সরকারের শাখাসমূহ : আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ বর্ণনামূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১) শাসন বিভাগ বলতে কী বােঝ?
উত্তর : ‘শাসন বিভাগ’ শব্দটি সংকীর্ণ এবং ব্যাপক এই দুই অর্থেই ব্যবহার করা হয়। সংকীর্ণ অর্থে প্রধান কর্মকর্তা এবং অন্যান্য পরিচালকগণকে নিয়ে শাসন বিভাগ গঠিত হয়। এরা দেশ শাসনের মূলনীতি নির্ধারণ করেন এবং প্রশাসন ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত স্থায়ী কর্মচারীগণের মাধ্যমে ওই নীতি কার্যকর করেন। এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভাকে শাসন বিভাগ বলা যায়। কিন্তু ব্যাপক অর্থে শাসন বিভাগ বলতে রাষ্টের প্রধান কর্মকর্তা ও প্রধান পরিচালকবৃন্দসহ প্রশাসন ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত সকল কর্মচারীদের বােঝায়। আইন অনুযায়ী শাসননীতি নির্ধারণ এবং তা কার্যকর করবার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্মসচিব ও কর্মচারী নিয়ে শাসন বিভাগ গঠিত। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংকীর্ণ অর্থেই শাসন বিভাগ কথাটির ব্যবহার করা হয়। শাসক-প্রধান বা শাসন বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা নির্বাচনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। ব্রিটেনের রানি উত্তরাধিকার-সূত্রে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জনগণের দ্বারা পরােক্ষভাবে নির্বাচিত হন। ফরাসি রাষ্ট্রপতি জনগণের প্রত্যক্ষ ভােটে নির্বাচিত হন। ভারতের রাষ্ট্রপতি আইনসভার সদস্যগণের দ্বারা নির্বাচিত হন। বিভিন্ন দেশের শাসনব্যবস্থায় শাসক প্রধানের নির্বাচন পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
প্রশ্ন ২) একক শাসন কর্তৃপক্ষ বলতে কী বােঝায়? এর গুণাগুণ আলােচনা করাে।
উত্তর : অধ্যাপক গার্নারের মতে শাসন বিভাগের সংগঠন এক বা একাধিক ব্যক্তির ভিত্তিতে হতে পারে। শাসন বিভাগের ক্ষমতা চরমভাবে যখন একজন ব্যক্তির ওপর ন্যস্ত হয়, তাকে একক শাসন কর্তৃপক্ষ বলা যেতে পারে। একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় একক শাসন কর্তৃপক্ষের অস্তিত্ব সুস্পষ্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে জার্মানিতে হিটলারের নেতৃত্বে এবং ইটালিতে মুসােলিনির
নেতৃত্বে গঠিত সরকার একক শাসন কর্তৃপক্ষের উদাহরণ বলা যেতে পারে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থাকে একক শাসন কর্তৃপক্ষের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়।
একক শাসন কর্তৃপক্ষের সপক্ষে কতকগুলি যুক্তির অবতারণা করা হয়। এই যুক্তিগুলি হল—
(ক) এই শাসনব্যবস্থায় সরকারের পক্ষে দ্রুত এবং বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয় এবং তা কার্যকর করা যায়। একজন দক্ষ সেনাপতি দুজন অদক্ষ সেনাপতি অপেক্ষা শ্রেয় নেপােলিয়নের এই বিখ্যাত উক্তি একক শাসন কর্তৃপক্ষের মূলনীতি বলে গৃহীত।
(খ) এই শাসনব্যবস্থায় একটি সুসংহত শাসননীতি হিসাবে গ্রহণ করা সম্ভব হয়।
(গ) দায়িত্বশীলতার দিক থেকে বলা যায় যে, একক শাসন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বও সুনির্দিষ্ট।
(ঘ) সুষ্ঠ শাসন পরিচালনার জন্য শাসন বিভাগীয় তথ্যের গােপনীয়তা রক্ষা বিশেষ প্রয়ােজন বলে মনে হয়। এই শাসনব্যবস্থায় তা সম্ভব হয়।
একক শাসন কর্তৃপক্ষের বিপক্ষে কয়েকটি যুক্তির অবতারণা করা হয়-
(ক) শাসন কর্তৃপক্ষের ক্ষমতার অপব্যবহার করার বা স্বৈরাচারী হওয়ার প্রবণতা উপেক্ষা করা যায় না।
(খ) একজন ব্যক্তির হাতে সকল ক্ষমতা চরমভাবে কেন্দ্রীভূত হলে ক্ষমতার অপব্যবহারে ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষুন্ন হবার আশঙ্কা থাকে।
নেতৃত্বে গঠিত সরকার একক শাসন কর্তৃপক্ষের উদাহরণ বলা যেতে পারে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থাকে একক শাসন কর্তৃপক্ষের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়।
একক শাসন কর্তৃপক্ষের সপক্ষে কতকগুলি যুক্তির অবতারণা করা হয়। এই যুক্তিগুলি হল—
(ক) এই শাসনব্যবস্থায় সরকারের পক্ষে দ্রুত এবং বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয় এবং তা কার্যকর করা যায়। একজন দক্ষ সেনাপতি দুজন অদক্ষ সেনাপতি অপেক্ষা শ্রেয় নেপােলিয়নের এই বিখ্যাত উক্তি একক শাসন কর্তৃপক্ষের মূলনীতি বলে গৃহীত।
(খ) এই শাসনব্যবস্থায় একটি সুসংহত শাসননীতি হিসাবে গ্রহণ করা সম্ভব হয়।
(গ) দায়িত্বশীলতার দিক থেকে বলা যায় যে, একক শাসন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বও সুনির্দিষ্ট।
(ঘ) সুষ্ঠ শাসন পরিচালনার জন্য শাসন বিভাগীয় তথ্যের গােপনীয়তা রক্ষা বিশেষ প্রয়ােজন বলে মনে হয়। এই শাসনব্যবস্থায় তা সম্ভব হয়।
একক শাসন কর্তৃপক্ষের বিপক্ষে কয়েকটি যুক্তির অবতারণা করা হয়-
(ক) শাসন কর্তৃপক্ষের ক্ষমতার অপব্যবহার করার বা স্বৈরাচারী হওয়ার প্রবণতা উপেক্ষা করা যায় না।
(খ) একজন ব্যক্তির হাতে সকল ক্ষমতা চরমভাবে কেন্দ্রীভূত হলে ক্ষমতার অপব্যবহারে ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষুন্ন হবার আশঙ্কা থাকে।
প্রশ্ন ৩) বহুশাসন কতৃপক্ষের সংজ্ঞা দাও। এর গুণাগুণ আলােচনা করাে।
উত্তর : শাসনক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ একাধিক ব্যক্তি-সমন্বিত কোনাে সংস্থার হাতে ন্যস্ত থাকলে তাকে বহুব্যক্তিবিশিষ্ট শাসন বিভাগ বা বহুশাসন কর্তৃপক্ষ বলে অভিহিত করা যায়। ইতিহাসে বহুশাসন-কতৃপক্ষের অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়। প্রাচীন গ্রিসের এথেন্স ও স্পার্টা এবং প্রাচীন রােমে একাধিক শাসন কর্তৃপক্ষের দ্বারা শাসন পরিচালনার কথা জানতে পারা যায়। বর্তমানকালে সুইজারল্যান্ড এবং সােভিয়েত ইউনিয়নের শাসন বিভাগকে একাধিক ব্যক্তি-সমন্বিত শাসন বিভাগ বলে উল্লেখ করা যেতে পারে। বহুশাসন কর্তৃপক্ষের সপক্ষে কতকগুলি যুক্তির অবতারণা করা হয়।
এই যুক্তিগুলি হল—
(i) বহুশাসন কর্তৃপক্ষ বা একাধিক ব্যক্তি-সমন্বিত শাসন বিভাগের ক্ষেত্রে শাসন ক্ষমতার অপব্যবহারের সম্ভাবনা কম থাকে।
(ii) শাসনকার্য পরিচালনায় বহু ব্যক্তি আলাপ-আলােচনা, বিচারবিবেচনার সুযােগ থাকে বলে শাসনব্যবস্থায় উৎকর্ষ সাধিত হয়।
(iii) শাসনব্যবস্থায় জনগণের স্বাধীনতা হরণের সুযােগ থাকে না।
