রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি
প্রশ্ন ১) হবস বর্ণিত “প্রাকৃতিক অবস্থা” বর্ণনা করাে।
উত্তর: ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের গৃহশিক্ষক টমাস হবস তাঁর ‘লেভিয়াথান’ (Leviathan) গ্রন্থে চুক্তিবাদের আলােচনা করে রাজনৈতিক চিন্তাজগতে আলােড়ন সৃষ্টি করেন। হবস হলেন চুক্তিবাদের আধুনিক ভাষ্যকার।
‘প্রাকৃতিক অবস্থা’-র বর্ণনা থেকেই হবস তার চুক্তিবাদী আলােচনা শুরু করেন। হবসের মতে প্রাকৃতিক অবস্থা ছিল প্রাক-সামাজিক। অর্থাৎ প্রাকৃতিক অবস্থায় কোনাে সমাজজীবন ছিল না। মানবচরিত্র সম্পর্কে তাঁর সম্পূর্ণ স্বকীয় ব্যাখ্যার মাধ্যমে হবস প্রাক-সামাজিক প্রাকৃতিক অবস্থার বর্ণনা করেছেন। হবসের মতে, মানুষ প্রকৃতিগতভাবে স্বার্থপর, কলহপ্রিয়, লােভী, ধূর্ত, শঠ, নির্দয় ও আক্রমণমুখী। এই কারণে প্রাকৃতিক অবস্থায় প্রত্যেকে ছিল প্রত্যেকের শত্রু। হবস এই অবস্থাকে ‘সকলের সঙ্গে সকলের যুদ্ধ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
প্রাকৃতিক অবস্থায় স্বাভাবিক আইন বলতে ‘জোর যার মুল্লুক তার’-কে বােঝাত। স্বার্থসাধনের জন্য অন্যকে হত্যা করতেও কেউ দ্বিধাবােধ করত না। একে অন্যকে শত্রু ভাবত। প্রত্যেকে প্রত্যেককে এড়িয়ে চলত। প্রাকৃতিক অবস্থায় মানুষের জীবন হয়ে উঠল নিঃসঙ্গ। ফলে প্রাকৃতিক অবস্থা থেকে মুক্তিলাভের জন্য মানুষ উদ্যোগী হয়ে চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে।
‘প্রাকৃতিক অবস্থা’-র বর্ণনা থেকেই হবস তার চুক্তিবাদী আলােচনা শুরু করেন। হবসের মতে প্রাকৃতিক অবস্থা ছিল প্রাক-সামাজিক। অর্থাৎ প্রাকৃতিক অবস্থায় কোনাে সমাজজীবন ছিল না। মানবচরিত্র সম্পর্কে তাঁর সম্পূর্ণ স্বকীয় ব্যাখ্যার মাধ্যমে হবস প্রাক-সামাজিক প্রাকৃতিক অবস্থার বর্ণনা করেছেন। হবসের মতে, মানুষ প্রকৃতিগতভাবে স্বার্থপর, কলহপ্রিয়, লােভী, ধূর্ত, শঠ, নির্দয় ও আক্রমণমুখী। এই কারণে প্রাকৃতিক অবস্থায় প্রত্যেকে ছিল প্রত্যেকের শত্রু। হবস এই অবস্থাকে ‘সকলের সঙ্গে সকলের যুদ্ধ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
প্রাকৃতিক অবস্থায় স্বাভাবিক আইন বলতে ‘জোর যার মুল্লুক তার’-কে বােঝাত। স্বার্থসাধনের জন্য অন্যকে হত্যা করতেও কেউ দ্বিধাবােধ করত না। একে অন্যকে শত্রু ভাবত। প্রত্যেকে প্রত্যেককে এড়িয়ে চলত। প্রাকৃতিক অবস্থায় মানুষের জীবন হয়ে উঠল নিঃসঙ্গ। ফলে প্রাকৃতিক অবস্থা থেকে মুক্তিলাভের জন্য মানুষ উদ্যোগী হয়ে চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন ২) অ্যারিস্টটল কেন মানুষকে রাজনৈতিক জীব হিসাবে চিহ্নিত করেন?
উত্তর: অ্যারিস্টটলের মতে, মানুষ প্রকৃতিগতভাবে সামাজিক জীব (“Man is by nature Social Animal”)। গ্রিক দর্শন অনুযায়ী অ্যারিস্টটল রাষ্ট্র ও সমাজকে অভিন্ন মনে করতেন। অর্থাৎ মানুষ একইসঙ্গে সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব। কারণ একমাত্র রাষ্ট্রের মধ্য দিয়েই মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব। তিনি রাষ্ট্রকে একটি স্বাভাবিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গণ্য করেছেন। রাজনৈতিক সমাজ বা রাষ্ট্র ছাড়া ব্যক্তির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। তিনি বলেন—“The State is prior to the individual,” অর্থাৎ রাষ্ট্র হল একটি সার্বিক সত্তা। ব্যক্তি তার অংশমাত্র; সমগ্র ছাড়া অংশের সৃষ্টি ও বিকাশ আজও সম্ভব নয়। তাই রাষ্ট্রকে তিনি অপরিহার্য মনে করেন।
প্রশ্ন ৩) রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করাে।
উত্তর: রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে গভীর সম্পর্ক আছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও বহু ক্ষেত্রে পার্থক্য বর্তমান। নিম্নে সেগুলি উল্লেখ করা হল-
প্রথমত, রাষ্ট্র প্রধানত চারটি উপাদান নিয়ে গঠিত। এগুলি হল—নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনসমষ্টি, সরকার ও সার্বভৌমিকতা। তাই সরকার রাষ্ট্রের একটি অংশমাত্র। অংশ কখনও সমগ্রের সমান হতে পারে না। প্রাণীর সারাদেহ আর মাথা এক জিনিস নয়। মাথা দেহের অংশমাত্র। তেমনি সরকার ও রাষ্ট্র এক জিনিস নয়।
দ্বিতীয়ত, রাষ্টের সদস্য সংখ্যা অনেক বেশি। নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের সব মানুষকে নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয়। কিন্তু সরকার গঠিত হয় দেশ শাসনের কাজে নিযুক্ত মাত্র কয়েকজনকে নিয়ে।
তৃতীয়ত, রাষ্ট্র একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সরকার অস্থায়ী। এক সরকারের পরিবর্তে অন্য সরকার আসে। কিন্তু রাষ্ট্র একইভাবে থেকে যায়।
চতুর্থত, ব্যক্তি সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করতে পারে। সরকারের নীতিকে সমালােচনা করতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তার কোনাে অভিযােগ থাকতে পারে না।
পঞ্চমত, রাষ্ট্র বলতে সাধারণত নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের কথা মনে পড়ে। যেমন, ভারত রাষ্ট্র বলতে ভারতের ভৌগােলিক সীমানার কথা মনে আসে। কিন্তু সরকার বলতে যারা শাসন করে তাদের বােঝায়।
ষষ্ঠত, সব রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য এক। প্রত্যেকের নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনসমষ্টি, সরকার ও সার্বভৌমিকতা অবশ্যই আছে। কিন্তু সব সরকার এক ধরনের নয়। যেমন, কোথাও রাজতন্ত্র, কোথাও গণতন্ত্র আছে; কোথাও এককেন্দ্রিক, আবার কোথাও যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা আছে।
সপ্তমত, রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। সরকার সেই ক্ষমতা প্রয়ােগ করে মাত্র। তাই সরকার সরে গেলে সে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়ােগের অধিকারী হারায়। অন্য সরকার এসে রাষ্ট্রের সেই ক্ষমতা প্রয়ােগ করে।।
অষ্টমত, রাষ্ট্রকে দেখা যায় না। তার সম্বন্ধে একটা ধারণা করা যায়। রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতার ক্ষেত্রে একথা বিশেষভাবে প্রযােজ্য। কিন্তু সরকার হল বাস্তব রূপ। দৈনন্দিন জীবনে আমরা এর অস্তিত্ব বুঝতে পারি।
প্রথমত, রাষ্ট্র প্রধানত চারটি উপাদান নিয়ে গঠিত। এগুলি হল—নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনসমষ্টি, সরকার ও সার্বভৌমিকতা। তাই সরকার রাষ্ট্রের একটি অংশমাত্র। অংশ কখনও সমগ্রের সমান হতে পারে না। প্রাণীর সারাদেহ আর মাথা এক জিনিস নয়। মাথা দেহের অংশমাত্র। তেমনি সরকার ও রাষ্ট্র এক জিনিস নয়।
দ্বিতীয়ত, রাষ্টের সদস্য সংখ্যা অনেক বেশি। নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের সব মানুষকে নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয়। কিন্তু সরকার গঠিত হয় দেশ শাসনের কাজে নিযুক্ত মাত্র কয়েকজনকে নিয়ে।
