স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা (পশ্চিমবঙ্গ) বর্ণনামূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১) স্বায়ত্তশাসনের ধারণা কী? স্বায়ত্তশাসনের বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে।
উত্তর: “সুশাসন কখনাে স্বায়ত্তশাসনের বিকল্প হতে পারে না”—এই উপলদ্ধিই মানুষকে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হওয়ার অনুপ্রেরণা জোগায়। স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বারা যখন জেলা, শহর, গ্রাম প্রভৃতির মতাে ছােটো ছােটো অঞলের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়, তখন সেই ব্যবস্থাকে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা বলে। সংসদীয় গণতন্ত্রে জনগণই স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। গণতন্ত্রে যদি জনগণ সরকারের কাজে অংশগ্রহণ না করতে পারে তাহলে গণতন্ত্র সফল হতে পারে না। আর পঞ্চায়েতের মাধ্যমে গণতন্ত্র সার্থক রূপ লাভ করে। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে লর্ড রিপন স্থানীয় গণতন্ত্রকে সার্থক করে তােলার জন্য একে স্বায়ত্তশাসনে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেন। এককথায় স্বায়ত্তশাসনের অর্থ হল—’নিজেদের সরকার’। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে জওহরলাল নেহরু বলেন যে, ভারতের প্রকৃত গণতন্ত্রের ভিত্তি হবে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন। এবিষয়ে অধ্যাপক ল্যাস্কি বলেন—What touches all should be framed by all.
বৈশিষ্ট্য
(i) স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা আইনের দ্বারা সৃষ্ট। এটি একটি আইনগত সংস্থা। যেমন, ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় পৌরসভা আইন পশ্চিমবঙ্গের পৌরসভাগুলির উৎস।
(ii) স্বায়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠানগুলি জনসাধারণকে শাসনকার্য পরিচালনার বিষয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবার সুযােগ করে দেয়।
(iii) স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন সংস্থাগুলি আইনসম্মত যৌথ সংস্থা।
(iv) এগুলি ক্ষুদ্র সরকার হিসাবে কাজ করে।
(v) মিতব্যয়িতা ও ন্যায়পরায়ণতার দিক দিয়ে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার যথেষ্ট প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে। নিজেদের উন্নতির জন্য যে অর্থ স্থানীয় জনসাধারণ ব্যয় করে, সেই অর্থের যাতে অপচয় না হয় সেদিকে তারা সদাসতর্ক দৃষ্টি রাখে।
(vi) এই সংস্থাগুলি ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণের নীতি মেনে চলে না।
(vii) এই সংস্থাগুলি গণতন্ত্রের সম্প্রসারণে সাহায্য করে। এগুলিকে বলা হয় তৃণমূলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।
(viii) এই সংস্থাগুলি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে, অর্থ সংগ্রহ করতে এবং কর্মসূচি রূপায়ণ করতে পারে।
(ix) স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে তাদের প্রতিনিধিদের সম্পর্ক অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ হয়। জনসাধারণ নিজেরাই তাদের প্রতিনিধিদের কাজকর্ম প্রত্যক্ষ করে বলে তারা অতি সহজেই প্রতিনিধিদের যােগ্যতা বিচার করতে পারে। তাই এইরূপ শাসনব্যবস্থাকে সামাজিক অগ্রগতির হাতিয়ার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
উত্তর: “সুশাসন কখনাে স্বায়ত্তশাসনের বিকল্প হতে পারে না”—এই উপলদ্ধিই মানুষকে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হওয়ার অনুপ্রেরণা জোগায়। স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বারা যখন জেলা, শহর, গ্রাম প্রভৃতির মতাে ছােটো ছােটো অঞলের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়, তখন সেই ব্যবস্থাকে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা বলে। সংসদীয় গণতন্ত্রে জনগণই স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। গণতন্ত্রে যদি জনগণ সরকারের কাজে অংশগ্রহণ না করতে পারে তাহলে গণতন্ত্র সফল হতে পারে না। আর পঞ্চায়েতের মাধ্যমে গণতন্ত্র সার্থক রূপ লাভ করে। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে লর্ড রিপন স্থানীয় গণতন্ত্রকে সার্থক করে তােলার জন্য একে স্বায়ত্তশাসনে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেন। এককথায় স্বায়ত্তশাসনের অর্থ হল—’নিজেদের সরকার’। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে জওহরলাল নেহরু বলেন যে, ভারতের প্রকৃত গণতন্ত্রের ভিত্তি হবে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন। এবিষয়ে অধ্যাপক ল্যাস্কি বলেন—What touches all should be framed by all.