বহু বা সমষ্টিগত শাসন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযােগ হল এই যে—
(ক) বহুজনের মধ্যে শাসন ক্ষমতা বিভক্ত হওয়ার ফলে শাসনের বলিষ্ঠতা লক্ষ করা যায় না।
(খ) তা ছাড়া জরুরি অবস্থায় বা সংকটকালে এই শাসনব্যবস্থা প্রয়ােজনীয় ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়।
(গ) শাসন পরিচালনায় অনেকের অংশগ্রহণের ফলে গােপনীয়তা রক্ষার ব্যবস্থাও সম্ভব হয় না।।
এই যুক্তিগুলি হল—
(i) বহুশাসন কর্তৃপক্ষ বা একাধিক ব্যক্তি-সমন্বিত শাসন বিভাগের ক্ষেত্রে শাসন ক্ষমতার অপব্যবহারের সম্ভাবনা কম থাকে।
(ii) শাসনকার্য পরিচালনায় বহু ব্যক্তি আলাপ-আলােচনা, বিচারবিবেচনার সুযােগ থাকে বলে শাসনব্যবস্থায় উৎকর্ষ সাধিত হয়।
(iii) শাসনব্যবস্থায় জনগণের স্বাধীনতা হরণের সুযােগ থাকে না।
বহু বা সমষ্টিগত শাসন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযােগ হল এই যে—
(ক) বহুজনের মধ্যে শাসন ক্ষমতা বিভক্ত হওয়ার ফলে শাসনের বলিষ্ঠতা লক্ষ করা যায় না।
(খ) তা ছাড়া জরুরি অবস্থায় বা সংকটকালে এই শাসনব্যবস্থা প্রয়ােজনীয় ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়।
(গ) শাসন পরিচালনায় অনেকের অংশগ্রহণের ফলে গােপনীয়তা রক্ষার ব্যবস্থাও সম্ভব হয় না।।
প্রশ্ন ৪) “পূর্ণ ক্ষমতারস্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব নয়, কাম্যও নয়।” ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : বাস্তব প্রয়ােগ সম্ভব নয়
প্রথমত, এই নীতিতে বলা আছে,—এক বিভাগের ব্যক্তি অন্য বিভাগে যাবে না। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। ভারত, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশে আইনসভার সদস্যরা শাসন বিভাগে যান। তা ছাড়া মন্ত্রীরা আইন বিভাগের সদস্য হিসাবে আইনসভায় গিয়ে বিতর্কে অংশ নেন।
দ্বিতীয়ত, এই নীতিতে বলা আছে,—এক বিভাগের কোনাে ব্যক্তি অন্য বিভাগে কাজ করবে না। কিন্তু বাস্তব ঘটনা আলাদা। পৃথিবীর প্রতিটি দেশে বিচার বিভাগ বিচার করতে গিয়ে আইন তৈরি করে তা ছাড়া শাসন বিভাগও আইন তৈরি করে। যেমন, আমাদের রাষ্ট্রপতি জরুরি আইন জারি করেন।
তৃতীয়ত, এই নীতিতে বলা আছে—এক বিভাগ অন্য বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করবে না। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয়। তাই দেখা যায়, আমাদের দেশে আইনসভা অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে মন্ত্রীসভাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
চতুর্থত, বেশ কিছু রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেছেন, সরকারের কার্যাবলি তিন ভাগে বিভক্ত নয়। যেমন, গুডনাউ বলেছেন, সরকারের দুটি বিভাগ, আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগ। বিচার বিভাগ শাসন বিভাগের মধ্যে পড়ে। আবার উইলােবি বলেছেন, সরকারের পাঁচটি বিভাগ আছে।
এই নীতি কাম্য নয় :
প্রথমত, সরকার একটি জীবদেহের মতাে। জীবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ করতে পারে না। সেরুপ সরকারের বিভাগগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ করবে—তা সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত, প্রত্যেক বিভাগ যদি পৃথকভাবে কাজ করার সুযােগ পায় তাহলে প্রত্যেকে কাজের খুঁত ধরতে ব্যস্ত থাকবে। অপরকে হেয় করার চেষ্টা করবে। এটি কাম্য নয়।
তৃতীয়ত, এই নীতি স্বাধীনতার একমাত্র রক্ষাকবচ নয়। স্বাধীনতার সব থেকে বড়াে রক্ষাকবচ হল জনগণের সতর্কতা। পেরিক্লিসের ভাষায় বলা যায়, “Eternal vigilance is the price of liberty” অর্থাৎ চিরন্তন সতর্কতাই স্বাধীনতার মূল্য।
চতুর্থত, এই নীতিতে বলা আছে -সরকারের তিনটি বিভাগ সমান ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন বিভাগের প্রাধান্যই স্বীকৃত।
পঞ্চমত, স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে জনগণের স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষা করতে অষ্টদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এই মতবাদের গুরুত্ব ছিল। বর্তমানে গণতন্ত্রে এটি কাম্য নয়। কারণ, গণতন্ত্রে শাসন বিভাগের সঙ্গে আইন বিভাগের সুসম্পর্ক গড়ে তােলার উপর জোর দেওয়া হয়। অধ্যাপক গার্নার বলেছেন—দুটি বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকলে, সুশাসন গড়ে তােলা সম্ভব নয়। এই অবস্থায় পূর্ণ ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ কাম্য নয়।
প্রথমত, এই নীতিতে বলা আছে,—এক বিভাগের ব্যক্তি অন্য বিভাগে যাবে না। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। ভারত, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশে আইনসভার সদস্যরা শাসন বিভাগে যান। তা ছাড়া মন্ত্রীরা আইন বিভাগের সদস্য হিসাবে আইনসভায় গিয়ে বিতর্কে অংশ নেন।
দ্বিতীয়ত, এই নীতিতে বলা আছে,—এক বিভাগের কোনাে ব্যক্তি অন্য বিভাগে কাজ করবে না। কিন্তু বাস্তব ঘটনা আলাদা। পৃথিবীর প্রতিটি দেশে বিচার বিভাগ বিচার করতে গিয়ে আইন তৈরি করে তা ছাড়া শাসন বিভাগও আইন তৈরি করে। যেমন, আমাদের রাষ্ট্রপতি জরুরি আইন জারি করেন।
তৃতীয়ত, এই নীতিতে বলা আছে—এক বিভাগ অন্য বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করবে না। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয়। তাই দেখা যায়, আমাদের দেশে আইনসভা অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে মন্ত্রীসভাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
চতুর্থত, বেশ কিছু রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেছেন, সরকারের কার্যাবলি তিন ভাগে বিভক্ত নয়। যেমন, গুডনাউ বলেছেন, সরকারের দুটি বিভাগ, আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগ। বিচার বিভাগ শাসন বিভাগের মধ্যে পড়ে। আবার উইলােবি বলেছেন, সরকারের পাঁচটি বিভাগ আছে।
এই নীতি কাম্য নয় :
প্রথমত, সরকার একটি জীবদেহের মতাে। জীবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ করতে পারে না। সেরুপ সরকারের বিভাগগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ করবে—তা সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত, প্রত্যেক বিভাগ যদি পৃথকভাবে কাজ করার সুযােগ পায় তাহলে প্রত্যেকে কাজের খুঁত ধরতে ব্যস্ত থাকবে। অপরকে হেয় করার চেষ্টা করবে। এটি কাম্য নয়।
