নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য
প্রশ্ন ১) নাগরিকতার সংজ্ঞা দাও।
উত্তর : রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে নাগরিকতার প্রশ্ন বিশেষভাবে জড়িত। কারণ ব্যক্তির সঙ্গেরাষ্ট্রের সম্পর্ক কেমন হবে, রাষ্ট্রের কাছ থেকে ব্যক্তি কী অধিকার দাবি করতে পারে বারাষ্ট্রের প্রতি ব্যক্তির কর্তব্য কী হবে—এইসব প্রশ্নের উত্তর নাগরিকতা সম্পর্কে ধারণার মধ্যে নিহিত আছে।
নাগরিকতার সংজ্ঞা
আক্ষরিক অর্থে নগরের অধিবাসীকে নাগরিক বলা যায়। প্রাচীনকালে নগরকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্র গড়ে উঠত —তাকে বলা হত city state বা নগর রাষ্ট্র। সেই নগরে যারা বাস করত এবং যারা প্রশাসনে অংশগ্রহণ করত, তাদের বলা হত নাগরিক। সেখানে স্ত্রীলােক এবং ক্রীতদাসদের নাগরিক বলা হত না। কারণ, তারা শাসনকার্যে অংশ নিতে পারত না।
বর্তমানে রাষ্ট্রের আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে। শহর ছাড়া এতে গ্রামও আছে। সকলে শাসনের কাজে অংশ নিতে পারে না। পারা সম্ভবও নয়। তাই তখন নাগরিকতার সংজ্ঞার পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে তাকেই নাগরিক বলা হয়,—যে রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাস করে, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য দেখায় এবংরাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রেরই দেওয়া সব সুযােগসুবিধা ভােগ করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি মিলার (Miller) বলেছেন -“রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হয়ে মানুষ যখন রাষ্ট্র গঠন করে এবং যারা নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য সরকার প্রতিষ্ঠা করে ও সেই সরকারের প্রতি আনুগত্য দেখায়, তখন তারাই নাগরিক বলে বিবেচিত হয়।” তবে অধ্যাপক ল্যাস্কি(Laski)-এর সঙ্গে আরও বলেছেন যে,—“আদর্শ নাগরিক হতে গেলে তার সমাজের কল্যাণসাধনের জন্য নিজের বুদ্ধি প্রয়ােগের ক্ষমতা থাকা দরকার।”
নাগরিকতার সংজ্ঞা
আক্ষরিক অর্থে নগরের অধিবাসীকে নাগরিক বলা যায়। প্রাচীনকালে নগরকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্র গড়ে উঠত —তাকে বলা হত city state বা নগর রাষ্ট্র। সেই নগরে যারা বাস করত এবং যারা প্রশাসনে অংশগ্রহণ করত, তাদের বলা হত নাগরিক। সেখানে স্ত্রীলােক এবং ক্রীতদাসদের নাগরিক বলা হত না। কারণ, তারা শাসনকার্যে অংশ নিতে পারত না।
বর্তমানে রাষ্ট্রের আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে। শহর ছাড়া এতে গ্রামও আছে। সকলে শাসনের কাজে অংশ নিতে পারে না। পারা সম্ভবও নয়। তাই তখন নাগরিকতার সংজ্ঞার পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে তাকেই নাগরিক বলা হয়,—যে রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাস করে, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য দেখায় এবংরাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রেরই দেওয়া সব সুযােগসুবিধা ভােগ করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি মিলার (Miller) বলেছেন -“রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হয়ে মানুষ যখন রাষ্ট্র গঠন করে এবং যারা নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য সরকার প্রতিষ্ঠা করে ও সেই সরকারের প্রতি আনুগত্য দেখায়, তখন তারাই নাগরিক বলে বিবেচিত হয়।” তবে অধ্যাপক ল্যাস্কি(Laski)-এর সঙ্গে আরও বলেছেন যে,—“আদর্শ নাগরিক হতে গেলে তার সমাজের কল্যাণসাধনের জন্য নিজের বুদ্ধি প্রয়ােগের ক্ষমতা থাকা দরকার।”
প্রশ্ন ২) নাগরিকতা অর্জনের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : নাগরিকতা অর্জনের জন্য প্রধানত দুটি পদ্ধতি আছে—(ক) জন্মসূত্রে অর্জন এবং (খ) রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমােদনের দ্বারা অর্জন। জন্মসূত্রে যে নাগরিকতা পাওয়া যায়, সেটি হল স্বাভাবিক পদ্ধতি। অন্যদিকে অনুমােদনের দ্বারা কৃত্রিম উপায়ে নাগরিকতা অর্জন করা যায়।
জন্মসূত্রে অর্জন
জন্মসূত্রে নাগরিকতা অর্জনের দুটি মূল নীতি আছে—(ক) রক্তের সম্পর্ক নীতি এবং (খ) জন্মস্থান নীতি।
• (ক) রক্তের সম্পর্ক নীতি
রক্তের সম্পর্ক নীতি অনুসারে শিশু যেখানেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন, সে তার পিতা-মাতার নাগরিকতা পাবে। অর্থাৎ পিতা-মাতা যে রাষ্ট্রের নাগরিক শিশুও সেই রাষ্ট্রের নাগরিক হবে। যেমন, কোনাে ভারতীয় পিতা-মাতার সন্তান যদি জাপানে জন্মগ্রহণ করে, তাহলে রক্তের সম্পর্ক নীতি অনুসারে সেই শিশু ভারতের নাগরিক হবে।
• (খ) জন্মস্থান নীতি
এই নীতি অনুসারে সন্তানের পিতা-মাতা যে দেশের নাগরিক হােক না কেন, শিশু যে রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করবে সেই রাষ্ট্রের নাগরিক হবে। যেমন, ভারতের কোনাে পিতা-মাতার সন্তান যদি জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করে, তবে সে জার্মানির নাগরিক হবে। জাহাজে বা বিমানে যদি কেউ জন্মগ্রহণ করে, তাহলে এইনীতি অনুসারে সেই জাহাজ বা বিমান যে রাষ্ট্রের, শিশুটি সেই রাষ্ট্রের নাগরিক হবে।
অনুমােদনসিদ্ধ নাগরিক
অনুমােদনের মাধ্যমে নাগরিকতা অর্জন করা যায়। অনুমােদন আবার দুটি অর্থে হতে পারে –ব্যাপক অর্থে এবং সংকীর্ণ অর্থে। ব্যাপক অর্থে অনুমােদনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কাছে আবেদন করতে হয় না। বিদেশে সম্পত্তি ক্রয়, সরকারি চাকুরি গ্রহণ, বিবাহ, সেনাবাহিনীতে যােগদান প্রভৃতি যে-কোনাে উপায়ের মাধ্যমে নাগরিকতা অর্জন করা যায়।
জন্মসূত্রে অর্জন
জন্মসূত্রে নাগরিকতা অর্জনের দুটি মূল নীতি আছে—(ক) রক্তের সম্পর্ক নীতি এবং (খ) জন্মস্থান নীতি।
• (ক) রক্তের সম্পর্ক নীতি
