Tuesday 7 April 2020

স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী Swami Vivekananda Biography in Bengali Pdf

বিবেকানন্দের জীবনী
Swami Vivekananda Biography

নাম
নরেন্দ্রনাথ দত্ত/Swami Vivekananda
জন্ম
১২ জানুয়ারি ১৮৬৩ (কোলকাতা)
অভিভাবক
বিশ্বনাথ দত্ত (বাবা)
ভুবনেশ্বরী দেবী (মা)
প্রতিষ্ঠাতা
রামকৃষ্ণ মিশন
রামকৃষ্ণ মঠ
জনপ্রিয় সাহিত্যকর্ম
রাজযোগ, কর্মযোগ, ভক্তিযোগ, জ্ঞানযোগ
আধ্যাত্মিক গুরু
শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস
জাতীয়তা
ভারতীয়
ধর্ম
হিন্দু
উপাধি
স্বামীজি
মৃত্যু
৪ জুলাই ১৯০২
মৃত্যুস্থান
বেলুড় মঠ, হাওড়া

বাংলা তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সবচেয়ে বিখ্যাত দার্শনিক ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ | তিনি একজন দার্শনিক ছাড়াও ছিলেন লেখক ও সঙ্গীতজ্ঞ মানুষও | তাঁর লেখা প্রত্যেকটা বই আজও সকল বাঙালী তথা সমগ্র দেশবাসীকে সমানভাবে মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে চলেছে |
স্বামীজি এমন একজন মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন যাঁর উচ্চ চিন্তাধারা, আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা প্রত্যেক মানুষের মনে এক গভীর ছাপ ফেলেছিলো | তাঁর অভূতপূর্ব দূরদর্শী মনোভাব ভারতের বিকাশের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেইসময় |
আমরা হয়তো এটা সবাই জানি, তাঁর স্বভাব ছিলো খুব দুয়ালু প্রকৃতির | তিনি সাধারণ মানুষ ছাড়াও অনান্য জীবদেরও সমানভাবে ভালোবাসা দিতেন | তিনি সর্বদা সবাইকে, প্রত্যেক জীবকে সমানভাবে ভালোবাসা দেওয়ার কথাও বলতেন | কারণ তাঁর মতানুযায়ী প্রত্যেক জীবের মধ্যেই ঈশ্বর বিরাজ করেন |
স্বামীজি এছাড়াও ভাতৃপ্রীতি ও সবাইকে ভালোবাসা দেওয়ার নীতিতেও বিশ্বাসী ছিলেন | তিনি মনে করতেন, ভাতৃপ্রীতি ও সদ্ভাবের দ্বারা প্রত্যেকটা মানুষ তার জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে |
তিনি এছাড়াও একজন প্রবল আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তি ছিলেন এবং সকলের উদ্দেশ্যে একসময় বলেছিলেন – “যতক্ষণ না আপনি নিজের উপর বিশ্বাস করতে পারবেন, ততক্ষণ অবধি আপনি ইশ্বরকেও বিশ্বাস করতে পারবেন না”
Swami Vivekananda Life History:
স্বামী বিবেকানন্দ জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১২ জানুয়ারি ১৮৬৩ সালে, উত্তর কলকাতার শিমুলিয়া গ্রামের বিখ্যাত দত্ত পরিবারে | তাঁর বাবার নাম ছিলো বিশ্বনাথ দত্ত, যিনি কিনা কলকাতা হাইকোর্টের একজন আইনজীবি ছিলেন এবং মায়ের নাম ছিলো ভুবনেশ্বরী দেবী, যিনি ছিলেন সাধারণ এক গৃহবধু |
বিবেকানন্দদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিলো মোট ৯ জন | তাঁর ভাই মহেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও বিদেশ ভ্রমণে বিবেকানন্দের সঙ্গী এবং তাঁর ছোট ভাই ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন সেইসময়ের একজন বিশিষ্ট সাম্যবাদী নেতা |
জানা যায়, ছোটবেলা থেকে স্বামীজির মনে আধ্যাত্মিক ভাবকে সর্বপ্রথম জাগ্রত করার পিছনে তাঁর মা ভুবনেশ্বরী দেবীরই সর্বপ্রথম হাত ছিলো | তিনি খুব ধার্মিক নারী ছিলেন | হিন্দুশাস্ত্র, রামায়ণ ও মহাভারতের বিষয়ে তাঁর পান্ডিত্ব ছিলো প্রচুর | এছাড়াও তিনি সেই সময়কার মহিলা হয়েও ইংরাজী ভাষা ভালোই বুঝতে ও একটু আধটু বলতেও পারতেন |