তৃতীয়ত, এই নীতি স্বাধীনতার একমাত্র রক্ষাকবচ নয়। স্বাধীনতার সব থেকে বড়াে রক্ষাকবচ হল জনগণের সতর্কতা। পেরিক্লিসের ভাষায় বলা যায়, “Eternal vigilance is the price of liberty” অর্থাৎ চিরন্তন সতর্কতাই স্বাধীনতার মূল্য।
চতুর্থত, এই নীতিতে বলা আছে -সরকারের তিনটি বিভাগ সমান ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন বিভাগের প্রাধান্যই স্বীকৃত।
পঞ্চমত, স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে জনগণের স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষা করতে অষ্টদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এই মতবাদের গুরুত্ব ছিল। বর্তমানে গণতন্ত্রে এটি কাম্য নয়। কারণ, গণতন্ত্রে শাসন বিভাগের সঙ্গে আইন বিভাগের সুসম্পর্ক গড়ে তােলার উপর জোর দেওয়া হয়। অধ্যাপক গার্নার বলেছেন—দুটি বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকলে, সুশাসন গড়ে তােলা সম্ভব নয়। এই অবস্থায় পূর্ণ ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ কাম্য নয়।
প্রশ্ন ৫) আধুনিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের কার্যাবলি আলােচনা করাে।
উত্তর : পূর্বের পুলিশি রাষ্ট্র বর্তমানে জনকল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ফলে শাসন বিভাগের কাজের পরিধি বেড়েছে। শাসন বিভাগের কাজকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করে আলােচনা করা যায় :
(ক) অভ্যন্তরীণ শাসন সংক্রান্ত কাজ
রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করা শাসন বিভাগের প্রধান কাজ। এই কাজের মধ্যে পড়ে রাষ্ট্রের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা, কর্মচারীদের নিয়ােগ, বদলি ও তাদের জন্য নিয়মকানুন প্রস্তুত প্রভৃতি।
(খ) পররাষ্ট্র সংক্রান্ত কাজ
পররাষ্ট্র সংক্রান্ত কাজ শাসন বিভাগের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। পররাষ্ট্র সংক্রান্ত কাজ বলতে, অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সন্ধি ও চুক্তি করা, অন্য রাষ্ট্রে কূটনৈতিক প্রতিনিধি পাঠানাে, অন্য রাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রতিনিধিকে গ্রহণ করা প্রভৃতি।
(গ) আইন সংক্রান্ত কাজ
শাসন বিভাগ আইন প্রণয়নের কাজ করে থাকে। মন্ত্রীসভা পরিচালিত শাসনব্যবস্থায় মন্ত্রীরাই আইনসভায় গুরুত্বপূর্ণ বিল উত্থাপন করেন এবং বিলের সপক্ষে বক্তব্য রাখেন। আবার শাসন বিভাগ সম্মতি না দিলে কোনাে বিল আইনে পরিণত হতে পারে না।
(ঘ) অর্থসংক্রান্ত কাজ
শাসন বিভাগ অর্থসংক্রান্ত কাজও করে থাকে। কোন্ খাতে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে, কোন্ নীতিতে কর ধার্য করা হবে, তা নির্ধারণ করে শাসন বিভাগ। বাজেট তৈরি করে শাসন বিভাগের অর্থমন্ত্রী। ঋণ গ্রহণের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেয় শাসন বিভাগ।
(ঙ) বিচার সংক্রান্ত কাজ
শাসন বিভাগ বিচার সংক্রান্ত কাজও করে থাকে। বর্তমানে শাসন বিভাগ বিভিন্ন ধরনের বিচার সংক্রান্ত কাজ করে থাকে। বেশির ভাগ দেশে শাসন বিভাগের প্রধান উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের নিয়ােগ করেন। যেমন, ভারতের রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্ট, হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়ােগ করেন। আবার শাসক প্রধান দণ্ডিত ব্যক্তিদের ক্ষমা প্রদর্শন বা দণ্ডমুকুব বা দণ্ড হ্রাস করতে পারেন।
(চ) নীতি নির্ধারণ সংক্রান্ত কাজ
শাসন বিভাগের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল নীতি নির্ধারণ করা। ভারত, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রীসভা এই নীতি নির্ধারণ করে।
(ক) অভ্যন্তরীণ শাসন সংক্রান্ত কাজ
রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করা শাসন বিভাগের প্রধান কাজ। এই কাজের মধ্যে পড়ে রাষ্ট্রের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা, কর্মচারীদের নিয়ােগ, বদলি ও তাদের জন্য নিয়মকানুন প্রস্তুত প্রভৃতি।
(খ) পররাষ্ট্র সংক্রান্ত কাজ
পররাষ্ট্র সংক্রান্ত কাজ শাসন বিভাগের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। পররাষ্ট্র সংক্রান্ত কাজ বলতে, অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সন্ধি ও চুক্তি করা, অন্য রাষ্ট্রে কূটনৈতিক প্রতিনিধি পাঠানাে, অন্য রাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রতিনিধিকে গ্রহণ করা প্রভৃতি।
(গ) আইন সংক্রান্ত কাজ
শাসন বিভাগ আইন প্রণয়নের কাজ করে থাকে। মন্ত্রীসভা পরিচালিত শাসনব্যবস্থায় মন্ত্রীরাই আইনসভায় গুরুত্বপূর্ণ বিল উত্থাপন করেন এবং বিলের সপক্ষে বক্তব্য রাখেন। আবার শাসন বিভাগ সম্মতি না দিলে কোনাে বিল আইনে পরিণত হতে পারে না।
(ঘ) অর্থসংক্রান্ত কাজ
শাসন বিভাগ অর্থসংক্রান্ত কাজও করে থাকে। কোন্ খাতে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে, কোন্ নীতিতে কর ধার্য করা হবে, তা নির্ধারণ করে শাসন বিভাগ। বাজেট তৈরি করে শাসন বিভাগের অর্থমন্ত্রী। ঋণ গ্রহণের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেয় শাসন বিভাগ।
(ঙ) বিচার সংক্রান্ত কাজ
শাসন বিভাগ বিচার সংক্রান্ত কাজও করে থাকে। বর্তমানে শাসন বিভাগ বিভিন্ন ধরনের বিচার সংক্রান্ত কাজ করে থাকে। বেশির ভাগ দেশে শাসন বিভাগের প্রধান উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের নিয়ােগ করেন। যেমন, ভারতের রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্ট, হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়ােগ করেন। আবার শাসক প্রধান দণ্ডিত ব্যক্তিদের ক্ষমা প্রদর্শন বা দণ্ডমুকুব বা দণ্ড হ্রাস করতে পারেন।
(চ) নীতি নির্ধারণ সংক্রান্ত কাজ
শাসন বিভাগের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল নীতি নির্ধারণ করা। ভারত, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রীসভা এই নীতি নির্ধারণ করে।
প্রশ্ন ৬) দ্বিকক্ষ সমন্বিত আইনসভার সপক্ষে মতামত দাও।
উত্তর : (ক) আকস্মিক বা ভাবাবেগপ্রসূত আইন প্রণয়ন রদ করে
আইনসভার দুটি কক্ষ থাকলে জাতীয় স্বার্থের অনুপন্থী আইন প্রণয়ন করা সম্ভব হয়। এককক্ষ ব্যবস্থায় সকল বিষয়ে বিস্তৃত ও সুচিন্তিত আলােচনা সম্ভব হয় না। অবিবেচনাপ্রসূত আইন প্রণয়নের সম্ভাবনা থেকে যায়।
