Tuesday 7 April 2020

প্রাচীন যুগ ভারতের ইতিহাস হরপ্পা মহেঞ্জোদারো সভ্যতা

মেহেরগড় সভ্যতা

  1. ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতার নাম হলো মেহেরগড় সভ্যতা।
  2. বোলান গিরিপথের কাছে এবং কোয়েটা শহর থেকে ১৫০ km দূরে কাচ্চি সমভূমিতে ৫০০ একর ব্যাপ্ত মেহেরগরের প্রত্নক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়েছে।
  3. ১৯৭৪-১৯৮৬ সালে বিশিষ্ট ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক জা ফ্রাঁসোয়া জারিজ এর নেতৃত্বে এখানে খননকাজ চালানো হয়।
  4. পরবর্তীকালে ১৯৯৬-১৯৯৭ সালেও এখানে খননকাজ চালানো হয়।
  5. মেহেরগর সভ্যতা গ্রামীন সভ্যতা থেকে আস্তে আস্তে নাগরিক সভ্যতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।
  6. খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের মাঝামাঝি সময়ে মেহেরগর সভ্যতার পতন হয়।
  7. এতদিন মনে করা হতো যে সিন্ধু সভ্যতায় ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা কিন্তু মেহেরগরের আবিষ্কার প্রমান করেছে যে সিন্ধু পূর্ব যুগে ভারতে এক উন্নত সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল।
  8. মেহেরগর ও সন্নিহিত অঞ্চলে মানব সভ্যতার যে বিকাশ ঘটেছিল হরপ্পা সভ্যতা তারই এক পরিপূর্ণ রূপ।
  9. 1921 ক্রিস্টাব্দে দয়ারাম সাহানি পাঞ্জাবের মন্টগমারী জেলায় ইরাবতী বা রাভি নদীর তীরে এক উন্নত নগর সভ্যতার সন্ধান পান।