বর্তমানে স্বামীজির মহান চরিত্র সম্বন্ধে আমরা যে জানতে পাই, সেটা গড়ে তোলার পিছনে ভুবনেশ্বরী দেবী ও বিশ্বনাথ দত্তের অবদান ছিলো প্রচুর | কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা অনেক মানুষই আজ এই সম্পর্কে জানি না |
সে যাই হোক, আমরা আবার আসল কথায় ফিরে আসি |
ছোটবেলা থেকেই আধ্যাত্মিকতার দিকে নরেন্দ্রনাথ দত্ত ওরফে বিবেকানন্দদের যে আগ্রহ ফুটে ওঠে, সেই কথাতো আমি তোমাকে আগেই জানালাম ।
Real Photos of Swami Vivekananda
সেইসময় সময় তিনি বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তির সামনে প্রায়ই ধ্যানে বসতেন আর নানা সাধু-সন্ন্যাসীদের প্রতিও আগ্রহ রাখতেন ভীষনভাবে । ছোটবেলায় তিনি এতটাই দুরন্ত ছিলেন যে তার বাবা-মার পক্ষে তাকে সামলানো মাঝে মাঝেই দুঃসাধ্য হয়ে উঠত ।
শোনা যায় তাঁর মা সর্বদা বলতেন – “শিবের কাছে ছেলে চাইলুম, তা তিনি নিজে না এসে পাঠালেন তার চেলা এক ভূতকে”
তুমি কি জানো? ছোট্ট নরেন্দ্রনাথ দুষ্টু হওয়া সত্বেও কিন্তু ছিলো একজন ভীষন প্রখর বুদ্ধিশীল মানুষ ও সাহসী | তাঁর ভীতর এক অদ্ভুত প্রতিভা ছিলো, যাকে সে একবার দেখতো তাঁকে কোনোদিনও ভুলতো না এবং যেটা একবার পড়তো সেই বিষয়ও তাঁর সারাজীবন মনে থাকতো |
সত্যি ! কেউ ভাবতেও পারেনি যে, এই ছোট্ট নরেন্দ্রনাথ দত্ত একদিন আধ্যাত্মিকতা, জাতীয়তা, হিন্দু ধর্ম এবং ভারতীয় সংস্কৃতির বাহক ও স্বামী বিবেকানন্দ নামে বিশ্বের বুকে পরিচিতি পাবে |
Swami Vivekananda Education:
স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৭১ সালে ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে সর্বপ্রথম ভর্তি হন এবং সেখানেই পড়াশোনা করেন যতদিন না পর্যন্ত তিনি ও তাঁর পরিবার ছত্তিসগড়ের রায়পুরে স্থানান্তরিত হন |
রায়পুর থেকে আবার ১৮৭৯ সালে ফিরে আসার পর, প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাশ করে তিনি ভর্তি হন কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে | আর সেইবছর কলেজের সব পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে একমাত্র ছাত্র হিসাবে তিনি নজির গড়ে দেন |
এরপর প্রেসিডেন্সি থেকে তিনি পড়াশোনা শেষ করে তিনি কোলকাতার আরেকটি সুপ্রতিষ্ঠিত কলেজ স্কটিশ চার্চে ভর্তি হন | এখানে তিনি পাশ্চাত্য যুক্তিবিদ্যা, পাশ্চাত্য দর্শন ও ইউরোপীয় ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং ১৮৮৪ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে সক্ষম হন |
কলেজে পড়াশোনা করার পাশাপাশি, তিনি প্রচুর অন্যান্য বইও পড়তেন |  ধর্ম,দর্শন, ইতিহাস, শিল্পকলা,সমাজবিজ্ঞান ও সাহিত্য সম্পর্কীয় বিষয় নিয়ে তাঁর আগ্রহ ছিলো ভীষন | এছাড়াও তিনি খুব অল্প বয়সেই  বেদ,উপনিষদ,রামায়ণ ও মহাভারত প্রভৃতি পড়েও ফেলেন |
এত পড়াশোনার মাঝেও তিনি কিন্তু তাঁর শরীর চর্চা করতে কখনোই ভুলতেন না | প্রত্যেকদিন মনে করে ব্যায়াম, যোগাসন ও খেলাধুলাতে তিনি সময় ব্যয় অবশ্যই করতেন |
Brahmo Samaj and  Vivekananda:
রাজা রামমোহন রায়ের বেদান্ত বিষয়ক গ্রন্থ পড়ে স্বামীজি ব্রাহ্মসমাজের প্রতি ভীষনভাবে আকৃষ্ট হন । শোনা যায়, কেশবচন্দ্র সেন সেই সংঘের একজন শক্তিশালী নেতা ছিলেন, যাঁর বক্তৃতা শুনতে যুবক নরেন্দ্রনাথ বেশ ভালোবাসতো এবং সেই সংগঠিত সভাসমিতিতে তিনি নাকি মাঝে মাঝে অনেক ভক্তিমূলক সংগীতও পরিবেশন করতেন যা সেখারকার সদস্যদের বেশ অনুপ্রাণিতও করতো |

