উঃ
ভূমিকা: প্রচলিত রচনাধর্মী পরীক্ষার ব্যক্তিকতার প্রভাব থেকে গতানুগতিক পরীক্ষা ব্যবস্থাকে মুক্ত করতে মূল্যায়ন মনীষীরা এমন একটি অভীক্ষার কথা তুলে ধরেন যেখানে পরীক্ষকের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের মনোভাব প্রকাশের কোন স্থান থাকে না এবং যেখানে পরীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা, যথার্থতা ও ব্যবহারযোগ্যতা অতিমাত্রায় রক্ষা করা সম্ভব হয়। এই ধরনের পরীক্ষা হচ্ছে বস্তুধর্মী বা নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা।
নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা: যে সব পরীক্ষার প্রশ্ন শিক্ষার্থী এবং পরীক্ষক উভয়ের ব্যক্তিগত প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে না এবং নম্বর দানের পার্থক্য হবার সুযোগ থাকে না তাকে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা বলে। এইসব পরীক্ষার প্রশ্নগুলি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন: যে প্রশ্নগুলি পরীক্ষার্থীদের কয়েকটি শব্দে উত্তর দিতে হয় এবং কতিপয় কয়েকটি বিকল্প উত্তর থেকে সঠিক উত্তরটি নির্দিষ্ট করতে হয়, সেই সব প্রশ্নগুলি হল নৈর্ব্যক্তিক।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের বৈশিষ্ট্য: ১) ব্যক্তি নির্ভর নয়। (২) পরীক্ষক এবং পরীক্ষার্থী উভয়ের কোন ব্যক্তিগত প্রভাব থাকে না (3) মান নির্ণয় অপেক্ষাকৃত সহজ (4) প্রশ্ন গঠন পরিশ্রমসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ (5) শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞানের সামগ্রিক পরিমাপ করা যায়।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের শ্রেণীবিভাগ: নিম্নে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করা হল-
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন মূলত দুই প্রকার।
যথা-
(ক) সরবরাহ প্রকৃতি এবং (খ) নির্বাচন প্রকৃতি।
১) সরবরাহ প্রকৃতি প্রশ্ন: যে সকল প্রশ্নের উত্তর প্রশ্নপত্রের দেওয়া থাকে না। শিক্ষার্থীকে সঠিক উত্তরটি কি হবে তা চিন্তা করে উত্তর দিতে হয় তাকে সরবরাহ প্রকৃতির প্রশ্ন বলে।
সরবরাহ প্রকৃতি প্রশ্ন তিন ধরনের হয়। যথা -
ক) সম্পূর্ণকরণ প্রশ্ন
খ) প্রশ্নোত্তর
গ) উপমান
ক) সম্পূর্ণকরণ প্রশ্ন: এখানে প্রশ্নটিই অসম্পূর্ণ থাকে শিক্ষার্থীকে সঠিক প্রশ্নোত্তরটি সরবরাহ করে সম্পূর্ণ করতে হয়। যেমন-
ভারতের উত্তরে ...............পর্বত অবস্থিত।
খ) প্রশ্নোত্তর: এখানে শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন দুই একটি শব্দে উত্তর লিখতে হয়। যেমন-
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম কি?
গ) উপমান: এখানে দুটি বস্তু বা বিষয়ের নাম দেওয়া থাকে এবং তার পাশে আরও একটি বিষয় দেওয়া থাকে প্রথম দুটি বিষয়ের সঙ্গে অনুসরণ করে তৃতীয় বিষয়টির সঙ্গে সম্পর্কিত আরেকটি বিষয় লিখতে হয়। যেমন-
বাঙালি : ভাত : বিহারী : ?
চোখ : দেখা : কান : ?
২) নির্বাচন প্রকৃতির প্রশ্ন: যেসব প্রশ্নের উত্তর দানের সময় শিক্ষার্থীদের প্রদত্ত কতগুলি উত্তরের মধ্যে একটিকে নির্বাচন করতে হয় তাদের নির্বাচন প্রকৃতি প্রশ্ন বলে।
নির্বাচন প্রকৃতির প্রশ্নগুলি চার ধরনের হয়। যথা-
(ক) সত্য-মিথ্যা নিরূপণ: এই ধরনের প্রশ্নে প্রশ্নটির পাশে একটি সঠিক উত্তর ও একটি ভুল উত্তর থাকে শিক্ষার্থীকে সঠিক উত্তরের পাশে হ্যাঁ বা না লিখতে হয়। কখনো কোনো বিবরণ দিয়ে তার সত্য-মিথ্যা নির্ভর করতে বলা হয়। যেমন-
১) হিমালয় ভারতের দক্ষিণে অবস্থিত। (হ্যাঁ বা না লেখ)
২) ভারতের রাজধানী দিল্লি। (সত্য না মিথ্যা)
খ) সজ্জিতকরণ: যে প্রশ্নে বিভিন্ন এলোমেলো ঘটনাকে ধারাবাহিকভাবে সাজাতে হয় তাকে সজ্জিতকরণ প্রশ্ন বলে। যেমন-
জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, বাবর, আকবর, হুমায়ুন
গ) সামঞ্জস্য নির্ণয়: এখানে সমান্তরাল দুটি স্তম্ভ থাকে, প্রথম স্তম্ভে প্রশ্নটিকে উপস্থাপনা করা হয় এবং দ্বিতীয় স্তম্ভ প্রশ্নের উত্তরগুলি উল্টেপাল্টে দেওয়া থাকে। শিক্ষার্থীকে দুটি স্তম্ভ মেলাতে বলা হয়। যেমন-
প্রথম স্তম্ভ দ্বিতীয় স্তম্ভ
১) রবীন্দ্রনাথ ( ) ফুটবল খেলোয়ার
২) আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ( ) বিশ্বকবি
৩) পেলে ( ) বিজ্ঞানী
ঘ) বহুমুখী নির্বাচন: এখানে একটি প্রশ্নের একাধিক সম্ভাব্য উত্তর এর মধ্যে শিক্ষার্থীকে সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করতে বলা হয়।
যেমন-
পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী হচ্ছে দিল্লি /কলকাতা/ বর্ধমান।
ঙ) শ্রেণীকরণ: এই ধরনের প্রশ্নে একসাথে অনেকগুলো বস্তু বা বিষয়ের নাম থেকে যেটি ওই শ্রেণির নয় তাকে পৃথক করতে হয়।
যেমন-
কালো, সাদা, লাল, নদী
মন্তব্য উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, রচনাধর্মী প্রশ্ন অপেক্ষা নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নগুলি অল্প সময়ে শিক্ষার্থীদের অধিক সংখ্যক ঘটনা, তথ্য বা বিষয়ের জ্ঞান পরিমাপ করতে পারে। তাই রচনাধর্মী পরীক্ষার পাশাপাশি নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার ব্যবস্থা রেখে রচনাধর্মী পরীক্ষার সংস্কার করার ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরী।