Tuesday, 7 April 2020

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বর্ণনামূলক প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ কী উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল?
উত্তর : মানবজাতির ইতিহাসে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা এক গুরুপূর্ণ ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপকতা ও অগণিত মানুষের প্রাণনাশ ও সম্পত্তির বিনাশ বিশ্ববাসীকে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ব্যাকুল করে তুলেছিল। এর ফলশ্রুতি হিসাবে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য নিম্নরূপ-
প্রথমত, সনদের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, জাতিপুঞ্জের প্রধান উদ্দেশ্য হল বিশ্ব থেকে যুদ্ধের অবসান ঘটানাে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করা।
দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করাই হল সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রধান উদ্দেশ্য। সনদের ১ নং ধারায় বলা হয়েছে, জাতিপুঞ্জ বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে। শান্তি রক্ষার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ ও আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য যৌথ প্রচেষ্টা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ন্যায়বিচারের নীতি ও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সংহতি রেখে শান্তিপূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক বিরােধের মীমাংসা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তৃতীয়ত, সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল—বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তােলার জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সমানাধিকারের নীতিকে সম্মান দেখানাে হবে।
চতুর্থত, বিভিন্ন জাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতির মান উন্নয়নের জন্য সহযােগিতা করা ও বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
পঞ্চমত, নারী, পুরুষ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের সমান অধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ষষ্ঠত, এই সকল উদ্দেশ্যগুলিকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জ বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সমন্বয়সাধনের কেন্দ্র হিসাবে কাজ করবে ও প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রশ্ন ২) অছি পরিষদের গঠন ও কার্যাবলি আলােচনা করাে।
উত্তর : সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদ যখন রচনা করা হয় তখন বিশ্বের বহু মানুষ স্বায়ত্তশাসনের থেকে বঞ্চিত ছিল। তারা অন্য রাষ্ট্র কর্তৃক শাসিত হত। এই স্বায়ত্তশাসনের অধিকার থেকে বঞিত অঞলের প্রশাসন পরিচালনা ও তদারকি করার জন্য জাতিপুঞ্জের সনদে যে ব্যবস্থার উল্লেখ আছে তার নাম আন্তর্জাতিক অছি ব্যবস্থা।
     অছি ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হল অছি অঞ্চলের আদিবাসীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষা বিষয়ে অগ্রগতি সাধন করা। ওইসব অঞ্চলের জনগণের স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। মানবিক অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি মর্যাদা ও উৎসাহ দেওয়া। সদস্য রাষ্ট্রের জনগণকে সমান সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুযােগসুবিধা দেওয়া।
গঠন
অছিপরিষদ জাতিপুঞ্জের নিম্নলিখিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত-
(i) অছি অঞ্চলের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত সদস্যগণ।
(ii) নিরাপত্তাপরিষদের স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে যারা অছি অঞ্চলের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত থাকেন না।
(iii) অছি অঞ্চলের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত এবং অছি অঞ্চলের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত নয় এই উভয় শ্রেণির সদস্য সংখ্যা সমান করার জন্য যে কয়জন অতিরিক্ত সদস্য রাষ্ট্রের প্রয়ােজন হয় তাদের সাধারণ সভা ৩ বছরের জন্য নির্বাচিত করে।
কার্যাবলি
সনদের ৮৭ ও ৮৮ নং ধারায় অছিপরিষদের কার্যাবলির উল্লেখ আছে। অছিপরিষদের উল্লেখযােগ্য কাজ হল :
(i) অছি অঞ্চলের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ যে রিপাের্ট পাঠায় তা বিবেচনা করা।
(ii) অছি অঞ্চল থেকে আবেদনপত্র পরীক্ষা করা এবং প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে তা পরীক্ষা করা।
(iii) অছি অঞল পরিদর্শন করা।
(iv) অছি সম্পর্কিত চুক্তি অনুযায়ী প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
(v) অছি অঞ্চলের জনগণের সার্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে প্রশ্নমালা তৈরি করা। এই প্রশ্নমালার ভিত্তিতে সাধারণ সভার কাছে রিপাের্ট পাঠানাে অছিপরিষদের প্রধান কাজ।
প্রশ্ন ৩) সেক্রেটারি জেনারেল বা জাতিপুঞ্জের মহাসচিবের নিয়ােগ ও কার্যাবলি কী?