তৃতীয়ত, রাষ্ট্র একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সরকার অস্থায়ী। এক সরকারের পরিবর্তে অন্য সরকার আসে। কিন্তু রাষ্ট্র একইভাবে থেকে যায়।
চতুর্থত, ব্যক্তি সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করতে পারে। সরকারের নীতিকে সমালােচনা করতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তার কোনাে অভিযােগ থাকতে পারে না।
পঞ্চমত, রাষ্ট্র বলতে সাধারণত নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের কথা মনে পড়ে। যেমন, ভারত রাষ্ট্র বলতে ভারতের ভৌগােলিক সীমানার কথা মনে আসে। কিন্তু সরকার বলতে যারা শাসন করে তাদের বােঝায়।
ষষ্ঠত, সব রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য এক। প্রত্যেকের নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনসমষ্টি, সরকার ও সার্বভৌমিকতা অবশ্যই আছে। কিন্তু সব সরকার এক ধরনের নয়। যেমন, কোথাও রাজতন্ত্র, কোথাও গণতন্ত্র আছে; কোথাও এককেন্দ্রিক, আবার কোথাও যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা আছে।
সপ্তমত, রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। সরকার সেই ক্ষমতা প্রয়ােগ করে মাত্র। তাই সরকার সরে গেলে সে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়ােগের অধিকারী হারায়। অন্য সরকার এসে রাষ্ট্রের সেই ক্ষমতা প্রয়ােগ করে।।
অষ্টমত, রাষ্ট্রকে দেখা যায় না। তার সম্বন্ধে একটা ধারণা করা যায়। রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতার ক্ষেত্রে একথা বিশেষভাবে প্রযােজ্য। কিন্তু সরকার হল বাস্তব রূপ। দৈনন্দিন জীবনে আমরা এর অস্তিত্ব বুঝতে পারি।
প্রশ্ন ৪) রাষ্ট্রের উৎপত্তি বিষয়ে বিবর্তনবাদ বা ঐতিহাসিক মতবাদের উপাদান হিসাবে ধর্মের গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উত্তর: গােষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে রক্তের বন্ধন দীর্ঘস্থায়ী হল না। তার প্রভাব ধীরে ধীরে কমে গেল। এই অবস্থায় গােষ্ঠীজীবনের সংহতি বজায় রাখল ধর্ম। ধর্ম বলতে মানুষ প্রকৃতি পূজা এবং পূর্বপুরুষদের পূজা বুঝত। তারা প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে দেবতার কোপ বলে মনে করত। দুঃখদুর্দশাকে পূর্বপুরুষদের অভিশাপের ফল বলে গােষ্ঠীপ্রধানের মাধ্যমে দেবতা ও পূর্বপুরুষদের পূজা দিত। ফলে গােষ্ঠীপ্রধান নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই কর্তৃত্ব থেকে জন্ম নিল রাষ্ট্র। অধ্যাপক গেটেল বলেছেন, রাষ্ট্রনৈতিক বিবর্তনের প্রথম দিকে ও সবথেকে সংকটময় যুগে ধর্ম বর্বরােচিত অরাজকতা দমন করেছিল এবং শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের শিক্ষা দিয়েছিল। এই আনুগত্যের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছিল। শুধু তাই নয়, কিছু চতুর লােক সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযােগ নিয়ে নিজেরা অলৌকিক শক্তির অধিকারী বলে প্রচার করল। এদের বলা হত জাদুকর। এরা এই সুযােগে নিজেদের নেতা হিসাবে ঘােষণা করল। এদের কারচুপি ধরা পড়ায় এদের মধ্যে কেউ কেউ পরে পুরােহিত সেজে আনুগত্য লাভ করে রাজায় পরিণত হয়। বিখ্যাত নৃতাত্ত্বিক ফ্রেজার তাই বলেছেন—“জাদুকরেরা অবশেষে পুরােহিত রাজায় পরিণত হল।”
প্রশ্ন ৫) ঐশ্বরিক মতবাদকে কোন কোন দিক থেকে সমালােচনা করা যায়?
উত্তর: ঐশ্বরিক মতবাদ বিভিন্নভাবে সমালােচিত হয়েছে। যেমন—
• (ক) কাল্পনিক মতবাদ
বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা একমত যে, এই মতবাদ নিছক কাল্পনিক। ইতিহাসে এর সন্ধান পাওয়া যায় না। ঈশ্বর একের পর এক রাষ্ট্র তৈরি করে এক-একজনকে তার দায়িত্ব দিয়েছেন। এ ধারণা বিশ্বাসযােগ্য নয়।
• (খ) ধর্ম ও রাজনীতি এক নয়
ধর্মযাজকরাই বলেছেন, ধর্ম ও রাজনীতি সম্পূর্ণ পৃথক। জিশুখ্রিস্ট নিজেই বলেছেন—“সিজারের যা কিছু প্রাপ্য সিজারকে দাও। ঈশ্বরের যা কিছু প্রাপ্য, তা ঈশ্বরকে দাও।” বিখ্যাত ধর্মযাজক হকার বলেছেন—“ধর্মের ব্যাপারে ঈশ্বরের কথা স্বীকার করা যায়, কিন্তু লৌকিক ব্যাপারে নয়।” সুতরাং রাষ্ট্রের ব্যাপারে ঈশ্বরকে টেনে আনা ঠিক নয়।
• (গ) বিপজ্জনক মতবাদ
এই মতবাদ বিপজ্জনক। কারণ, অতীতে এই মতবাদের অজুহাতে রাজারা নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতাকে ঈশ্বরের নির্দেশ বলে প্রচার করেছিল। ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে মানুষের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারকে পদানত করা হয়েছিল।
• (ঘ) অযৌক্তিক মতবাদ
ঈশ্বর মানুষের মঙ্গল করে। তাই যে রাজা মানুষের কল্যাণ করে, তাকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে মনে করলেও যে অত্যাচারী রাজা তাকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে মনে করার কোনাে যুক্তি মহাভারতে বলা হয়েছে, কল্যাণকামী রাজাকে দেবতাজ্ঞানে পূজা করা হয়। কিন্তু যে রাজা প্রজা রক্ষা করতে পারে না, তাকে ক্ষিপ্ত কুকুরের মতাে বিনষ্ট করা উচিত।
• (ঙ) অসম্পূর্ণ মতবাদ
যেখানে রাজতন্ত্র আছে, সেখানে রাজাকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে কল্পনা করা গেলেও যেখানে রাজতন্ত্র নেই, রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের দ্বারা নির্বাচিত, সেই রাষ্ট্রে ঈশ্বরের প্রতিনিধি কে তার উত্তর এই মতবাদে নেই।
• (ক) কাল্পনিক মতবাদ
বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা একমত যে, এই মতবাদ নিছক কাল্পনিক। ইতিহাসে এর সন্ধান পাওয়া যায় না। ঈশ্বর একের পর এক রাষ্ট্র তৈরি করে এক-একজনকে তার দায়িত্ব দিয়েছেন। এ ধারণা বিশ্বাসযােগ্য নয়।
• (খ) ধর্ম ও রাজনীতি এক নয়
ধর্মযাজকরাই বলেছেন, ধর্ম ও রাজনীতি সম্পূর্ণ পৃথক। জিশুখ্রিস্ট নিজেই বলেছেন—“সিজারের যা কিছু প্রাপ্য সিজারকে দাও। ঈশ্বরের যা কিছু প্রাপ্য, তা ঈশ্বরকে দাও।” বিখ্যাত ধর্মযাজক হকার বলেছেন—“ধর্মের ব্যাপারে ঈশ্বরের কথা স্বীকার করা যায়, কিন্তু লৌকিক ব্যাপারে নয়।” সুতরাং রাষ্ট্রের ব্যাপারে ঈশ্বরকে টেনে আনা ঠিক নয়।
• (গ) বিপজ্জনক মতবাদ
এই মতবাদ বিপজ্জনক। কারণ, অতীতে এই মতবাদের অজুহাতে রাজারা নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতাকে ঈশ্বরের নির্দেশ বলে প্রচার করেছিল। ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে মানুষের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারকে পদানত করা হয়েছিল।
• (ঘ) অযৌক্তিক মতবাদ
ঈশ্বর মানুষের মঙ্গল করে। তাই যে রাজা মানুষের কল্যাণ করে, তাকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে মনে করলেও যে অত্যাচারী রাজা তাকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে মনে করার কোনাে যুক্তি মহাভারতে বলা হয়েছে, কল্যাণকামী রাজাকে দেবতাজ্ঞানে পূজা করা হয়। কিন্তু যে রাজা প্রজা রক্ষা করতে পারে না, তাকে ক্ষিপ্ত কুকুরের মতাে বিনষ্ট করা উচিত।
• (ঙ) অসম্পূর্ণ মতবাদ