(খ) এককক্ষের স্বৈরাচারী মনােভাব রদ করে
অধ্যাপক ব্রাইস (Lord Bryce)-এর মতে, আইনসভার অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তি হল অসংযমী ও স্বৈরাচারী হওয়া। আইনসভা এককক্ষ বিশিষ্ট হলে স্বৈরাচারী ও নীতিভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা অধিক হয়। দুটি কক্ষ একে অপরের স্বৈরাচারী মনােভাবকে সংযত রাখতে পারে। ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখা এবং নাগরিক অধিকার রক্ষায় দুটি কক্ষের বিশেষ প্রয়ােজন।
(গ) জনমতের সুষ্ঠু প্রতিফলন হয়
আইনসভার দটি কক্ষ থাকলে জনমতের যথার্থ প্রতিফলন সম্ভব হয়। একটি কক্ষ থাকলে এবং একই সময়ে সদস্যগণ নির্বাচিত হলে ওই নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে জনমতের পরিবর্তন আইনসভায় প্রতিফলিত হতে পারে না। দুটি কক্ষ থাকলে তাদের গঠন পদ্ধতি ও নির্বাচন বিভিন্ন হয়।
(ঘ) সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব সম্ভব
দ্বিকক্ষ ব্যবস্থায় সমাজের সকল শ্রেণির স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব সম্ভব হয়। এককক্ষবিশিষ্ট আইন সভায় প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে সকল শ্রেণির উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব সম্ভব হয় না।
(ঙ) কর্মধারার সম্প্রসারণ দ্বিকক্ষ ব্যবস্থাকে সমর্থন করে
বর্তমান যুগে রাষ্ট্রের কর্মধারা বিচিত্র ও বহুধা বিস্তৃত হয়ে পড়েছে। আইনসভার কাজও বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি কক্ষের মাধ্যমে তাই সমস্ত কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হয় না। সেজন্য দুটি কক্ষের প্রয়ােজন হয়।
(চ) যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় কক্ষ বিশেষ প্রয়ােজন
যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় জাতীয় (National) স্বার্থ ও আঞ্চলিক (regional) স্বার্থের সমন্বয়সাধন করা হয়। জনসংখ্যার ভিত্তিতে গঠিত, নিম্নকক্ষে জাতীয় স্বার্থের প্রতিনিধিগণ এবং অঙ্গরাজ্যের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত দ্বিতীয় কক্ষ যথার্থ সমন্বয়সাধন করতে পারে।
আইনসভার দুটি কক্ষ থাকলে জাতীয় স্বার্থের অনুপন্থী আইন প্রণয়ন করা সম্ভব হয়। এককক্ষ ব্যবস্থায় সকল বিষয়ে বিস্তৃত ও সুচিন্তিত আলােচনা সম্ভব হয় না। অবিবেচনাপ্রসূত আইন প্রণয়নের সম্ভাবনা থেকে যায়।
(খ) এককক্ষের স্বৈরাচারী মনােভাব রদ করে
অধ্যাপক ব্রাইস (Lord Bryce)-এর মতে, আইনসভার অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তি হল অসংযমী ও স্বৈরাচারী হওয়া। আইনসভা এককক্ষ বিশিষ্ট হলে স্বৈরাচারী ও নীতিভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা অধিক হয়। দুটি কক্ষ একে অপরের স্বৈরাচারী মনােভাবকে সংযত রাখতে পারে। ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখা এবং নাগরিক অধিকার রক্ষায় দুটি কক্ষের বিশেষ প্রয়ােজন।
(গ) জনমতের সুষ্ঠু প্রতিফলন হয়
আইনসভার দটি কক্ষ থাকলে জনমতের যথার্থ প্রতিফলন সম্ভব হয়। একটি কক্ষ থাকলে এবং একই সময়ে সদস্যগণ নির্বাচিত হলে ওই নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে জনমতের পরিবর্তন আইনসভায় প্রতিফলিত হতে পারে না। দুটি কক্ষ থাকলে তাদের গঠন পদ্ধতি ও নির্বাচন বিভিন্ন হয়।
(ঘ) সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব সম্ভব
দ্বিকক্ষ ব্যবস্থায় সমাজের সকল শ্রেণির স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব সম্ভব হয়। এককক্ষবিশিষ্ট আইন সভায় প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে সকল শ্রেণির উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব সম্ভব হয় না।
(ঙ) কর্মধারার সম্প্রসারণ দ্বিকক্ষ ব্যবস্থাকে সমর্থন করে
বর্তমান যুগে রাষ্ট্রের কর্মধারা বিচিত্র ও বহুধা বিস্তৃত হয়ে পড়েছে। আইনসভার কাজও বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি কক্ষের মাধ্যমে তাই সমস্ত কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হয় না। সেজন্য দুটি কক্ষের প্রয়ােজন হয়।
(চ) যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় কক্ষ বিশেষ প্রয়ােজন
যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় জাতীয় (National) স্বার্থ ও আঞ্চলিক (regional) স্বার্থের সমন্বয়সাধন করা হয়। জনসংখ্যার ভিত্তিতে গঠিত, নিম্নকক্ষে জাতীয় স্বার্থের প্রতিনিধিগণ এবং অঙ্গরাজ্যের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত দ্বিতীয় কক্ষ যথার্থ সমন্বয়সাধন করতে পারে।
প্রশ্ন ৭) দ্বিকক্ষ সমন্বিত আইনসভার বিপক্ষে যুক্তি দেখাও।
উত্তর : (ক) গণতান্ত্রিক নীতির প্রতিফলন হয় না : গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় আইন বিভিন্ন ধারায় প্রকাশ হতে পারে না। গণতন্ত্রে দু-মুখো কথা বলতে পারে না। আইন হল জনগণের ইচ্ছার প্রকাশ ও সমাজের দর্পণ। গণতন্ত্রে সফলতার জন্যে তাই প্রয়ােজন আইনসভার ঐক্য। ফ্রাঙ্কলিন বলেছেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা ‘বিপরীতমুখী গতি সম্পন্ন অশ্ব ও অশ্বয়ানের মতাে।’
(খ) প্রতিক্রিয়ার দুর্গ হয়ে দাঁড়ায় : দ্বিতীয় কক্ষ বিভিন্ন শ্রেণি ও স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে। ফলে সাধারণ স্বার্থ উপেক্ষিত হয়ে শ্রেণিস্বার্থ রক্ষিত হয়। অনেকে বলেন দ্বিতীয় কক্ষ প্রতিক্রিয়ার দুর্গবিশেষ হয়ে দাঁড়ায়।
(গ) অগণতান্ত্রিক গঠন : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় আইনসভা জনগণের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হবে—এটি অন্যতম মৌল গণতান্ত্রিক নিয়ম। কিন্তু দ্বিতীয় কক্ষের আইনসভায় লক্ষ করা যায় যে, সমাজের বিত্তশালী, রক্ষণশীল ও মনােনীত ব্যক্তিরাই এতে সদস্য হওয়ার সুযােগ লাভ করেন।
(ঘ) বর্তমানে আকস্মিক আইন প্রণয়ন সম্ভব নয় : অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে, বর্তমানে আইন প্রণয়নের যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তাতে আকস্মিকভাবে বা অবিবেচনাপ্রসূত আইন প্রণয়ন সম্ভব না। প্রতিটি আইনের খসড়া বিল আলােচনার সময় সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনগণের অবগতির জন্যে প্রকাশিত হয়।