সিন্ধু সভ্যতা

  1. ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার কানিংহাম হরপ্পায় একটি সিলমোহর আবিষ্কার করেছিলেন।
  2. সিন্ধু নদের তীরে প্রথম এই সভ্যতা আবিষ্কৃত হয় বলে এই সভ্যতা কে আগে সিন্ধু সভ্যতা বলা হতো।
  3. সাম্প্রতিক কালে সিন্ধুতট অতিক্রম করে ভারত ও ভারতের বাইরে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছোটো বড়ো মিলিয়ে এই সভ্যতার ১৫০০ টি কেন্দ্র আবিষ্কৃত হয়েছে।
  4. এই সভ্যতা হলো তাম্র প্রস্তর যুগের সভ্যতা।
  5. এই যুগের মানুষ লোহার ব্যাবহার জানতো না।
  6. সমগ্র এলাকাটির আয়তন ছিলো প্রায় ১২ লক্ষ ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।
  7. নগর কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ছিল হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারও। এই নগর দুটির মধ্যে দূরত্ব ছিল প্রায় ৪৮৩ বর্গ কিলোমিটার।
  8. সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতা ছিল নগরকেন্দ্রিক।
  9. নগরগুলির দুটি এলাকা ছিল উঁচু এলাকা ও নিচু এলাকা।
  10. মহেঞ্জোদারও শহরটির পশ্চিম দিকে প্রায় চল্লিশ ফুট উঁচু একটি বিশাল আয়তনের ঢিপির উপর একটি দুর্গ ছিল।একে দুর্গঞ্চল বা citadel area বলা হতো। এই অঞ্চল ঘিরে ছিল বিরাট প্রাচীর। কেবলমাত্র মহেঞ্জোদারও বা হরপ্পায় নয়…ছোটো বড়ো বহু নগরেই এই ব্যবস্থা ছিল।
  11. দুর্গ অঞ্চলেই সর্বসাধারণের ব্যবহার -উপযোগীএকটি বিরাট স্নানাগার আবিস্কৃত হয়েছে। তার আয়তন দৈর্ঘ্যে ১৮০ ফুট ও প্রস্থে ১০৮ ফুট। এর চারদিক ঘিরে আছে ৮ ফুট উঁচু ইটের দেওয়াল।
  12. এর কেন্দ্রস্থলে আছে একটি জলাশয় যা 39 ফুট লম্বা, 23 ফুট চওড়া এবং 8 ফুট গভীর। জলাশয়ের নোংরা জল নিকাশ ও তাতে পরিষ্কার জল পূর্ণ করার ব্যবস্থা ছিল। এরই পাশে ছিল একটি কেন্দ্রীয় শষ‍্য‌গার। এর আয়তন ছিল দৈর্ঘ্যে 200 ফুট এবং প্রস্থে 150 ফুট। শস‍্যগার সংলগ্ন বিরাট চাতালে শস্য ঝাড়াই মাড়াই হত।শস‍্যগার সংলগ্ন বিরাট চাতালে শস্য ঝাড়াই মাড়াই হত।
  13. সিন্ধু সভ্যতার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো যে এর উন্নত নগর পরিকল্পনা। নগরের উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে সমান্তরাল ভাবে কয়েকটি রাস্তা চলে গেছে। রাস্তা গুলি 9 থেকে 34 ফুট চওড়া। এই রাস্তা গুলি থেকে বেরিয়ে এসেছে অসংখ্য গলি। গলিগুলোর দুপাশে নাগরিকদের ঘরবাড়ি ছিল।বাড়িগুলো ছিল পড়া ইটের তৈরি এবং অনেক বাড়ি ই দোতলা বা তিনতলা।
  14. অনেক বাড়িতে আবার সোকপিট ছিল। বাড়ির নোংরা জল নর্দমা দিয়ে এসে রাস্তার ঢাকা দেওয়া বাঁধানো নর্দমায় পড়তো। নর্দমাগুলি পরিষ্কারের জন্যে ইট দিয়ে তৈরি ঢাকা ম্যানহোলের ব্যবস্থা ছিল।এমনকি প্রত্যেক বাড়ির সামনে বাঁধানো ডাস্টবিন ছিল।
  15. এই সভ্যতা নগরকেন্দ্রিক হলেও তার মূল ভিত্তি ছিল কৃষি। এখানকার অধিবাসীরা গম, যব, বার্লি, ভাত,  ফলমূল, বাদাম, শাকসবজি, মুরগি, ভেড়া, গরু, পাখির মাংস, দুধ, খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করত। মাছ ও ডিম ও তাদের খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। গৃহপালিত জন্তুর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল গরু, মহিষ, ভেড়া, উট, হাতি, শুকর, ছাগল। এরা ঘোড়া কে পোষ মানাতে পারেনি।
  16. সিন্ধুবাসীরা সুতি ও পশমের বস্ত্র ব্যবহার করত। তারা দেহের উর্ধাংশ ও নিম্নাঙ্গ দুইখন্ড বস্ত্রের দ্বারা আবৃত করতো।
  17. নারীরা নানা ধরনের অলংকার পড়তো। নারী পুরুষ উভয়েই চুল রাখত। নৃত্য-গীত, পশুশিকার, পাশাখেলা, ষাঁড়ের লড়াই ও রথ চালনা ছিল তাদের অবসর বিনোদনের উপায়। এ প্রসঙ্গে স্মরনীয় যে সিন্ধু উপত‍্যকায় ঢাল, বর্ম, শিরস্ত্রাণ প্রভৃতি আত্মরক্ষামূলক অস্ত্রের কোন ও সন্ধান মেলেনি।