স্বামী বিবেকানন্দের অমূল্য বাণী 


“যখন আপনি ব্যস্ত থাকেন তখন সব কিছুই সহজ বলে মনে হয় কিন্তু অলস হলে কোনো কিছুই সহজ বলে মনে হয়না” – Swami Vivekananda
quote-2
“নিজের জীবনে ঝুঁকি নিন, যদি আপনি জেতেন তাহলে নেতৃত্ব করবেন আর যদি হারেন তাহলে আপনি অন্যদের সঠিক পথ দেখাতে পারবেন” – Swami Vivekananda
quote-3
“কখনো না বলোনা, কখনো বলোনা আমি করতে পারবোনা | তুমি অনন্ত এবং সব শক্তি তোমার ভিতরে আছে, তুমি সব কিছুই করতে পারো”  – Swami Vivekananda
quote-4
“যা কিছু আপনাকে শারীরিক, বৌদ্ধিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল করে তোলে সেটাকে বিষ ভেবে প্রত্যাখ্যান করুন” – Swami Vivekananda
quote-5
“দুনিয়া আপনার সম্বন্ধে কি ভাবছে সেটা তাদের ভাবতে দিন | আপনি আপনার লক্ষ্যগুলিতে দৃঢ় থাকুন, দুনিয়া আপনার একদিন পায়ের সম্মুখে হবে” – Swami Vivekananda
quote-6
“কখনও বড় পরিকল্পনার হিসাব করবেন না, ধীরে ধীরে আগে শুরু করুন, আপনার ভূমি নির্মাণ করুন তারপর ধীরে ধীরে এটিকে  প্রসার করুন” – Swami Vivekananda
quote-7
“ইচ্ছা, অজ্ঞতা এবং বৈষম্য – এই তিনটিই হলো বন্ধনের ত্রিমূর্তি” – Swami Vivekananda
quote-8
“মানুষের সেবাই হলো ভগবানের সেবা” – Swami Vivekananda
quote-9
“মহাবিশ্বের সীমাহীন পুস্তকালয় আপনার মনের ভীতর অবস্থিত” – Swami Vivekananda
quote-10
“ওঠো এবং ততক্ষণ অবধি থেমো না, যতক্ষণ না তুমি সফল হচ্ছ” – Swami Vivekananda 
quote-11
“যতক্ষণ না আপনি নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখবেন, ততক্ষন আপনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করবেন না” – Swami Vivekananda
quote-12
 “মনের শক্তি সূর্যের কিরণের মত, যখন এটি এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হয় তখনই এটি চকচক করে ওঠে” – Swami Vivekananda
quote-13
 “যেই রকম আপনি ভাববেন ঠিক সেইরকমই আপনি হয়ে যাবেন | যদি আপনি নিজেকে দুর্বল হিসাবে বিবেচনা করেন তাহলে আপনি দুর্বল হয়ে যাবেন আর আপনি যদি নিজেকে শক্তিশালী মনে করেন, তাহলে আপনি শক্তিশালী হয়ে উঠবেন” – Swami Vivekananda
quote-14
 “শক্তিই জীবন, দুর্বলতাই মৃত্যু, বিস্তার জীবন, সংকোচন মৃত্যু, প্রেম জীবন, ঘৃণা মৃত্যু” – Swami Vivekananda
quote-15
 “প্রত্যেকটি ধারণা যা আপনাকে দৃঢ় করে সেটাকে আপন করে নেওয়া উচিত এবং প্রত্যেকটি ধারণা যা  আপনাকে দুর্বল করে দেয়, তা প্রত্যাখ্যান করা উচিত” – Swami Vivekananda