রক্তের সম্পর্ক নীতি অনুসারে শিশু যেখানেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন, সে তার পিতা-মাতার নাগরিকতা পাবে। অর্থাৎ পিতা-মাতা যে রাষ্ট্রের নাগরিক শিশুও সেই রাষ্ট্রের নাগরিক হবে। যেমন, কোনাে ভারতীয় পিতা-মাতার সন্তান যদি জাপানে জন্মগ্রহণ করে, তাহলে রক্তের সম্পর্ক নীতি অনুসারে সেই শিশু ভারতের নাগরিক হবে।
• (খ) জন্মস্থান নীতি
এই নীতি অনুসারে সন্তানের পিতা-মাতা যে দেশের নাগরিক হােক না কেন, শিশু যে রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করবে সেই রাষ্ট্রের নাগরিক হবে। যেমন, ভারতের কোনাে পিতা-মাতার সন্তান যদি জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করে, তবে সে জার্মানির নাগরিক হবে। জাহাজে বা বিমানে যদি কেউ জন্মগ্রহণ করে, তাহলে এইনীতি অনুসারে সেই জাহাজ বা বিমান যে রাষ্ট্রের, শিশুটি সেই রাষ্ট্রের নাগরিক হবে।
অনুমােদনসিদ্ধ নাগরিক
অনুমােদনের মাধ্যমে নাগরিকতা অর্জন করা যায়। অনুমােদন আবার দুটি অর্থে হতে পারে –ব্যাপক অর্থে এবং সংকীর্ণ অর্থে। ব্যাপক অর্থে অনুমােদনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কাছে আবেদন করতে হয় না। বিদেশে সম্পত্তি ক্রয়, সরকারি চাকুরি গ্রহণ, বিবাহ, সেনাবাহিনীতে যােগদান প্রভৃতি যে-কোনাে উপায়ের মাধ্যমে নাগরিকতা অর্জন করা যায়।
ব্রিটেন, ভারত প্রভৃতি দেশে অনুমােদন শব্দটি সংকীর্ণ অর্থে ব্যবহৃত হয়। এখানে কয়েকটি শর্তপূরণ করে সরকারের কাছে আবেদনের মাধ্যমে নাগরিকতা পাওয়া যায়। এইসব শর্তের মধ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের শর্ত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়ােজন—অধিকাংশ রাষ্টে জন্মসূত্রে নাগরিকতা ও অনুমােদনসিদ্ধ নাগরিকতার মধ্যে কোনাে পার্থক্য করা হয় না। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এদের মধ্যে পার্থক্য টানা হয়। যেমন, কোনাে অনুমােদনসিদ্ধ নাগরিক সেখানে রাষ্ট্রপতিপদে প্রার্থী হতে পারবে না।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়ােজন—অধিকাংশ রাষ্টে জন্মসূত্রে নাগরিকতা ও অনুমােদনসিদ্ধ নাগরিকতার মধ্যে কোনাে পার্থক্য করা হয় না। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এদের মধ্যে পার্থক্য টানা হয়। যেমন, কোনাে অনুমােদনসিদ্ধ নাগরিক সেখানে রাষ্ট্রপতিপদে প্রার্থী হতে পারবে না।
প্রশ্ন ৩) ব্যক্তির নাগরিকতা কীভাবে বিলুপ্ত হয়?
উত্তর : নাগরিকতা হল একটি বিশেষ মর্যাদা। কোনাে ব্যক্তি নাগরিকতা অর্জন করলে সে রাষ্ট্রের কাছ থেকে রাষ্ট্রস্বীকৃত সব অধিকার ভােগ করতে পারে। তবে এই নাগরিকতা বজায় রাখার জন্য কতকগুলি শর্ত মেনে চলতে হয়। না মানলে নাগরিকতার বিলােপ ঘটে। নিম্নে নাগরিকতা বিলােপের কারণ উল্লেখ করা হল—
(ক) কোনাে ব্যক্তি অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে, তার নিজের রাষ্ট্রের নাগরিকতা লােপ পায়। কারণ, একই সঙ্গে দুটি রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়া যায় না।
(খ) কোনাে স্ত্রীলােক বিদেশিকে বিয়ে করলে, সে নিজের নাগরিকত্ব হারিয়ে স্বামীর নাগরিকত্ব পায়।
(গ) নিজের রাষ্ট্রের অনুমতি না নিয়ে অন্য রাষ্ট্রের অধীনে সরকারি চাকুরি নিলে অনেক ক্ষেত্রে নিজের রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব চলে যায়।
(ঘ) নিজের দেশে দীর্ঘকাল অনুপস্থিত থাকলে নাগরিকতার বিলােপ ঘটতে পারে।
(ঙ) যুদ্ধের সময় সৈন্যদল থেকে পালিয়ে গেলে বা বিদেশি সেনাবাহিনীতে যােগ দিলে নিজের দেশের নাগরিকত্ব হারাতে হয়।
(চ) দেশদ্রোহিতার অপরাধে কোনাে ব্যক্তির নাগরিকতার বিলােপ হতে পারে।
(ছ) অন্য রাষ্ট্রের উপাধি গ্রহণ করলে কোনাে কোনাে রাষ্ট্রের নাগরিকের নাগরিকত্ব বিলুপ্ত হতে পারে।
(জ) কোনাে কোনাে রাষ্ট্রে গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিকে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।
নাগরিকত্ব বিলােপের ব্যাপারে সব দেশের নিয়ম এক নয়। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের আইন চালু আছে। তবে কিছুকিছু নিয়ম সব দেশে স্বীকৃত। যেমন, অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকতা গ্রহণ করলে নিজ রাষ্ট্রের নাগরিকতা হারাতে হয়।
(ক) কোনাে ব্যক্তি অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে, তার নিজের রাষ্ট্রের নাগরিকতা লােপ পায়। কারণ, একই সঙ্গে দুটি রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়া যায় না।
(খ) কোনাে স্ত্রীলােক বিদেশিকে বিয়ে করলে, সে নিজের নাগরিকত্ব হারিয়ে স্বামীর নাগরিকত্ব পায়।
(গ) নিজের রাষ্ট্রের অনুমতি না নিয়ে অন্য রাষ্ট্রের অধীনে সরকারি চাকুরি নিলে অনেক ক্ষেত্রে নিজের রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব চলে যায়।
(ঘ) নিজের দেশে দীর্ঘকাল অনুপস্থিত থাকলে নাগরিকতার বিলােপ ঘটতে পারে।
(ঙ) যুদ্ধের সময় সৈন্যদল থেকে পালিয়ে গেলে বা বিদেশি সেনাবাহিনীতে যােগ দিলে নিজের দেশের নাগরিকত্ব হারাতে হয়।
(চ) দেশদ্রোহিতার অপরাধে কোনাে ব্যক্তির নাগরিকতার বিলােপ হতে পারে।
(ছ) অন্য রাষ্ট্রের উপাধি গ্রহণ করলে কোনাে কোনাে রাষ্ট্রের নাগরিকের নাগরিকত্ব বিলুপ্ত হতে পারে।
(জ) কোনাে কোনাে রাষ্ট্রে গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিকে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।
নাগরিকত্ব বিলােপের ব্যাপারে সব দেশের নিয়ম এক নয়। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের আইন চালু আছে। তবে কিছুকিছু নিয়ম সব দেশে স্বীকৃত। যেমন, অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকতা গ্রহণ করলে নিজ রাষ্ট্রের নাগরিকতা হারাতে হয়।
প্রশ্ন ৪) সুনাগরিক বলতে কী বােঝ?