  18. সিন্ধু উপত্যকায় পোড়ামাটি,তামা ও ব্রোঞ্জের প্রচুর সিল আবিস্কৃত হয়েছে। পন্ডিতদের অনুমান প্রধানত ব্যবসা বাণিজ্যের জন্যই ওইসব সিল তৈরী হয়েছিল এবং আন্তজার্তিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এগুলি ব্যবহৃত হতো কারণ সুসা এবং মেসোপটেমিয়ার নগরগুলিতেও হরপ্পার সিল আবিস্কৃত হয়েছে।
  19. হরপ্পাবাসী ছবি এঁকে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করত। এগুলিই হলো সিন্ধু লিপি বা হরপ্পা লিপি। এই লিপি গুলি হলো চিত্র লিপি-বর্ণলিপি নয়। এই লিপি ডানদিক থেকে বাঁদিকে পড়া হতো। এইসব লিপি এখনও পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয় নি।
  20. হরপ্পা সভ্যতার অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিল। প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং সিন্ধু ও তার শাখা নদীর বন্যায় এই অঞ্চল যথেষ্ট উর্বর ছিল। ফসল উৎপাদনের জন্য সার,জলসেচ,বা দক্ষতার বিশেষ প্রয়োজন হতো না। তারা লোহার ব্যবহার জানতো না,তাই তারা লোহার পরিবর্তে কাঠের লাঙ্গল ব্যবহার করত।
  21. বস্ত্রবয়ন শিল্প ছিল হরপ্পা সভ্যতার প্রধান শিল্প। এই অঞ্চল থেকে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সুতিবস্ত্র রপ্তানি করা হত। সোনা ও রুপার অলংকার নির্মাণে এবং মৃৎ শিল্পের ক্ষেত্রেও তাদের দক্ষতা ছিল। তবে এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে তাদের গৃহ, যন্ত্রপাতি প্রভৃতিতে কোনও শৈল্পিক সুক্ষতাবোধের পরিচয় নাই।তাদের লক্ষ ছিল প্রয়োজন মেটানো।
  22. হরপ্পার নগর সংস্কৃতির বিকাশের অন্যতম কারণ হলো এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি। ভারত ও ভারতের বাইরে বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে হরপ্পার বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। জলপথ ও স্থলপথ–দুই ই ব্যবহৃত হতো। হিমালয় থেকে দেবদারু কাঠ,কর্ণাটক থেকে সোনা,রাজপুতানা থেকে তামা ও সীসা,রাজপুতানা-গুজরাট থেকে দামি পাথর, কাথিয়াওয়ার শাঁখ আসতো। ভারতের বাইরে বেলুচিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরান থেকে আমদানি করা হত সোনা,রূপা,সীসা,টিন ও দামি পাথর। সিন্ধু উপত্যকা থেকে রপ্তানি করা হতো তুলো, সুতিবস্ত্র,তামা,হাতির দাঁত ও দাঁতের তৈরি নানা জিনসপত্র। সুতিবস্ত্র ও তুলা ছিলো রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান উপকরণ।
  23. লোথালের প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার বিশাল বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রমান দেয়। লোথাল হলো বিশ্বের প্রাচীনতম বন্দর ও পোতাশ্রয়। এখানে একটি প্রকান্ড জাহাজঘাট, আগন্তুক জাহাজ রাখার উপযোগী ডক এবং পাথরের তৈরি নোঙর মিলেছে।
  24. তখন ও মুদ্রার প্রচলন হয়নি। বিনিময় প্রথার মাধ্যমে বাণিজ্য চলত।
  25. সিন্ধুবাসীরা পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে উট, গাধা ও ঘোড়ার ব্যবহার করত।
  26. ওজন ও মাপের ব্যাপারেও সিন্ধুবাসী যথেষ্ট দক্ষ ছিল। এখানে নানা ওজনের বিভিন্ন বাটখারা, ব্রোঞ্জনির্মিত কয়েকটি দাঁড়িপাল্লা এবং ধাতুনির্মিত গজকাঠি পাওয়া গেছে। ওজনের সময় সাধারণত ১৬ ও তার গুণিতক ব্যবহৃত হতো, যথা- ১৬,৬৪,১৬০,৩২০,৬৪০ প্রভৃতি। সমগ্র এলাকা জুড়ে একই ধরনের ওজন ও মাপ প্রচলিত ছিল।
  27. সিন্ধু সভ্যতায় খননকার্যের ফলে প্রচুর অর্ধনগ্ন নারীমূর্তি মিলেছে। পন্ডিতরা এই মুর্তিগুলি কে মাতৃমূর্তি বা ভূমাতৃকা বলেছেন। সিন্ধু উপত্যকার এই মূর্তিগুলি তে ধোঁয়ার চিহ্ন স্পষ্ট। মনে হয় দেবীকে প্রসন্ন করার জন্য ধুপ তেল দেওয়া হতো এবং সামনে প্রদীপ জ্বালা হতো।
  28. এই সময় নরবলি প্রথাও প্রচলিত ছিল। একটি সিলে বাঘ,হাতি,গন্ডার, মোষ ও হরিণ ——-এই পাঁচটি পশু দ্বারা পরিবৃত ও ত্রিমুখবিশিষ্ট এক যোগীমূর্তি দেখা যায়। মূর্তিটির মাথায় দুটি সিং আছে। অনেকের ধারণা এটি হলো শিবমূর্তি,কারণ হিন্দু ধারণায় শিব হলেন ত্রিমুখ ,পশুপতি ও যোগেশ্বর।