(ঙ) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংরক্ষণ : সংখ্যালঘু স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে দ্বিতীয় কক্ষের প্রয়ােজন বলা হয়। এর উত্তরে বলা যায় যে, সংখ্যালঘু স্বার্থ রক্ষার জন্যে দ্বিতীয় করে প্রয়ােজন নেই। দেশের সংবিধান ও আইনে নানাভাবে সংখ্যালঘু স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকে। দ্বিতীয় কক্ষ সংস্কারকার্যে বিলম্ব ঘটিয়ে কায়েমি স্বার্থের পৃষ্ঠপােষকতা করে মাত্র।
(চ) যুক্তরাষ্ট্রেও অপরিহার্য নয় : যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় দ্বিতীয় কক্ষের অপরিহার্যতার কথা অনেকে স্বীকার করেন না। অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই আঞ্চলিক স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকে। সংবিধানের প্রাধান্যের জন্যেই আঞ্চলিক স্বার্থ সুরক্ষিত হতে পারে।
(খ) প্রতিক্রিয়ার দুর্গ হয়ে দাঁড়ায় : দ্বিতীয় কক্ষ বিভিন্ন শ্রেণি ও স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে। ফলে সাধারণ স্বার্থ উপেক্ষিত হয়ে শ্রেণিস্বার্থ রক্ষিত হয়। অনেকে বলেন দ্বিতীয় কক্ষ প্রতিক্রিয়ার দুর্গবিশেষ হয়ে দাঁড়ায়।
(গ) অগণতান্ত্রিক গঠন : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় আইনসভা জনগণের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হবে—এটি অন্যতম মৌল গণতান্ত্রিক নিয়ম। কিন্তু দ্বিতীয় কক্ষের আইনসভায় লক্ষ করা যায় যে, সমাজের বিত্তশালী, রক্ষণশীল ও মনােনীত ব্যক্তিরাই এতে সদস্য হওয়ার সুযােগ লাভ করেন।
(ঘ) বর্তমানে আকস্মিক আইন প্রণয়ন সম্ভব নয় : অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে, বর্তমানে আইন প্রণয়নের যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তাতে আকস্মিকভাবে বা অবিবেচনাপ্রসূত আইন প্রণয়ন সম্ভব না। প্রতিটি আইনের খসড়া বিল আলােচনার সময় সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনগণের অবগতির জন্যে প্রকাশিত হয়।
(ঙ) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংরক্ষণ : সংখ্যালঘু স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে দ্বিতীয় কক্ষের প্রয়ােজন বলা হয়। এর উত্তরে বলা যায় যে, সংখ্যালঘু স্বার্থ রক্ষার জন্যে দ্বিতীয় করে প্রয়ােজন নেই। দেশের সংবিধান ও আইনে নানাভাবে সংখ্যালঘু স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকে। দ্বিতীয় কক্ষ সংস্কারকার্যে বিলম্ব ঘটিয়ে কায়েমি স্বার্থের পৃষ্ঠপােষকতা করে মাত্র।
(চ) যুক্তরাষ্ট্রেও অপরিহার্য নয় : যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় দ্বিতীয় কক্ষের অপরিহার্যতার কথা অনেকে স্বীকার করেন না। অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই আঞ্চলিক স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকে। সংবিধানের প্রাধান্যের জন্যেই আঞ্চলিক স্বার্থ সুরক্ষিত হতে পারে।
প্রশ্ন ৮) আমলাতন্ত্র বলতে কী বােঝায়?
উত্তর : আধুনিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক শাসন কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত বিরাট সংখ্যক সরকারি কর্মচারী নীতি ও কর্মসূচিকে বাস্তবে রূপায়িত করেন। এরা রাষ্ট্রকৃত্যকের (Civil Service) সদস্য বলে গণ্য। এই স্থায়ী কর্মচারীগণ ‘আমলা’ বলে পরিচিত। বর্তমান গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ‘আমলাতন্ত্র বা Bureaucracy নিন্দাসূচক অর্থে ব্যবহার করা হলেও শাসন পরিচালনায় আমলাতন্ত্রের গুরুত্ব উপেক্ষা করা সম্ভব হয় না। ব্যুৎপত্তিগত অর্থে ‘আমলাতন্ত্র’ বা ইংরেজি ‘Bureaucracy’ কথাটি ফরাসি ব্যুরাে (Bureau) থেকে উদ্ভূত যার অর্থ ডেস্ক বা লেখার টেবিল। সুতরাং, আক্ষরিক অর্থ হল ‘টেবিল শাসনব্যবস্থা’ (desk Government)। পরবর্তী সময়ে ব্যুরাে কথাটি এক-একটি দপ্তর হিসাবে গৃহীত হয় এবং সহজ ভাষায় আমলাতন্ত্র বলতে বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে শাসন পরিচালনা বােঝায়। আব্রাহাম লিঙ্কন প্রদত্ত গণতয়ের বিখ্যাত সংজ্ঞাটি অনুসরণে বলা হয় ‘আমলাতন্ত্র হ’ল বিভিন্ন দপ্তর দ্বারা দপ্তরের স্বার্থে দপ্তরের শাসনব্যবস্থা। অধ্যাপক ফাইনার (H. Finer) বলেছেন, ‘স্থায়ী, অভিজ্ঞ ও বেতনভুক কর্মচারীগণের দ্বারা পরিচালিত প্রশাসন ব্যবস্থা হল আমলাতন্ত্র।’ অধ্যাপক গার্নার (Garner) বলেছেন, “আমলাতন্ত্র বলতে এমন এক শাসনব্যবস্থা বােঝায় যেখানে সরকারের কার্যাবলি প্রধানত বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে সম্পাদিত হয় এবং দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন। মার্কসের মতে,—“রাষ্ট্রের সারবস্তু ও আত্মিক সমাজের আত্মিক সত্তা আমলাতন্ত্র ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতাে নিয়ন্ত্রণ করে।”
প্রশ্ন ৯) আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : জার্মান সমাজতত্ত্ববিদ ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) আমলাতন্ত্রের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেছেন। সেগুলি হল—(ক) প্রত্যেক কর্মচারীর ওপর নির্দিষ্ট দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে। (খ) প্রত্যেক কর্মচারী যাতে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হন, তার জন্যে কর্তৃত্বের বণ্টন, (গ) স্থায়ীভাবে এবং নিয়মিত দায়িত্ব পালনের জন্যে সুস্পষ্ট নিয়মকানুনের প্রবর্তন, (ঘ) বিভিন্ন স্তরে বিখ্যাত সরকারি কর্মচারীগণের পিরামিড সদৃশ সংগঠন এবং (ঙ) সরকারের নীতি, সিদ্ধান্ত, কার্যাবলি লিখিতভাবে নথিভুক্ত করার ব্যবস্থা। ওয়েবার (Weber) বলেছেন, স্থায়িত্ব, কঠোর শৃঙ্খলাপরায়ণতা, বিশ্বস্ততা ও নিয়মনিষ্ঠার মাপকাঠিতে আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা অন্য শাসনব্যবস্থা অপেক্ষা অধিক উৎকর্ষের দাবি করতে পারে।
প্রশ্ন ১০) সরকারের তৃতীয় অঙ্গ হিসাবে বিচার বিভাগের গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উত্তর : সরকারের তৃতীয় অঙ্গ হল বিচার বিভাগ। উদারনৈতিক গণতন্ত্রে বিচার বিভাগের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করা হয়। অধ্যাপক ল্যাস্কি (Harold Laski) বলেছেন, কোনাে জাতীয় রাষ্ট্রের বিচার পরিচালনা পদ্ধতির প্রতি দৃষ্টিপাত করলে সেই রাষ্ট্রের নৈতিক প্রকৃতি উপলব্ধি করা যায়। ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির, ব্যক্তির সঙ্গে সরকারের বিরােধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার
