধ্যে হয়েছিল।
  3. খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের একটি প্রজাতান্ত্রিক জনপদের নাম উল্লেখ করাে।
    উঃ বৃজি (বা মল্ল) ছিল খ্রিঃ পূঃ ষষ্ঠ শতকের একটি প্রজাতান্ত্রিক জনপদ।
  4. ষােড়শ মহাজনপদের মধ্যে কোন্ মহাজনপদ কালক্রমে সাম্রাজ্যে পরিণত হয় ?
    উঃ ষােড়শ মহাজনপদের মধ্যে মগধ কালক্রমে সাম্রাজ্যে পরিণত হয়।
  5. মগধের প্রাচীনতম রাজধানীর নাম কী ছিল ?
    উঃ মগধের প্রাচীনতম রাজধানীর নাম ছিল গিরিব্রজ।
  6. রাজগৃহ-এ কে মগধের রাজধানী স্থানান্তরিত করেন?
    উঃ বিম্বিসার রাজগৃহ-এ মগধের রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।
  7. বিম্বিসার কে ছিলেন?
    উঃ বিম্বিসার ছিলেন মগধের হর্ষঙ্ক বংশের রাজা।
  8. বুদ্ধদেবের সমসাময়িক মগধের শাসক কে ছিলেন?
    উঃ বুদ্ধদেবের সমসাময়িক মগধের শাসক ছিলেন বিম্বিসার।
  9. অজাতশত্রু কে ছিলেন ?
    উঃ অজাতশত্রু ছিলেন মগধের সম্রাট ও বিম্বিসারের পুত্র।
  10. কুণিক কার উপাধি?
    উঃ অজাতশত্রুর উপাধি কুণিক।
  11. উদয়িন কে ছিলেন?
    উঃ উদয়িন ছিলেন হর্ষঙ্ক বংশীয় সম্রাট অজাতশত্রুর পুত্র। তাঁর আমলে পাটলিপুত্র নগরীর নির্মাণকার্য সমাপ্ত হয়।
  12. হর্ষঙ্ক বংশের শেষ সম্রাট কে ছিলেন ?
    উঃ নাগদশক ছিলেন হর্ষঙ্ক বংশের শেষ সম্রাট।
  13. পাটলিপুত্র নগরী কোথায় অবস্থিত ছিল ?
    উঃ পাটলিপুত্র নগরী বর্তমান পাটনার কাছে গঙ্গা ও শােন নদীর  সংগমস্থলে অবস্থিত ছিল।
  14. পাটলিপুত্র নগরী কে প্রতিষ্ঠা করেন ?
    উঃ পাটলিপুত্র নগরী অজাতশত্রু নির্মাণ শুরু করেন। তাঁর পুত্র উদয়ন বা উদয়ভদ্র এই নির্মাণ সম্পূর্ণ করেন।
  15. শিশুনাগ বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ?
    উঃ শিশুনাগ বংশের প্রতিষ্ঠাতা শিশুনাগ।
  16. মগধের কোন সম্রাট বৈশালীতে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন ?
    উঃ মগধের সম্রাট শিশুনাগ বৈশালীতে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।
  17. নন্দ বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ?
    উঃ নন্দ বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহাপদ্ম নন্দ।
  18. নন্দ বংশের শেষ রাজা কে ছিলেন ?
    উঃ নন্দ বংশের শেষ রাজা ছিলেন ধননন্দ।
Comment

Class XI Political Science

Class XII Political Science

Class 12 Bangla Books Question& Answers