যেখানে রাজতন্ত্র আছে, সেখানে রাজাকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে কল্পনা করা গেলেও যেখানে রাজতন্ত্র নেই, রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের দ্বারা নির্বাচিত, সেই রাষ্ট্রে ঈশ্বরের প্রতিনিধি কে তার উত্তর এই মতবাদে নেই।
প্রশ্ন ৬) রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করাে।
উত্তর : রাষ্ট্র ও সমাজের রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে সম্পর্ক বা পার্থক্য দেখাতে গেলে প্রথমে উভয়ের সংজ্ঞা সংক্ষেপে দেওয়া প্রয়ােজন। সমাজের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার বলেছেন- সাধারণভাবে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং সম্পর্ক বিষয়ে সচেতন মানবগােষ্ঠীকে সমাজ বলে। অন্যদিকে রাষ্ট্র বলতে বােঝায় বিশেষ উদ্দেশ্যসাধনের জন্যে প্রতিষ্ঠিত এক আবশ্যিক রাজনৈতিক সংগঠন।
প্রাচীনকালে গ্রিক দার্শনিকরা রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে কোনাে পার্থক্য আছে বলে মনে করতেন না। অ্যারিস্টটল বলেছেন—“মানুষের পূর্ণ বিকাশ রাষ্ট্রেই সম্ভব।” এখানে রাষ্ট্রের মধ্যে সমাজ কথাটি নিহিত আছে। কারণ তিনি বলেছেন–“মানুষ সমাজবদ্ধ জীব।” অর্থাৎ সমাজের মধ্যে মানুষের প্রকৃত বিকাশ ঘটে। তবে রাষ্ট্র ও সমাজ এক নয়। কারণ-
প্রথমত, সমাজের জন্ম অনেক আগে হয়েছে। আদিম মানুষ যখন গােষ্ঠীগত জীবন শুরু করে, তখন থেকে সমাজের উৎপত্তি। এর অনেক পরে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র এসেছে।
দ্বিতীয়ত, সমাজের কাজ হল মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিক, যেমন—নৈতিক দিক, ধর্মীয় দিক প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু রাষ্ট্র মানুষের রাজনৈতিক দিক নিয়ে আলােচনা করে।
তৃতীয়ত, রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হল সার্বভৌমিকতা। সার্বভৌমিকতা ছাড়া রাষ্ট্র বাঁচতে পারে না। কিন্তু সার্বভৌমিকতা ছাড়া সমাজ গড়ে উঠতে পারে।
চতুর্থত, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ছাড়া রাষ্ট হয় না। কিন্তু নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ছাড়া সমাজ গড়ে উঠতে পারে। তাই লিকক বলেছেন- “সমাজ শব্দটির সঙ্গে ভূখণ্ডের ধারণা যুক্ত নয়।”
পঞ্চমত, রাষ্ট্রের জন্য একটি সুগঠিত সরকার থাকা একান্ত প্রয়ােজন। কারণ, সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ইচ্ছা পূরণ হয়। কিন্তু সমাজের ক্ষেত্রে এমন কোনাে সরকারের প্রয়ােজন হয় না।
প্রাচীনকালে গ্রিক দার্শনিকরা রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে কোনাে পার্থক্য আছে বলে মনে করতেন না। অ্যারিস্টটল বলেছেন—“মানুষের পূর্ণ বিকাশ রাষ্ট্রেই সম্ভব।” এখানে রাষ্ট্রের মধ্যে সমাজ কথাটি নিহিত আছে। কারণ তিনি বলেছেন–“মানুষ সমাজবদ্ধ জীব।” অর্থাৎ সমাজের মধ্যে মানুষের প্রকৃত বিকাশ ঘটে। তবে রাষ্ট্র ও সমাজ এক নয়। কারণ-
প্রথমত, সমাজের জন্ম অনেক আগে হয়েছে। আদিম মানুষ যখন গােষ্ঠীগত জীবন শুরু করে, তখন থেকে সমাজের উৎপত্তি। এর অনেক পরে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র এসেছে।
দ্বিতীয়ত, সমাজের কাজ হল মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিক, যেমন—নৈতিক দিক, ধর্মীয় দিক প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু রাষ্ট্র মানুষের রাজনৈতিক দিক নিয়ে আলােচনা করে।
তৃতীয়ত, রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হল সার্বভৌমিকতা। সার্বভৌমিকতা ছাড়া রাষ্ট্র বাঁচতে পারে না। কিন্তু সার্বভৌমিকতা ছাড়া সমাজ গড়ে উঠতে পারে।
চতুর্থত, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ছাড়া রাষ্ট হয় না। কিন্তু নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ছাড়া সমাজ গড়ে উঠতে পারে। তাই লিকক বলেছেন- “সমাজ শব্দটির সঙ্গে ভূখণ্ডের ধারণা যুক্ত নয়।”
পঞ্চমত, রাষ্ট্রের জন্য একটি সুগঠিত সরকার থাকা একান্ত প্রয়ােজন। কারণ, সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ইচ্ছা পূরণ হয়। কিন্তু সমাজের ক্ষেত্রে এমন কোনাে সরকারের প্রয়ােজন হয় না।
প্রশ্ন ৭) রুশাের সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্ব আলােচনা করাে।
উত্তর : ফরাসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রুশাে ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত “সামাজিক চুক্তি” (Social Contract) গ্রন্থে এই মতবাদ প্রচার করেন। রুশাে বলেছেন—“মানুষ পুর্বে প্রাকৃতিক পরিবেশে বাস করত। সেই পরিবেশ ছিল স্বর্গরাজ্য। সেখানে মানুষে-মানুষে কোনাে হানাহানি ছিল। ছিল না কোনাে হিংসা। এক সময়ে মানুষের জীবনে দেখা দিল সমস্যা। প্রকৃতির রাজ্য ভরে উঠল হিংসা ও অরাজকতায়। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে মানুষ সামাজিক চুক্তি করল।”
রুশাের মতে চুক্তি হয়েছিল একটি। এই চুক্তির দ্বারা কোনাে ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল সমাজের হাতে। রুশাে তার নামকরণ করেছেন—“সাধারণের ইচ্ছা” বা ‘General Will’। ‘সাধারণের ইচ্ছা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন—সকলের ইচ্ছার যােগফল হল সাধারণ ইচ্ছা এবং অপ্রকৃত ইচ্ছা। সর্বমানুষের প্রকৃত ইচ্ছার যােগফল হল “সাধারণের ইচ্ছা”। প্রকৃত ইচ্ছা কোনাে ভুল করে না বলে সাধারণের ইচ্ছা” ভুল করে না। এই ইচ্ছা চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী। তাই এর নির্দেশ সবাই মানতে বাধ্য। রুশাের বিশেষ অবদান হল—তিনি গণ-সার্বভৌমিকতার তত্ত্ব প্রচার করেছেন। “Voice of the People is the voice of God”——অর্থাৎ জনগণের কণ্ঠস্বর হল ঈশ্বরের কণ্ঠস্বররুশাের এই বাণী রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি অমূল্য সম্পদ।
উত্তর : ফরাসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রুশাে ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত “সামাজিক চুক্তি” (Social Contract) গ্রন্থে এই মতবাদ প্রচার করেন। রুশাে বলেছেন—“মানুষ পুর্বে প্রাকৃতিক পরিবেশে বাস করত। সেই পরিবেশ ছিল স্বর্গরাজ্য। সেখানে মানুষে-মানুষে কোনাে হানাহানি ছিল। ছিল না কোনাে হিংসা। এক সময়ে মানুষের জীবনে দেখা দিল সমস্যা। প্রকৃতির রাজ্য ভরে উঠল হিংসা ও অরাজকতায়। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে মানুষ সামাজিক চুক্তি করল।”
রুশাের মতে চুক্তি হয়েছিল একটি। এই চুক্তির দ্বারা কোনাে ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল সমাজের হাতে। রুশাে তার নামকরণ করেছেন—“সাধারণের ইচ্ছা” বা ‘General Will’। ‘সাধারণের ইচ্ছা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন—সকলের ইচ্ছার যােগফল হল সাধারণ ইচ্ছা এবং অপ্রকৃত ইচ্ছা। সর্বমানুষের প্রকৃত ইচ্ছার যােগফল হল “সাধারণের ইচ্ছা”। প্রকৃত ইচ্ছা কোনাে ভুল করে না বলে সাধারণের ইচ্ছা” ভুল করে না। এই ইচ্ছা চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী। তাই এর নির্দেশ সবাই মানতে বাধ্য। রুশাের বিশেষ অবদান হল—তিনি গণ-সার্বভৌমিকতার তত্ত্ব প্রচার করেছেন। “Voice of the People is the voice of God”——অর্থাৎ জনগণের কণ্ঠস্বর হল ঈশ্বরের কণ্ঠস্বররুশাের এই বাণী রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি অমূল্য সম্পদ।