বৈশিষ্ট্য
(i) স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা আইনের দ্বারা সৃষ্ট। এটি একটি আইনগত সংস্থা। যেমন, ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় পৌরসভা আইন পশ্চিমবঙ্গের পৌরসভাগুলির উৎস।
(ii) স্বায়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠানগুলি জনসাধারণকে শাসনকার্য পরিচালনার বিষয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবার সুযােগ করে দেয়।
(iii) স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন সংস্থাগুলি আইনসম্মত যৌথ সংস্থা।
(iv) এগুলি ক্ষুদ্র সরকার হিসাবে কাজ করে।
(v) মিতব্যয়িতা ও ন্যায়পরায়ণতার দিক দিয়ে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার যথেষ্ট প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে। নিজেদের উন্নতির জন্য যে অর্থ স্থানীয় জনসাধারণ ব্যয় করে, সেই অর্থের যাতে অপচয় না হয় সেদিকে তারা সদাসতর্ক দৃষ্টি রাখে।
(vi) এই সংস্থাগুলি ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণের নীতি মেনে চলে না।
(vii) এই সংস্থাগুলি গণতন্ত্রের সম্প্রসারণে সাহায্য করে। এগুলিকে বলা হয় তৃণমূলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।
(viii) এই সংস্থাগুলি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে, অর্থ সংগ্রহ করতে এবং কর্মসূচি রূপায়ণ করতে পারে।
(ix) স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে তাদের প্রতিনিধিদের সম্পর্ক অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ হয়। জনসাধারণ নিজেরাই তাদের প্রতিনিধিদের কাজকর্ম প্রত্যক্ষ করে বলে তারা অতি সহজেই প্রতিনিধিদের যােগ্যতা বিচার করতে পারে। তাই এইরূপ শাসনব্যবস্থাকে সামাজিক অগ্রগতির হাতিয়ার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
প্রশ্ন ২) পশ্চিমবঙ্গে পৌরসভার গঠন আলােচনা করাে।
উত্তর: আধুনিক ভারতে পৌরসভার সূত্রপাত ঘটেছিল ব্রিটিশ আমলে। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে লর্ড রিপনের একটি ঘােষণার মধ্য দিয়ে পৌর শাসনব্যবস্থার যাত্রা শুরু। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত বঙ্গীয় পৌর আইন [The Bengal Municipal Act-1932]-এর দ্বারা এতদিন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের পৌরসভাগুলি প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়েছে। কলকাতা, চন্দননগর, হাওড়া, আসানসােল এবং শিলিগুড়ি—এই কয়টি শহর ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য শহরে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা পৌরসভার দ্বারা পরিচালিত হয়।
গঠন
নতুন আইনে পৌরসভাগুলিকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
(ক) ২ লক্ষাধিক সংখ্যাবিশিষ্ট পৌরঅঞল।
(খ) ১ লক্ষ ৫০ হাজার ও অনধিক ২ লক্ষ জনসংখ্যাবিশিষ্ট পৌরঅঞ্চল।
(গ) অন্যূন ৭৫ হাজার অনধিক ১ লক্ষ ৫০ হাজার জনসংখ্যাবিশিষ্ট পৌরঅঞ্চল।
(ঘ) অন্যূন ২৫ হাজার অনধিক ৭৫ হাজার জনসংখ্যাবিশিষ্ট পৌরঅঞ্চল।
(ঙ) অনধিক ৭৫ হাজার জনসংখ্যাবিশিষ্ট পৌরঅঞ্চল।
কাউন্সিলারের যােগ্যতা
পৌরসভার সদস্যদের কাউন্সিলর হিসাবে অভিহিত করা হয়। তারা সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভােটাধিকারের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পৌরঅঞ্চলে বসবাসকারি ১৮ বছর বয়স্ক নাগরিকদের দ্বারা নির্বাচিত হন। কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হতে গেলে কোনাে ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভােটদাতা হতে হবে।
তিনটি কর্তৃপক্ষ
নতুন আইন অনুসারে পৌরসভার কার্যসম্পাদন ও পরিচালনা করার জন্য ৩টি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে—(ক) পৌরসভা, (খ) সপরিষদ, (গ) চেয়ারম্যান। প্রতিটি পৌরসভা নির্বাচিত কাউন্সিলারদের নিয়ে গঠিত কাউন্সিলার পরিষদকে পৌরসভা বলা হয়। এই পরিষদের মেয়াদ ৫ বছর।
বিভিন্ন কমিটি গঠন :
বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ পৌরসভা আইনে চার রকমের কমিটির কথা বলা হয়েছে।