quote-16
 “সব শক্তিই আপনার মধ্যে আছে সেটার উপর বিশ্বাস রাখুন, এটা বিশ্বাস করবেন না যে আপনি দুর্বল | দাঁড়ান এবং আপনার মধ্যেকার দৈবত্বকে চিনতে শিখুন” – Swami Vivekananda
quote-17
 “অন্য কারোর জন্য অপেক্ষা করো না, তুমি যা করতে পারো সেটা করো কিন্তু অন্যের উপর আশা করো না” – Swami Vivekananda
quote-18
 “সমাজ অপরাধীদের কারণে খারাপ হয়না বরং ভালো মানুষদের নীরবতার কারণে হয়” – Swami Vivekananda 
quote-19
 “তারা একাই থাকেন, যারা অন্যদের জন্য জীবিত থাকেন” – Swami Vivekananda 
quote-20
 “একটি সময়ে একটিই কাজ করো এবং সেটা করার সময় নিজের সবকিছুই  তার মধ্যে ব্যয় করে দেও” – Swami Vivekananda 
quote-21
 “নিজেকে দুর্বল মনে করা সবথেকে বড় পাপ” – Swami Vivekananda 
quote-22
 “সত্যকে হাজার আলাদা আলাদা উপায়ে বলা যেতে পারে, তারপরেও সব কিছু সত্যই থাকে” – Swami Vivekananda
quote-23
 “একটি রাষ্ট্রের অগ্রগতি জানার সবচেয়ে ভাল উপায় হল সেই রাষ্ট্রে নারীর অবস্থান” – Swami Vivekananda
quote-24
 “মহাবিশ্বের সমস্ত শক্তি প্রথম থেকেই আমাদের। তারা হল আমরাই যারা নিজের চোখের উপর প্রথমে হাত রাখি এবং তারপর কান্নাকাটি করি, কত অন্ধকার আছে বলে” – Swami Vivekananda 
quote-25
 “যেমন ভাবে বিভিন্ন উৎস থেকে উৎপন্ন স্রোতগুলি তাদের জল সমুদ্রে মিলিত করে, তেমন প্রকারই মানুষ দ্বারা নির্বাচিত প্রত্যেক পথ সেটা ভালোই হোক বা খারাপ, ভগবানের কাছে নিয়ে যায়” – Swami Vivekananda 
quote-26
 “কারোর নিন্দা করবেন না: যদি আপনি সাহায্যের জন্য আপনার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন, তাহলে নিশ্চই তা বাড়ান | আর যদি  না বাড়াতে পারেন, তাহলে আপনার হাত জোর করুন আর আপনার ভাইদের আশীর্বাদ করুন এবং তাদেরকে তাদের পথে যেতে দিন” – Swami Vivekananda
quote-27
 “বিশ্ব একটি ব্যায়ামাগার যেখানে আমরা নিজেদেরকে শক্তিশালী করতে এসেছি” – Swami Vivekananda 
quote-28
 “যত বেশি আমরা বাইরে গিয়ে অন্যদের ভালো করবো, আমাদের হৃদয় ততই বিশুদ্ধ হবে এবং ভগবান সেখানে বাস করবেন” – Swami Vivekananda 
quote-29
 “বাহ্যিক স্বভাব কেবল অভ্যন্তরীণ স্বভাবের একটি বড় রূপ হয়” – Swami Vivekananda 
quote-30
 “যখন কোনো বিচার অন্যভাবে মনকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে, তখন সেটা বাস্তবিক, শারীরিক বা মানসিক অবস্থায় পরিবর্তিত হয়ে যায়” – Swami Vivekananda 

