Tuesday, 7 April 2020

আন্তজাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কয়েকটি মৌলিক ধারণা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। ক্ষমতা কাকে বলে?
উত্তর: ক্ষমতা বলতে সাধারণত শক্তি সামর্থ্য বা দক্ষতাপ্রসূত এক ধরনের প্রভাবকে বােঝায় যার।
দ্বারা মানুষের ব্যবহারকে প্রভাবিত করা যায়। সুতরাং, মানুষের আচার-আচরণকে প্রভাবিত বা নিয়ন্ত্রণ।
করার উদ্দেশ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সামর্থ্যকে ক্ষমতা বলে।
প্রশ্ন ২। ক্ষমতার দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে।
উত্তর : ক্ষমতার প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য হল—
(i) ক্ষমতা হল একটি সম্পর্কমূলক বিষয়,
(ii) ক্ষমতা হল একটি আচরণমূলক বিষয়।
প্রশ্ন ৩। ক্ষমতার সমস্যাগুলি উল্লেখ করাে।
উত্তর : ক্ষমতার সমস্যাগুলি হল—
(i) ক্ষমতার অভিপ্রায়টি জানা দরকার,
(ii) ক্ষমতার কার্যকারিতার প্রশ্নটিও বিবেচ্য,
(iii) ক্ষমতার গােপনীয়তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ,
(iv) ক্ষমতার ভারসাম্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ৪। ক্ষমতা সম্পর্কে অধ্যাপক অ্যালান বলের বক্তব্য উল্লেখ করাে।
উত্তর : অধ্যাপক অ্যালান বল তাঁর ‘Modern Politics & Government’ গ্রন্থে রাজনৈতিক ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করেছেন। বলের মতে, রাজনৈতিক ক্ষমতা হল এক ধরনের সম্পর্ক, ক্ষমতাকে যিনি ধারণ করে আছেন তিনি বিভিন্ন শক্তির ভয় দেখিয়ে অনিচ্ছুক ব্যক্তির ওপর প্রভাব খাটিয়ে নিজের নির্দেশ পালনে বাধ্য করবে। অ্যালান বল উল্লেখ করেছেন যে, ফ্রাইডে নামক ব্যক্তিটি দ্বীপে না আসা পর্যন্ত রবিনসন ক্রুসাের কোনাে ক্ষমতা ছিল না।
প্রশ্ন ৫। ‘জাতীয় স্বার্থ’ বলতে কী বােঝ?
উত্তর : অধ্যাপক পল সিবিউরি জাতীয় স্বার্থের ধারণাকে তিনটি অর্থে ব্যাখ্যা করেছেন-
(i) ‘জাতীয় স্বার্থ’ বলতে একটি আদর্শ স্থানীয় উদ্দেশ্যের সমষ্টিকে বােঝায়।
(ii) বর্ণনাত্মক অর্থে জাতীয় স্বার্থ হল সেইসব উদ্দেশ্যের সমন্বয় যা প্রতিটি জাতি তার নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে নিরন্তর অনুসরণ করে।।
(iii) জাতীয় স্বার্থের বিষয়ে গােষ্ঠী এবং ব্যক্তির মধ্যে যে বিরােধ সৃষ্টি হতে পারে তার প্রতিও সিবিউরি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
প্রশ্ন ৬। জোটনিরপেক্ষ নীতির মূল বিষয়গুলি বর্ণনা করাে।
উত্তর : ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ দেশসমূহের সপ্তম শীর্ষ সম্মেলনে আলােচনার ভিত্তিতে জোটনিরপেক্ষ নীতির যে মূল বিষয়বস্তুগুলি স্থির হয়েছিল সেগুলি হল— সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতা, নয়া ঔপনিবেশিকতা, বর্ণবিদ্বেষ, অন্যের ভূখণ্ড গ্রাস, বৃহৎশক্তির আগ্রাসন নীতির বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম ঘােষণা করা। ওই সম্মেলনে আরও স্থির করা হয়েছিল যে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন স্বাধীনতা, সাম্য ও সহযােগিতার ভিত্তিতে নতুন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে তােলার সংগ্রামে লিপ্ত থাকবে।
প্রশ্ন ৭৷ ‘পঞ্চশীল’ নীতি কী?
উত্তর : জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের অগ্রণী পদক্ষেপ হিসাবে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে চিন-ভারত সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে গৃহীত নীতিগুলি হল-