উত্তর : রাষ্টের প্রগতি নির্ভর করে তার নাগরিকরা কতটা গুণসম্পন্ন ও সচেতন তার উপর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে একথা আরও বিশেষভাবে প্রযােজ্য। কারণ গণতন্ত্র হল জনগণের শাসনব্যবস্থা। গণতন্ত্রের সাফল্য নির্ভর করে সুনাগরিকতার উপর।
যে ব্যক্তিরা বিবেকবান, সংযমী এবং বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন তাদের এককথায় সুনাগরিক বলা হয়। লর্ড ব্রাইসের মতে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিটি নাগরিককে যােগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে। গণতন্ত্রে নাগরিকদের ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করতে হয়। তাই নাগরিকদের যােগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে। ব্রাইসের মতে, নাগরিক হবে কর্তব্যপরায়ণ ও পরিশ্রমী। অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে, জনকল্যাণের স্বার্থে নাগরিক তার অবদান রাখবে।
ল্যাস্কির মতে সুনাগরিকের গুণাবলি হল—(ক) সুনাগরিককে জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে, (খ) সে হবে বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন, (গ) নিজের কাজে তাকে সক্রিয় হতে হবে। অন্যান্য গুণাবলি হল বুদ্ধিমত্তা, রাজনৈতিক সচেতনতা, নাগরিককে বিবেকবান হতে হবে। আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকতে হবে। তাকে কর্তব্যপরায়ণ ও দায়িত্বশীল হতে হবে। এইসব গুণের বিকাশ তখনই সম্ভব হবে যখন একজন নাগরিক দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হবে।
যে ব্যক্তিরা বিবেকবান, সংযমী এবং বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন তাদের এককথায় সুনাগরিক বলা হয়। লর্ড ব্রাইসের মতে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিটি নাগরিককে যােগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে। গণতন্ত্রে নাগরিকদের ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করতে হয়। তাই নাগরিকদের যােগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে। ব্রাইসের মতে, নাগরিক হবে কর্তব্যপরায়ণ ও পরিশ্রমী। অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে, জনকল্যাণের স্বার্থে নাগরিক তার অবদান রাখবে।
ল্যাস্কির মতে সুনাগরিকের গুণাবলি হল—(ক) সুনাগরিককে জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে, (খ) সে হবে বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন, (গ) নিজের কাজে তাকে সক্রিয় হতে হবে। অন্যান্য গুণাবলি হল বুদ্ধিমত্তা, রাজনৈতিক সচেতনতা, নাগরিককে বিবেকবান হতে হবে। আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকতে হবে। তাকে কর্তব্যপরায়ণ ও দায়িত্বশীল হতে হবে। এইসব গুণের বিকাশ তখনই সম্ভব হবে যখন একজন নাগরিক দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হবে।
প্রশ্ন ৫) নাগরিক ও বিদেশির মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করাে।
উত্তর : উভয়ের মধ্যে কিছু বিষয়ে মিল থাকলেও পার্থক্য অনেক বেশি।
(i) আনুগত্যের ক্ষেত্রে : নাগরিক যে রাষ্ট্রে বাস করে সেই রাষ্ট্রের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য দেখায়। কিন্তু বিদেশি তার নিজের রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য দেখায়।
(ii) অধিকার ভােগের ক্ষেত্রে : নাগরিক সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সব ধরনের অধিকার ভােগ করে। কিন্তু বিদেশি রাজনৈতিক অধিকার ভােগ করতে পারে না। যেমন, সে ভােটে অংশ নিতে পারে না।
(iii) স্থায়ী বসবাসের ক্ষেত্রে : নাগরিকরা সারাজীবন নিজের রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারে। বিদেশিরা স্থায়ীভাবে অন্য রাষ্ট্রের বাসিন্দা হতে পারে না।
(iv) সেনাবাহিনীতে যােগদানের ক্ষেত্রে : রাষ্ট্র প্রয়ােজনে নাগরিকদের সেনাবাহিনীতে যােগ দিতে বাধ্য করতে পারে। কিন্তু বিদেশির ক্ষেত্রে তা পারে না।
(v) শাস্তিদানের ক্ষেত্রে : রাষ্ট্র নাগরিকদের চরম শাস্তি দিতে পারে। এমনকি মৃত্যুদণ্ডও দিতে পারে। কিন্তু বিদেশিকে দিতে পারে না। তাকে বড়াে জোর রাষ্ট্র থেকে বের করে দিতে পারে।
(vi) নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রে : নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা রাষ্ট্রের কর্তব্য। কোনাে নাগরিক যদি বিদেশে থাকে, তাহলেও রাষ্ট্র তার সম্পত্তি রক্ষা করার দায়িত্ব নেবে। কিন্তু বিদেশি যতক্ষণ কোনাে দেশে থাকে, ততক্ষণ রাষ্ট্র তার জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করে। কিন্তু সে চলে গেলে রাষ্ট্রের আর কোনাে দায়িত্ব থাকে না।
(i) আনুগত্যের ক্ষেত্রে : নাগরিক যে রাষ্ট্রে বাস করে সেই রাষ্ট্রের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য দেখায়। কিন্তু বিদেশি তার নিজের রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য দেখায়।
(ii) অধিকার ভােগের ক্ষেত্রে : নাগরিক সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সব ধরনের অধিকার ভােগ করে। কিন্তু বিদেশি রাজনৈতিক অধিকার ভােগ করতে পারে না। যেমন, সে ভােটে অংশ নিতে পারে না।
(iii) স্থায়ী বসবাসের ক্ষেত্রে : নাগরিকরা সারাজীবন নিজের রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারে। বিদেশিরা স্থায়ীভাবে অন্য রাষ্ট্রের বাসিন্দা হতে পারে না।
(iv) সেনাবাহিনীতে যােগদানের ক্ষেত্রে : রাষ্ট্র প্রয়ােজনে নাগরিকদের সেনাবাহিনীতে যােগ দিতে বাধ্য করতে পারে। কিন্তু বিদেশির ক্ষেত্রে তা পারে না।
(v) শাস্তিদানের ক্ষেত্রে : রাষ্ট্র নাগরিকদের চরম শাস্তি দিতে পারে। এমনকি মৃত্যুদণ্ডও দিতে পারে। কিন্তু বিদেশিকে দিতে পারে না। তাকে বড়াে জোর রাষ্ট্র থেকে বের করে দিতে পারে।
(vi) নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রে : নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা রাষ্ট্রের কর্তব্য। কোনাে নাগরিক যদি বিদেশে থাকে, তাহলেও রাষ্ট্র তার সম্পত্তি রক্ষা করার দায়িত্ব নেবে। কিন্তু বিদেশি যতক্ষণ কোনাে দেশে থাকে, ততক্ষণ রাষ্ট্র তার জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করে। কিন্তু সে চলে গেলে রাষ্ট্রের আর কোনাে দায়িত্ব থাকে না।
প্রশ্ন ৬) সুনাগরিকতার পথে অন্তরায়গুলি কী কী?