(i) বরাে কমিটি; (i) ওয়ার্ড কমিটি; (ii) বিশেষ কমিটি; (iv) যৌথ কমিটি।
কর্মচারীবৃন্দ
একটি পৌরসভায় (১) একজন কার্যনির্বাহী আধিকারিক, (২) একজন চিকিৎসক, (৩) একজন বাস্তুকার, (৪) একজন সচিব, (৫) একজন প্রধান সহকারী, (৬) একজন জরিপদার ও (৭) একজন হিসাব পরীক্ষক এবং আরও অন্যান্য কর্মচারী থাকে।
উত্তর: আধুনিক ভারতে পৌরসভার সূত্রপাত ঘটেছিল ব্রিটিশ আমলে। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে লর্ড রিপনের একটি ঘােষণার মধ্য দিয়ে পৌর শাসনব্যবস্থার যাত্রা শুরু। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত বঙ্গীয় পৌর আইন [The Bengal Municipal Act-1932]-এর দ্বারা এতদিন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের পৌরসভাগুলি প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়েছে। কলকাতা, চন্দননগর, হাওড়া, আসানসােল এবং শিলিগুড়ি—এই কয়টি শহর ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য শহরে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা পৌরসভার দ্বারা পরিচালিত হয়।
গঠন
নতুন আইনে পৌরসভাগুলিকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
(ক) ২ লক্ষাধিক সংখ্যাবিশিষ্ট পৌরঅঞল।
(খ) ১ লক্ষ ৫০ হাজার ও অনধিক ২ লক্ষ জনসংখ্যাবিশিষ্ট পৌরঅঞ্চল।
(গ) অন্যূন ৭৫ হাজার অনধিক ১ লক্ষ ৫০ হাজার জনসংখ্যাবিশিষ্ট পৌরঅঞ্চল।
(ঘ) অন্যূন ২৫ হাজার অনধিক ৭৫ হাজার জনসংখ্যাবিশিষ্ট পৌরঅঞ্চল।
(ঙ) অনধিক ৭৫ হাজার জনসংখ্যাবিশিষ্ট পৌরঅঞ্চল।
কাউন্সিলারের যােগ্যতা
পৌরসভার সদস্যদের কাউন্সিলর হিসাবে অভিহিত করা হয়। তারা সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভােটাধিকারের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পৌরঅঞ্চলে বসবাসকারি ১৮ বছর বয়স্ক নাগরিকদের দ্বারা নির্বাচিত হন। কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হতে গেলে কোনাে ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভােটদাতা হতে হবে।
তিনটি কর্তৃপক্ষ
নতুন আইন অনুসারে পৌরসভার কার্যসম্পাদন ও পরিচালনা করার জন্য ৩টি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে—(ক) পৌরসভা, (খ) সপরিষদ, (গ) চেয়ারম্যান। প্রতিটি পৌরসভা নির্বাচিত কাউন্সিলারদের নিয়ে গঠিত কাউন্সিলার পরিষদকে পৌরসভা বলা হয়। এই পরিষদের মেয়াদ ৫ বছর।
বিভিন্ন কমিটি গঠন :
বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ পৌরসভা আইনে চার রকমের কমিটির কথা বলা হয়েছে।
(i) বরাে কমিটি; (i) ওয়ার্ড কমিটি; (ii) বিশেষ কমিটি; (iv) যৌথ কমিটি।
কর্মচারীবৃন্দ
একটি পৌরসভায় (১) একজন কার্যনির্বাহী আধিকারিক, (২) একজন চিকিৎসক, (৩) একজন বাস্তুকার, (৪) একজন সচিব, (৫) একজন প্রধান সহকারী, (৬) একজন জরিপদার ও (৭) একজন হিসাব পরীক্ষক এবং আরও অন্যান্য কর্মচারী থাকে।
প্রশ্ন ৩) পৌরসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি বর্ণনা করাে।
উত্তর: পশ্চিমবঙ্গ পৌর আইনের ষষ্ঠ অধ্যায়ে [৬৩–৬৬] নং ধারা পৌরসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি সম্বন্ধে আলােচনা করা হয়েছে। এইসব কাজকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(ক) বাধ্যতামূলক কাজ (খ) স্বেচ্ছাধীন কাজ (গ) অর্পিত কাজ।
বাধ্যতামূলক কাজ
বাধ্যতামূলক কার্যাবলি চার ভাগে বিভক্ত। যথা—
(১) জনসেবামূলক, (২) জনস্বাস্থ্যমূলক, (৩) নগর পরিকল্পনামূলক, (৪) প্রশাসন বিষয়ক।
পৌরসভার বাধ্যতামূলক কাজের মধ্যে কয়েকটি হল রাস্তা, সেতু তৈরি, মারাত্মক রােগ প্রতিরােধ, পরিবেশ দূষণরােধ, নগর পরিকল্পনা প্রভৃতি।
স্বেচ্ছাধীন কার্যাবলি
নতুন আইনে স্বেচ্ছাধীন কার্যাবলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়—(১) জনকল্যাণ, (২) জনস্বাস্থ্য, (৩) শিক্ষা, (৪) প্রশাসন, (৫) উন্নয়ন। মােট ৪১টি বিষয়কে স্বেচ্ছাধীন কার্যাবলির তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সেগুলির মধ্যে কয়েকটি হল-বৃদ্ধ ও অনাথদের আশ্রয়দান, পাঠাগার, সংগ্রহশালা, গুদামঘর, দোকান, বাজার সংরক্ষণ প্রভৃতি।
অর্পিত কাজ
