পলাশির যুদ্ধ
১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান। এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন। সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে, যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ। এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘অহমিকাবোধ’ ও ‘অর্থলোভ’ দায়ী ছিল কিনা।
যুদ্ধের পটভূমি / কারণ
সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –
1) আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।
2) ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।
3) কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি বেগমের প্রিয়পাত্র ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভ আর্থিক তছরুপের দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন। সিরাজ রাজস্বের সঠিক হিসাব নিয়ে মুর্শিদাবাদে হাজির হতে বলেন। রাজবল্লভ নবাবের নির্দেশ অমান্য করে প্রচুর ধনরত্নসহ পুত্র কৃষ্ণদাসকে কলকাতায় ইংরেজদের আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেন। নবাব ইংরেজদের কৃষ্ণদাসকে ফেরৎ পাঠানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু ইংরেজরা এই নির্দেশ অমান্য করে। এই ঘটনায় সিরাজ প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হন।
4) দূর্গনির্মান। দাক্ষিণাত্য যুদ্ধের অজুহাতে ইংরেজ ও ফরাসিরা বাংলায় দূর্গ নির্মান শুরু করে। সিরাজের নির্দেশে ফরাসিরা দূর্গনির্মান বন্ধ করলেও ইংরেজরা নবাবের নির্দেশ বারংবার অমান্য করে। এই ঘটনায় নবাব অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন ও দূর্গনির্মাণে সামরিক হস্তক্ষেপ করেন।
5) দস্তকের অপব্যবহার। ইংরেজরা ১৭১৭ সালে মোঘল সম্রাট ফারুকশিয়ারের কাছ থেকে দস্তক লাভ করে। এর ফলে তারা বাংলায় কয়েকটি পন্যের বিনাশুল্কে বানিজ্য করার অধিকার পায়। কিন্তু কোম্পানি ও কোম্পানির কর্মচারিরা এর অপব্যবহার শুরু করলে নবাবের ব্যপক রাজস্বের ক্ষতি হয়। সিরাজ এর প্রতিবাদ করলে বিরোধ চরমে ওঠে।
6) নারায়ণ দাসকে অপমান। দূর্গনির্মান, দস্তকের অপব্যবহার, কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করার জন্য সিরাজ নারায়ণ দাসকে দূত হিসাবে কলকাতায় পাঠান। ইংরেজরা নারায়ণ দাসকে গুপ্তচর বলে অপমান করে এবং তাড়িয়ে দেয়।
7) নবাবের কলকাতা অভিযান। এইভাবে একের পর এক ঘটনায় নবাব উপলব্ধি করেন, ইংরেজরারা তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতাকেই চ্যালেঞ্জ করছে। তাই তাদের শিক্ষা দিতেই নবাব প্রথমে কাশিমবাজার কুঠি (৪ঠা জুন ১৭৫৬) এবং পরে কলকাতা (২০জুন ১৭৫৬) দখল করেন। ইংরেজরা অভিযোগ করে, এই সময় নবাব ‘অন্ধকূপ হত্যা’ সংঘটিত করেন, যার ফলে ১২৩জন ইংরেজ বন্দি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়।
8) আলিনগরের সন্ধি। ১৭৫৭ সালের জানুয়ারি মাস। কলকাতার শাসনকর্তা মানিকচাঁদকে উৎকোচ দিয়ে ইংরেজরা কলকাতা পুনর্দখল করে। দরবারের অনেকের ষড়যন্ত্রের কারণে সিরাজের এবারের কলকাতা অভিযান ব্যর্থ হয়। ফলে তিনি আলিনগরের সন্ধি করতে বাধ্য হন।
পলাশীর যুদ্ধ ও নবাবের মূল্যায়ন