উত্তর : রাষ্ট্রের উৎকর্ষের জন্য সুনাগরিক আবশ্যক। কিন্তু সুনাগরিকতার পথে বহু বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। লর্ড ব্রাইস সুনাগরিকতার পথে তিনটি অন্তরায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। ব্রাইসের মতে-
(ক) নির্লিপ্ততা, (খ) ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা এবং (গ) সংকীর্ণ দলীয় মনােবৃত্তি সুনাগরিকতার পথে প্রধান অন্তরায়।
(ক) নির্লিপ্ততা, (খ) ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা এবং (গ) সংকীর্ণ দলীয় মনােবৃত্তি সুনাগরিকতার পথে প্রধান অন্তরায়।
এছাড়া অজ্ঞতা সংবাদপত্রের প্রতি অন্ধবিশ্বাস, নির্বাচন ব্যবস্থার ত্রুটি ইত্যাদি বিষয়ও সুনাগরিকতার পথে বাধা হিসেবে কাজ করে।
উদ্যমহীনতা ও নির্লিপ্ততা সুনাগরিকতার পথে প্রধান বাধা। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাজকর্মের বিষয়ে উদাসীনতা নাগারকদের নির্লিপ্ত করে তােলে। ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা সনাগরিকের পথে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। অর্থের লালসা, মানসম্মানের লােভ, প্রভাব প্রতিপত্তির আকাক্ষা ইত্যাদি কারণে মানুষের মনে ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা দেখা দেয়। এই মনােভাব ব্যক্তিকে সমাজের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থসম্পন্ন করে তােলে। সংকীর্ণ দলীয় মনােভাব সুনাগরিকতার পথে প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবিেচত হয়। সংকীর্ণ দলীয় মনােবৃত্তির কারণে ব্যক্তির মনে যদি সংকীর্ণ মনােভাবের সৃষ্টি হয় তাতে সমষ্টিগত স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। গণমাধ্যমসমূহের বিকৃত তথ্য, অজ্ঞতা, নির্বাচন ব্যবস্থার ত্রুটি ইত্যাদি সুনাগরিকতার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
উদ্যমহীনতা ও নির্লিপ্ততা সুনাগরিকতার পথে প্রধান বাধা। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাজকর্মের বিষয়ে উদাসীনতা নাগারকদের নির্লিপ্ত করে তােলে। ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা সনাগরিকের পথে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। অর্থের লালসা, মানসম্মানের লােভ, প্রভাব প্রতিপত্তির আকাক্ষা ইত্যাদি কারণে মানুষের মনে ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা দেখা দেয়। এই মনােভাব ব্যক্তিকে সমাজের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থসম্পন্ন করে তােলে। সংকীর্ণ দলীয় মনােভাব সুনাগরিকতার পথে প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবিেচত হয়। সংকীর্ণ দলীয় মনােবৃত্তির কারণে ব্যক্তির মনে যদি সংকীর্ণ মনােভাবের সৃষ্টি হয় তাতে সমষ্টিগত স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। গণমাধ্যমসমূহের বিকৃত তথ্য, অজ্ঞতা, নির্বাচন ব্যবস্থার ত্রুটি ইত্যাদি সুনাগরিকতার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন ৭) অধিকারের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?
উত্তর : ব্যাপক অর্থে অধিকার শুধু দাবিই বােঝায় না। বিভিন্ন অধিকারের মধ্য দিয়ে নাগরিক তার পূর্ণ ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায়। অধিকারের মৌল বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ-
(i) অধিকারের উৎস সমাজজীবন। সমাজজীবন ব্যতীত অধিকার থাকতে পারে না। নির্জন দ্বীপে রবিনসন ক্রুশাের কোনাে অধিকার ছিল না।
(ii) অধিকার সমাজে ভােগ করে ব্যক্তি। অধিকারের অর্থ সমাজে ব্যক্তির অধিকার। এই অধিকারই ব্যাক্তির সঙ্গে সমাজের এবং সমাজের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক নির্দেশ করে।
(iii) গ্রিনের মতে, অধিকারের বৈশিষ্ট্য হল স্বাধীনভাবে চলার দাবি। অধিকার ব্যক্তির অন্তর্নিহিত ক্ষমতাকে বিকশিত করে। ব্যক্তির স্বাধীনতার দাবি সমাজের মঙ্গলের জন্য।
(iv) ল্যাস্কির মতে, অধিকারের উৎস সমাজজীবন ও পরিবেশ যেগুলি না থাকলে ব্যক্তি নিজেকে বিকশিত করতে পারে না। তাঁর মতে, অধিকারের উৎস ব্যক্তি ও সমাজজীবন। ল্যাস্কি অধিকারকে দেখেছেন ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও প্রয়ােজনের দিক থেকে।
(v) বার্কারের মতে, অধিকারের উৎস ন্যায় (justice)। তার মতে, প্রতিটি রাষ্ট্রই আইনের মাধ্যমে ন্যায় ব্যবস্থাকে রূপায়িত করে। বাকারের মতে, আদর্শ অধিকারের উৎস দুটি— (ক) ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, (খ) রাষ্ট্র ও তার আইন। অধিকার এই দুই উৎস থেকে উদ্ভত
হয়। আদর্শ অধিকারের বৈশিষ্ট্য দুটি—(ক) অধিকার ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের শর্ত, (খ) আইনের দ্বারা অধিকার স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয়।
