উঃ
ভূমিকা: সুস্পষ্ট উদ্দেশ্যের প্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর সময়ব্যাপী প্রশিক্ষণের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হওয়াকে বলা হয় পারদর্শিতা। আর এই পরিমাপের কৌশলকে বলে পারদর্শিতার অভীক্ষা। পারদর্শিতার অভীক্ষগুলি শিক্ষক নির্মিত হয়। এই অভিক্ষা কখনও লিখিত কখনও মৌখিক হয়ে থাকে। লিখিত পরীক্ষার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল রচনাধর্মী পরীক্ষা।
রচনাধর্মী পরীক্ষা: রচনাধর্মী পরীক্ষা হল এমন এক ধরনের লিখিত পরীক্ষা যার মধ্যে রচনা বা প্রবন্ধ লেখার প্রবণতা ও প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রশ্ন পত্র রচনা করা হয় এবং সেই রচনাধর্মী প্রশ্নের প্রবন্ধ বা রচনানির্ভর উত্তর লিখনকে মূল্যায়ন করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
রচনাধর্মী পরীক্ষার বৈশিষ্ট্য: রচনাধর্মী পরীক্ষার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ -
১) নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে এই পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ শিক্ষাকালকে গুরুত্ব দিয়ে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, শিক্ষার্থীর শিখন ক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে নয়।
২) এই পরীক্ষা সাধারণত শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবিষয় কেন্দ্রিক জ্ঞান পরিমাপ করার চেষ্টা করা হয়। শিক্ষার্থীদের শিখনের মাধ্যমে পরিমাপ করার চেষ্টা করা হয়।
৩) পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে খুব সীমিত সংখ্যক প্রশ্ন থাকে এবং তার মধ্যেও পরীক্ষার্থীকে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হয়। হয়তো আটটি প্রশ্ন দিয়ে পাঁচটি লিখতে বলা হয়। অনেক সময় বিশেষ বিশেষ প্রশ্নের সঙ্গেও বিকল্প প্রশ্ন থাকে।
৪) প্রদত্ত প্রশ্নগুলির উত্তরে, পরীক্ষার্থীকে এক একটি করে প্রবন্ধ রচনা করতে হয়।
৫) এই পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা এবং চিন্তন ক্ষমতার বিকাশ ঘটে।
৬) এই পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর ভাষা মূলক জ্ঞান ও ভাষা ব্যবহারের দক্ষতার বিকাশ ঘটে।
৭) রচনাধর্মী পরীক্ষার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটি সময়সীমা আগে থেকে ঠিক করা থাকে। শিক্ষার্থীকে সেই সময়ের মধ্যে সবকয়টি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয়।
৮) রচনাধর্মী পরীক্ষা হল এক ধরনের শিক্ষক নির্মিত অভিক্ষা।
রচনাধর্মী পরীক্ষার সংস্কার সাধন: শিক্ষাবিদগণ রচনাধর্মী পরীক্ষার সংস্কারের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
১) এই পরীক্ষা গ্রহণের জন্য প্রশ্নপত্র রচনার পূর্বে পরীক্ষক বা শিক্ষক নির্দিষ্ট বিষয় পাঠের উদ্দেশ্যগুলি নির্ধারণ করবেন।
২) প্রশ্নপত্রের প্রশ্নের সংখ্যা যত বেশি হবে পরিমাপের নির্ভরযোগ্যতা তত বেশি বাড়বে। তবে সময়সীমার কথা চিন্তা করে রচনাধর্মী পরীক্ষায় খুব বেশি সংখ্যক প্রশ্ন দেওয়া সম্ভব নয়।
৩) পরিমাপের নির্ভরযোগ্যতার বৃদ্ধির জন্য প্রশ্নপত্রে প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করা দরকার। এমন প্রশ্ন করা হবে না যার উত্তর আংশিকভাবে অন্য প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে মিলে যায়।
৪) প্রশ্নের ভাষা সাধারণ পরীক্ষার্থীদের বোধগম্য হওয়া উচিত এবং বিশেষধর্মী হওয়া উচিত। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা প্রশ্নের ভাষা বুঝতে পারে না বলে, জানা সত্ত্বেও উত্তর লিখতে পারে না। তাই প্রশ্নের ভাষা সহজ ও সরল হওয়া দরকার।
৫) রচনাধর্মী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র রচনার সঙ্গে উত্তরের মান নির্ণয়ের পদ্ধতিটি যদি ঠিক করা যায়, তাহলে এর অনেক ত্রুটি দূর দূর হয়।
৬) রচনাধর্মী পরীক্ষাকে পরীক্ষকের ব্যক্তিগত প্রভাব মুক্ত করার জন্য উত্তরপত্র একজন পরীক্ষককে দিয়ে বিচার না করিয়ে অন্ততঃপক্ষে দুইজন পরীক্ষককে দিয়ে বিচার করানো উচিত।
৭) পরীক্ষার্থীদের উত্তর বিচার করার সময় পরীক্ষকরা যদি এক একটি প্রশ্নের উত্তর পর্যায়ক্রমে সকলের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে বিচার করেন, তাহলে রচনাধর্মী পরীক্ষার ফলাফলের স্থিরতা বৃদ্ধি পায়।
৮) এই পরীক্ষা ব্যবস্থায় সংখ্যাগত মান নানা রকমের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং তা সব সময় তুলনাযোগ্য নয়। এই ত্রুটি দূর করার জন্য সংখ্যাগত মানের পরিবর্তে গুনগত মান অক্ষর মান দেওয়ার ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।
মন্তব্য: রচনাধর্মী প্রশ্নের উন্নতিসাধন করতে হলে, অভীক্ষাপদ নির্বাচনের সময় উপরিউক্ত নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত। এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে, রচনাধর্মী প্রশ্নের অনেক ত্রুটি, বিশেষভাবে তাদের নৈর্ব্যক্তিকতার অভাব দূর করা সম্ভব হবে।