এইভাবে মুর্শিদাবাদের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি, যেমন – রায়দুর্লভ, জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, উমিচাঁদ ইয়ারলতিফ, মিরজাফর প্রমুখের ষড়যন্ত্রে এবং ইংরেজদের ক্ষমতার মোহে এই ষড়যন্ত্রে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ায় পলাশীর যুদ্ধের পটভুমি তৈরি হয়। আর এই পটভূমিতেই লর্ড ক্লাইভ আলিনগরের সন্ধি ভঙ্গের অজুহাতে মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করে। শুরু হয় পলাশির যুদ্ধ (২৩জুন ১৭৫৭)। যুদ্ধে পরাজয়রের ফলে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য প্রায় ২০০ বছরের জন্য অস্তমিত হয়।
সুতরাং, ইংরেজদের সঙ্গে নবাবের বিরোধের জন্য ইংরেজরাই মূলতঃ দায়ী। আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত, ১৮ ফুট লম্বা ও ১৪ ফুট ১০ ইঞ্চি চওড়া একটা ঘরে এতজনকে আটকে রাখা যায় না। এপ্রসঙ্গে অ্যানি বেসান্ত বলেছেন, ‘জ্যামিতি প্রমাণ করছে পাটিগণিতের অঙ্কটি ভুল’। ইতিহাসবিদ ব্রিজেন গুপ্ত যুক্তি সহকারে ঐতিহাসিক হিলের মত খণ্ডন করে বলেছেন, নবাবের ‘অহমিকাবোধ’ এবং ‘অর্থলোভ’ নয়, ঐশ্বর্য ও ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার মোহে মত্ত ইংরেজরাই পলাশির যুদ্ধের জন্য দায়ী।
যুদ্ধের ফলাফল / গুরুত্ব
এই যুদ্ধের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারি। ঐতিহাসিক ম্যালেসন বলেছেন, পলাশির যুদ্ধের মত আর কোনো যুদ্ধের ফলাফল এত প্রত্যক্ষ, এত ব্যপক ও এত স্থায়ী হয় নি। এর ফলাফল বা গুরুত্ব হল –
1) কিং মেকার। এই যুদ্ধের ফলে ইংরেজ কোম্পানি কার্যত বাংলার নবাবি শাসনের পরোক্ষ পরিচালকে (King Maker) পরিণত হয়।
2) পলাশির লুণ্ঠন। মিরজাফরকে সিংহাসনে বসিয়ে উপঢৌকন বাবদ কোম্পানির কর্মচারিরা প্রভূত অর্থ উপার্জন করে, যা ‘পলাশির লুণ্ঠন’ নামে পরিচিত।
3) অন্য অঞ্চলে আধিপত্য। পলাশির সাফল্যকে সামনে রেখে ইংরেজ কোম্পানি ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে আধিপত্য প্রসারের স্বপ্ন দেখতে থাকে।
4) ফরাসিদের বিতাড়ন। ইংরেজরা এই যুদ্ধে জয় লাভের ফলে বাংলা থেকে ফরাসিরা বিতাড়িত হয়। বাংলার অর্থ কাজে লাগিয়ে দাক্ষিণাত্যে ফরাসিদের বিরুদ্ধে জয়ী হয়।
5) শূন্যতা ও জটিলতা। এই যুদ্ধে নবাবের পরাজয়ের ফলে বাংলার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এক ভয়াবহ শূন্যতা ও জটিলতা সৃষ্টি হয়।
6) বাণিজ্যে একচেটিয়া প্রাধান্য। এই যুদ্ধে জিতে ইংরেজ কোম্পানি বাংলায় দস্তক বা বিনাশুল্কে বাণিজ্যিক অধিকারের সফল প্রয়োগ ঘটায়। ফলে বাংলার ব্যাবসা-বাণিজ্যে কোম্পানির একচেটিয়া প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
7) দেশীয় বাণিজ্য ধ্বংশ। কোম্পানির একচেটিয়া প্রাধান্যের ফলে দেশীয় ব্যাবসা-বাণিজ্য ক্রমে ধ্বংসের পথে এগোয়।
8) নবজাগরণের সূচনা। পলাশি যুদ্ধের পর ইংরেজরা এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ভাবধারার প্রসার ঘটাতে শুরু করে। ‘আইনের শাসনে’র ধারণার প্রবর্তন করে। ফলে ভারতীয় সমাজ ও সভ্যতায় নবজাগরণ ঘটে। ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার বলেছেন, ‘On 23rd June, 1757, the middle ages of India ended and her modern age began.