quote-31
 “গীতা পড়ার পরিবর্তে আপনি ফুটবলের মাধ্যমে স্বর্গের আরো কাছাকাছি চলে যেতে পারবেন” – Swami Vivekananda 
quote-32
 “যদি কোনদিন, আপনার সামান্য কোনো সমস্যা না আসে, আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে আপনি ভুল পথে হাটছেন” – Swami Vivekananda 
quote-33
 “সবচেয়ে বড় ধর্ম হল নিজের স্বভাবের প্রতি সত্য থাকা, নিজের প্রতি বিশ্বাস করুন” – Swami Vivekananda
quote-34
“আর কিছুরই দরকার নেই | দরকার শুধু প্রেম, ভালোবাসা ও সহিষ্ণুতা | জীবনের অর্থ বিস্তার আর বিস্তার ও প্রেম একই কথা | সুতরাং প্রেমই জীবন, এটাই জীবনের একমাত্র গতি” – Swami Vivekananda
quote-35
“কী সামাজিক, কী রাজনৈতিক, কী আধ্যাত্মিক সব ক্ষেত্রেই যথার্ত কল্যাণের ভিক্তি একটিই আছে | সেটি এইটুকু জানা যে, আমি আর আমার ভাই এক | এই কথাটি সব দেশ ও সব জাতির পক্ষে সমান ভাবে সত্য” – Swami Vivekananda
quote-36
“চোখ আমাদের পিছনের দিকে নয় সামনের দিকে, অতএব সামনের দিকে অগ্রসর হও | আর যেই ধর্মকে নিজের ধর্ম বলে গৌরববোধ করো, তার উপদেশ গুলিকে কাজে পরিণত করো | ঈশ্বর তোমাদের সাহায্য করুন” – Swami Vivekananda
quote-37
“প্রত্যেক নারী-পুরুষকে ইশ্বরের দৃষ্টিতে দেখতে থাকো | তোমরা কাউকেই সাহায্য করতে পারোনা, কেবল সেবা করতে পারো | নিজেদের খুব বড় কিছু ভেবনা; তোমরা ধন্য যে সেবা করার অধিকার পেয়েছ, অন্যরা পায়নি” – Swami Vivekananda
quote-38
“দরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে আমি যেন ঈশ্বরকে দেখি | নিজের মুক্তির জন্য তাদের কাছে গিয়ে তাদেরই পূজা করবো, ঈশ্বর তাদের মধ্যে রয়েছেন” – Swami Vivekananda
quote-39
“তোমাদের সবার ভিতর মহাশক্তি আছে, নাস্তিকের ভিতর তা নেই | যারা আস্তিক তারা বীর, তাদের মহাশক্তির বিকাশ হবেই” – Swami Vivekananda







এরপর ধীরে ধীরে তিনি নিরাকার ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন এবং মূর্তি পূজার সমালোচকে পরিণত হন । আর দৃঢ়ভাবে উপনিষদ ও বেদান্তের যৌক্তিকীকরণ, একেশ্বরবাদী ধর্মতত্ত্ব এইসব বিষয়; সমাজের মানুষদের মাঝে তুলে ধরতে শুরু করেন |
Ramakrishna Paramahamsa and Swami Vivekananda:
স্বামী বিবেকানন্দের জীবনে এমন এক সময় আসে যখন তিনি সাংসারিক জীবন এবং সন্ন্যাস জীবনের মধ্যে যে কোনো একটা দিক বেছে নেওয়ার ব্যাপারে চিন্তিত হয়ে পরেন |
বাবার মৃত্যুর পর তাঁকে তাঁর পড়াশুনা ছেড়ে দিতে হয় । কারণ পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্বভার তখন তাঁর কাঁধে এসে পরে | তিনি তাঁর পরিবারের আর্থিক সহায়তার জন্য মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন কিছুদিনের জন্য ।
কিন্তু সেখানে তিনি বেশিদিন পড়াতে পারেননি | এর পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ তাঁর আধ্যাত্মিক জীবনের প্রতি আকর্ষণ | শোনা যায়, তিনি নাকি একদিন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি ঈশ্বরকে দেখেছেন? 
সেই কথা শুনে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বামীজিকে রামকৃষ্ণ পরমহংসের সাথে সাক্ষাৎ করার পরামর্শ দেন | কারণ তাঁর মতে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া একমাত্র রামকৃষ্ণ ছাড়া অন্য কারোর পক্ষে সম্ভব ছিলোনা |
অবশেষে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের কথা মতো তিনি রামকৃষ্ণ পরমহংসের সাথে সাক্ষাৎ করেন |
তারপর কি হয়েছিলো, তা হয়তো আমরা প্রত্যেকেই জানি | স্বামীজি এরপর রামকৃষ্ণ পরমহংসের পরম ভক্ত হয়ে যান এবং তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে নিজের জীবনে তাঁর গুরুর আদর্শ ও নীতিগুলোকে সারাজীবন পালন করতে থাকেন |
ধীরে ধীরে স্বামী বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরো মজবুত হতে থাকে | স্বামীজি তাঁর গুরুর, একদম শেষদিন পর্যন্ত ভীষন সেবা করেন | ১৮৮৫ সালে যখন রামকৃষ্ণ পরমহংস ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হন, তখন তিনি তাঁর সেবায় দিনরাত অতিবাহিত করেছিলেন |