প্রশ্ন ৮) রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে বলপ্রয়ােগ মতবাদের মূলকথা বর্ণনা করাে।
উত্তর : বলপ্রয়ােগ মতবাদের প্রবক্তাগণ বলেন, মানুষ কলহপ্রিয় ও ক্ষমতালােভী। সৃষ্টির আদিম কাল থেকে দেখা যাচ্ছে মানুষে-মানুষে বিরােধ। শক্তিশালী ব্যক্তি দুর্বল ব্যক্তির উপর বলপ্রয়ােগের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করে গােষ্ঠী তৈরি করছে। পরে শক্তিশালী গােষ্ঠী গােষ্ঠীপতির নেতৃত্বে যুদ্ধ করে দুর্বল গােষ্ঠীকে পরাজিত করেছে এবং তাদের উপর প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করে উপজাতিতে পরিণত হয়েছে। তারপর বিভিন্ন উপজাতির মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দিলে সবথেকে শক্তিশালী উপজাতি বলপ্রয়ােগের মাধ্যমে নিজের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তারা রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। সুতরাং এই মতবাদের মূলকথা হল, একমাত্র বলপ্রয়ােগের মাধ্যমে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে।
বলপ্রয়ােগ মতবাদের সমর্থকগণ আরও বলেন যে, শুধু রাষ্ট্রের উৎপত্তিতে বলপ্রয়ােগ ঘটেনি, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার পরও তার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বলপ্রয়ােগ প্রয়ােজন। অর্থাৎ এই মতবাদ শুধুমাত্র রাষ্ট্রের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করে না, রাষ্ট্রের প্রকৃতিও ব্যাখ্যা করে।
উত্তর : বলপ্রয়ােগ মতবাদের প্রবক্তাগণ বলেন, মানুষ কলহপ্রিয় ও ক্ষমতালােভী। সৃষ্টির আদিম কাল থেকে দেখা যাচ্ছে মানুষে-মানুষে বিরােধ। শক্তিশালী ব্যক্তি দুর্বল ব্যক্তির উপর বলপ্রয়ােগের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করে গােষ্ঠী তৈরি করছে। পরে শক্তিশালী গােষ্ঠী গােষ্ঠীপতির নেতৃত্বে যুদ্ধ করে দুর্বল গােষ্ঠীকে পরাজিত করেছে এবং তাদের উপর প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করে উপজাতিতে পরিণত হয়েছে। তারপর বিভিন্ন উপজাতির মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দিলে সবথেকে শক্তিশালী উপজাতি বলপ্রয়ােগের মাধ্যমে নিজের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তারা রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। সুতরাং এই মতবাদের মূলকথা হল, একমাত্র বলপ্রয়ােগের মাধ্যমে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে।
বলপ্রয়ােগ মতবাদের সমর্থকগণ আরও বলেন যে, শুধু রাষ্ট্রের উৎপত্তিতে বলপ্রয়ােগ ঘটেনি, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার পরও তার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বলপ্রয়ােগ প্রয়ােজন। অর্থাৎ এই মতবাদ শুধুমাত্র রাষ্ট্রের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করে না, রাষ্ট্রের প্রকৃতিও ব্যাখ্যা করে।
প্রশ্ন ৯) রাষ্ট্র ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বা সংঘের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
উত্তর : রাষ্ট্র ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বর্তমান। কিন্তু তা সত্ত্বেও এদের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য দেখা যায়—
প্রথমত, রাষ্ট্র নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ, কিন্তু অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যেমন, রামকৃয় মিশন, রেডক্রস সােসাইটি প্রভৃতি সংঘের কার্যকলাপ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে।
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তাই সে নাগরিকদের যে-কোনাে শাস্তি দিতে পারে। কিন্তু সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সার্বভৌম ক্ষমতা নেই। সেই কারণে সে কাউকে কঠোর শাস্তি বা মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে না।
তৃতীয়ত, রাষ্ট্রের সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু সামাজিক সংঘের সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। নিজের ইচ্ছার উপর তা নির্ভর করে।
চতুর্থত, একজন ব্যক্তি কেবলমাত্র একটি রাষ্ট্রের সদস্য হতে পারে। কিন্তু কোনাে ব্যক্তি একসঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য হতে পারে। যেমন, কেউ একইসঙ্গে ভারত ও চিনের নাগরিক হতে পারে না। কিন্তু কেউ একইসঙ্গে ফুটবল ক্লাবের এবং কোনাে পূজা কমিটির সদস্য হতে পারে।
পঞ্চমত, স্থায়িত্বের দিক থেকে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। রাষ্ট্র সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয়। কিন্তু সামাজিক সংগঠনগুলি দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে। রাষ্ট্রের মধ্যে অনেক সংঘ গড়ে ওঠে এবং অনেকের পতনও ঘটে। কিন্তু রাষ্ট্র স্থায়ী প্রতিষ্ঠান হিসাবে টিকে থাকে।
ষষ্ঠত, সামাজিক সংঘ সাধারণত একটি উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়। যেমন, মােহনবাগান ক্লাব খেলাধুলার উদ্দেশ্য নিয়ে গড়ে উঠেছে। কিন্তু রাষ্ট্র নানারকম উদ্দেশ্য সাধন করে।
সপ্তমত, রাষ্ট্র যে-কোনাে সংঘ তৈরি করতে পারে। কিন্তু কোনাে সামাজিক প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্র তৈরি করতে পারে না।
অষ্টমত, গঠনের দিক থেকে রাষ্ট্র অনেক বড়াে হতে পারে। যেমন, চিনের লােকসংখ্যা ১৪৩ কোটি। কিন্তু কোনাে একটি সামাজিক সংঘের এত সদস্য নেই।
নবমত, রাষ্ট্র সামাজিক সংগঠনগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। প্রয়ােজন দেখা দিলে সংগঠনকে ভেঙে দিতে পারে। কিন্তু কোনাে সংগঠন রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ বা ভেঙে দিতে পারে না।
উত্তর : রাষ্ট্র ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বর্তমান। কিন্তু তা সত্ত্বেও এদের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য দেখা যায়—
প্রথমত, রাষ্ট্র নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ, কিন্তু অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যেমন, রামকৃয় মিশন, রেডক্রস সােসাইটি প্রভৃতি সংঘের কার্যকলাপ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে।
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তাই সে নাগরিকদের যে-কোনাে শাস্তি দিতে পারে। কিন্তু সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সার্বভৌম ক্ষমতা নেই। সেই কারণে সে কাউকে কঠোর শাস্তি বা মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে না।