  29. সিন্ধুবাসীরা বৃক্ষ,আগুন,জল,সাপ, বিভিন্ন জীবজন্তু, লিঙ্গ ও যোনি পূজা এবং সূর্য উপাসনা ও করত।
  30. সিন্ধুবাসীরা পরলোকে বিশ্বাস করত। তারা মৃতদেহ সমাধিস্থ করত। মৃতদেহকে সাধারণত কবরস্থানের উত্তর থেকে দক্ষিণে শায়িত করা হতো। কবর দেওয়া হতো মূলত তিনরকমভাবে। অনেকের মতে কবরের এই ভেদাভেদ শ্রেণী বৈষম্যের পরিচায়ক।
  31. সিন্ধু উপত্যকায় প্রাপ্ত নর কঙ্কাল গুলির নৃতাত্ত্বিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক পরীক্ষা করে পন্ডিতরা এখানে চারটি জনগোষ্ঠীর মানুষের সন্ধান পেয়েছেন। কঙ্কাল গুলির সংখ্যা এত কম যে সেগুলি থেকে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। সুতরাং বলা হয় যে, হরপ্পা সভ্যতা বিশেষ কোনো জাতিগোষ্ঠীর দ্বারা সৃষ্ট হয় নি। বিভিন্ন জাতির মানুষের প্রচেষ্টায় এই সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
  32. মহেঞ্জোদারোর নিচের দিকে কয়েকটি স্তর এখনও জলমগ্ন থাকায় সেখানে কোনও পরীক্ষা চালানো সম্ভব হয়নি। হরপ্পা লিপির পাঠোদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এখনও সঠিক কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তাই বলা যায় যে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সাহায্যে এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।
  33. হরপ্পা সংস্কৃতির প্রাচীনত্ব বা কালানুক্রম নির্ণয় করা একটি কঠিন সমস্যা। স্যার জন মার্শাল এর সময়সীমা খ্রিস্টপূর্ব ৩২৫০ থেকে ২৭৫০ খ্রিস্টপূর্ব র মধ্যে স্থির করেন।
  34. ঐতিহাসিকরা এই সংস্কৃতির কলানুক্রমের দুটি দিকের কথা বলেছেন। একটি হলো নিম্নতম কালসীমা এবং ঊর্ধ্বতম কালসীমা। নিম্নতম কালসীমা হলো ১৫০০ খ্রিস্টপূর্ব। ২৮০০ খ্রিস্টপূর্ব হলো সর্বোচ্চ কালসীমা । তবে এ কথা ঠিক যে কালসীমা সংক্রান্ত সব আলোচনাই অনুমানভিত্তিক। সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এই সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
  35. পশ্চিমে ইরান ও পাকিস্তানের সীমানায় অবস্থিত সুকতাসেনদোর থেকে পূর্বে আলমগীরপুর এবং উত্তরে জম্মুর কাছাকাছি মান্ডা থেকে দক্ষিণে গোদাবরী উপত্যকার দাইমাবাদ পর্যন্ত এর ব্যাপ্তি ছিলো। কিন্তু এই সভ্যতার শেষ পর্যন্ত পতন হয়।
  36. এই সভ্যতার ঠিক কি কারণে পতন হয় সেই সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা একমত নন। অনেক ঐতিহাসিক কারণ হিসাবে অভ্যন্তরীণ অবক্ষয়, রক্ষনশীল মানসিকতা কে দায়ী করেন । অনেকে আবার প্রাকৃতিক কারণ কে দায়ী করেন। প্রাকৃতিক কারণগুলির মধ্যে ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুর পরিবর্তন, সিন্ধু নদের গতিপথের পরিবর্তন, ভূমিকম্প- তত্ত্ব,বন্যা তত্ত্ব,উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল ধ্বংস প্রভৃতি কারণগুলো জোরালো দাবি রাখে। আবার হুইলার, Stuart পিগট , গর্ডন চাইল্ড, অলচিন দম্পতি প্রমুখ মনে করেন যে আর্যদের আক্রমণের ফলেই এই সভ্যতা ধংসপ্রাপ্ত হয়। তবে এই মতবাদের কিছু দুর্বলতা আছে। মূল কথা হরপ্পা সভ্যতার পতনের জন্য কোনো ও একটি কারণকে দায়ী করা যায় না। তবে যে কোনো কারণ ই থাক না কেন অভ্যন্তরীণ অবক্ষয় এর প্রেক্ষাপট রচনা করেছিল।
  37. হরপ্পা সভ্যতার পতন হলেও প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার উপর এর প্রভাব ছিল ব্যাপক। এত সুন্দর নগর পরিকল্পনা সমকালীন বিশ্বে সত্যিই বিস্ময়কর ছিল।
  38. প্রাচীন ভারতীয় মুদ্রার ছাঁচ ও কাঠামোর জন্য ভারতবাসী সিন্ধু সভ্যতার কাছে ঋণী। মাপ ও ওজনের ব্যাপারেও ভারতের মানুষ সিন্ধু সভ্যতার কাছে কৃতজ্ঞ। হিন্দু ধর্মে মূর্তিপূজা,প্রতীক উপাসনা,শিব ও লিঙ্গ পূজা, বলিদান প্রথা,বৃষের প্রতি ভক্তি —–সব ই হরপ্পা সভ্যতার অবদান।