অর্পিত তালিকায় ১৭টি কাজ তালিকাভুক্ত। এইসব কাজের মধ্যে শহর ও গ্রাম পরিকল্পনা, নগরােন্নয়ন, জল সরবরাহ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, খাদ্য ও খাদ্য সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ, তফশিলি জাতি ও উপজাতি কল্যাণ, বনসৃজন প্রভৃতি।
মূল্যায়ন
শহরাঞ্চলে পৌরসভাগুলির নানা সমস্যা আছে। এর মধ্যে প্রধান হল আর্থিক সমস্যা। আছে সাংগঠনিক সমস্যাও। পৌরসভাগুলির দিন দিন পরিকল্পনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আয়ের উৎস সীমিত। তাই নিজস্ব আয়ে কর্মচারীদের বেতন মেটানাে সম্ভব হচ্ছে না। রাজ্য সরকারের অনুদানের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তাই স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে আয়ের উৎসকে বাড়াতে হবে। বকেয়া কর আদায় করতে হবে। পৌর প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি দূর করা দরকার। রাজনৈতিক কারণে অনেক সময় অযােগ্য ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হয়ে আসে।
এইভাবে পৌরসভাগুলির হাতে অধিক ক্ষমতা প্রদান, উন্নয়নের স্বার্থে এগুলির প্রশাসনিক ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস প্রভৃতির মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের সরকার পৌর প্রশাসনের ক্ষেত্রে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে সে বিষয়ে দ্বিমত পােষণ করার কোনাে অবকাশ নেই।
উত্তর: পশ্চিমবঙ্গ পৌর আইনের ষষ্ঠ অধ্যায়ে [৬৩–৬৬] নং ধারা পৌরসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি সম্বন্ধে আলােচনা করা হয়েছে। এইসব কাজকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(ক) বাধ্যতামূলক কাজ (খ) স্বেচ্ছাধীন কাজ (গ) অর্পিত কাজ।
বাধ্যতামূলক কাজ
বাধ্যতামূলক কার্যাবলি চার ভাগে বিভক্ত। যথা—
(১) জনসেবামূলক, (২) জনস্বাস্থ্যমূলক, (৩) নগর পরিকল্পনামূলক, (৪) প্রশাসন বিষয়ক।
পৌরসভার বাধ্যতামূলক কাজের মধ্যে কয়েকটি হল রাস্তা, সেতু তৈরি, মারাত্মক রােগ প্রতিরােধ, পরিবেশ দূষণরােধ, নগর পরিকল্পনা প্রভৃতি।
স্বেচ্ছাধীন কার্যাবলি
নতুন আইনে স্বেচ্ছাধীন কার্যাবলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়—(১) জনকল্যাণ, (২) জনস্বাস্থ্য, (৩) শিক্ষা, (৪) প্রশাসন, (৫) উন্নয়ন। মােট ৪১টি বিষয়কে স্বেচ্ছাধীন কার্যাবলির তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সেগুলির মধ্যে কয়েকটি হল-বৃদ্ধ ও অনাথদের আশ্রয়দান, পাঠাগার, সংগ্রহশালা, গুদামঘর, দোকান, বাজার সংরক্ষণ প্রভৃতি।
অর্পিত কাজ
অর্পিত তালিকায় ১৭টি কাজ তালিকাভুক্ত। এইসব কাজের মধ্যে শহর ও গ্রাম পরিকল্পনা, নগরােন্নয়ন, জল সরবরাহ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, খাদ্য ও খাদ্য সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ, তফশিলি জাতি ও উপজাতি কল্যাণ, বনসৃজন প্রভৃতি।
মূল্যায়ন
শহরাঞ্চলে পৌরসভাগুলির নানা সমস্যা আছে। এর মধ্যে প্রধান হল আর্থিক সমস্যা। আছে সাংগঠনিক সমস্যাও। পৌরসভাগুলির দিন দিন পরিকল্পনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আয়ের উৎস সীমিত। তাই নিজস্ব আয়ে কর্মচারীদের বেতন মেটানাে সম্ভব হচ্ছে না। রাজ্য সরকারের অনুদানের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তাই স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে আয়ের উৎসকে বাড়াতে হবে। বকেয়া কর আদায় করতে হবে। পৌর প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি দূর করা দরকার। রাজনৈতিক কারণে অনেক সময় অযােগ্য ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হয়ে আসে।
এইভাবে পৌরসভাগুলির হাতে অধিক ক্ষমতা প্রদান, উন্নয়নের স্বার্থে এগুলির প্রশাসনিক ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস প্রভৃতির মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের সরকার পৌর প্রশাসনের ক্ষেত্রে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে সে বিষয়ে দ্বিমত পােষণ করার কোনাে অবকাশ নেই।
প্রশ্ন ৪) রাজ্য সরকার কীভাবে কর্পোরেশনের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেন?