তৃতীয়ত, রাষ্ট্রের সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু সামাজিক সংঘের সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। নিজের ইচ্ছার উপর তা নির্ভর করে।
চতুর্থত, একজন ব্যক্তি কেবলমাত্র একটি রাষ্ট্রের সদস্য হতে পারে। কিন্তু কোনাে ব্যক্তি একসঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য হতে পারে। যেমন, কেউ একইসঙ্গে ভারত ও চিনের নাগরিক হতে পারে না। কিন্তু কেউ একইসঙ্গে ফুটবল ক্লাবের এবং কোনাে পূজা কমিটির সদস্য হতে পারে।
পঞ্চমত, স্থায়িত্বের দিক থেকে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। রাষ্ট্র সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয়। কিন্তু সামাজিক সংগঠনগুলি দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে। রাষ্ট্রের মধ্যে অনেক সংঘ গড়ে ওঠে এবং অনেকের পতনও ঘটে। কিন্তু রাষ্ট্র স্থায়ী প্রতিষ্ঠান হিসাবে টিকে থাকে।
ষষ্ঠত, সামাজিক সংঘ সাধারণত একটি উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়। যেমন, মােহনবাগান ক্লাব খেলাধুলার উদ্দেশ্য নিয়ে গড়ে উঠেছে। কিন্তু রাষ্ট্র নানারকম উদ্দেশ্য সাধন করে।
সপ্তমত, রাষ্ট্র যে-কোনাে সংঘ তৈরি করতে পারে। কিন্তু কোনাে সামাজিক প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্র তৈরি করতে পারে না।
অষ্টমত, গঠনের দিক থেকে রাষ্ট্র অনেক বড়াে হতে পারে। যেমন, চিনের লােকসংখ্যা ১৪৩ কোটি। কিন্তু কোনাে একটি সামাজিক সংঘের এত সদস্য নেই।
নবমত, রাষ্ট্র সামাজিক সংগঠনগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। প্রয়ােজন দেখা দিলে সংগঠনকে ভেঙে দিতে পারে। কিন্তু কোনাে সংগঠন রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ বা ভেঙে দিতে পারে না।
প্রশ্ন ১০ জাতিপুঞ্জও কি একটি রাষ্ট্র?
উত্তর : জাতিপুঞ্জ রাষ্ট্র নয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন রাষ্ট্রের সহযােগিতায় এটি গড়ে উঠেছে। অনেকে একে Super State বা মহান রাষ্ট্ররূপে বর্ণনা করেছেন। কারণ—
প্রথমত, রাষ্ট্রের যেমন একটি সংবিধান থাকে, জাতিপুঞ্জের তেমনি একটি সংবিধান আছে যাকে বলা হয় সনদ।
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রের একটি সরকার থাকে এবং সরকারের তিনটি বিভাগ থাকে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। জাতিপুঞ্জের তেমনি সরকার আছে। এর শাসন বিভাগ হল নিরাপত্তা পরিষদ, আইন বিভাগ হল সাধারণ সভা এবং বিচার বিভাগ হল আন্তর্জাতিক আদালত।
তৃতীয়ত, রাষ্ট্র যেমন অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করতে পারে, তেমনি জাতিপুঞ্জও অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করতে পারে।
উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও জাতিপুঞ্জকে রাষ্ট্র বলা যায় না। কারণ-
প্রথমত, জাতিপুঞ্জের নিজস্ব কোনাে ভূখণ্ড নেই। নির্দিষ্ট কোনাে নিজস্ব জনসমষ্টি নেই।
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রের সদস্য হওয়া নাগরিকদের পক্ষে বাধ্যতামূলক। কিন্তু জাতিপুঞ্জের সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। সদস্য রাষ্ট্রগুলি স্বেচ্ছায় এতে যােগ দিয়েছে, ইচ্ছা করলে যে-কোনাে সময় থেকেই এরা সদস্যপদ ত্যাগ করতে পারে। কেউ সদস্য নাও হতে পারে।
তৃতীয়ত, জাতিপুঞ্জের সার্বভৌম ক্ষমতা নেই। রাষ্ট্র এই ক্ষমতা ভােগ করে বলে তার আইন নাগরিকরা মানতে বাধ্য, না মানলে রাষ্ট্র শাস্তি দেবে। কিন্তু জাতিপুঞ্জের কোনাে নির্দেশ মান্য করা রাষ্ট্রের পক্ষে বাধ্যতামূলক নয়। তাই জাতিপুঞ্জ সার্বভৌম ক্ষমতা দাবি করতে পারে না।
চতুর্থত, রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতাকে ভাগ করা যায় না। তাই রাষ্ট্রের সদস্য নাগরিকদের সার্বভৌম ক্ষমতা নেই। কিন্তু জাতিপুঞ্জে সদস্য রাষ্ট্রদের সার্বভৌম ক্ষমতা আছে।
সুতরাং জাতিপুঞ্জকে রাষ্ট্র বলা চলে না। এটি হল কতকগুলি সার্বভৌম রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি
আন্তর্জাতিক সংস্থা।
প্রথমত, রাষ্ট্রের যেমন একটি সংবিধান থাকে, জাতিপুঞ্জের তেমনি একটি সংবিধান আছে যাকে বলা হয় সনদ।
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রের একটি সরকার থাকে এবং সরকারের তিনটি বিভাগ থাকে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। জাতিপুঞ্জের তেমনি সরকার আছে। এর শাসন বিভাগ হল নিরাপত্তা পরিষদ, আইন বিভাগ হল সাধারণ সভা এবং বিচার বিভাগ হল আন্তর্জাতিক আদালত।
তৃতীয়ত, রাষ্ট্র যেমন অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করতে পারে, তেমনি জাতিপুঞ্জও অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করতে পারে।
উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও জাতিপুঞ্জকে রাষ্ট্র বলা যায় না। কারণ-
প্রথমত, জাতিপুঞ্জের নিজস্ব কোনাে ভূখণ্ড নেই। নির্দিষ্ট কোনাে নিজস্ব জনসমষ্টি নেই।
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রের সদস্য হওয়া নাগরিকদের পক্ষে বাধ্যতামূলক। কিন্তু জাতিপুঞ্জের সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। সদস্য রাষ্ট্রগুলি স্বেচ্ছায় এতে যােগ দিয়েছে, ইচ্ছা করলে যে-কোনাে সময় থেকেই এরা সদস্যপদ ত্যাগ করতে পারে। কেউ সদস্য নাও হতে পারে।
তৃতীয়ত, জাতিপুঞ্জের সার্বভৌম ক্ষমতা নেই। রাষ্ট্র এই ক্ষমতা ভােগ করে বলে তার আইন নাগরিকরা মানতে বাধ্য, না মানলে রাষ্ট্র শাস্তি দেবে। কিন্তু জাতিপুঞ্জের কোনাে নির্দেশ মান্য করা রাষ্ট্রের পক্ষে বাধ্যতামূলক নয়। তাই জাতিপুঞ্জ সার্বভৌম ক্ষমতা দাবি করতে পারে না।
চতুর্থত, রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতাকে ভাগ করা যায় না। তাই রাষ্ট্রের সদস্য নাগরিকদের সার্বভৌম ক্ষমতা নেই। কিন্তু জাতিপুঞ্জে সদস্য রাষ্ট্রদের সার্বভৌম ক্ষমতা আছে।
সুতরাং জাতিপুঞ্জকে রাষ্ট্র বলা চলে না। এটি হল কতকগুলি সার্বভৌম রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি
আন্তর্জাতিক সংস্থা।
প্রশ্ন ১১) রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হিসাবে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের গুরুত্ব বর্ণনা করাে।
উত্তর : নির্দিষ্ট ভূখণ্ড রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। শুন্যে রাষ্ট্র হয় না। কোনাে রাষ্ট্রের ভূখণ্ড বলতে শুধুমাত্র মাটির উপরিভাগ বােঝায় না। তার মধ্যে নদীনালা, পাহাড়-পর্বত এমনকি মাটির নীচের সম্পদ ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। ভূখণ্ডের উপরের আকাশ রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে পড়ে। তাই কোনাে দেশের বিমান অন্য দেশের আকাশপথ ব্যবহার করলে তার অনুমতি নিতে হয়। উপকূল সংলগ্ন সমুদ্রের কিছু অংশও ভূখণ্ডের মধ্যে পড়ে। এতদিন নিয়ম ছিল উপকুলের নিম্নতম জলরেখা থেকে সমুদ্রের তিন মাইল পর্যন্ত ওই ভূখণ্ডের মধ্যে পড়ে। ওই সীমানা এখন বারাে মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। তবে ভূখণ্ডের নিয়মের কিছুটা ব্যতিক্রম আছে। আন্তর্জাতিক নিয়মের ফলে বিদেশি রাষ্ট্রের দূতাবাস, বিদেশের পতাকাধারী জাহাজ বা বিমান তাদের রাষ্ট্রের ভূখণ্ড বলে গণ্য করা হবে।