শ্রেষ্ঠ সংস্থা হল বিচারালয়। লর্ড ব্রাইস (Lord James Bryce) এর মতে, বিচার বিভাগের কর্মকুশলতাই পরকারের যােগ্যতা বিচারের উপযুক্ত মানদণ্ড। রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনের নিরিখে বিচার করা এবং আইন অনুযায়ী উপযুক্ত দণ্ড বিধানের দায়িত্ব বিচার বিভাগের। ন্যায়বিচারের অভাব ঘটলে এবং জনগণের মনে বিচার বিভাগের ওপর আস্থার অভাব হলে রাষ্ট্রের বিপর্যয় দেখা দেবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও গবেষকগণের মধ্যে অনেকে বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিরপেক্ষ বলে মনে করেন না। বিচার বিভাগ রাজনৈতিক ব্যবস্থারই অঙ্গ। উদারনৈতিক গণতন্ত্রে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতার ওপর যে প্রাধান্য আরােপ করা হয়, অধ্যাপক অ্যালান বল (Alan R. Ball) তাকে ‘আধা অলীক’ (Semi-fiction) বলে মনে করেন। মার্কসীয় দৃষ্টিতে বিচার বিভাগও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃতি অনুযায়ী ভূমিকা পালন করে। শ্রেণি বৈষম্যমূলক পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় আইন শ্রেণিস্বার্থের রক্ষক হয়ে পড়ে এবং বিচার বিভাগও সেই আইনের প্রেক্ষিতে বিচার সম্পাদন করে। চিন, ভিয়েতনাম, কিউবা প্রভৃতি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচার বিভাগের পৃথক গুরুত্ব স্বীকার করা হয় না।
শ্রেষ্ঠ সংস্থা হল বিচারালয়। লর্ড ব্রাইস (Lord James Bryce) এর মতে, বিচার বিভাগের কর্মকুশলতাই পরকারের যােগ্যতা বিচারের উপযুক্ত মানদণ্ড। রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনের নিরিখে বিচার করা এবং আইন অনুযায়ী উপযুক্ত দণ্ড বিধানের দায়িত্ব বিচার বিভাগের। ন্যায়বিচারের অভাব ঘটলে এবং জনগণের মনে বিচার বিভাগের ওপর আস্থার অভাব হলে রাষ্ট্রের বিপর্যয় দেখা দেবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও গবেষকগণের মধ্যে অনেকে বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিরপেক্ষ বলে মনে করেন না। বিচার বিভাগ রাজনৈতিক ব্যবস্থারই অঙ্গ। উদারনৈতিক গণতন্ত্রে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতার ওপর যে প্রাধান্য আরােপ করা হয়, অধ্যাপক অ্যালান বল (Alan R. Ball) তাকে ‘আধা অলীক’ (Semi-fiction) বলে মনে করেন। মার্কসীয় দৃষ্টিতে বিচার বিভাগও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃতি অনুযায়ী ভূমিকা পালন করে। শ্রেণি বৈষম্যমূলক পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় আইন শ্রেণিস্বার্থের রক্ষক হয়ে পড়ে এবং বিচার বিভাগও সেই আইনের প্রেক্ষিতে বিচার সম্পাদন করে। চিন, ভিয়েতনাম, কিউবা প্রভৃতি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচার বিভাগের পৃথক গুরুত্ব স্বীকার করা হয় না।
প্রশ্ন ১১) আধুনিক রাষ্ট্রে আইন বিভাগের কার্যাবলি বর্ণনা করাে।
উত্তর : বর্তমানে বিশ্বে সরকারের আইনসভার গুরুত্ব সবাই স্বীকার করেন। ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত প্রভৃতি দেশে আইনসভার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর কার্যাবলি নিম্নরূপ :
(ক)আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত কাজ
আইনসভার মূল কাজ হল, আইন তৈরি করা। আইনের অন্যান্য উৎসগুলির গুরুত্ব কমে যাওয়ার ফলে আইনসভা আইন প্রণয়নের মূল উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনসভা নতুন আইন তৈরি করে এবং পুরাতন আইনকে সংশােধন করে সময়ের উপযােগী করে তােলে।
(খ) শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কাজ
আইন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল,—শাসন বিভাগ তৈরি করা এবং তাকে নিয়ন্ত্রণ করা। যেমন, ভারতের আইনসভা মন্ত্রীসভাকে তৈরি করে। মন্ত্রীসভার প্রতিটি সদস্যকে পার্লামেন্টের সদস্য হতে হয়। শুধু তাই নয়, মন্ত্রীপরিষদকে তাদের কাজের জন্য পার্লামেন্টের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।
(গ) বিচার সংক্রান্ত কাজ
আইন বিভাগ বেশ কিছু বিচার সংক্রান্ত কাজ করে। যেমন, ভারতের রাষ্ট্রপতি সংবিধান লঙ্ঘন করলে পার্লামেন্ট ইমপিচমেন্টের মাধ্যমে বিচার করে তাকে অপসারিত করতে পারে।
(ঘ) সংবিধান সংশােধন সংক্রান্ত কাজ
আইনসভার গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল—সংবিধান সংশােধন করা। আইনসভা এককভাবে অথবা অন্যের সহযােগিতায় এই কাজ করে থাকে। যেমন, ব্রিটেনে আইনসভা একাই সংবিধান সংশােধন করতে পারে। ভারতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে পার্লামেন্ট একা সংবিধান সংশােধন করে। আবার কিছু ক্ষেত্রে রাজ্যের সম্মতি লাগে।
(ঙ) অর্থ সংক্রান্ত কাজ
আইনসভার অনুমােদন ছাড়া সরকার কোনাে অর্থ ব্যয় করতে পারে না। আর্থিক বছরের শুরুতে আইনসভা বাজেট অনুমােদন করে। আবার অর্থ ঠিকমতাে খরচ হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে আইনসভায় বিভিন্ন কমিটি গঠিত হয়। যেমন, সরকারি হিসাব কমিটি, আনুমানিক ব্যয় কমিটি প্রভৃতি।
(চ) নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ
আইনসভা কিছু কিছু নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ করে থাকে। যেমন, রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচনে ভারতের পার্লামেন্ট অংশগ্রহণ করে।
(ক)আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত কাজ
আইনসভার মূল কাজ হল, আইন তৈরি করা। আইনের অন্যান্য উৎসগুলির গুরুত্ব কমে যাওয়ার ফলে আইনসভা আইন প্রণয়নের মূল উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনসভা নতুন আইন তৈরি করে এবং পুরাতন আইনকে সংশােধন করে সময়ের উপযােগী করে তােলে।
(খ) শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কাজ
আইন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল,—শাসন বিভাগ তৈরি করা এবং তাকে নিয়ন্ত্রণ করা। যেমন, ভারতের আইনসভা মন্ত্রীসভাকে তৈরি করে। মন্ত্রীসভার প্রতিটি সদস্যকে পার্লামেন্টের সদস্য হতে হয়। শুধু তাই নয়, মন্ত্রীপরিষদকে তাদের কাজের জন্য পার্লামেন্টের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।
(গ) বিচার সংক্রান্ত কাজ
