উঃ ভূমিকা: শিক্ষকের উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত শিখন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা। শিক্ষা এবং শিখন হল দুটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসে। পরিবর্তন যেভাবেই হোক না কেন, তার গতি, প্রকৃতি, পরিমাণ ইত্যাদি সম্পর্কে জানা শিক্ষকের পক্ষে একান্ত প্রয়োজনীয়। এই পরিবর্তনগুলি জানার কৌশল গুলির মধ্যে অন্যতম হল মূল্যায়ন ও পরিমাপ।
মূল্যায়ন: কোন ব্যক্তি-বিষয়ের পরিমাণগত ও গুণগত মূল্য নির্ধারণ বা বিচার করার প্রক্রিয়া হল মূল্যায়ন।
পরিমাপ: শিক্ষার্থীর মানসিক ক্ষমতা ও অর্জিত শিক্ষাগত জ্ঞানের পরিমাপ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও পরিমাপ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কোন নির্দিষ্ট নিয়মানুযায়ী কোন বিষয়বস্তুর সংখ্যাগত মান নির্দেশ করাই হল পরিমাপ।
পরিমাপ ও মূল্যায়ন এর পার্থক্য:
১) পরিমাপের পরিধি সংকীর্ণ। কিন্তু মূল্যায়নের পরিধি ব্যাপক।
২) পরিমাপ একটি তাৎক্ষণিক ও সমসাময়িক প্রক্রিয়া কিন্তু মূল্যায়ন একটি অবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া।
৩) পরিমাপে শিক্ষার্থীর ক্রমোন্নতি ও এর হার নির্ণয় করার পরিবর্তে অবস্থা নির্ণয় করা হয়ে থাকে। কিন্তু মূল্যায়নে শিক্ষার্থীর শুধুমাত্র ক্রমোন্নতি ও হার নির্ণয় করা যায়।
৪) পরিমাপে শিক্ষার্থীর কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্যের বিকাশের কেবলমাত্র পরিমাণগত দিকের বিচার প্রাধান্য পায়। কিন্তু মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদের সকল বৈশিষ্ট্যের বিকাশের পরিমাণগত ও গুণগত উভয় দিকের বিচারই প্রাধান্য পেয়ে থাকে।
৫) পরিমাপ একটি সহজ প্রক্রিয়া এবং শিক্ষায় সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু মূল্যায়ন অপেক্ষাকৃত জটিল এবং সকলের সহযোগিতা অপরিহার্য্য।
৬) পরিমাপের প্রকাশিত ব্যক্তির কোন বৈশিষ্ট্যের পরিমাপ শিক্ষকদের দিক থেকে তাৎপর্য হবে কিনা বলা যায় না। কিন্তু মূল্যায়ন প্রক্রিয়া উদ্দেশ্যমুখীনতা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতনতা নিহিত থাকায় মূল্যায়ন প্রাপ্ত পরিমাপের উপর শিক্ষকদের পক্ষে মূল্যমান আরোপ করার সুযোগ থাকে।
৭) পরিমাপে শিক্ষার্থীর প্রধানত শিক্ষাগত দিক বিবেচনা করা হয়। কিন্তু মূল্যায়নে শিক্ষার্থীর শারীরিক,মানসিক, শিক্ষাগত, সামাজিক ইত্যাদি দিক বিবেচনা করা হয়।
মন্তব্য: পরিশেষে বলা যায় উপরোক্ত পার্থক্য সমূহের প্রেক্ষিতে শিক্ষায় মূল্যায়ন পরিমাপ থেকে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ, অনেক বেশি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, অনেক পরিবর্তনের ইঙ্গিতবাহী গুনাধার এবং অনেক বেশি শিক্ষার উদ্দেশ্যমুখী অবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া হিসাবে গৃহীত হয়ে থাকে।