উত্তর : সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কর্মদপ্তর একজন প্রধান কর্মসচিব ও প্রয়ােজনীয় সংখ্যক কর্মসচিব নিয়ে গঠিত। নিরাপত্তাপরিষদের সুপারিশ অনুযায়ী সাধারণ সভা প্রধান কর্মসচিবকে নিয়ােগ করেন।
     প্রধান কর্মর্সচিব বা মহাসচিব হলেন কর্মদপ্তরের মুখ্য পরিচালক। তিনি তাঁর নিয়ােগের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাপরিষদের অনুমােদনপুষ্ট পাঁচটি স্থায়ী সদস্যসহ নয়টি সদস্য রাষ্ট্রের তরফ থেকে সমর্থিত হওয়া প্রয়ােজন। নিরাপত্তাপরিষদের সুপারিশে সাধারণ সভায় প্রেরিত হওয়ার পর সভায় উপস্থিত ও ভােটদানকারী সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রধান কর্মসচিব বা সেক্রেটারি জেনারেলের কার্যকাল ৫ বছর।
     মহাসচিবের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল–কর্মচারীদের নিয়ােগ করা, অপরাধী কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জাতিপুঞ্জের বিভিন্ন বিভাগের বৈঠকের ব্যবস্থা করা। সাধারণ সভা ও নিরাপত্তাপরিষদের অধিবেশনের কর্মসূচি নির্ধারণ করা, জাতিপুঞ্জের বাজেট প্রণয়ন করা, জাতিপুঞ্জের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা প্রভৃতি।
     তবে মহাসচিবের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল রাজনৈতিক কার্যাবলি। সনদের ৯৯ নং ধারায় এর উল্লেখ আছে। যদি কোনাে ঘটনা বা পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে, তাহলে মহাসচিব সে ব্যাপারে নিরাপত্তাপরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। কোনাে ঘটনা বিশ্বশান্তি বা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করেছে বা করতে পারে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার একমাত্র অধিকারী হলেন সহসচিব। এই বিষয়ে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না।
     বর্তমানে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মহাসচিবের ভমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে সােভিয়েত ইউনিয়ন এবং পূর্ব ইউরােপে সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতা মহাসচিবকে সম্পূর্ণ নীরব করে তুলেছে।
প্রশ্ন ৪) আন্তর্জাতিক জরুরি শিশুভাণ্ডার সম্পর্কে একটি টাকা লেখাে।
উত্তর : ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভা আন্তর্জাতিক জরুরি শিশুভাণ্ডার গড়ে তােলে। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে এই সংস্থার নাম পরিবর্তন করে ‘সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের শিশুভাণ্ডার’ করা হয়। এর সদর দপ্তর নিউইয়র্কে অবস্থিত। একটি পর্ষদ-এর কাজকর্ম পরিচালনা করেন। মুখ্য প্রশাসক মহাসচিব কর্তৃক নিযুক্ত হন।
     সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের শিশুভাণ্ডারকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সহযােগী রূপে চিহ্নিত করা হয়। এই সংস্থার ব্যয়ভার বহনের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থসংগ্রহ করা হয়। এই সংস্থার প্রধান দায়িত্ব হল শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নতি-বিধান, শিশু ও মহিলাদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ, শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ ও বণ্টন করা। হাসপাতাল ও প্রসুতিসদন নির্মাণ, মাতা ও শিশুদের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা। শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বিদ্যালয়ে খাদ্য প্রকল্প চালু করা। শিশু, মাতৃকল্যাণ শিক্ষা ও কর্মসংস্থান, খরা, বন্যা, ঝড়, ভূমিকম্প বিধ্বস্ত শিশুদের জন্য ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ ও বণ্টন করা ইত্যাদি।
     সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের শিশুভাণ্ডার তাঁর দায়িত্ব গুরুত্ব সহকারে পালন করেছে। কিন্তু শিশুদের শােষণ অব্যাহত থেকে গেছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক শােষণ এবং বৈষম্যের অবসান ছাড়া যে শিশুদের শােষণ এবং অপব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের একটি প্রতিবেদনে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
প্রশ্ন ৫) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
উত্তর : উদ্দেশ্য
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রধান লক্ষ্য হল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। এই উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উত্তেজনা কমানাে, অস্ত্রের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ, নিরস্ত্রীকরণ, শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরােধের মীমাংসা এবং শান্তি বিঘ্নকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়ােজন। অন্যদিকে এই সকল উদ্যোগের সাফল্যের জন্য প্রয়ােজন সমগ্র মানবজাতির সামাজিক,
অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের বিকাশ এবং অগ্রগতি। জাতিপুঞ্জের সনদের প্রস্তাবনায় এজন্যই সামাজিক অগ্রগতি এবং ব্যাপক স্বাধীনতার পরিবেশসহ এক উন্নত জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছােনাের সংকল্প ঘােষিত হয়েছে।
কার্যাবলি
সনদের ৬২ থেকে ৬৬ নং ধারায় পরিষদের নিম্নলিখিত কার্যাবলির উল্লেখ করা হয়েছে।
(ক) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মহাসচিব অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনকল্যাণ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে পরীক্ষা করার পর প্রতিবেদন তৈরি করে বিশেষজ্ঞ সংস্থার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া।
(খ) মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখানাে এবং এগুলি সংরক্ষণের জন্য প্রয়ােজনীয় সুপারিশ করা ও পরিকল্পনা গ্রহণের ব্যবস্থা করা।
(গ) নিজের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
(ঘ) পরিষদের অধীনস্থ বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলির কাজকর্মের তত্ত্ববধান ও সমন্বয়সাধন ঘটানাে।
(ঙ) বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলির কাছ থেকে প্রতিবেদনগুলি সংগ্রহ করার পর সেগুলি পরীক্ষা করা এবং সাধারণসভার কাছে বিশেষজ্ঞ সংস্থা কর্তৃক প্রেরিত প্রতিবেদনগুলি পাঠানাে।
(চ) নিরাপত্তাপরিষদকে প্রয়ােজনীয় সুপারিশ ও বিভিন্ন রকম তথ্য সরবরাহ করা হল মহাসচিবের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
প্রশ্ন ৬) আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের কার্যাবলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
উত্তর : সদনের রচয়িতাগণ আন্তর্জাতিক বিচারলয়ের বিচারপতিদের স্বাধীনতার উপর গুরুত্ব আরােপ করেছেন। সেজন্য বিচারকদের অপসারণের ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যােগ্য বিচারপতিরা যাতে চাকুরি গ্রহণ করেন তার জন্যে তাঁদের বেতন ও ভাতা করমুক্ত করা হয়েছে। বিচারকরা যাতে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে কোনাে পক্ষপাতমূলক আচরণ করতে না পারে তার জন্য সে বিষয়ে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
    এখানে উল্লেখ করা প্রয়ােজন, এই আদালতে কোনাে ব্যক্তি বিচারপ্রার্থী হতে পারে না। একমাত্র রাষ্ট্র বিচারপ্রার্থী হতে পারে। আদালতের কার্যাবলি নিম্নরূপ :
(ক) স্বেচ্ছামূলক এলাকা
    দুটি বিবাদমান রাষ্ট্র নিজেদের ইচ্ছায় যে-কোনাে মামলা এখানে আনলে স্বেচ্ছামূলক এলাকায় তার বিচার করা হয়। এখানে বিবাদমান রাষ্ট্রগুলির অনুমতি না পেলে আন্তর্জাতিক বিচারালয় বিচারকার্য সম্পন্ন করতে পারবে না।।
(খ) আবশ্যিক এলাকা