অবশেষে ১৮৮৬ সালে ১৬ই অগাস্ট রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর স্বামীজি সহ তাঁর ১২ জন শিষ্য কোলকাতার নিকটবর্তী বরাহনগর অঞ্চলে রামকৃষ্ণ মঠের  প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানে তাঁরা গুরুর কাছ থেকে শেখা সমস্ত আধ্যাত্মিক সাধনাগুলোর অনুশীলন করতে থাকেন |
Traveler Swami Vivekananda:
তোমাকে জানিয়ে দিই, স্বামী বিবেকানন্দ মাত্র ২৫ বছর বয়সেই গেরুয়া বস্ত্র ধারণ করেছিলেন এবং তারপর তিনি সমগ্র ভারতবর্ষ পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন | ১৮৮৮ সালে তিনি পরিব্রাজকরূপে মঠ ত্যাগ করেন |
জানা যায়, ভ্রমনকালীন সময়ে স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গী ছিল একটা কমণ্ডলু, লাঠি এবং তাঁর প্রিয় দুটো গ্রন্থ – ভগবদ্গীতা ও ইশানুসরণ | পাঁচ বছর ধরে তিনি ভারতের সর্বত্র ভ্রমণ করেন এবং বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায় ও সমাজব্যবস্থার সঙ্গে সুপরিচিত হন |
ভারত ভ্রমনকালে তিনি বিভিন্ন জায়গা, যেমন- বারানসী, আগড়া, বৃন্দাবন, আলওয়ারসহ অনেক স্থানে যান এবং ১৮৯০ সালের জুলাই মাসে স্বামী অখণ্ডানন্দের সঙ্গে তিনি যান নৈনিতাল, আলমোড়া, শ্রীনগর, দেরাদুন, ঋষিকেশ, হরিদ্বার এবং শেষপর্যন্ত হিমালয়েও |
এই সফরকালে তিনি অনেক সময় রাজপ্রাসাদেও রাত কাটান এবং অনেক দরিদ্র মানুষের কুটিরেও রাত কাটান কখনো কখনো | যখন যেখানে মাথা গোঁজার স্থান পেতেন সেখানেই নির্দ্বিধায় চলে যেতেন |
১৮৯২ সালে ২৩শে ডিসেম্বর তিনি ভ্রমন করতে করতে পৌঁছান কন্যাকুমারীতে | সেখানে তিনি তিনদিন ধ্যানবস্থায় ছিলেন | এরপর তিনি কন্যাকুমারী থেকে রওনা হন রাজস্থানের আবু রোডের উদ্দেশ্যে | যেখানে তিনি স্বামী ব্রহ্মানন্দ ও স্বামী তুরীয়ানন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেন |
তিনি তাদের দুজনের কাছে ভারতের দারিদ্রতা ও মানুষের কষ্ট সম্পর্কে দুঃখ প্রকাশ করেন | ভারতের এই করুণ অবস্থা তাঁকে ভিতর ভিতর ভীষনভাবে ব্যথিত করে | সেইজন্য তিনি এইসবের থেকে ভারতকে মুক্ত করার জন্য আমেরিকায় আয়োজিত ধর্ম সম্মেলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন |
Swami Vivekananda Chicago Speech:
১৮৮৩ সালের বিশ্ব ধর্ম সম্মেলন সেইবার আমেরিকার শিকাগোতে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো | সেখানে ভারতের হয়ে স্বামী বিবেকানন্দ অংশগ্রহন করেন |
সম্মেলনের এক জায়গায় যখন প্রত্যেক ধর্মগুরুরা তাদের ধর্মের মহানগ্রন্থ গুলো রেখেছিলো, সেইসময় স্বামীজি ভারতীয় হিন্দু ধর্মকে মানুষের মাঝে বিশ্লেষণ করার জন্য শ্রীমদ ভগবদ্গীতা বার করে সেখানে রাখেন | যা দেখে সেখানে উপস্থিত সমস্ত ধর্মগুরুরা হঠাৎ তাঁকে উপহাস করতে শুরু করেন |
কিন্তু স্বামীজি তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি, বরং যখন সম্মেলন শুরু হয় এবং তাঁর সেখানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় আসে, তখন তিনি এত সুন্দরভাবে ভারতীয় হিন্দুধর্ম ও শাস্ত্রগুলো সম্পর্কে সবার মাঝে বিশ্লেষণ করেন যা দেখে সেখানে উপস্থিত সকল দর্শকেরা মুগ্ধ হয়ে যান এবং আনন্দে হাততালি দিতে শুরু করেন |
তাঁর বক্তৃতায় একদিকে যেমন ছিলো বৈদিক দর্শনের জ্ঞান, তেমনই অন্যদিকে ছিলো শান্তির বার্তাও | তিনি তাঁর বক্তৃতার মাধ্যমে চরমপন্থা ও সাম্প্রদায়িকতার বিষয়েগুলোকে সবার মাঝে তুলে ধরেছিলেন |
তাঁর এই বক্তৃতাই, বিশ্বের বুকে হিন্দুধর্ম ও ভারতবর্ষকে পুণরায় সবার উপরে তুলে ধরতে ভীষনভাবে সাহায্য করেছিলো |
শিকাগোতে দেওয়া স্বামীজির সেই অনবদ্য ভাষন