(vi) অধিকারের অপর বৈশিষ্ট্য হল, কোনাে অধিকারই সমাজ নিরপেক্ষ নয়।।
(vii) কোনাে অধিকারই সীমাহীন নয়।।
(viii) অধিকার বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে পারে না। প্রতিটি অধিকারই অন্যান্য অধিকারের সঙ্গে যুক্ত।
(ix) মার্কসীয় তত্ত্বে অধিকারকে শ্রেণিস্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করে দেখা হয়। কারণ কোনাে অধিকারই সমাজে নিরপেক্ষ নয়। সব অধিকারের দাবি সমাজের কোনাে-না-কোনো শ্রেণির দাবি।
(i) অধিকারের উৎস সমাজজীবন। সমাজজীবন ব্যতীত অধিকার থাকতে পারে না। নির্জন দ্বীপে রবিনসন ক্রুশাের কোনাে অধিকার ছিল না।
(ii) অধিকার সমাজে ভােগ করে ব্যক্তি। অধিকারের অর্থ সমাজে ব্যক্তির অধিকার। এই অধিকারই ব্যাক্তির সঙ্গে সমাজের এবং সমাজের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক নির্দেশ করে।
(iii) গ্রিনের মতে, অধিকারের বৈশিষ্ট্য হল স্বাধীনভাবে চলার দাবি। অধিকার ব্যক্তির অন্তর্নিহিত ক্ষমতাকে বিকশিত করে। ব্যক্তির স্বাধীনতার দাবি সমাজের মঙ্গলের জন্য।
(iv) ল্যাস্কির মতে, অধিকারের উৎস সমাজজীবন ও পরিবেশ যেগুলি না থাকলে ব্যক্তি নিজেকে বিকশিত করতে পারে না। তাঁর মতে, অধিকারের উৎস ব্যক্তি ও সমাজজীবন। ল্যাস্কি অধিকারকে দেখেছেন ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও প্রয়ােজনের দিক থেকে।
(v) বার্কারের মতে, অধিকারের উৎস ন্যায় (justice)। তার মতে, প্রতিটি রাষ্ট্রই আইনের মাধ্যমে ন্যায় ব্যবস্থাকে রূপায়িত করে। বাকারের মতে, আদর্শ অধিকারের উৎস দুটি— (ক) ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, (খ) রাষ্ট্র ও তার আইন। অধিকার এই দুই উৎস থেকে উদ্ভত
হয়। আদর্শ অধিকারের বৈশিষ্ট্য দুটি—(ক) অধিকার ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের শর্ত, (খ) আইনের দ্বারা অধিকার স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয়।
(vi) অধিকারের অপর বৈশিষ্ট্য হল, কোনাে অধিকারই সমাজ নিরপেক্ষ নয়।।
(vii) কোনাে অধিকারই সীমাহীন নয়।।
(viii) অধিকার বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে পারে না। প্রতিটি অধিকারই অন্যান্য অধিকারের সঙ্গে যুক্ত।
(ix) মার্কসীয় তত্ত্বে অধিকারকে শ্রেণিস্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করে দেখা হয়। কারণ কোনাে অধিকারই সমাজে নিরপেক্ষ নয়। সব অধিকারের দাবি সমাজের কোনাে-না-কোনো শ্রেণির দাবি।
প্রশ্ন ৮) অর্থনৈতিক অধিকার বলতে কী বােঝ?
উত্তর : শুধু ভােট দিয়ে পেট ভরে না। খাওয়া পরার সুযােগ থাকা চাই। এইসব অর্থনৈতিক সুযােগের নাম অর্থনৈতিক অধিকার। তাই অধ্যাপক ল্যাস্কি (Laski) বলেছেন— “দৈনন্দিন অন্ন সংস্থানের সুযােগের নাম অর্থনৈতিক অধিকার” এই অধিকার বিভিন্ন ধরনের-
• (ক) কর্মের অধিকার
এটি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অধিকার। এর অর্থ হল—প্রত্যেকে তার যােগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাবে। সমাজতান্ত্রিক দেশে এই অধিকার স্বীকৃত হয়। যেমন, চিনে এই অধিকার স্বীকৃত হয়েছে।
• (খ) বিশ্রামের অধিকার
মানুষ যন্ত্র নয়। কাজের মাঝে বিশ্রামের প্রয়ােজন। না হলে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়বে। কর্মদক্ষতা কমে যাবে। তাই মানুষ বিশ্রামের অধিকার ভােগ করে। যেমন, সপ্তাহের শেষে সবেতন ছুটি পায়।
• (গ)পর্যাপ্ত মজুরির অধিকার
শ্রমিক তার কাজ অনুযায়ী পর্যাপ্ত বেতন পাবার অধিকারী। এমন বেতন দেওয়া উচিত যাতে ভদ্রভাবে বেঁচে থাকতে পারে। তা না হলে অসৎ পথ অবলম্বন করবে।
• (ঘ)বৃদ্ধ বয়সে ভরণ-পােষণের অধিকার
বৃদ্ধ বয়সে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেললে মানুষ অন্ন সংস্থান করতে পারে না, তখন রাষ্ট্রকে তার দায়িত্ব নিতে হয়। কল্যাণকর রাষ্ট্রে এ অধিকার মানুষ দাবি করতে পারে।
• (ঙ)সমান কাজের সমান বেতন পাবার অধিকার
একই কাজের বেতন একই হওয়া উচিত। দুর্বল শ্রেণির মানুষ বা নারীরা অসহায় বলে তাদের কম বেতন দিলে ন্যায় ও সাম্যনীতির বিরােধী হবে।
• (চ)অন্যান্য অধিকার
এছাড়া, অন্যান্য অর্থনৈতিক অধিকার আছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল —বেকারভাতা পাবার অধিকার, শ্রমিক সংঘ গঠনের অধিকার প্রভৃতি।
• (ক) কর্মের অধিকার
এটি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অধিকার। এর অর্থ হল—প্রত্যেকে তার যােগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাবে। সমাজতান্ত্রিক দেশে এই অধিকার স্বীকৃত হয়। যেমন, চিনে এই অধিকার স্বীকৃত হয়েছে।
• (খ) বিশ্রামের অধিকার
মানুষ যন্ত্র নয়। কাজের মাঝে বিশ্রামের প্রয়ােজন। না হলে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়বে। কর্মদক্ষতা কমে যাবে। তাই মানুষ বিশ্রামের অধিকার ভােগ করে। যেমন, সপ্তাহের শেষে সবেতন ছুটি পায়।
• (গ)পর্যাপ্ত মজুরির অধিকার