    সদস্য রাষ্ট্রগুলি বিভিন্ন বিরােধের নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এই বিচারালয়ের এক্তিয়ারকে আবশ্যিক বলে মনে করতে পারে। এর মধ্যে আছে কোনাে সন্ধি বা চুক্তির ব্যাখ্যা, আন্তর্জাতিক আইনের ব্যাখ্যা, আন্তর্জাতিক দায়দায়িত্ব লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক দায়িত্ব ভঙ্গের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ প্রভৃতি।
(গ) পরামর্শদান এলাকা
     জাতিপুঞ্জের বিভিন্ন বিভাগ এই আদালতের কাছে পরামর্শ দিতে পারে। তবে এই পরামর্শ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক নয়।
প্রশ্ন ৭) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সম্পর্কে একটি টীকা লেখাে।
উত্তর : রাষ্ট্রসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের দ্বারা স্থাপিত প্রথম বিশেষজ্ঞ সংস্থা হল বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে সানফ্রান্সিসকো সম্মেলনে এই সংস্থা স্থাপনে প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এই সংস্থার কাজকর্ম শুরু হয় ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ এপ্রিল। এই সময়ে ৬৪টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সংবিধানে স্বাক্ষর করে। বিশ্বের সকল নাগরিককে সুস্বাস্থ্যের অধিকারীরূপে গড়ে তােলা এর মূল লক্ষ্য। এর সদর দপ্তর জেনিভা শহরে অবস্থিত।
তবে ওয়াশিংটন, ম্যানিলা, আলেকজান্দ্রিয়া, কোপেনহেগেন ও দিল্লির ন্যায় শহরগুলিতে আঞ্চলিক কার্যালয় আছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার কার্যাবলির মধ্যে কয়েকটি বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। নিম্নে সেগুলি আলােচনা করা হল-
(ক) বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ দান। (খ) বিভিন্ন রাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যাদি সংগ্রহ করা, বিশ্লেষণ করা এবং প্রতিবেদন প্রস্তত করা। (গ) মহামারি প্রতিরােধ ও প্রতিরােধকল্পে উৎসাহ দান। (ঘ) স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ে প্রশিক্ষণের মান উন্নত করা। (ঙ) ঔষধ প্রস্তুত ও মান বজায় রাখা ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৮) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতার কারণ সংক্ষেপে বর্ণনা করাে।
উত্তর : বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না, কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে আরাে বড়াে রকমের কোনাে যুদ্ধ হয়নি। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে সুয়েজ খালকে কেন্দ্র করে বড়াে রকমের যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। জাতিপুঞ্জের হস্তক্ষেপে তার রদ করা গেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিকোলাস, পামার ও পারকিনস প্রভৃতি বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করেন,—জাতিপুঞ্জ মানবজাতির আশাকে পূর্ণ করতে পারেনি। এর ব্যর্থতার পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ বর্তমান। সেগুলি নিম্নরূপ :
প্রথমত, নিরাপত্তাপরিষদে পাঁচটি সদস্য রাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা প্রয়ােগের ফলে আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
দ্বিতীয়ত, জাতিপুঞ্জের নিজস্ব সামরিক বাহিনী না থাকার জন্য বিবদমান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দ্রুত কোনাে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
তৃতীয়ত, জাতিপুঞ্জের নিজস্ব কোনাে আয় নেই। সদস্য রাষ্ট্রগুলি অল্প পরিমাণ চাঁদা প্রদান করে এবং সেই চাঁদাও সঠিকভাবে আদায় সম্ভব হয়নি।
চতুর্থত, বৃহৎ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ঠান্ডা লড়াই জাতিপুঞ্জকে অকেজো করে দিয়েছিল। নিকোলাস তাই বলেছেন—“Their conflict tears the United Nations apart.”
