উপনয়ন: ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় উপনয়ন হলো শিক্ষার্থীকে ছাত্র জীবনে দীক্ষিত করার অপরিহার্য অনুষ্ঠান। উপনয়ন এর অর্থ হল সমীপে নিয়ে যাওয়া অর্থাৎ শিক্ষালাভের জন্য গুরুর কাছে শিশুকে নিয়ে যাওয়া। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যদের জন্য উপনয়ন ব্যবস্থা ছিল একটি সহজ সরল অনাড়ম্বর অনুষ্ঠান। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য- এই তিন বর্ণের উপনয়নের অর্থ দ্বিতীয় জন্ম। গুরু এই দ্বিতীয় জন্ম দান করতেন। শিক্ষার্থী তখন হতেন দ্বিজ। উপনয়ন এমন একটি অনুষ্ঠান যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী সংযম, বেদ, নিয়ম, গুরু ও দেবতার সংস্পর্শে আসতেন।
ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা ব্যবস্থায় উপনয়ন দান করা হতো ব্রাহ্মণ সন্তানদের আট বছর বয়সে, ক্ষত্রিয়দের 11 বছর বয়সে, ও বৈশ্যদের 12 বছর বয়সে। শিক্ষার্থীকে মস্তক-মুণ্ডন, কৌপিন ও মেঘলা ধারণ করতে হতো। শিক্ষার্থী সমিধভাব বহন করতে তপবনে গুরু গৃহে উপস্থিত হতো এবং গুরুকে প্রণাম করে ব্রহ্মচর্যাশ্রমে গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করতো। গুরু তার নাম পরিচয় জেনে তাকে গ্রহণের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হলে তবে ছাত্ররূপে গ্রহণ করতেন। শুদ্রদের অবশ্য বেদ পাঠ ও উপনয়নের কোন অধিকার ছিল না।
যদিও বর্তমানে উপনয়ন অনুষ্ঠানটি শুধুমাত্র ব্রাহ্মণদের অনুষ্ঠানরূপে পরিচিত। তথাপি ব্রাহ্মণ্য শিক্ষায় এর ব্যাপক প্রচলন লক্ষ্য করা যায় এবং বর্তমানেও এর নৈতিক আদর্শ কিছুটা হলেও পরিলক্ষিত হয়।