শ্রমিক তার কাজ অনুযায়ী পর্যাপ্ত বেতন পাবার অধিকারী। এমন বেতন দেওয়া উচিত যাতে ভদ্রভাবে বেঁচে থাকতে পারে। তা না হলে অসৎ পথ অবলম্বন করবে।
• (ঘ)বৃদ্ধ বয়সে ভরণ-পােষণের অধিকার
বৃদ্ধ বয়সে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেললে মানুষ অন্ন সংস্থান করতে পারে না, তখন রাষ্ট্রকে তার দায়িত্ব নিতে হয়। কল্যাণকর রাষ্ট্রে এ অধিকার মানুষ দাবি করতে পারে।
• (ঙ)সমান কাজের সমান বেতন পাবার অধিকার
একই কাজের বেতন একই হওয়া উচিত। দুর্বল শ্রেণির মানুষ বা নারীরা অসহায় বলে তাদের কম বেতন দিলে ন্যায় ও সাম্যনীতির বিরােধী হবে।
• (চ)অন্যান্য অধিকার
এছাড়া, অন্যান্য অর্থনৈতিক অধিকার আছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল —বেকারভাতা পাবার অধিকার, শ্রমিক সংঘ গঠনের অধিকার প্রভৃতি।
প্রশ্ন ৯) ‘অধিকারের মধ্যেই কর্তব্য নিহিত আছে’ —এই উক্তিটি ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : ইংরেজিতে একটি কথা আছে,—Rights imply duties. অর্থাৎ অধিকারের মধ্যে কর্তব্য নিহিত আছে। প্রকৃতপক্ষে অধিকার ও কর্তব্য অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে আশা করা যায় না” অধ্যাপক ল্যাস্কি (Laski) যথার্থই বলেছেন,—”যে কর্তব্য পালন করবে না, সে অধিকার ভােগ করতে পারবে না।” যেমন, যে কাজ করবে না, সে খেতেও পাবে না। অধিকার কর্তব্যের মধ্যে এই সম্পর্ক বিভিন্ন দিক থেকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
• (ক) সমাজের দিক থেকে সম্পর্ক
অধিকার হল,—কতকগুলি সুযােগসুবিধা, যেগুলির মাধ্যমে ব্যক্তির বিকাশ সম্ভব। কোনাে ব্যক্তি যদি এই সুযােগসুবিধার অধিকার পেতে চায়, তাহলে অন্যদের কর্তব্য হল সেই সুযােগসুবিধা পাবার পথে বাধা সৃষ্টি না করা।
হবসহাউস (Hobhouse) একটি উদাহরণের সাহায্যে সহজভাবে এই সম্পর্কটি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, আমার যদি ধাক্কা না খেয়ে পথ চলার অধিকার থাকে, তাহলে অপরের কর্তব্য হল মাকে প্রয়ােজনমতাে পথ ছেড়ে দেওয়া। অপরে যদি এই কর্তব্য পালন না করে, তাহলে আমার অধিকার ভােগ করা হবে না। আবার, আমি যদি এই কর্তব্য পালন না করি, তাহলে অপরে এই
অধিকার ভােগ করতে পারবে না।
• (খ) রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে সম্পর্ক
রাষ্ট্রের কাজ হল -নাগরিকদের আত্মবিকাশের সুযােগ করে দেওয়া। এই উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র নাগরিকদের এ কিছু সুযােগসুবিধা বা অধিকার দেয় এবং সংরক্ষণ করে। কিন্তু এই অধিকার সংরক্ষণ করতে গেলে জনগণের কর্তব্য হল রাষ্ট্রকে সাহায্য করা। যেমন, কর দেওয়া, আইন মেনে চলা, মাতৃভূমি রক্ষা করা প্রভৃতি।
• (গ) নীতিগত ক্ষেত্রে সম্পর্ক
শুধু আইনগত ক্ষেত্রে নয়, নৈতিক ক্ষেত্রেও উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক আছে। যেমন, পিতা-মাতার কর্তব্য হল—শিশুদের লালনপালন করা। এই কর্তব্য পালন করলে তারা বৃদ্ধ বয়সে সন্তানদের সাহায্য পাবার নৈতিক অধিকার ভােগ করতে পারবে।
• (ঘ) অধিকার কর্তব্যের দ্বারা সীমাবদ্ধ
অধিকার অবাধ হতে পারে না। কারণ, অধিকার অবাধ হলে শক্তিমানরাই অধিকার ভােগ করবে। দুর্বলের কোনাে অধিকার থাকবে না। তাই দুর্বলরা যাতে অধিকার ভােগ করতে পারে তার জন্য সবলদের কিছু কর্তব্যবােধের দ্বারা গণ্ডিবদ্ধ করা দরকার।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে—অধিকার ও কর্তব্য উভয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্ক আছে। একটিকে বাদ দিলে অপরটির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
• (ক) সমাজের দিক থেকে সম্পর্ক
অধিকার হল,—কতকগুলি সুযােগসুবিধা, যেগুলির মাধ্যমে ব্যক্তির বিকাশ সম্ভব। কোনাে ব্যক্তি যদি এই সুযােগসুবিধার অধিকার পেতে চায়, তাহলে অন্যদের কর্তব্য হল সেই সুযােগসুবিধা পাবার পথে বাধা সৃষ্টি না করা।
হবসহাউস (Hobhouse) একটি উদাহরণের সাহায্যে সহজভাবে এই সম্পর্কটি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, আমার যদি ধাক্কা না খেয়ে পথ চলার অধিকার থাকে, তাহলে অপরের কর্তব্য হল মাকে প্রয়ােজনমতাে পথ ছেড়ে দেওয়া। অপরে যদি এই কর্তব্য পালন না করে, তাহলে আমার অধিকার ভােগ করা হবে না। আবার, আমি যদি এই কর্তব্য পালন না করি, তাহলে অপরে এই
অধিকার ভােগ করতে পারবে না।
• (খ) রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে সম্পর্ক
রাষ্ট্রের কাজ হল -নাগরিকদের আত্মবিকাশের সুযােগ করে দেওয়া। এই উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র নাগরিকদের এ কিছু সুযােগসুবিধা বা অধিকার দেয় এবং সংরক্ষণ করে। কিন্তু এই অধিকার সংরক্ষণ করতে গেলে জনগণের কর্তব্য হল রাষ্ট্রকে সাহায্য করা। যেমন, কর দেওয়া, আইন মেনে চলা, মাতৃভূমি রক্ষা করা প্রভৃতি।
• (গ) নীতিগত ক্ষেত্রে সম্পর্ক