পঞ্চমত, জাতিপুঞ্জ আন্তর্জাতিক বিরােধের মীমাংসা করতে পারছে না বলে NATO, SEATO প্রভূতি আঞ্চলিক জোট গড়ে উঠেছে। আঞ্চলিক জোটগুলি আন্তর্জাতিক উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। শক্তিধর রাষ্টের মদত থাকার জন্য আঞ্চলিক জোটের বিরুদ্ধে জাতিপুঞ্জ কোনাে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না।
ষষ্ঠত, জাতিপুঞ্জের উদ্যোগে শান্তি রক্ষার কাজ বৃহৎ ও শক্তিধর রাষ্ট্রের অসহযােগিতায় সফল হতে পারছে না।
প্রশ্ন ৯) নিরাপত্তাপরিষদের ভেটো ক্ষমতা সম্পর্কে টীকা লেখাে।
উত্তর : সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সর্বাপেক্ষা গুরত্বপূর্ণ বিভাগ হল নিরাপত্তাপরিষদের মােট সদস্য সংখ্যা ১৫ জন। এর মধ্যে ৫ জন সদস্য স্থায়ী। স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলি হল—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, গণপ্রজাতন্ত্রী চিন এবং রাশিয়া। পদ্ধতিমূলক বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ৫জন স্থায়ী সদস্যসহ মােট ৯জন সদস্যের সম্মতি আবশ্যক। নিরাপত্তাপরিষদের কোনাে স্থায়ী সদস্য প্রস্তাবে অসম্মতি জানালে প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়। স্থায়ী সদস্যদের প্রস্তাবের উপর এই অসম্মতি জ্ঞাপনকে ভেটো প্রয়ােগ বা ভেটো ক্ষমতা বলে। এক কথায় ভেটো হল এক বিশেষ অধিকার যা স্থায়ী পঞ্চপ্রধান ভােগ করে।
     ভেটো ক্ষমতার বিরুদ্ধাচরণ করে বলা হয় যে, স্থায়ী সদস্যদের হাতে ন্যস্ত এই ক্ষমতা রাষ্ট্রসংঘের দুর্বলতার মূল কারণ। এই ভেটো প্রয়ােগের ফলেই সামগ্রিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা সফল হয়নি। এই ক্ষমতার তাৎপর্য হল মাত্র একজন স্থায়ী সদস্যের অন্যায় অভিপ্রায় বা জেদের কাছে সকল সদস্য রাষ্ট্রের ইচ্ছার আত্মসমর্পণ। তবে গুড স্পীডের ভাষায়, ভেটো ব্যবস্থা নিরাপত্তাপরিষদের অচলাবস্থা ও ক্ষমতা হ্রাসের কারণ হলেও বিশ্বকে এখনও সংকটের মুখে ঠেলে দেয়নি।
প্রশ্ন ১০) আটলান্টিক চার্টার কী?
উত্তর : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির ফলে শক্তিকামী রাষ্ট্রগুলির নেতৃবৃন্দ এক নতুন আন্তর্জাতিক সংগঠনের পরিকল্পনা করেন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী চার্চিল যে যৌথ বিবৃতি পেশ করেন তা আটলান্টিক চার্টার বা আটলান্টিক সনদ নামে পরিচিত।
     আটলান্টিক চার্টারের শেষ পরিচ্ছদে সাধারণ নিরাপত্তার জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে তােলার উল্লেখ ছিল। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন ও রাশিয়া একটি ঘােষণা পত্রে স্বাক্ষর করে আটলান্টিক চার্টারে উল্লিখিত নীতি ও আদর্শকে স্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীকালে আরও ২২টি রাষ্ট্র এই সমস্ত আদর্শকে বহন করে। আটলান্টিক সনদের নীতিগুলি রাষ্ট্রসংঘের ঘােষণাপত্র (Declaration of United Nations) নামে পরিচিত হয়।
     এই ঘােষণাপত্রে বলা হয় যে, আটলান্টিক সনদে সংযােজিত সমস্ত উদ্দেশ্য ও নীতির প্রতি অধিকার প্রদর্শন, জীবন স্বাধীনতা, জাতীয় মুক্তি, ধর্মীয় স্বাধীনতা, মানব অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য শত্রুর পরাজয় প্রয়ােজন। জাতিপুঞ্জের ইতিহাসে আটলান্টিক চার্টার-এর ঘােষণা এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
প্রশ্ন ১১) শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরােধের মীমাংসা বলতে কী বােঝ?