ভূখণ্ডের আয়তন কত হবে তা নিয়ে মতপার্থক্য আছে। কেউ কেউ বলেছেন, ক্ষুদ্র রাষ্ট ভালাে, শাসনকার্যে সুবিধা হয়। সরকারের সঙ্গে জনগণের যােগাযােগ সহজ হয়। কিন্তু ট্রিটস্কে প্রভৃতি দার্শনিকরা বলেছেন,—“ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হওয়া পাপ”। কারণ, তারা অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে দুর্বল হয়। কিন্তু একথা ঠিক নয়। জাপান ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হলেও যথেষ্ট শক্তিশালী।
রাষ্ট্র ছােটো হবে, না বড়াে হবে রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য আলােচনার ক্ষেত্রে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসল কথা হল রাষ্ট্র হতে গেলে একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড থাকা চাই।
উত্তর : নির্দিষ্ট ভূখণ্ড রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। শুন্যে রাষ্ট্র হয় না। কোনাে রাষ্ট্রের ভূখণ্ড বলতে শুধুমাত্র মাটির উপরিভাগ বােঝায় না। তার মধ্যে নদীনালা, পাহাড়-পর্বত এমনকি মাটির নীচের সম্পদ ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। ভূখণ্ডের উপরের আকাশ রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে পড়ে। তাই কোনাে দেশের বিমান অন্য দেশের আকাশপথ ব্যবহার করলে তার অনুমতি নিতে হয়। উপকূল সংলগ্ন সমুদ্রের কিছু অংশও ভূখণ্ডের মধ্যে পড়ে। এতদিন নিয়ম ছিল উপকুলের নিম্নতম জলরেখা থেকে সমুদ্রের তিন মাইল পর্যন্ত ওই ভূখণ্ডের মধ্যে পড়ে। ওই সীমানা এখন বারাে মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। তবে ভূখণ্ডের নিয়মের কিছুটা ব্যতিক্রম আছে। আন্তর্জাতিক নিয়মের ফলে বিদেশি রাষ্ট্রের দূতাবাস, বিদেশের পতাকাধারী জাহাজ বা বিমান তাদের রাষ্ট্রের ভূখণ্ড বলে গণ্য করা হবে।
ভূখণ্ডের আয়তন কত হবে তা নিয়ে মতপার্থক্য আছে। কেউ কেউ বলেছেন, ক্ষুদ্র রাষ্ট ভালাে, শাসনকার্যে সুবিধা হয়। সরকারের সঙ্গে জনগণের যােগাযােগ সহজ হয়। কিন্তু ট্রিটস্কে প্রভৃতি দার্শনিকরা বলেছেন,—“ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হওয়া পাপ”। কারণ, তারা অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে দুর্বল হয়। কিন্তু একথা ঠিক নয়। জাপান ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হলেও যথেষ্ট শক্তিশালী।
রাষ্ট্র ছােটো হবে, না বড়াে হবে রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য আলােচনার ক্ষেত্রে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসল কথা হল রাষ্ট্র হতে গেলে একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড থাকা চাই।
প্রশ্ন ১২) রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হিসাবে সার্বভৌমিকতার গুরুত্ব বর্ণনা করাে।
উত্তর : রাষ্ট্রের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল সার্বভৌমিকতা। সার্বভৌমিকতা বলতে বােঝায় চূড়ান্ত ক্ষমতা। রাষ্ট্র এই ক্ষমতা ভােগ করে। এই ক্ষমতার বলে রাষ্ট্র তার এলাকার সব নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বার্জেস বলেছেন—“ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর আরােপিত মৌলিক, চরম ও অসীম ক্ষমতার নাম হল সার্বভৌমিকতা।” অন্য কোনাে প্রতিষ্ঠানের এই ক্ষমতা থাকে না। তাই অধ্যাপক ল্যাস্কি বলেছেন—“এই সার্বভৌমিকতাই রাষ্ট্রকে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে পৃথক করে।”
সার্বভৌমিকতার দুটি দিক আছে, অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমিকতা ও বাহ্যিক সার্বভৌমিকতা। অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমিকতা বলতে বােঝায় রাষ্ট্র বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর বাহ্যিক সার্বভৌমিকতা বলতে বােঝায়—এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তােলার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন মতামত দিতে সক্ষম।
সমালােচকরা বলেছেন, রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন নয়। কারণ রাষ্ট্র প্রথা, সামাজিক রীতিনীতি ও জনমতকে উপেক্ষা করতে পারে না। বাহ্যিক ক্ষেত্রেও রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন ও বিশ্বজনমতকে উপেক্ষা করতে পারে না।
সমালােচিত হলেও একথা মানতেই হবে যে, সার্বভৌমিকতা ছাড়া কোনাে রাষ্ট্র কল্পনা করা যায় না। এই ক্ষমতার জোরে সে তার মধ্যেকার সব নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করে। সার্বভৌমিকতা হল রাষ্ট্রের প্রাণ। প্রাণ ছাড়া জীব দেহের সচল অস্তিত্ব থাকে না। তেমনি সার্বভৌমিকতা ছাড়া রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়।
উত্তর : রাষ্ট্রের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল সার্বভৌমিকতা। সার্বভৌমিকতা বলতে বােঝায় চূড়ান্ত ক্ষমতা। রাষ্ট্র এই ক্ষমতা ভােগ করে। এই ক্ষমতার বলে রাষ্ট্র তার এলাকার সব নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বার্জেস বলেছেন—“ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর আরােপিত মৌলিক, চরম ও অসীম ক্ষমতার নাম হল সার্বভৌমিকতা।” অন্য কোনাে প্রতিষ্ঠানের এই ক্ষমতা থাকে না। তাই অধ্যাপক ল্যাস্কি বলেছেন—“এই সার্বভৌমিকতাই রাষ্ট্রকে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে পৃথক করে।”
সার্বভৌমিকতার দুটি দিক আছে, অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমিকতা ও বাহ্যিক সার্বভৌমিকতা। অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমিকতা বলতে বােঝায় রাষ্ট্র বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর বাহ্যিক সার্বভৌমিকতা বলতে বােঝায়—এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তােলার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন মতামত দিতে সক্ষম।
সমালােচকরা বলেছেন, রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন নয়। কারণ রাষ্ট্র প্রথা, সামাজিক রীতিনীতি ও জনমতকে উপেক্ষা করতে পারে না। বাহ্যিক ক্ষেত্রেও রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন ও বিশ্বজনমতকে উপেক্ষা করতে পারে না।
সমালােচিত হলেও একথা মানতেই হবে যে, সার্বভৌমিকতা ছাড়া কোনাে রাষ্ট্র কল্পনা করা যায় না। এই ক্ষমতার জোরে সে তার মধ্যেকার সব নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করে। সার্বভৌমিকতা হল রাষ্ট্রের প্রাণ। প্রাণ ছাড়া জীব দেহের সচল অস্তিত্ব থাকে না। তেমনি সার্বভৌমিকতা ছাড়া রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন ১৩) লক কোন অর্থে উদারনীতিবাদের জনক?