১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান। এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন। সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে, যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ। এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘অহমিকাবোধ’ ও ‘অর্থলোভ’ দায়ী ছিল কিনা।
যুদ্ধের পটভূমি / কারণ
সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –
1) আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।
2) ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।
3) কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি বেগমের প্রিয়পাত্র ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভ আর্থিক তছরুপের দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন। সিরাজ রাজস্বের সঠিক হিসাব নিয়ে মুর্শিদাবাদে হাজির হতে বলেন। রাজবল্লভ নবাবের নির্দেশ অমান্য করে প্রচুর ধনরত্নসহ পুত্র কৃষ্ণদাসকে কলকাতায় ইংরেজদের আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেন। নবাব ইংরেজদের কৃষ্ণদাসকে ফেরৎ পাঠানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু ইংরেজরা এই নির্দেশ অমান্য করে। এই ঘটনায় সিরাজ প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হন।
4) দূর্গনির্মান। দাক্ষিণাত্য যুদ্ধের অজুহাতে ইংরেজ ও ফরাসিরা বাংলায় দূর্গ নির্মান শুরু করে। সিরাজের নির্দেশে ফরাসিরা দূর্গনির্মান বন্ধ করলেও ইংরেজরা নবাবের নির্দেশ বারংবার অমান্য করে। এই ঘটনায় নবাব অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন ও দূর্গনির্মাণে সামরিক হস্তক্ষেপ করেন।
5) দস্তকের অপব্যবহার। ইংরেজরা ১৭১৭ সালে মোঘল সম্রাট ফারুকশিয়ারের কাছ থেকে দস্তক লাভ করে। এর ফলে তারা বাংলায় কয়েকটি পন্যের বিনাশুল্কে বানিজ্য করার অধিকার পায়। কিন্তু কোম্পানি ও কোম্পানির কর্মচারিরা এর অপব্যবহার শুরু করলে নবাবের ব্যপক রাজস্বের ক্ষতি হয়। সিরাজ এর প্রতিবাদ করলে বিরোধ চরমে ওঠে।
6) নারায়ণ দাসকে অপমান। দূর্গনির্মান, দস্তকের অপব্যবহার, কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করার জন্য সিরাজ নারায়ণ দাসকে দূত হিসাবে কলকাতায় পাঠান। ইংরেজরা নারায়ণ দাসকে গুপ্তচর বলে অপমান করে এবং তাড়িয়ে দেয়।
7) নবাবের কলকাতা অভিযান। এইভাবে একের পর এক ঘটনায় নবাব উপলব্ধি করেন, ইংরেজরারা তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতাকেই চ্যালেঞ্জ করছে। তাই তাদের শিক্ষা দিতেই নবাব প্রথমে কাশিমবাজার কুঠি (৪ঠা জুন ১৭৫৬) এবং পরে কলকাতা (২০জুন ১৭৫৬) দখল করেন। ইংরেজরা অভিযোগ করে, এই সময় নবাব ‘অন্ধকূপ হত্যা’ সংঘটিত করেন, যার ফলে ১২৩জন ইংরেজ বন্দি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়।
8) আলিনগরের সন্ধি। ১৭৫৭ সালের জানুয়ারি মাস। কলকাতার শাসনকর্তা মানিকচাঁদকে উৎকোচ দিয়ে ইংরেজরা কলকাতা পুনর্দখল করে। দরবারের অনেকের ষড়যন্ত্রের কারণে সিরাজের এবারের কলকাতা অভিযান ব্যর্থ হয়। ফলে তিনি আলিনগরের সন্ধি করতে বাধ্য হন।
পলাশীর যুদ্ধ ও নবাবের মূল্যায়ন