উত্তর: আমাদের মনে রাখা দরকার যে-কোনাে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন হতে পারে না। এরা কেউই সরকার বা সরকারের সমগােত্রীয় নয়। এছাড়া রাজ্য সরকারকে এইসব প্রতিষ্ঠানের দোষ ত্রুটির জন্য আইনসভায় দায়বদ্ধ থাকতে হয়। সুতরাং, পশ্চিমবঙ্গের পৌরসভাগুলির উপর রাজ্য সরকারের যথেষ্ট প্রশাসনিক ও আর্থিক নিয়ন্ত্রণ আছে।
নতুন আইনে কলকাতা কর্পোরেশনকে যেমন অনেক বেশি ক্ষমতার অধিকারী করা হয়েছে তেমনি সেই ক্ষমতার উপর রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণ সুস্পষ্টভাবে কার্যকর করা হয়েছে। প্রথম, কলকাতা কর্পোরেশনের কোনাে বিভাগ, দপ্তর, কার্যাবলি, সম্পত্তি ইত্যাদি পরিদর্শন বা পরীক্ষার জন্য রাজ্য সরকার উপযুক্ত দায়িত্বশীল প্রশাসনিক কর্মচারী নিয়ােগ করতে পারে। এই কর্মচারী যখন তার দায়িত্ব পালনের প্রয়ােজনে কর্পোরেশনকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দলিল ও কাগজপত্র সরবরাহ করার জন্য নির্দেশ দিতে পারে। নতুন পুর আইনের ১১৩নং ধারা অনুসারে তিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে রিপাের্ট পেশ করতে পারেন, ওই রিপাের্টের ভিত্তিতে যদি রাজ্য সরকারের মনে হয় যে কর্পোরেশন নিজের দায়িত্ব পালনের অক্ষমতা বা অবহেলা প্রদর্শন করেছে অথবা রাজ্য সরকারের সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে তাহলে পৌর আইনের ১১৭ নং ধারা অনুসারে রাজ্য সরকার কর্পোরেশনের পরিচালনার দায়িত্বভার স্বহস্তে গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া রাজ্য সরকার যদি মনে করে যে মেয়র কর্পোরেশনের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারিয়েছেন তাহলে রাজ্য সরকার কর্পোরেশনকে অধিগ্রহণ করতে পারে। রাজ্য সরকার কলকাতা কর্পোরেশনকে সর্বাধিক ১৮ মাস
পর্যন্ত বাতিল করে রাখতে পারে। প্রথম পর্বে সরকার ১ বছরের জন্য কর্পোরেশনকে অধিগ্রহণ করে পরে এর মেয়াদ আরও ৬ মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায়। কর্পোরেশনের কোনাে কাজ আইন বহির্ভূতভাবে হয়েছে একথা যদি রাজ্য সরকার মনে করে তবে প্রয়ােজনীয় সংশােধনের জন্য রাজ্য সরকার নির্দেশ দিতে পারে। এছাড়া আমরা আগেই দেখেছি যে অর্থ সাহায্য এবং ঋণ সংগ্রহের জন্য কর্পোরেশনকে রাজ্য সরকারের উপর নির্ভর করতে হয়। এই নির্ভরতার মধ্যে স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণের মনোভাব নিহিত থাকে।
উত্তর: আমাদের মনে রাখা দরকার যে-কোনাে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন হতে পারে না। এরা কেউই সরকার বা সরকারের সমগােত্রীয় নয়। এছাড়া রাজ্য সরকারকে এইসব প্রতিষ্ঠানের দোষ ত্রুটির জন্য আইনসভায় দায়বদ্ধ থাকতে হয়। সুতরাং, পশ্চিমবঙ্গের পৌরসভাগুলির উপর রাজ্য সরকারের যথেষ্ট প্রশাসনিক ও আর্থিক নিয়ন্ত্রণ আছে।
নতুন আইনে কলকাতা কর্পোরেশনকে যেমন অনেক বেশি ক্ষমতার অধিকারী করা হয়েছে তেমনি সেই ক্ষমতার উপর রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণ সুস্পষ্টভাবে কার্যকর করা হয়েছে। প্রথম, কলকাতা কর্পোরেশনের কোনাে বিভাগ, দপ্তর, কার্যাবলি, সম্পত্তি ইত্যাদি পরিদর্শন বা পরীক্ষার জন্য রাজ্য সরকার উপযুক্ত দায়িত্বশীল প্রশাসনিক কর্মচারী নিয়ােগ করতে পারে। এই কর্মচারী যখন তার দায়িত্ব পালনের প্রয়ােজনে কর্পোরেশনকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দলিল ও কাগজপত্র সরবরাহ করার জন্য নির্দেশ দিতে পারে। নতুন পুর আইনের ১১৩নং ধারা অনুসারে তিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে রিপাের্ট পেশ করতে পারেন, ওই রিপাের্টের ভিত্তিতে যদি রাজ্য সরকারের মনে হয় যে কর্পোরেশন নিজের দায়িত্ব পালনের অক্ষমতা বা অবহেলা প্রদর্শন করেছে অথবা রাজ্য সরকারের সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে তাহলে পৌর আইনের ১১৭ নং ধারা অনুসারে রাজ্য সরকার কর্পোরেশনের পরিচালনার দায়িত্বভার স্বহস্তে গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া রাজ্য সরকার যদি মনে করে যে মেয়র কর্পোরেশনের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারিয়েছেন তাহলে রাজ্য সরকার কর্পোরেশনকে অধিগ্রহণ করতে পারে। রাজ্য সরকার কলকাতা কর্পোরেশনকে সর্বাধিক ১৮ মাস