উত্তর : রাষ্ট্রসংঘের সনদের ১নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য হল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা ও সেই উদ্দেশ্যে ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে সেইসব আন্তর্জাতিক বিবাদের শান্তিপূর্ণ মীমাংসা যা বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সনদের ২(৩) ধারা অনুযায়ী সকল সদস্য রাষ্ট্র তাদের সকল আন্তর্জাতিক
বিরােধের এমনভাবে মীমাংসার চেষ্টা করবে যাতে আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ক্ষুন্ন না হয়। সনদের ষষ্ঠ অধ্যায়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরােধ মীমাংসার জন্য বিশেষ উল্লেখ রয়েছে। সনদের ৩৩নং ধারা অনুযায়ী কোনাে বিবাদের বিবাদমান পক্ষগুলি, বিশেষত যে বিবাদ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা ভঙ্গ করতে পারে, সেইসব বিবাদের মীমাংসার জন্য আলাপ-আলােচনা, অনুসন্ধান, মধ্যস্থতা, আপস-মীমাংসা, সালিশি, বিচার বিভাগীয় নিষ্পত্তি, আঞ্চলিক ব্যবস্থা ও পছন্দমতাে অন্য কোনাে পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে। নিরাপত্তাপরিষদ এইসব পদ্ধতির মাধ্যমে বিবদমান পক্ষগুলিকে তাদের বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য সুপারিশ করতে পারে।
১২) জাতিপুঞ্জের প্রধান নীতিগুলি বর্ণনা করাে।
উত্তর : মানবজাতির ইতিহাসে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা এক যুগান্তকারী ঘটনা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ হত্যালীলার পটভূমিতে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে জন্ম নিয়েছিল জাতিসংঘ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে জাতিসংঘ ভেঙে পড়ে। এই যুদ্ধের ব্যাপকতা ও অগণিত মানুষের প্রাণনাশ ও সম্পত্তির বিনাশ বিশ্ববাসীকে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ব্যাকুল করে তুলেছিল। তারই ফলশ্রুতি হিসাবে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়।
     জাতিপুঞ্জের সনদে যে উদ্দেশ্যগুলির কথা বলা হয়েছে, সেগুলিকে রূপায়ণের জন্যে সাতটি নীতির কথা সনদের ২নং ধারায় বলা হয়েছে। সেগুলি নিম্নরূপ :
প্রথমত, সকল সদস্য রাষ্ট্র সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে সমান মর্যাদা পাবে।
দ্বিতীয়ত, সনদ প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রকে যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে, প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রকে সেগুলি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে।
তৃতীয়ত, প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্র আলাপ-আলােচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিরােধের মীমাংসা করবে।
চতুর্থত, সকল সদস্য রাষ্ট্র অপরের ভৌগােলিক অখণ্ডতা বা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বলপ্রয়ােগ করবে না।
পঞ্চমত, জাতিপুঞ্জ কোনাে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সকল সদস্য রাষ্ট্র তাকে সর্বতােভাবে সাহায্য করবে। যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জাতিপুঞ্জ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সদস্য রাষ্ট্র সেই রাষ্ট্রের সঙ্গে কোনাে সহযােগিতা বা মদত দিতে পারবে না।
ষষ্ঠত, বিশ্বশান্তির স্বার্থে যারা সদস্য নয়, এমন সব রাষ্ট্র যাতে সনদের নিয়ম মেনে চলে তার জন্য রাষ্ট্রসংঘ প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সপ্তমত, জাতিপুঞ্জ কোনাে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না।
     কিন্তু কোনাে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ঘটনা যদি আন্তর্জাতিক শান্তির পরিপন্থী হয়, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রসংঘ অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে।
প্রশ্ন ১৩) আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের ত্রুটিগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বিচার বিভাগের নাম হল আন্তর্জাতিক বিচারালয়। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে এটি গড়ে ওঠে। ১৫ জন বিচারপতি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচারালয় গড়ে ওঠে। সাধারণ সভা ও নিরাপত্তাপরিষদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভােটে বিচারপতিরা নির্বাচিত হন। সনদে বলা হয়েছে, -বিচারপতিরা উন্নত নৈতিক চরিত্রের মানুষ হবেন। বিচারপতিরা নিজ নিজ দেশের সর্বোচ্চ বিচারক পদে নিযুক্ত হবার যােগ্যতা অবশ্যই থাকতে হবে। বিচারপতিরা নয় বছরের জন্য নিযুক্ত হন। প্রতি তিন বছর অন্তর এক-তৃতীয়াংশ বিচারপতিকে অবসর নিতে হয়। সকল বিচারপতিরা ঐক্যমত হলেই কোনাে বিচারপতিকে পদচ্যুত করা যায়।