শুধু আইনগত ক্ষেত্রে নয়, নৈতিক ক্ষেত্রেও উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক আছে। যেমন, পিতা-মাতার কর্তব্য হল—শিশুদের লালনপালন করা। এই কর্তব্য পালন করলে তারা বৃদ্ধ বয়সে সন্তানদের সাহায্য পাবার নৈতিক অধিকার ভােগ করতে পারবে।
• (ঘ) অধিকার কর্তব্যের দ্বারা সীমাবদ্ধ
অধিকার অবাধ হতে পারে না। কারণ, অধিকার অবাধ হলে শক্তিমানরাই অধিকার ভােগ করবে। দুর্বলের কোনাে অধিকার থাকবে না। তাই দুর্বলরা যাতে অধিকার ভােগ করতে পারে তার জন্য সবলদের কিছু কর্তব্যবােধের দ্বারা গণ্ডিবদ্ধ করা দরকার।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে—অধিকার ও কর্তব্য উভয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্ক আছে। একটিকে বাদ দিলে অপরটির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
প্রশ্ন ১০) মানবাধিকারের সংজ্ঞা দাও। মানবাধিকারের প্রকৃতি আলােচনা করাে।
উত্তর : মানবাধিকারের ঘােষণার পর ৭০টি বছর পার হয়ে গেল। কিন্তু আজও সাম্রাজ্যবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও ক্ষুধা আমাদের সম্মুখে বিপদের তমসা রাত্রিরূপে দেখা দিয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে আফগানিস্তানে, ইরাকে, ইরানে, চিনে, উত্তর কোরিয়াসহ আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার একনায়কতন্ত্রী দেশগুলিতে। তাই বর্তমান বিশ্ব মানবাধিকারের প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়। মানুষের মর্যাদা রক্ষা করা, সমান অধিকারের স্পষ্ট ও লিপিবদ্ধ রূপকেই মানবাধিকার বলে। মনুষ্যত্বের অধিকার মানুষের আসল অধিকার। জন্মসূত্রে মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদার সমন্বয় রূপই হল মানবাধিকার।
মানবিক অধিকার রক্ষার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে, ১০ ডিসেম্বর মানবিক অধিকারের বিশ্ব ঘােষণাপত্র গৃহীত হয়। এই ঘােষণাপত্রে ৩০টি ধারায় সমস্ত প্রকার অধিকার স্থান পেয়েছে। রাষ্ট্রসংঘ মানবাধিকারের যে সংজ্ঞা দিয়েছে তার মর্মার্থ হল ‘সব মানুষের মর্যাদা’। সকলের সমান অধিকারের স্বীকৃতির উপরই কেবল এই পৃথিবীতে স্বাধীনতা, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। কমিশনের সভানেত্রী শ্রীমতী ফ্রাঙ্কলিন ভি. রুজভেল্ট -এর ভাষায়—এ হল মানবজাতির কাছে এক মহাসনদ।
রাষ্ট্রসংঘের ঘােষণাপত্রে যে অধিকারগুলির কথা বলা হয়েছে তাকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়। (ক) রাজনৈতিক ও পৌর অধিকার, (খ) আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার। রাজনৈতিক ও পৌর অধিকারগুলির মধ্যে আছে জীবন, স্বাধীনতা, নিরাপত্তার অধিকার। অন্যায় আটক ও গ্রেপ্তারের বিরদ্ধে অব্যাহতি পাবার অধিকার, ন্যায়বিচারের অধিকার। ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার, ভােটাধিকার, সরকার গঠনের অধিকার। আর্থ-সামাজিক সাংস্কৃতিক অধিকারগুলির মধ্যে কাজকর্মের অধিকার। এই অধিকারগুলির যােগফলই হল মানবাধিকার।
প্রকৃতপক্ষে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদে মানবাধিকার বা মৌলিক স্বাধীনতার কোনাে সম্পই সংজ্ঞা দেননি সনদ প্রণেতারা। এর কারণ সনদ প্রণেতাদের মধ্যে সংজ্ঞা ও বিষয়বস্তু নিয়ে মতবিরােধ।
মানবিক অধিকার রক্ষার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে, ১০ ডিসেম্বর মানবিক অধিকারের বিশ্ব ঘােষণাপত্র গৃহীত হয়। এই ঘােষণাপত্রে ৩০টি ধারায় সমস্ত প্রকার অধিকার স্থান পেয়েছে। রাষ্ট্রসংঘ মানবাধিকারের যে সংজ্ঞা দিয়েছে তার মর্মার্থ হল ‘সব মানুষের মর্যাদা’। সকলের সমান অধিকারের স্বীকৃতির উপরই কেবল এই পৃথিবীতে স্বাধীনতা, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। কমিশনের সভানেত্রী শ্রীমতী ফ্রাঙ্কলিন ভি. রুজভেল্ট -এর ভাষায়—এ হল মানবজাতির কাছে এক মহাসনদ।
রাষ্ট্রসংঘের ঘােষণাপত্রে যে অধিকারগুলির কথা বলা হয়েছে তাকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়। (ক) রাজনৈতিক ও পৌর অধিকার, (খ) আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার। রাজনৈতিক ও পৌর অধিকারগুলির মধ্যে আছে জীবন, স্বাধীনতা, নিরাপত্তার অধিকার। অন্যায় আটক ও গ্রেপ্তারের বিরদ্ধে অব্যাহতি পাবার অধিকার, ন্যায়বিচারের অধিকার। ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার, ভােটাধিকার, সরকার গঠনের অধিকার। আর্থ-সামাজিক সাংস্কৃতিক অধিকারগুলির মধ্যে কাজকর্মের অধিকার। এই অধিকারগুলির যােগফলই হল মানবাধিকার।
প্রকৃতপক্ষে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদে মানবাধিকার বা মৌলিক স্বাধীনতার কোনাে সম্পই সংজ্ঞা দেননি সনদ প্রণেতারা। এর কারণ সনদ প্রণেতাদের মধ্যে সংজ্ঞা ও বিষয়বস্তু নিয়ে মতবিরােধ।
প্রশ্ন ১১) ভারতে মানবাধিকারের উপর কতটুকু গুরুত্ব আরােপ করা হয়েছে?