এইভাবে মুর্শিদাবাদের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি, যেমন – রায়দুর্লভ, জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, উমিচাঁদ ইয়ারলতিফ, মিরজাফর প্রমুখের ষড়যন্ত্রে এবং ইংরেজদের ক্ষমতার মোহে এই ষড়যন্ত্রে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ায় পলাশীর যুদ্ধের পটভুমি তৈরি হয়। আর এই পটভূমিতেই লর্ড ক্লাইভ আলিনগরের সন্ধি ভঙ্গের অজুহাতে মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করে। শুরু হয় পলাশির যুদ্ধ (২৩জুন ১৭৫৭)। যুদ্ধে পরাজয়রের ফলে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য প্রায় ২০০ বছরের জন্য অস্তমিত হয়।
সুতরাং, ইংরেজদের সঙ্গে নবাবের বিরোধের জন্য ইংরেজরাই মূলতঃ দায়ী। আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত, ১৮ ফুট লম্বা ও ১৪ ফুট ১০ ইঞ্চি চওড়া একটা ঘরে এতজনকে আটকে রাখা যায় না। এপ্রসঙ্গে অ্যানি বেসান্ত বলেছেন, ‘জ্যামিতি প্রমাণ করছে পাটিগণিতের অঙ্কটি ভুল’। ইতিহাসবিদ ব্রিজেন গুপ্ত যুক্তি সহকারে ঐতিহাসিক হিলের মত খণ্ডন করে বলেছেন, নবাবের ‘অহমিকাবোধ’ এবং ‘অর্থলোভ’ নয়, ঐশ্বর্য ও ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার মোহে মত্ত ইংরেজরাই পলাশির যুদ্ধের জন্য দায়ী।
যুদ্ধের ফলাফল / গুরুত্ব
এই যুদ্ধের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারি। ঐতিহাসিক ম্যালেসন বলেছেন, পলাশির যুদ্ধের মত আর কোনো যুদ্ধের ফলাফল এত প্রত্যক্ষ, এত ব্যপক ও এত স্থায়ী হয় নি। এর ফলাফল বা গুরুত্ব হল –
1) কিং মেকার। এই যুদ্ধের ফলে ইংরেজ কোম্পানি কার্যত বাংলার নবাবি শাসনের পরোক্ষ পরিচালকে (King Maker) পরিণত হয়।
2) পলাশির লুণ্ঠন। মিরজাফরকে সিংহাসনে বসিয়ে উপঢৌকন বাবদ কোম্পানির কর্মচারিরা প্রভূত অর্থ উপার্জন করে, যা ‘পলাশির লুণ্ঠন’ নামে পরিচিত।
3) অন্য অঞ্চলে আধিপত্য। পলাশির সাফল্যকে সামনে রেখে ইংরেজ কোম্পানি ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে আধিপত্য প্রসারের স্বপ্ন দেখতে থাকে।
4) ফরাসিদের বিতাড়ন। ইংরেজরা এই যুদ্ধে জয় লাভের ফলে বাংলা থেকে ফরাসিরা বিতাড়িত হয়। বাংলার অর্থ কাজে লাগিয়ে দাক্ষিণাত্যে ফরাসিদের বিরুদ্ধে জয়ী হয়।
5) শূন্যতা ও জটিলতা। এই যুদ্ধে নবাবের পরাজয়ের ফলে বাংলার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এক ভয়াবহ শূন্যতা ও জটিলতা সৃষ্টি হয়।
6) বাণিজ্যে একচেটিয়া প্রাধান্য। এই যুদ্ধে জিতে ইংরেজ কোম্পানি বাংলায় দস্তক বা বিনাশুল্কে বাণিজ্যিক অধিকারের সফল প্রয়োগ ঘটায়। ফলে বাংলার ব্যাবসা-বাণিজ্যে কোম্পানির একচেটিয়া প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
7) দেশীয় বাণিজ্য ধ্বংশ। কোম্পানির একচেটিয়া প্রাধান্যের ফলে দেশীয় ব্যাবসা-বাণিজ্য ক্রমে ধ্বংসের পথে এগোয়।
8) নবজাগরণের সূচনা। পলাশি যুদ্ধের পর ইংরেজরা এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ভাবধারার প্রসার ঘটাতে শুরু করে। ‘আইনের শাসনে’র ধারণার প্রবর্তন করে। ফলে ভারতীয় সমাজ ও সভ্যতায় নবজাগরণ ঘটে। ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার বলেছেন, ‘On 23rd June, 1757, the middle ages of India ended and her modern age began.