Ramakrishna Mission Established:
১লা মে ১৮৯৭ সালে বিবেকানন্দ অবশেষে কোলকাতায় আসেন এবং এখানে এসে তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিষ্ঠা করেন | এই মিশন তৈরীর পিছনে তাঁর উদেশ্য ছিলো নতুন ভারত নির্মানের | মানুষের সেবার জন্য আধুনিক স্কুল,কলেজ এবং হাসপাতাল নির্মান করাই এর প্রধান কাজ ছিলো |
এরপর ১৮৯৮ সালে স্বামীজি প্রতিষ্ঠা করেন বেলুড় মঠের, যা ভারতীয় জীবন দর্শনের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা প্রদান করতে সাহায্য করেছিলো | এছাড়াও পরে, স্বামী বিবেকানন্দ আরো দুটো মঠের প্রতিষ্ঠাও করেন ।
Death of Swami Vivekananda:
অবশেষে ৪ই জুলাই ১৯০২ সালে, মাত্র ৩৯ বছর বয়সে স্বামী বিবেকানন্দ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন | তিনি নাকি সেইদিন, ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠেন এবং  বেলুড় মঠ প্রাঙ্গনে তিন ঘন্টা ধরে ধ্যানও করেন | এছাড়াও তিনি স্বামী প্রেমানন্দের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে তাঁর সাথে রামকৃষ্ণ মঠের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গুলো সম্পর্কে আলোচনাও করেন |
এরপর সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ তিনি তাঁর ঘরে ফেরেন এবং সবাইকে নির্দেশ দেন বিরক্ত না করার | 
এর ঠিক প্রায় দুই ঘন্টা পর অর্থাৎ রাত ৯:১০ মিনিটে ধ্যানরত অবস্থাযই তাঁর মৃত্যু হয় | ডাক্তারদের মতে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল মস্তিস্কের একটা রক্তনালী ফেটে যাওয়ার ফলে কিন্তু তাঁর শিষ্যদের মতে তিনি নাকি স্বেছায় দেহত্যাগ করেন, তাঁর মৃত্যু হয়নি |

সে যেই কারণই হোক না কেন, তাঁর মতো একজন মহান মানুষকে প্রত্যেক দেশবাসীই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হারিয়ে ফেলে | তিনি সমাজের উন্নতি সাধনের জন্য যা করে গেছিলেন, সেটা আমরা কোনোদিন ভুলতে পারবোনা |
যুব সমাজ তথা সাধারণ দেশবাসীর কাছে তিনি হলেন ভগবান তুল্য মানুষ | তাঁর এইরকম অকাল মৃত্যুতে আজও দেশবাসী কোনো না কোনোভাবে ভীতর ভীতর গভীর ভাবে শোকাহত |
অবশেষে এই মহান মানুষটির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, বেলুড়ে গঙ্গা নদীর তীরে সম্পন্ন করা হয় | যেখানে তাঁর মৃতদেহকে দাহ করা হয়, তার ঠিক বিপরীত পাশে ষোলো বছর আগে রামকৃষ্ণ দেবের মৃতদেহকে দাহ করা হয় |
Comment

Class XI Political Science

Class XII Political Science

Class 12 Bangla Books Question& Answers