উত্তর : লকের রাজনৈতিক দর্শন অনুযায়ী রাষ্ট্রব্যবস্থা জনগণের সম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত। রাষ্ট্রের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি প্রাক্-রাষ্ট্রীয় জীবনকে মানুষের সরল ও স্বাভাবিক জীবন হিসেবে গণ্য করেন। প্রাকৃতিক জীবনে মানুষের সম্পত্তি, জীবন ও স্বাধীনতার অধিকার ছিল। কিন্তু এই প্রাকৃতিক অধিকার রক্ষার জন্য মানুষ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ সৃষ্টি করে। রাষ্ট্রের হাতে আংশিক
দায়িত্ব অর্পণ করলেও সর্বোচ্চ ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত। লকের রাষ্ট্রদর্শনে রাজনৈতিক ক্ষমতা সর্বোচ্চ ব্যক্তির পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট সংস্থাকে অর্পণ করা হয়। এই সংস্থা বা রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ মানুষের প্রাকৃতিক অধিকার সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে জনগণ তার বিরােধিতা করতে পারে। লকের মতে, জনগণের স্বাধীনতাই হল রাষ্ট্রীয় আনুগত্যের প্রধান শর্ত। উদারনৈতিক দর্শনের মূল আদর্শ হল ব্যক্তিস্বাধীনতা। ব্রিটেনে পুঁজিবাদের বিকাশের পর্যায়ে ব্যক্তিস্বাধীনতার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরােপ করার জন্য বলা হয়—“লক হলেন উদারনীতিবাদের জনক” (“Lock was the Forerunner of Liberal Political Philosophy”)। লকের উদারনীতিবাদ সমালােচনামুক্ত নয়। সমালােচকরা বলেন, লকের উদারনৈতিক দর্শন হল তৎকালীন পুঁজিপতি শ্রেণির অর্থনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষার হাতিয়ার।
উত্তর : লকের রাজনৈতিক দর্শন অনুযায়ী রাষ্ট্রব্যবস্থা জনগণের সম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত। রাষ্ট্রের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি প্রাক্-রাষ্ট্রীয় জীবনকে মানুষের সরল ও স্বাভাবিক জীবন হিসেবে গণ্য করেন। প্রাকৃতিক জীবনে মানুষের সম্পত্তি, জীবন ও স্বাধীনতার অধিকার ছিল। কিন্তু এই প্রাকৃতিক অধিকার রক্ষার জন্য মানুষ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ সৃষ্টি করে। রাষ্ট্রের হাতে আংশিক
দায়িত্ব অর্পণ করলেও সর্বোচ্চ ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত। লকের রাষ্ট্রদর্শনে রাজনৈতিক ক্ষমতা সর্বোচ্চ ব্যক্তির পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট সংস্থাকে অর্পণ করা হয়। এই সংস্থা বা রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ মানুষের প্রাকৃতিক অধিকার সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে জনগণ তার বিরােধিতা করতে পারে। লকের মতে, জনগণের স্বাধীনতাই হল রাষ্ট্রীয় আনুগত্যের প্রধান শর্ত। উদারনৈতিক দর্শনের মূল আদর্শ হল ব্যক্তিস্বাধীনতা। ব্রিটেনে পুঁজিবাদের বিকাশের পর্যায়ে ব্যক্তিস্বাধীনতার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরােপ করার জন্য বলা হয়—“লক হলেন উদারনীতিবাদের জনক” (“Lock was the Forerunner of Liberal Political Philosophy”)। লকের উদারনীতিবাদ সমালােচনামুক্ত নয়। সমালােচকরা বলেন, লকের উদারনৈতিক দর্শন হল তৎকালীন পুঁজিপতি শ্রেণির অর্থনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষার হাতিয়ার।
প্রশ্ন ১৪) রাষ্ট্রের অবলুপ্তি সম্পর্কে মার্কসীয় ধারণা লেখাে।
উত্তর : মার্কসীয় রাষ্ট্রতত্ত্বের শেষ সিদ্ধান্ত হল রাষ্ট্রের অবলুপ্তি। কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো (Communist Manifesto) গ্রন্থে মার্কস ও এঙ্গেলস ঘােষণা করেন যে, সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর উন্নততর সমাজ গঠিত হবে। পুঁজির স্বাধীন সত্তা, মজুরি ও শ্রমের পার্থক্য বিলুপ্ত হবে। শ্রেণি ও শ্রেণিদ্বন্দ্বের অবসান ঘটবে। এন্টিভুরিং রচনায় এঙ্গেলস ঘােষণা করেন যে,
সর্বহারা শ্রেণির নেতৃত্বে শ্রেণিবিভক্ত সমাজ বিলুপ্ত হবে। বিশেষ শ্রেণির আধিপত্য থাকবে না। শ্রেণিশােষণের যন্ত্র হিসাবে রাষ্ট্রের প্রয়ােজন থাকবে না। সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ অপ্রয়ােজন হবে (“The State will wither away”)। লেনিনের মতে রাষ্ট্রের বিলুপ্তির অর্থ নৈরাজ্যবাদ নয়।
রাষ্ট্রের বিলুপ্তি সম্পর্কিত তত্ত্বটি সমালােচনার ঊর্ধ্বে নয়। রাষ্ট্র সম্পর্কে সাম্প্রতিক ব্যাখ্যায় মিলিব্যান্ড, পলসুইজি প্রমুখ বলেছেন—পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মার্কসীয় দর্শন এক নতুন দিক সংযােজন করেছে। সমালােচকদের মতে, বিশ্বের একাধিক দেশে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিফলিত হলেও রাষ্ট্র ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে।
উত্তর : মার্কসীয় রাষ্ট্রতত্ত্বের শেষ সিদ্ধান্ত হল রাষ্ট্রের অবলুপ্তি। কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো (Communist Manifesto) গ্রন্থে মার্কস ও এঙ্গেলস ঘােষণা করেন যে, সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর উন্নততর সমাজ গঠিত হবে। পুঁজির স্বাধীন সত্তা, মজুরি ও শ্রমের পার্থক্য বিলুপ্ত হবে। শ্রেণি ও শ্রেণিদ্বন্দ্বের অবসান ঘটবে। এন্টিভুরিং রচনায় এঙ্গেলস ঘােষণা করেন যে,
সর্বহারা শ্রেণির নেতৃত্বে শ্রেণিবিভক্ত সমাজ বিলুপ্ত হবে। বিশেষ শ্রেণির আধিপত্য থাকবে না। শ্রেণিশােষণের যন্ত্র হিসাবে রাষ্ট্রের প্রয়ােজন থাকবে না। সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ অপ্রয়ােজন হবে (“The State will wither away”)। লেনিনের মতে রাষ্ট্রের বিলুপ্তির অর্থ নৈরাজ্যবাদ নয়।
রাষ্ট্রের বিলুপ্তি সম্পর্কিত তত্ত্বটি সমালােচনার ঊর্ধ্বে নয়। রাষ্ট্র সম্পর্কে সাম্প্রতিক ব্যাখ্যায় মিলিব্যান্ড, পলসুইজি প্রমুখ বলেছেন—পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মার্কসীয় দর্শন এক নতুন দিক সংযােজন করেছে। সমালােচকদের মতে, বিশ্বের একাধিক দেশে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিফলিত হলেও রাষ্ট্র ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে।
প্রশ্ন ১৫) রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হিসাবে জনসমষ্টির গুরুত্ব বর্ণনা করাে।