(i) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, (ii) ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা, (iii) অনাগ্রাসন, (iv) অন্যের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ না করা, (v) সমগত বা পারস্পরিক সুবিধা। এই নীতিগুলি ‘পঞ্চশীল’ নীতি নামে পরিচিত।
প্রশ্ন ৮। ‘বিশ্বায়ন’ বলতে কী বােঝ?
উত্তর : ‘বিশ্বায়ন’ হল দেশীয় সীমানার ঊর্ধ্বে শিল্প কর্পোরেশনের প্রসারতা এবং আন্তঃসীমাভিত্তিক অর্থনৈতিক সুবিধা ও সম্পর্কের এক সংযুক্ত প্রক্রিয়া। যা ক্রমাগত পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে দ্রুত পরিণতি লাভ করেছে। বিশ্বব্যাপী মতাদর্শ হিসাবে একে গ্রহণযােগ্য করে তােলার প্রচেষ্টার পিছনে মুক্ত বাণিজ্যের দর্শন কাজ করে চলেছে। বর্তমানে বিশ্বায়ন ও মুক্ত বাণিজ্যের তত্ত্ব দুটিকে নতুন শতাব্দীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক বলে প্রচার করা হয়।
প্রশ্ন ৯। ‘বিশ্বায়ন’-এর তালিকায় কী কী অন্তর্ভুক্ত করা যায়?
উত্তর : ‘বিশ্বায়নের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি হল—তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতি, বিমানপথে মাল পরিবহনের বহুল প্রচলন, টাকার বাজারে ফাটকাবাজি, দেশের সীমানা পেরিয়ে ক্রমবর্ধমান পুঁজি প্রবাহ, কেবল চ্যানেল প্রসার, গণ বিপণন, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বহুজাতিক কর্পোরেটরের শক্তি বৃদ্ধি, নতুন আন্তর্জাতিক শ্রম-বিভাজন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শ্রমের অবাধ চলাচল, জাতি রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতা হ্রাস, উত্তর-আধুনিকতা, প্লাস্টিক অর্থ (Plastic Money) প্রভৃতি।
প্রশ্ন ১০। ‘সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন’ বলতে কী বােঝ?
উত্তর : ‘সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন’ এক অভিনব চিন্তার ফসল। বিশ্বগ্রাসী পাশ্চাত্য সংস্কৃতি উন্নয়নশীল তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলির সংস্কৃতির ওপর সিংহভাগ অধিকার করতে বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে চলেছে। সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রথার মাধ্যমে নিজেদের গতি সমৃদ্ধ চকচকে ও রগরগে সংস্কৃতিকে তৃতীয় বিশ্বের অঙ্গনে প্রবেশ করিয়ে চলেছে। তথাকথিত জনপ্রিয় সংগীত প্রাচ্যের সংস্কৃতিকে অবরুদ্ধ করে চলেছে। কেবল টিভির মাধ্যমে প্রায় প্রতিটি সাধারণ মানুষের গৃহকোণে পশ্চিমি সংস্কৃতির প্রচার অব্যাহত। এর ফলে তৃতীয় বিশ্বের যুবসমাজ নিজেদের স্বকীয়তাকে বিসর্জন দিয়ে তাৎক্ষণিক উল্লাসে নিজেদের অস্তিত্বকে বিলীন করে তুলছে।
প্রশ্ন ১১। বিশ্বব্যাপী লগ্নি পুঁজির সম্প্রসারণের কাজ করছে এমন তিনটি আন্তর্জাতিক সংস্থার নাম লেখাে।
উত্তর : বিশ্বায়নের উদ্ভাবক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশগুলি আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (IMF), বিশ্বব্যাংক (World Bank) এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (W.T.O.) এই তিনটি সংস্থার মাধ্যমে পুঁজি লগ্নি করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে অর্থনৈতিক দিক থেকে শােষণ করছে।
প্রশ্ন ১২। ‘জাতীয় শক্তি’ বলতে কী বােঝ?
উত্তর : ‘জাতীয় শক্তি’ বলতে বােঝায় “একটি রাষ্ট্রের সেইসব শক্তি ও সামর্থ্যের সমষ্টি, যা সেই রাষ্ট্র তার জাতীয় স্বার্থের অগ্রগতির জন্য ও জাতীয় লক্ষ্যপূরণের জন্য কাজে লাগায় ও ব্যবহার করে।”
Comment

Class XI Political Science

Class XII Political Science

Class 12 Bangla Books Question& Answers