পর্যন্ত বাতিল করে রাখতে পারে। প্রথম পর্বে সরকার ১ বছরের জন্য কর্পোরেশনকে অধিগ্রহণ করে পরে এর মেয়াদ আরও ৬ মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায়। কর্পোরেশনের কোনাে কাজ আইন বহির্ভূতভাবে হয়েছে একথা যদি রাজ্য সরকার মনে করে তবে প্রয়ােজনীয় সংশােধনের জন্য রাজ্য সরকার নির্দেশ দিতে পারে। এছাড়া আমরা আগেই দেখেছি যে অর্থ সাহায্য এবং ঋণ সংগ্রহের জন্য কর্পোরেশনকে রাজ্য সরকারের উপর নির্ভর করতে হয়। এই নির্ভরতার মধ্যে স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণের মনোভাব নিহিত থাকে।
প্রশ্ন ৫) ন্যায় পঞ্চায়েতের গঠন ও কার্যাবলি সংক্ষেপে বর্ণনা করাে।
উত্তর: ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইনে ন্যায় পঞ্চায়েতের সংস্থান ছিল। একইভাবে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চায়েত আইনে ন্যায় পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। তবে একথাও বলা হয়েছে যে রাজ্য সরকার যদি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে কোনাে গ্রামপঞ্চায়েতকে ন্যায় পঞ্চায়েত গঠনের অনুমতি দেয় তবেই কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট গ্রামপঞ্চায়েত ন্যায় পঞ্চায়েত গঠন করতে পারবে। ভারতের কিছু কিছু রাজ্যে যেমন ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র ও জম্মু কাশ্মীরে
কিছু কিছু গ্রামপঞয়েতের উদ্যোগে ন্যায় পঞ্চায়েত গঠিত হয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত কোনাে গ্রামপঞ্চায়েতকে ন্যায় পঞ্চায়েত গঠনের জন্য রাজ্য সরকার অনুমতি প্রদান করেনি।
ন্যায় পঞ্চায়েতকে বলা যায় গ্রামীণ বিচারব্যবস্থার প্রাথমিক একক। স্বল্প খরচে দ্রুত গতিতে গ্রামীণ মানুষদের ন্যায় বিচারের সুযােগ দেওয়ার জন্যই ন্যায় পঞ্চায়েত গঠিত হয়।
পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত আইনের ৫১ নং ধারায় ৫ জন সদস্যবিশিষ্ট ন্যায় পঞ্চায়েত গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই পাঁচজনের মধ্যে একজনকে প্রধান বিচারকপদে নির্বাচিত করা হয়। তিনি ন্যায় পঞ্চায়েতের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি অনুপস্থিত থাকলে উপস্থিত অন্যান্যদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান বিচারকরূপে নির্বাচিত করা হয়। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনজন বিচারককে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। বিচারকদের কার্যকাল পাঁচ বছর। গ্রামপঞ্চায়েতের সচিবই ন্যায় পঞ্চায়েতের সচিবরূপে কাজ করেন। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার কোনাে পর্যায়ে নির্বাচিত কোনাে পঞ্চায়েত সদস্য বা পৌরসভার সদস্য ন্যায় পঞ্চায়েতের সদস্য তথা বিচারক হতে পারবেন না। প্রয়ােজনে রাজ্য সরকার বিচারকদের পদচ্যুত করতে পারেন।
ন্যায় পঞ্চায়েতের দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় এলাকায় বিচারকার্য করার ক্ষমতা আছে। যে-সকল দেওয়ানি বিবাদের সঙ্গে ২৫০ টাকা বা তার কম টাকার বিষয় জড়িত সেই সমস্ত বিবাদ ন্যায় পঞ্চায়েতের দেওয়ানি এলাকার অন্তর্ভুক্ত। ন্যায় পঞ্চায়েতের প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে এক্ষেত্রে মহকুমা আদালতে আবেদন করা যায়। অন্যদিকে ন্যায় পঞ্চায়েতের ফৌজদারি এলাকায় যে ক্ষমতা আছে তাতে দেখা যায় যে গবাদি পশুর অনধিকার প্রবেশ সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণের মামলা, ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুসারে যে সমস্ত মামলায় সর্বাধিক পঞ্চাশ টাকা জরিমানা হতে পারে এমন মামলা এবং খেয়া আইন সম্পর্কিত মামলায় ন্যায় পঞ্চায়েত বিচারকার্য সম্পন্ন করে। যথারীতি ন্যায় পঞ্চায়েতের রায়ের বিরুদ্ধে এক্ষেত্রেও মহকুমা আদালতে আবেদন করা যায়। তবে মনে রাখা দরকার যে ন্যায় পঞ্চায়েত কোনাে ব্যক্তিকে কারাদণ্ড দিতে পারে না।