     বহু রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের গুরুত্বকে অস্বীকার করেছেন। কারণ-
প্রথমত, বিবদমান রাষ্ট্রের সম্মতি না পেলে আদালত তাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
দ্বিতীয়ত, কোনাে রাষ্ট্র যদি আদালতের সিদ্ধান্ত অমান্য করে, তাহলে কোনাে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না।
তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে বিচারপ্রার্থী হওয়া অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ বলে, ছােটো রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে বিচার চাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য।
চতুর্থত, সনদে বলা হয়েছে,আদালত নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বিচারকরা যে দেশের মানুষ সেই দেশের প্রতি বিচারকরা পক্ষপাতিত্ব দেখান।
পঞ্চমত, সনদের ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা আদালতের হাতে দেওয়া হয়নি। নিকোলাস যথার্থই বলেছেন,—”জাতিপুঞ্জ এই আদালতের উপর যথােচিত গুরুত্ব আরােপ করেনি।” তাই আদালতে মামলার সংখ্যা ও গুরুত্ব কমে গেছে। কোনাে কোনাে বছর একটি বা দুটির বেশি মামলা এখানে আসে না। আবার যে সমস্ত মামলা এখানে আসে সেগুলির তেমন গুরুত্ব নেই।
প্রশ্ন ১৪) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাফল্য সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
উত্তর : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ মারণলীলার পটভূমিতে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল,—বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।
     বহু রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জাতিপুঞ্জ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে। যেমন—
(ক) শান্তি প্রতিষ্ঠা : শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে সুয়েজখালকে কেন্দ্র করে বড়াে রকমের যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। জাতিপুঞ্জের প্রচেষ্টায় এই বিবাদ এড়ানাে সম্ভব হয়েছে।
     এ ছাড়া কোরিয়া, কঙ্গো, পাক-ভারত যুদ্ধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। শুধু তাই নয়, কোনাে ঘটনা ও পরিস্থিতি যখন বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত করেছে তখন জাতিপুঞ্জের মহাসচিব সেখানে শান্তিবাহিনী পাঠিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়েছেন। সন্ত্রাসবাদ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড়াে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাদেন ও তার আলকায়দা জঙ্গি সংগঠন এবং অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বিশ্বের শান্তির পরিবেশ বিঘ্নিত করছে। এ ব্যাপারে জাতিপুঞ্জ প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।
(খ) আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা : এ ব্যাপারে জাতিপুঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অছিপরিষদের মাধ্যমে ১১টি অছিভুক্ত দেশের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফলে প্রায় সব কটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। অধ্যাপক নিকোলাস বলেছেন, ক্ষমতা ও সুযােগের সদ্ব্যবহার করে অছিপরিষদ যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছে।
(গ) মানব অধিকার প্রতিষ্ঠা : মানব অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জ প্রশংসার দাবি রাখে। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে জাতিপুঞ্জ মানব অধিকার সংক্রান্ত কর্মসূচি ঘােষণা করে। এর ফলশ্রুতি হিসাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রে মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়েছে এবং মানবাধিকার কমিশনগুলির জনকল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
(ঘ) অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি : পৃথিবীতে যদি বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য থাকে তাহলে শান্তি আসতে পারে না। সেজন্য দারিদ্র্য থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করতে জাতিপুঞ্জ বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে অনুন্নত ও উন্নতিশীল দেশগুলি অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটাতে সাহায্য পাচ্ছে। U.N.D.P. নামে এক পরিকল্পনার মাধ্যমে অনুন্নত দেশগুলিকে কারিগরি ও কৌশলগত সাহায্য দিয়ে শিল্পোন্নয়নে সাহায্য করেছে। UNCTAD-এর মাধ্যমে বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়ে উন্নত ও অনুন্নত দেশগুলির মধ্যে সহযােগিতার সম্প্রসারণ ঘটানাে হয়েছে।
Comment

Class XI Political Science

Class XII Political Science

Class 12 Bangla Books Question& Answers