আইন বিভাগ বেশ কিছু বিচার সংক্রান্ত কাজ করে। যেমন, ভারতের রাষ্ট্রপতি সংবিধান লঙ্ঘন করলে পার্লামেন্ট ইমপিচমেন্টের মাধ্যমে বিচার করে তাকে অপসারিত করতে পারে।
(ঘ) সংবিধান সংশােধন সংক্রান্ত কাজ
আইনসভার গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল—সংবিধান সংশােধন করা। আইনসভা এককভাবে অথবা অন্যের সহযােগিতায় এই কাজ করে থাকে। যেমন, ব্রিটেনে আইনসভা একাই সংবিধান সংশােধন করতে পারে। ভারতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে পার্লামেন্ট একা সংবিধান সংশােধন করে। আবার কিছু ক্ষেত্রে রাজ্যের সম্মতি লাগে।
(ঙ) অর্থ সংক্রান্ত কাজ
আইনসভার অনুমােদন ছাড়া সরকার কোনাে অর্থ ব্যয় করতে পারে না। আর্থিক বছরের শুরুতে আইনসভা বাজেট অনুমােদন করে। আবার অর্থ ঠিকমতাে খরচ হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে আইনসভায় বিভিন্ন কমিটি গঠিত হয়। যেমন, সরকারি হিসাব কমিটি, আনুমানিক ব্যয় কমিটি প্রভৃতি।
(চ) নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ
আইনসভা কিছু কিছু নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ করে থাকে। যেমন, রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচনে ভারতের পার্লামেন্ট অংশগ্রহণ করে।
প্রশ্ন ১২) আধুনিক রাষ্ট্রে বিচার বিভাগের কার্যাবলি বর্ণনা করাে।
উত্তর : (ক) আইনের ব্যাখ্যা করে
আইন কর্তৃক প্রণীত আইনের মধ্যে অস্পষ্টতা থাকলে, বিচার বিভাগ তা ব্যাখ্যা করে অস্পষ্টতা দূর করে। শুধু তাই নয়, সেই আইন ঠিকমত পালিত হচ্ছে কিনা বিচার বিভাগ তা লক্ষ রাখে।
(খ) বিরােধের মীমাংসা করে
ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বা রাষ্ট্র ও ব্যক্তির মধ্যে বিরােধ দেখা দিলে, রাষ্ট্রের আইন অনুসারে বিচার বিভাগ তার মীমাংসা করে। এর মাধ্যমে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে বিচার বিভাগ।
(গ) আইন তৈরি করে
দেশের প্রচলিত আইন দিয়ে সব সময় বিরােধের মীমাংসা করা যায় না। অনেক সময় বিচারকরা নিজেদের বিচারবুদ্ধি ও ন্যায়নীতি অনুসারে তার মীমাংসা করে। এই মীমাংসার ক্ষেত্রে বিচারকরা যে রায় দেন দেন সেটি ভবিষ্যতে বিচারের কাজে আইন হিসেবে গণ্য হয়।
(ঘ) অধিকার সংরক্ষণ করে
বিচার বিভাগ জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে। লিখিত সংবিধানে সাধারণত মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ থাকে। বিচার বিভাগকে সেই অধিকার রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
(ঙ) পরামর্শ দেয়
ভারত, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশে বিচার বিভাগ শাসন বিভাগকে পরামর্শ দেয়। যেমন, ভারতে, “কেরালা শিক্ষা বিল” সম্পর্কে সুপ্রিমকোর্ট রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিয়েছিল।
(চ) সংবিধানের ব্যাখ্যা করে
বিচার বিভাগকে সংবিধানের অভিভাবক বলা হয়। সংবিধানের কোনাে শব্দ বা বাক্যের মধ্যে যদি কোনাে অস্পষ্টতা থাকে, তাহলে বিচার বিভাগ অভিভাবক হিসাবে যে ব্যাখ্যা দেবে সেটি হবে চূড়ান্ত। আবার, কোনাে আইন যদি সংবিধান বিরােধী হয়, তাহলে বিচার বিভাগ তাকে অবৈধ বলে বাতিল করতে পারে।
(ছ) যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামাে বজায় রাখে
যুক্তরাষ্ট্রে দু-ধরনের সরকার থাকে,—কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার। সংবিধান দ্বারা উভয়ের মধ্যে ক্ষমতা ভাগ করে দেওয়া হয়। প্রত্যেকে যাতে নিজ এক্তিয়ারের মধ্যে কাজ করে তা লক্ষ রাখার অধিকার বিচার বিভাগের রয়েছে।
(জ) অন্যান্য কাজ
এ ছাড়াও বিচার বিভাগ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। এর মধ্যে আছে কর্মচারী নিয়ােগ, লাইসেন্স দেওয়া, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি দেখাশােনা করা প্রভৃতি।
আইন কর্তৃক প্রণীত আইনের মধ্যে অস্পষ্টতা থাকলে, বিচার বিভাগ তা ব্যাখ্যা করে অস্পষ্টতা দূর করে। শুধু তাই নয়, সেই আইন ঠিকমত পালিত হচ্ছে কিনা বিচার বিভাগ তা লক্ষ রাখে।
(খ) বিরােধের মীমাংসা করে
ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বা রাষ্ট্র ও ব্যক্তির মধ্যে বিরােধ দেখা দিলে, রাষ্ট্রের আইন অনুসারে বিচার বিভাগ তার মীমাংসা করে। এর মাধ্যমে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে বিচার বিভাগ।
(গ) আইন তৈরি করে
দেশের প্রচলিত আইন দিয়ে সব সময় বিরােধের মীমাংসা করা যায় না। অনেক সময় বিচারকরা নিজেদের বিচারবুদ্ধি ও ন্যায়নীতি অনুসারে তার মীমাংসা করে। এই মীমাংসার ক্ষেত্রে বিচারকরা যে রায় দেন দেন সেটি ভবিষ্যতে বিচারের কাজে আইন হিসেবে গণ্য হয়।
(ঘ) অধিকার সংরক্ষণ করে
বিচার বিভাগ জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে। লিখিত সংবিধানে সাধারণত মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ থাকে। বিচার বিভাগকে সেই অধিকার রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
(ঙ) পরামর্শ দেয়
ভারত, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশে বিচার বিভাগ শাসন বিভাগকে পরামর্শ দেয়। যেমন, ভারতে, “কেরালা শিক্ষা বিল” সম্পর্কে সুপ্রিমকোর্ট রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিয়েছিল।
(চ) সংবিধানের ব্যাখ্যা করে
বিচার বিভাগকে সংবিধানের অভিভাবক বলা হয়। সংবিধানের কোনাে শব্দ বা বাক্যের মধ্যে যদি কোনাে অস্পষ্টতা থাকে, তাহলে বিচার বিভাগ অভিভাবক হিসাবে যে ব্যাখ্যা দেবে সেটি হবে চূড়ান্ত। আবার, কোনাে আইন যদি সংবিধান বিরােধী হয়, তাহলে বিচার বিভাগ তাকে অবৈধ বলে বাতিল করতে পারে।
(ছ) যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামাে বজায় রাখে
যুক্তরাষ্ট্রে দু-ধরনের সরকার থাকে,—কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার। সংবিধান দ্বারা উভয়ের মধ্যে ক্ষমতা ভাগ করে দেওয়া হয়। প্রত্যেকে যাতে নিজ এক্তিয়ারের মধ্যে কাজ করে তা লক্ষ রাখার অধিকার বিচার বিভাগের রয়েছে।
(জ) অন্যান্য কাজ
এ ছাড়াও বিচার বিভাগ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। এর মধ্যে আছে কর্মচারী নিয়ােগ, লাইসেন্স দেওয়া, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি দেখাশােনা করা প্রভৃতি।
প্রশ্ন ১৩) আইন বিভাগ কীভাবে শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রিত করে?