উত্তর: ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইনে ন্যায় পঞ্চায়েতের সংস্থান ছিল। একইভাবে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চায়েত আইনে ন্যায় পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। তবে একথাও বলা হয়েছে যে রাজ্য সরকার যদি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে কোনাে গ্রামপঞ্চায়েতকে ন্যায় পঞ্চায়েত গঠনের অনুমতি দেয় তবেই কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট গ্রামপঞ্চায়েত ন্যায় পঞ্চায়েত গঠন করতে পারবে। ভারতের কিছু কিছু রাজ্যে যেমন ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র ও জম্মু কাশ্মীরে
কিছু কিছু গ্রামপঞয়েতের উদ্যোগে ন্যায় পঞ্চায়েত গঠিত হয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত কোনাে গ্রামপঞ্চায়েতকে ন্যায় পঞ্চায়েত গঠনের জন্য রাজ্য সরকার অনুমতি প্রদান করেনি।
ন্যায় পঞ্চায়েতকে বলা যায় গ্রামীণ বিচারব্যবস্থার প্রাথমিক একক। স্বল্প খরচে দ্রুত গতিতে গ্রামীণ মানুষদের ন্যায় বিচারের সুযােগ দেওয়ার জন্যই ন্যায় পঞ্চায়েত গঠিত হয়।
পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত আইনের ৫১ নং ধারায় ৫ জন সদস্যবিশিষ্ট ন্যায় পঞ্চায়েত গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই পাঁচজনের মধ্যে একজনকে প্রধান বিচারকপদে নির্বাচিত করা হয়। তিনি ন্যায় পঞ্চায়েতের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি অনুপস্থিত থাকলে উপস্থিত অন্যান্যদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান বিচারকরূপে নির্বাচিত করা হয়। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনজন বিচারককে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। বিচারকদের কার্যকাল পাঁচ বছর। গ্রামপঞ্চায়েতের সচিবই ন্যায় পঞ্চায়েতের সচিবরূপে কাজ করেন। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার কোনাে পর্যায়ে নির্বাচিত কোনাে পঞ্চায়েত সদস্য বা পৌরসভার সদস্য ন্যায় পঞ্চায়েতের সদস্য তথা বিচারক হতে পারবেন না। প্রয়ােজনে রাজ্য সরকার বিচারকদের পদচ্যুত করতে পারেন।
ন্যায় পঞ্চায়েতের দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় এলাকায় বিচারকার্য করার ক্ষমতা আছে। যে-সকল দেওয়ানি বিবাদের সঙ্গে ২৫০ টাকা বা তার কম টাকার বিষয় জড়িত সেই সমস্ত বিবাদ ন্যায় পঞ্চায়েতের দেওয়ানি এলাকার অন্তর্ভুক্ত। ন্যায় পঞ্চায়েতের প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে এক্ষেত্রে মহকুমা আদালতে আবেদন করা যায়। অন্যদিকে ন্যায় পঞ্চায়েতের ফৌজদারি এলাকায় যে ক্ষমতা আছে তাতে দেখা যায় যে গবাদি পশুর অনধিকার প্রবেশ সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণের মামলা, ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুসারে যে সমস্ত মামলায় সর্বাধিক পঞ্চাশ টাকা জরিমানা হতে পারে এমন মামলা এবং খেয়া আইন সম্পর্কিত মামলায় ন্যায় পঞ্চায়েত বিচারকার্য সম্পন্ন করে। যথারীতি ন্যায় পঞ্চায়েতের রায়ের বিরুদ্ধে এক্ষেত্রেও মহকুমা আদালতে আবেদন করা যায়। তবে মনে রাখা দরকার যে ন্যায় পঞ্চায়েত কোনাে ব্যক্তিকে কারাদণ্ড দিতে পারে না।
প্রশ্ন ৬) ব্লক প্রশাসনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
উত্তর: জেলা প্রশাসনের অঙ্গীভূত অংশ এবং সর্বনিম্ন প্রশাসনিক একক হল ব্লক। সাধারণভাবে একটি জেলার মধ্যে কমবেশি ১৫টি ব্লক দেখা যায়। ক্রমােচ্চ স্তর বিন্যস্ত ব্যবস্থায় যদিও ব্লকের অবস্থান সর্বনিম্নে বা অনেকাংশে তৃণমূল স্তরে প্রশাসনিক দৃষ্টি থেকে এর গুরুত্ব কিন্তু অপরিসীম। গ্রাম প্রধান ও কৃষি-প্রধান ভারতবর্ষের যে বিশাল উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলেছে সমগ্র দেশ জুড়ে তাতে ব্লকের গভীর তাৎপর্য আছে। সাধারণত একটি ব্লকের মধ্যে কমবেশি ১০০টি গ্রাম অন্তর্ভুক্ত হয়।