উত্তর : রাষ্ট্র মানুষের তৈরি। মানুষ ছাড়া রাষ্ট্র কল্পনা করা যায় না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হল্যান্ড (Holland) তাই বলেছেন—“রাষ্ট্র হল নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসকারী বহুসংখ্যক লােকের সমষ্টি।” রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাসকারী জনসমষ্টিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়—নাগরিক ও বিদেশি নাগরিকরা রাষ্ট্রের সভ্য এবং রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য দেখায়। বিদেশিরা অন্য রাষ্ট্রের সদস্য এবং তাঁরা তাঁদের রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। রাষ্ট্রের জনসমষ্টি কত হবে, তা নিয়ে মতপার্থক্য আছে। প্লেটো বলেছেন—আদর্শ রাষ্ট্রের জনসংখ্যা হবে ৫০৪০। রুশাে বলেছেন—এই জন্যসংখ্যা হবে ১০,০০০। কিন্তু বাস্তবে দেখি ১৪৩ কোটি মানুষের চিন দেশ যেমন আছে, তেমনি ১৫,০০০ লােকের মােনাকা দেশও আছে।।
আধুনিক চিন্তাবিদরা জনসংখ্যাকে নির্দিষ্ট করে বলার পক্ষপাতী নন। তবে এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, জনসংখ্যা যদি খুব কম হয়, তাহলে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগানাে যাবে না। রাষ্ট্র স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে না। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও দুর্বল হবে। আবার জনসংখ্যা যদি খুব বেশি হয়, তাহলে খাদ্যের অভাব ও বেকার সমস্যা দেখা দেবে। সুতরাং জনসংখ্যা ও সম্পদের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য থাকা প্রয়ােজন।
উত্তর : রাষ্ট্র মানুষের তৈরি। মানুষ ছাড়া রাষ্ট্র কল্পনা করা যায় না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হল্যান্ড (Holland) তাই বলেছেন—“রাষ্ট্র হল নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসকারী বহুসংখ্যক লােকের সমষ্টি।” রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাসকারী জনসমষ্টিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়—নাগরিক ও বিদেশি নাগরিকরা রাষ্ট্রের সভ্য এবং রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য দেখায়। বিদেশিরা অন্য রাষ্ট্রের সদস্য এবং তাঁরা তাঁদের রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। রাষ্ট্রের জনসমষ্টি কত হবে, তা নিয়ে মতপার্থক্য আছে। প্লেটো বলেছেন—আদর্শ রাষ্ট্রের জনসংখ্যা হবে ৫০৪০। রুশাে বলেছেন—এই জন্যসংখ্যা হবে ১০,০০০। কিন্তু বাস্তবে দেখি ১৪৩ কোটি মানুষের চিন দেশ যেমন আছে, তেমনি ১৫,০০০ লােকের মােনাকা দেশও আছে।।
আধুনিক চিন্তাবিদরা জনসংখ্যাকে নির্দিষ্ট করে বলার পক্ষপাতী নন। তবে এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, জনসংখ্যা যদি খুব কম হয়, তাহলে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগানাে যাবে না। রাষ্ট্র স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে না। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও দুর্বল হবে। আবার জনসংখ্যা যদি খুব বেশি হয়, তাহলে খাদ্যের অভাব ও বেকার সমস্যা দেখা দেবে। সুতরাং জনসংখ্যা ও সম্পদের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য থাকা প্রয়ােজন।
প্রশ্ন ১৬) পশ্চিমবঙ্গ কি একটি রাষ্ট্র? তােমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর : পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন, (ক) একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, (খ) জনসমষ্টি এবং (গ) একটি সরকার আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গকে রাষ্ট্র বলা যাবে না। কারণ-
প্রথমত, এর সার্বভৌমিকতা নেই। একে কেন্দ্রের অধীনে থেকে কাজ করতে হয়। কেন্দ্রের বিরােধী কোনাে আইন করলে তা বাতিল হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গ বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে কোনাে চুক্তি বা কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না।
তৃতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গের শাসক প্রধান হলেন রাজ্যপাল। অথচ তিনি কেন্দ্রের মনােনীত ব্যক্তি পশ্চিমবঙ্গ স্বাধীন রাষ্ট্র হলে কেন্দ্র তার প্রতিনিধি হিসাবে রাজ্যপালকে মনােনীত করে পাঠাতে পারত না।
চতুর্থত, কেন্দ্র ইচ্ছা করলে পশ্চিমবঙ্গের সীমানা পরিবর্তন করতে পারে। এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের সম্মতি নাও নিতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ সার্বভৌম হলে কেন্দ্র এভাবে সীমানা পরিবর্তন করতে পারত না।
পঞ্চমত, কেন্দ্র প্রয়ােজন মনে করলে কেন্দ্রের শাসন রাজ্যের উপর চাপিয়ে দিতে পারে। সংবিধানে তার বিধিব্যবস্থার উল্লেখ আছে। পশ্চিমবঙ্গ স্বাধীন রাষ্ট্র হলে কেন্দ্র তার শাসনভার রাজ্যের উপর চাপিয়ে দিতে পারত না।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের কোনাে সার্বভৌমিকতা নেই। তাই পশ্চিমবঙ্গকে রাষ্ট্র বলা যায় না। একে অঙ্গরাজ্য বলা হয়।
উত্তর : পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন, (ক) একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, (খ) জনসমষ্টি এবং (গ) একটি সরকার আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গকে রাষ্ট্র বলা যাবে না। কারণ-
প্রথমত, এর সার্বভৌমিকতা নেই। একে কেন্দ্রের অধীনে থেকে কাজ করতে হয়। কেন্দ্রের বিরােধী কোনাে আইন করলে তা বাতিল হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গ বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে কোনাে চুক্তি বা কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না।
তৃতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গের শাসক প্রধান হলেন রাজ্যপাল। অথচ তিনি কেন্দ্রের মনােনীত ব্যক্তি পশ্চিমবঙ্গ স্বাধীন রাষ্ট্র হলে কেন্দ্র তার প্রতিনিধি হিসাবে রাজ্যপালকে মনােনীত করে পাঠাতে পারত না।
চতুর্থত, কেন্দ্র ইচ্ছা করলে পশ্চিমবঙ্গের সীমানা পরিবর্তন করতে পারে। এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের সম্মতি নাও নিতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ সার্বভৌম হলে কেন্দ্র এভাবে সীমানা পরিবর্তন করতে পারত না।
পঞ্চমত, কেন্দ্র প্রয়ােজন মনে করলে কেন্দ্রের শাসন রাজ্যের উপর চাপিয়ে দিতে পারে। সংবিধানে তার বিধিব্যবস্থার উল্লেখ আছে। পশ্চিমবঙ্গ স্বাধীন রাষ্ট্র হলে কেন্দ্র তার শাসনভার রাজ্যের উপর চাপিয়ে দিতে পারত না।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের কোনাে সার্বভৌমিকতা নেই। তাই পশ্চিমবঙ্গকে রাষ্ট্র বলা যায় না। একে অঙ্গরাজ্য বলা হয়।