উত্তর : পার্লামেন্টীয় ব্যবস্থায় শাসন বিভাগকে গঠন ও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে আইন বিভাগ কার্যকারী ভূমিকা গ্রহণ করে। পার্লামেন্টীয় ব্যবস্থার রীতি অনুযায়ী মন্ত্রীপরিষদ যাবতীয় কার্যের জন্য ব্যক্তিগতভাবে ও যৌথভাবে পার্লামেন্টের প্রতি দায়িত্বশীল থাকেন। পার্লামেন্ট বা আইন বিভাগ প্রশ্ন, আলােচনা, প্রস্তাব ইত্যাদির মাধ্যমে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে। তবে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় আইন বিভাগের এই ভূমিকা থাকে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় আইন বিভাগ শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে না।
এ ছাড়া আইনসভা অনেক সময় রাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের নিয়ােগ করে, সন্ধি বা চুক্তি অনুমোদন করে এবং যুদ্ধ ঘােষণা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি সেনেটের পরামর্শ অনুযায়ী উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের নিয়ােগ করেন। মার্কিন কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া যুদ্ধ ঘােষণা করা যায় না।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন বিভাগ জনগণের অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করে। রাষ্ট্রের মধ্যে কর ধার্য, কর সংগ্রহ, আয় বা ব্যয়ের জন্য আইনসভার অনুমােদন প্রশ্নে ব্রিটেন ও ভারতে আইন সভার সরকারি আয় ও ব্যয়ের প্রশ্নে নিয়ন্ত্রণ আরােপ করে।
এ ছাড়া আইনসভা অনেক সময় রাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের নিয়ােগ করে, সন্ধি বা চুক্তি অনুমোদন করে এবং যুদ্ধ ঘােষণা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি সেনেটের পরামর্শ অনুযায়ী উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের নিয়ােগ করেন। মার্কিন কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া যুদ্ধ ঘােষণা করা যায় না।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন বিভাগ জনগণের অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করে। রাষ্ট্রের মধ্যে কর ধার্য, কর সংগ্রহ, আয় বা ব্যয়ের জন্য আইনসভার অনুমােদন প্রশ্নে ব্রিটেন ও ভারতে আইন সভার সরকারি আয় ও ব্যয়ের প্রশ্নে নিয়ন্ত্রণ আরােপ করে।
প্রশ্ন ১৪) আধুনিক রাষ্ট্রে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা কীভাবে রক্ষা করা যায়?
উত্তর : গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ হল প্রধান স্তম্ভ। স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হলে বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ ও অন্যান্য প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা প্রয়ােজন। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য কয়েকটি শর্তের উপর গুরুত্ব আরােপ করেন।
প্রথমত, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যােগ্য বিচারপতি প্রয়ােজন। শিক্ষাগত দিক থেকে বিচারপতিকে আইনজ্ঞ হতে হবে এবং সৎ, সাহসী ও নিষ্ঠাবান হওয়া প্রয়ােজন।
দ্বিতীয়ত, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অনেকাংশে বিচারপতিকে নিয়ােগ পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল। গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে বিচারপতি নিয়ােগের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ নির্বাচন, আইনসভা দ্বারা নির্বাচন এবং শাসন বিভাগ কর্তৃক নিয়ােগের পদ্ধতি লক্ষ করা যায়।
তৃতীয়ত, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য বিচারপতিদের কার্যকালের স্থায়িত্ব প্রয়ােজন। বিচারপতিদের কার্যকালের স্থায়িত্ব না থাকলে ন্যায়বিচার উপেক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
চতুর্থত, বিচারপতিদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য উপযুক্ত বেতন প্রয়ােজন। নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে হলে বিচারপতিগণকে অর্থনৈতিক অভাব থেকে মুক্ত করা প্রয়ােজন।
পঞ্চমত, ফরাসি চিন্তাবিদ মন্তেস্কু বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য ক্ষমতা-স্বতন্ত্রীকরণের উপর গুরুত্ব আরােপ করেছেন।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য এই সমস্ত শর্তগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও অধ্যাপক ল্যাস্কি মন্তব্য করেন যে, প্রতিটি দেশেই বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠিত সামাজিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সংরক্ষণ করে থাকে।
প্রথমত, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যােগ্য বিচারপতি প্রয়ােজন। শিক্ষাগত দিক থেকে বিচারপতিকে আইনজ্ঞ হতে হবে এবং সৎ, সাহসী ও নিষ্ঠাবান হওয়া প্রয়ােজন।
দ্বিতীয়ত, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অনেকাংশে বিচারপতিকে নিয়ােগ পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল। গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে বিচারপতি নিয়ােগের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ নির্বাচন, আইনসভা দ্বারা নির্বাচন এবং শাসন বিভাগ কর্তৃক নিয়ােগের পদ্ধতি লক্ষ করা যায়।
তৃতীয়ত, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য বিচারপতিদের কার্যকালের স্থায়িত্ব প্রয়ােজন। বিচারপতিদের কার্যকালের স্থায়িত্ব না থাকলে ন্যায়বিচার উপেক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
চতুর্থত, বিচারপতিদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য উপযুক্ত বেতন প্রয়ােজন। নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে হলে বিচারপতিগণকে অর্থনৈতিক অভাব থেকে মুক্ত করা প্রয়ােজন।
পঞ্চমত, ফরাসি চিন্তাবিদ মন্তেস্কু বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য ক্ষমতা-স্বতন্ত্রীকরণের উপর গুরুত্ব আরােপ করেছেন।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য এই সমস্ত শর্তগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও অধ্যাপক ল্যাস্কি মন্তব্য করেন যে, প্রতিটি দেশেই বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠিত সামাজিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সংরক্ষণ করে থাকে।