উত্তর : ভারতসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ তাদের অধিবাসীদের জন্য মানবাধিকারগুলিকে নিজেদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর থেকেই এই অধিকারগুলির গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপলব্ধি করা যায়। ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং অন্যান্য অনুচ্ছেদে এবিষয়ে বিধি ব্যবস্থার উল্লেখ আছে। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের ‘মানবাধিকার রক্ষা আইন’ এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরেই ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন’ গঠন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে এই কমিশন গঠন করা হয় ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে। পৃথিবীতে রাষ্ট্রসংঘ মানবিক অধিকার রক্ষার এক অতন্দ্র প্রহরী। একইভাবে রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকারগুলির অতন্দ্র প্রহরী হল সেই দেশের সরকার ও সংবিধান।
প্রশ্ন ১২) মার্কসের দৃষ্টিতে অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক আলােচনা করাে।
উত্তর : মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতেও অধিকার ও কর্তব্যের অঙ্গাঙ্গি ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্বীকার করা হয়। মার্কস বলেছেন, “কর্তব্য ব্যতীত অধিকার চিন্তা করা যায় না এবং অধিকার ব্যতীত কর্তব্য পালন সম্ভব হয় না।” সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনেই অধিকার ও কর্তব্যের প্রশ্ন দেখা দিতে পারে, সমাজের বাইরে নয়, সমস্যাটি কোনাে ব্যক্তি মানুষের জীবনের সমস্যা নয়, সামাজিক মানুষের সঙ্গে এর সম্পর্ক। সামাজিক মানুষই অধিকার ভােগ করে থাকে এবং মানুষ সামাজিক বলেই তার কর্তব্য পালনের প্রশ্নটিও অধিকার ভােগের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত। কর্মের অধিকার শ্রম করার কর্তব্যও বটে। ‘যে কাজ করবে না, সে খেতেও পাবে না।’ সুতরাং কর্তব্য পালন মানুষের সামাজিক দায়িত্ব। মার্কসবাদ অধিকার ও কর্তব্যকে পৃথক বা বিচ্ছিন্ন বিষয় বলে মনে করে না, উভয়ের অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক স্বীকার করে।
প্রশ্ন ১৩) মানবাধিকার ঘােষণাপত্রে ৩০ নং ধারায় নাগরিকদের যেসব মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা যুক্ত করা হয়েছে তা বর্ণনা করাে।
উত্তর : (i) জীবন, স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অধিকার, (ii) দাসত্ব থেকে মুক্তি, (iii) স্বৈরাচারীর আটক ও গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষ আদালত কর্তৃক যুদ্ধ বিচারের অধিকার, (iv) দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত নিরপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়ার অধিকার, (v) আইনের দ্বারা সমানভাবে সংরক্ষিত হওয়ার অধিকার, (vi) চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, (vii) তথ্য ও চিন্তার আদানপ্রদান, (viii) সমবেত হওয়ার স্বাধীনতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা, (ix) অন্য রাষ্ট্রে আশ্রয়লাভের অধিকার, (x) চলাফেরার স্বাধীনতা এবং (xi) ভােটদান ও সরকারের অংশগ্রহণের অধিকার প্রভৃতি।
প্রশ্ন ১৪) অধিকার ও মানবাধিকারের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর : প্রকৃতিগতভাবে মানবাধিকার (Human Rights) এবং অধিকারের (Rights) মধ্যে পার্থক্য আছে। নিম্নে সেগুলি উল্লেখ করা হল—
(i) মানবাধিকার আন্তর্জাতিক সংস্থার ঘােষণাপত্র, অধিকার রাষ্টের সীমানায় ব্যক্তি ভােগ করে।
(ii) অধিকার ব্যক্তি বা গােষ্ঠীর রাষ্ট্রের কাছে দাবি, কিন্তু মানবাধিকারের ক্ষেত্রে একথা বলা যায় না।
(iii) মানবাধিকারকে নীতি সম্বলিত নিয়ম বলে উল্লেখ করা যায়, কিন্তু অধিকার রাষ্ট্রের আইনের দ্বারা স্বীকৃত।
(iv) মানবাধিকার প্রয়ােগের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতার অভাব আছে, কিন্তু অধিকার রাষ্ট্রের আইন বলবৎ করে।
(v) মানবাধিকার বলবৎকরণের ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জকে নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু অধিকার রাষ্ট্রীয় আইনে নির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট।
(vi) রাষ্ট্রে লিখিত সংবিধানে অধিকার সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু মানবাধিকারের ঘােষণাপত্রকে রাষ্ট্রের লিখিত সংবিধানের সঙ্গে তুলনা করা যায় না।
(vii) অধিকার বলবৎযােগ্য, কিন্তু মানবাধিকার সেই অর্থে বলবৎযােগ্য নয়। অধিকার লঙ্খিত হলে সদস্যের আদালতে তার বিরুদ্ধে নাগরিক, ব্যক্তি বা গােষ্ঠী এমনকি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযােগ আনতে পারে। অধিকার লঙ্ঘনের অভিযােগ প্রমাণিত হলে অধিকার ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। যেমন, ভারতের লিখিত সংবিধানে নাগরিকের জন্যে প্রদত্ত অধিকার বলবৎকরণের জন্যে রাজ্যের হাইকোর্ট এবং ভারতের সুপ্রিমকোর্টের সংবিধান সম্মত ক্ষমতা রয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে রাষ্টের বিরুদ্ধে অভিযােগের তদন্ত করে মানবাধিকার কমিশন এবং প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারকেই নির্দেশ দেয়। সর্বোপরি নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি নিয়ে আলােচনা হতে পারে। সুতরাং মানবাধিকার ও অধিকারের মধ্যে উপরােক্ত বিষয়ে উল্লেখযােগ্য পার্থক্য রয়েছে বলা যায়।
(i) মানবাধিকার আন্তর্জাতিক সংস্থার ঘােষণাপত্র, অধিকার রাষ্টের সীমানায় ব্যক্তি ভােগ করে।
(ii) অধিকার ব্যক্তি বা গােষ্ঠীর রাষ্ট্রের কাছে দাবি, কিন্তু মানবাধিকারের ক্ষেত্রে একথা বলা যায় না।
(iii) মানবাধিকারকে নীতি সম্বলিত নিয়ম বলে উল্লেখ করা যায়, কিন্তু অধিকার রাষ্ট্রের আইনের দ্বারা স্বীকৃত।
(iv) মানবাধিকার প্রয়ােগের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতার অভাব আছে, কিন্তু অধিকার রাষ্ট্রের আইন বলবৎ করে।
(v) মানবাধিকার বলবৎকরণের ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জকে নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু অধিকার রাষ্ট্রীয় আইনে নির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট।
(vi) রাষ্ট্রে লিখিত সংবিধানে অধিকার সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু মানবাধিকারের ঘােষণাপত্রকে রাষ্ট্রের লিখিত সংবিধানের সঙ্গে তুলনা করা যায় না।
(vii) অধিকার বলবৎযােগ্য, কিন্তু মানবাধিকার সেই অর্থে বলবৎযােগ্য নয়। অধিকার লঙ্খিত হলে সদস্যের আদালতে তার বিরুদ্ধে নাগরিক, ব্যক্তি বা গােষ্ঠী এমনকি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযােগ আনতে পারে। অধিকার লঙ্ঘনের অভিযােগ প্রমাণিত হলে অধিকার ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। যেমন, ভারতের লিখিত সংবিধানে নাগরিকের জন্যে প্রদত্ত অধিকার বলবৎকরণের জন্যে রাজ্যের হাইকোর্ট এবং ভারতের সুপ্রিমকোর্টের সংবিধান সম্মত ক্ষমতা রয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে রাষ্টের বিরুদ্ধে অভিযােগের তদন্ত করে মানবাধিকার কমিশন এবং প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারকেই নির্দেশ দেয়। সর্বোপরি নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি নিয়ে আলােচনা হতে পারে। সুতরাং মানবাধিকার ও অধিকারের মধ্যে উপরােক্ত বিষয়ে উল্লেখযােগ্য পার্থক্য রয়েছে বলা যায়।