Short Question-Answer on Indus Valley Civilization (সিন্ধু সভ্যতা)

  1. কোন সময়কালকে প্রাচীন প্রস্তর যুগ বলা যায়?
    উঃ আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব চার লক্ষ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব দুই লক্ষ অব্দের মধ্যবর্তী সময়কালকে প্রাচীন প্রস্তর যুগ বলা যায়।
  2. কোন্ সময়কালকে মধ্য প্রস্তর যুগ বলা যায়?
    উঃ মােটামুটি খ্রিস্টপূর্ব আট হাজার অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব চার হাজার অব্দ পর্যন্ত সময়কালকে মধ্য প্রস্তর যুগ বলা যায়।
  3. কোন্ সময়কালকে নব্য প্রস্তর যুগ বলা যায়?
    উঃ মােটামুটি খ্রিস্টপূর্ব চার হাজার অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার অব্দ পর্যন্ত সময়কালকে নব্য প্রস্তর যুগ বলা যায়।
  4. মেহেরগড় সভ্যতা কোন যুগের সভ্যতা?
    উঃ মেহেরগড় সভ্যতা নতুন প্রস্তর যুগের সভ্যতা।
  5. মেহেরগড়ের ভৌগােলিক অবস্থান কোথায় ছিল?
    উঃ মেহেরগড়ের অবস্থান ছিল সিন্ধু ও বেলুচিস্তানের মধ্যবর্তী স্থানে।
  6. মেহেরগড়ের আয়তন কত ছিল?
    উঃ মেহেরগড়ের আয়তন ছিল দৈর্ঘ্যে ২ কিমি ও প্রস্থে ১ কিমি।
  7. ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা কোনটি?
    উঃ মেহেরগড় সভ্যতা ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা।
  8. মেহেরগড় সভ্যতা কখন আবিষ্কৃত হয়?
    উঃ মেহেরগড় সভ্যতা ১৯৭৪ সালে আবিষ্কৃত হয়।
  9. মেহেরগড় সভ্যতা কারা আবিষ্কার করেন?
    উঃ রিচার্ড মিভৌ ও জেন ফ্রাঁসােয়া জায়েজ মেহেরগড় সভ্যতা আবিষ্কার করেন।
  10. মেহেরগড় সভ্যতা কখন গড়ে উঠেছিল?
    উঃ আনুমানিক খ্রিঃপূঃ ৭০০০-৩২০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়কালে মেহেরগড় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।
  11. প্রথম তুলাের চাষ করা শুরু করেন?
    উঃ মেহেরগড় সভ্যতার অধিবাসীরা প্রথম তুলাের চাষ শুরু করেন।
  12. হরপ্পা সভ্যতা কোন সভ্যতার সমসাময়িক?
    উঃ হরপ্পা সভ্যতা মেসােপটেমিয়া এবং সুমেরীয় সভ্যতার সমসাময়িক।
  13. হরপ্পা সভ্যতা কোন যুগের সভ্যতা?
    উঃ হরপ্পা সভ্যতা তাম্র-প্রস্তর যুগের সভ্যতা।
  14. হরপ্পা সভ্যতায় কোন ধাতুর ব্যবহার জানা ছিল না?
    উঃ হরপ্পা সভ্যতায় লােহার ব্যবহার জানা ছিল না।
  15. হরপ্পা সভ্যতায় কোন প্রাণীর কথা অজানা ছিল?
    উঃ এই সভ্যতায় অশ্বের ব্যবহার অজানা ছিল।
  16. হরপ্পা সভ্যতা কত প্রাচীন?
    উঃ পণ্ডিতদের মতে ভারত-উপমহাদেশে এই সভ্যতার বিকাশ ঘটে খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার অব্দে বা তারও আগে এবং খ্রিস্টপূর্ব ১৭৫০ অব্দ পর্যন্ত এই সভ্যতার ব্যাপ্তি ছিল।
  17. হরপ্পা সভ্যতার আবিষ্কারকের নাম কী?
