উঃ
ভূমিকা: মূল্যায়ন হল একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া। মূল্যায়নকে কাজে লাগাতে হলে বিপুল পরিমাণ তথ্যের প্রয়োজন। তাই মূল্যায়নের জন্য বিভিন্ন সামগ্রী ও কৌশল ব্যবহার করা হয়। মূল্যায়নের এই সামগ্রী বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যথা- অভিক্ষা, নিরীক্ষণ, নিজস্ব মতামত প্রকাশ এবং প্রতিফলন পদ্ধতি।
মূল্যায়নের কৌশল: মূল্যায়ন একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া হাওয়ায় এর জন্য বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রয়োজন হয়। শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক যত বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন তত নির্ভুল হবে তার মূল্যায়ন। কোন ব্যক্তি বা বিষয় সম্পর্কে যে পদ্ধতিগুলির দ্বারা নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং সঠিক ও নির্ভরযোগ্য মূল্যায়ন করা হয় সেই সব পদ্ধতিগুলিকে মূল্যায়নের কৌশল বলা হয়।
মূল্যায়নের উপকরণ: সঠিক ও নির্ভরযোগ্য মূল্যায়নের জন্য তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত শিক্ষামূলক ও মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা গুলিকে মূল্যায়নের উপকরণ বলা হয়।
মূল্যায়নের কৌশল এর শ্রেণীবিভাগ: মূল্যায়নের কৌশলগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন - (ক) পরীক্ষামূলক কৌশল, (খ) আত্ম বিবৃতিমূলক কৌশল এবং (গ) পর্যবেক্ষণ ভিত্তিক কৌশল।
(ক) পরীক্ষামূলক কৌশল: বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত রেখে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য যে কৌশলগুলি ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাদের বলা হয় পরীক্ষামূলক কৌশল। যেমন লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা এবং বুদ্ধির অভিক্ষা বা রচনাধর্মী অভীক্ষা বা বস্তুধর্মী অভীক্ষা।
(খ) আত্মবিবৃতিমূলক কৌশল: মূল্যায়নের অপর একটি কৌশল হিসেবে আত্মবিবৃতির কথা বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীর নিজস্ব বিবৃতির মাধ্যমে তার সম্পর্কে মূল্যায়ন সংক্রান্ত তথ্যাবলী সংগ্রহের যে কৌশল ব্যবহার করা হয়, তাকেই বলা হয় আত্মবিবৃতিমূলক কৌশল। যেমন - সাক্ষাৎকার, প্রশ্নগুচ্ছ, অনুরাগের নির্ণায়ক অভীক্ষা, মনোভাব নির্ণায়ক অভীক্ষা।
(গ) পর্যবেক্ষণভিত্তিক কৌশল: শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে যখন অপর ব্যক্তিদের মতামত গ্রহণকে গুরুত্ব দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করা হয় তখন মূলত পর্যবেক্ষণমূলক কৌশলসমূহ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
সাধারণত এই শ্রেণীর যেসব কৌশল গুলি মূল্যায়নের জন্য ব্যবহার করা হয় সেগুলি হল (১) অতীত সংক্রান্ত তথ্য লিপি, (২) চেকলিস্ট, (৩) রেটিং স্কেল, (৪) সোসিও মেট্রিক কৌশল।
মূল্যায়নের উপকরণসমূহ: উপরোক্ত মূল্যায়ন কৌশলকে ব্যবহার করার জন্য উল্লেখযোগ্য যে উপকরণ সমূহের সাহায্য নেওয়া হয় তা হচ্ছে সাক্ষাৎকার। মূলত অসংগঠিত ও সংগঠিত এই দুই ধরনের সাক্ষাৎকার তালিকা তৈরি করে ব্যাক্তির আত্মবিবৃতিমূলক কৌশলকে বাস্তবে রূপ দিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
প্রথমতঃ শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে মূল্যায়নকারী প্রশ্নকারক নিজ পরিকল্পিত সাক্ষাত্কার তালিকা অনুসারে প্রশ্ন রেখে এবং তাদের উত্তর শুনে ও বুঝে কিছু প্রামাণ্য তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
দ্বিতীয়ত তথ্য সংগ্রহের অপর উপকরণটি হচ্ছে প্রশ্নগুচ্ছ। এখানে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠানো প্রশ্নগুচ্ছের প্রশ্নানুসারে প্রতিক্রিয়ামূলক আচরণ পর্যালোচনা করে তাদের আগ্রহ ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।
তৃতীয়তঃ উপকরণ হিসাবে ব্যবহারিক পরীক্ষাকে ব্যবহার করে অনেক বিষয়ের ব্যবহারিক দিকের দক্ষতার ও প্রয়োগক্ষমতাকে মূল্যায়ন করার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
চতুর্থতঃ পর্যবেক্ষণকে মূল্যায়নের একটি উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ভাবগত এবং বুদ্ধিগত পরিণতি ও তাদের সামাজিক সংগতিশীল দক্ষতাকে পরিমাপ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।
পঞ্চমতঃ শিক্ষার্থীদের নির্মিত বিভিন্ন উপাদান সামগ্রী ও অনেক সময় শিক্ষার্থীদের আচরণের উৎকর্ষতা-অপকর্ষতা নির্ধারণে ও নিরুপনে উল্লেখযোগ্য উপকরণ হিসেবে কাজ করে।
ষষ্ঠতঃ শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ডায়রি রাখার ব্যবস্থা রেখে তা থেকে এবং শিক্ষার্থীদের দ্বারা সংরক্ষিত বিভিন্ন রেকর্ড, কেসহিস্ট্রি থেকে বিভিন্ন বিষয় যথা শিক্ষার্থীদের আগ্রহ, উৎসাহ, দৃষ্টিভঙ্গি, নানান ব্যক্তিগত সামাজিক সমস্যা, এমনকি তাদের ব্যক্তিত্ব মূল্যায়ন করা সম্ভব হতে পারে।
সপ্তমতঃ বিজ্ঞানের পরীক্ষাগারে, খেলার মাঠে, পাঠাগারে এবং আর্টকক্ষে প্রদর্শিত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আচরণ ধারা পরীক্ষা করেও শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্বের, আগ্রহের ও কর্মকুশলতার পরিচয় নেওয়া যেতে পারে।
মন্তব্য: পরিশেষে তাই বলতে হয় যে মূল্যায়ন করার নানান কৌশল ও উপকরণ দিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের সামাজিক, সুষম ও সর্বোত্তম বিকাশকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়ে থাকে।