ব্লক প্রশাসন হল মূলত উন্নয়ন প্রশাসন। সুতরাং, ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের অর্থাৎ B.D.O.-র প্রধান দায়িত্ব হল অঞ্চলের উন্নয়নকে সুনিশ্চিত করা। ব্লকস্তরে যে ব্লক পরিকল্পনা কমিটি আছে তার সদস্য-সচিবের দায়িত্ব B.D.O.– কে পালন করতে হয়।
ব্যাপক জনসংযােগ বা জনগণের সঙ্গে সরাসরি যােগাযােগ (Public contact) ব্লক প্রশাসনকে একটি মৌল এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করেছে। যে-কোনাে রাজ্যের যে-কোনাে ব্লক অফিসের প্রতিদিন সাধারণ দৃশ্যটি প্রত্যক্ষ করলেই আমরা এই বৈশিষ্ট্যের বিষয়টিকে ভালােভাবে উপলব্ধি করতে পারি। দূরবর্তী ও দুর্গম গ্রামাঞ্চল থেকে কত না মানুষ প্রতিদিন তাদের নানা সমস্যার সমাধানের জন্য ব্লকে ধরনা দেয়। পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থা, প্রতিষ্ঠার কল্যাণে মানুষের কাছে ব্লকের মূল্য অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি, পশুপালন, মৎস্যচাষ, কুটিরশিল্প, স্বাস্থ্য যােগাযােগ ত্রাণ, বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প, সমাজের বিভিন্ন দুর্বল অংশের জন্য নানাবিধ বৃত্তি ও অনুদান—এই সমস্ত বিষয়ের জন্য মানুষ ব্লক দপ্তরের উপর নির্ভর করে।
ব্লক প্রশাসনের একটি বৈশিষ্ট্য হল এটাই যে ব্লকের প্রধান অর্থাৎ ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক (B.D.O.) এবং অন্যান্য যেসব বিভাগীয় Extension Officer তথা সম্প্রসারণ আধিকারিক আছেন তারা সবাই রাজ্যকৃত্যক থেকে নিযুক্ত হন। অবশ্য এরা সবাই আবার জেলাশাসকের অধীনে থেকে কাজ করেন এবং এই জেলাশাসক আবার রাজ্যকৃত্যকের সদস্য নাও হতে পারেন।
উত্তর: জেলা প্রশাসনের অঙ্গীভূত অংশ এবং সর্বনিম্ন প্রশাসনিক একক হল ব্লক। সাধারণভাবে একটি জেলার মধ্যে কমবেশি ১৫টি ব্লক দেখা যায়। ক্রমােচ্চ স্তর বিন্যস্ত ব্যবস্থায় যদিও ব্লকের অবস্থান সর্বনিম্নে বা অনেকাংশে তৃণমূল স্তরে প্রশাসনিক দৃষ্টি থেকে এর গুরুত্ব কিন্তু অপরিসীম। গ্রাম প্রধান ও কৃষি-প্রধান ভারতবর্ষের যে বিশাল উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলেছে সমগ্র দেশ জুড়ে তাতে ব্লকের গভীর তাৎপর্য আছে। সাধারণত একটি ব্লকের মধ্যে কমবেশি ১০০টি গ্রাম অন্তর্ভুক্ত হয়।
ব্লক প্রশাসন হল মূলত উন্নয়ন প্রশাসন। সুতরাং, ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের অর্থাৎ B.D.O.-র প্রধান দায়িত্ব হল অঞ্চলের উন্নয়নকে সুনিশ্চিত করা। ব্লকস্তরে যে ব্লক পরিকল্পনা কমিটি আছে তার সদস্য-সচিবের দায়িত্ব B.D.O.– কে পালন করতে হয়।
ব্যাপক জনসংযােগ বা জনগণের সঙ্গে সরাসরি যােগাযােগ (Public contact) ব্লক প্রশাসনকে একটি মৌল এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করেছে। যে-কোনাে রাজ্যের যে-কোনাে ব্লক অফিসের প্রতিদিন সাধারণ দৃশ্যটি প্রত্যক্ষ করলেই আমরা এই বৈশিষ্ট্যের বিষয়টিকে ভালােভাবে উপলব্ধি করতে পারি। দূরবর্তী ও দুর্গম গ্রামাঞ্চল থেকে কত না মানুষ প্রতিদিন তাদের নানা সমস্যার সমাধানের জন্য ব্লকে ধরনা দেয়। পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থা, প্রতিষ্ঠার কল্যাণে মানুষের কাছে ব্লকের মূল্য অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি, পশুপালন, মৎস্যচাষ, কুটিরশিল্প, স্বাস্থ্য যােগাযােগ ত্রাণ, বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প, সমাজের বিভিন্ন দুর্বল অংশের জন্য নানাবিধ বৃত্তি ও অনুদান—এই সমস্ত বিষয়ের জন্য মানুষ ব্লক দপ্তরের উপর নির্ভর করে।
ব্লক প্রশাসনের একটি বৈশিষ্ট্য হল এটাই যে ব্লকের প্রধান অর্থাৎ ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক (B.D.O.) এবং অন্যান্য যেসব বিভাগীয় Extension Officer তথা সম্প্রসারণ আধিকারিক আছেন তারা সবাই রাজ্যকৃত্যক থেকে নিযুক্ত হন। অবশ্য এরা সবাই আবার জেলাশাসকের অধীনে থেকে কাজ করেন এবং এই জেলাশাসক আবার রাজ্যকৃত্যকের সদস্য নাও হতে পারেন।