    উঃ এই সভ্যতার মহেন-জো-দারাে অঞ্চলের ও হরপ্পা অঞ্চলের আবিষ্কারক যথাক্রমে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও দয়ারাম সাহানি। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে প্রত্নতত্ত্ববিদ কানিংহাম ইরাবতী নদীর তীরে হরপ্পায় অপরিচিত লিপি-সংবলিত একটি সিলমােহরের সন্ধান পান।
  18. হরপ্পা সভ্যতা কত সালে আবিষ্কৃত হয় ?
    উঃ এই সভ্যতা ১৯২১ সালে আবিষ্কৃত হয়।
  19. হরপ্পা সভ্যতার অবস্থান কোথায় ছিল ?
    উঃ সিন্ধু নদকে কেন্দ্র করে এই সভ্যতার বিকাশ হয়। এই সভ্যতার দুটি প্রধান অঞ্চল হল- (১) পশ্চিম পাঞ্জাবের মন্টগােমারি জেলার হরপ্পা, (২) সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলার মহেন-জো-দারাে অঞ্চল।
  20. হরপ্পা সভ্যতার ভাষা কী ছিল ?
    উঃ এই সভ্যতার লেখন অনেকটা প্রাচীন মিশরীয় হিয়রােগ্লিফিক লেখার মতাে। তবে এই লিপিগুলির পাঠোদ্ধার না হওয়ায় এর প্রকৃত ভাষা এখনও অজানা।
  21. ভারতের প্রাচীনতম লিপির নাম কী ?
    উঃ ভারতের প্রাচীনতম লিপির নাম সিন্ধুলিপি।
  22. হরপ্পা সভ্যতায় কোন্ পশুকে দেবতাজ্ঞানে পুজো করা হত ?
    উঃ হরপ্পা সভ্যতায় বড়াে কুঁজবিশিষ্ট ষাঁড়কে দেবতাজ্ঞানে পুজো করা হত।
  23. হরপ্পা সভ্যতা কখন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল ?
    উঃ খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-১৪০০ অব্দের মধ্যে হরপ্পা সভ্যতা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল।
  24. ‘মহেন-জো-দারাে’ কথার অর্থ কী ?
    উঃ মহেনজোদারাে কথার অর্থ ‘মৃতের স্তুপ’।
  25. কোন বন্দরের মাধ্যমে হরপ্পা-সভ্যতার বৈদেশিক বাণিজ্য চলত ?
    উঃ লােথাল বন্দরের মাধ্যমে হরপ্পা সভ্যতার বৈদেশিক বাণিজ্য চলত।
  26. হরপ্পা কোথায় অবস্থিত ?
    উঃ হরপ্পা পাঞ্জাবের মন্টগােমারি জেলায় অবস্থিত।
  27. হরপ্পা সভ্যতার কোন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল ?
    উঃ হরপ্পা সভ্যতার সুমের দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল, এইরূপ প্রমাণ পাওয়া।
  28. লােথাল কোথায় অবস্থিত?
    উঃ লােথাল বর্তমান গুজরাত রাজ্যে অবস্থিত।
  29. বিদেশ থেকে হরপ্পায় কী কী দ্রব্য আমদানি করা হত ?
    উঃ বিদেশ থেকে হরপ্পায় সােনা, টিন, তামা, রপা, শঙ্খ, দেবদার কাঠ ইত্যাদি আমদানি করা হত।
  30. হরপ্পা ও মহেন-জো-দারাে বর্তমানে কোন রাষ্ট্রের অন্তর্গত?
    উঃ হরপ্পা ও মহেন-জো-দারাে বর্তমানে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্গত।
  31. হরপ্পা সভ্যতার কোথায় সমাধিক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়েছে?
    উঃ হরপ্পা সভ্যতার হরপ্পা অঞ্চলে সমাধিক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে।

Comment

Class XI Political Science

Class XII Political Science

Class 12 Bangla Books Question& Answers