Tuesday, 7 April 2020

নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যাবলী বর্ণনামূলক প্রশ্নোত্তর

নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যাবলী
প্রশ্ন ১) ভােটাধিকারের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সাফল্য নির্ভর করে জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। আধুনিক পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্বমুলক শাসনব্যবস্থা স্বীকৃত। কারণ বর্তমান সময়ে প্রত্যক্ষভাবে শাসনসংক্রান্ত ব্যাপারে জনগণের অংশগ্রহণ সম্ভব নয়। সুতরাং, জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন এবং এই প্রতিনিধি নির্বাচনের সঙ্গে ভােটাধিকারের ধারণাটি সম্পৃক্ত। নাগরিক ভােট প্রদানের মাধ্যমে তার প্রতিনিধি নির্বাচিত করে।
     আধুনিক গণতন্ত্রে ভােটাধিকার তাই রাজনৈতিক অধিকার। নাগরিক একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রার্থীর মধ্যে থেকে তার পছন্দমতাে ব্যক্তিকে নির্বাচিত করেন। তার মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতাবােধ বৃদ্ধি পায়। নাগরিক রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়। জনপ্রতিনিধিরা সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধ থাকেন।
     এই অধিকার প্রয়ােগের ক্ষেত্রে নানা বাধা ছিল। অর্থনৈতিক বাধা, শিক্ষাগত যােগ্যতার বাধা, স্ত্রীপুরুষ বিচারে বৈষম্যমূলক বাধা ইত্যাদি নানাভাবে এই বাধাকে আমরা চিহ্নিত করতে পারি। এককথায় বলা যায় যে, সর্বজনীন ভােটাধিকার স্বীকৃত ছিল না। বর্তমান সময়ে বিশ্বের বেশিরভাগ রাষ্ট্রেই সর্বজনীন ভােটাধিকার সম্প্রসারিত হয়েছে। তবে একথা উল্লেখ করা প্রয়ােজন যে, সর্বজনীন ভােটাধিকার স্বীকৃত হলেও বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি রাষ্ট্রে অল্প হলেও শাস্তিপ্রাপ্ত নাগরিকদের, বিদেশিদের, শিশুদের ভােটাধিকার কিন্তু স্বীকৃত নয়।
প্রশ্ন ২) সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকারের পক্ষে তিনটি যুক্তি দাও।
উত্তর : (i) সার্বভৌমত্ব বাস্তবে রূপায়িত হয়
গণতান্ত্রিক আদর্শের একটি মূল ভিত্তি হল গণসার্বভৌমত্ব। জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। সুতরাং প্রত্যেক নাগরিকের ভােটাধিকার স্বীকৃত না হলে গণ-সার্বভৌমত্বের ধারণা মিথ্যায় পর্যবসিত হবে। ভােটাধিকার নাগরিকের জন্মগত অধিকার; সুতরাং প্রকৃত জনগণের শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হলে সকল প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকার স্বীকার করতে হবে। শাসননীতি নির্ধারণে জনগণের কোনাে ভূমিকা না থাকলে গণতন্ত্র জনগণের শাসনে পরিণত হতে পারে না। প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকার ছাড়া গণতন্ত্র অর্থহীন।
(ii) ব্যক্তিস্বাধীনতার ভিত্তি
ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশের উপযােগী পরিবেশ গঠন করে ব্যক্তিস্বাধীনতা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মৌল কর্তব্য। ভােটাধিকার ছাড়া জীবনের পূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। ভােটাধিকার থেকে বঞ্চিত ব্যক্তির স্বার্থ, অভাব-অভিযােগের প্রতি শাসকশ্রেণি কর্ণপাত করে না। ভােটাধিকার থেকে বঞ্চিত ব্যক্তি শাসনের সকল ফল বা সুযােগসুবিধা লাভ করতে পারে না।
(iii) সাম্যনীতির প্রতিষ্ঠা
গণতন্ত্রের মৌল ভিত্তি হল সাম্যনীতি। সমাজের কিছু অংশকে ভােটাধিকারের সুযােগ দান করে অপর অংশকে বঞ্চিত করলে সমাজে শ্রেণিবৈষম্যের সৃষ্টি হবে। এটি গণতান্ত্রিক আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী, সকল নাগরিকের ভােটাধিকারের সুযােগ ছাড়া গণতন্ত্র সার্থক হতে পারে না।

প্রশ্ন ৩) আধুনিক গণতন্ত্রে ভােটদাতাদের যােগ্যতাবলি উল্লেখ করাে।
উত্তর : ভােটদাতাদের যােগ্যতাবলি
ভােটাধিকার প্রয়ােগের জন্য বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই কতকগুলি যােগ্যতা বা শর্তকে নির্দিষ্ট করা হয়। সেই শর্তগুলি হল নাগরিকতা, নির্দিষ্ট বয়স, বাসস্থান।
নাগরিকতা
প্রত্যেক রাষ্ট্রেই নাগরিকদের ভােটদানের অধিকার স্বীকৃত। ভােটাধিকারের বিষয়টি ব্যক্তির রাজনৈতিক আনুগত্যের সঙ্গে জড়িত। আর সেই কারণেই ভােটদানের আবশ্যিক শর্ত নাগরিকতা। কোনাে রাষ্ট্রেই বিদেশিদের ভােটাধিকার স্বীকার করা হয় না।

নির্দিষ্ট বয়স
সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকার স্বীকৃত হলেও প্রত্যেক রাষ্ট্রে ভােটাধিকারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বয়স ঠিক করা হয়েছে। ওই নির্দিষ্ট বয়স না হলে ভােটাধিকার প্রয়ােগ করা যায় না। বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ভােটাধিকার প্রয়ােগের ক্ষেত্রে ১৮ বছর বয়সকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ভারতীয় সংবিধান প্রবর্তিত হওয়ার সময়, ২১ বছর বয়স্ক সমস্ত নারী-পুরুষের ভােটাধিকার স্বীকৃত হয়েছিল। কিন্তু সংবিধানের ৬২ তম সংশোধন আইন অনুসারে ওই বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ বছর করা হয়েছে। সুতরাং, বর্তমানে ভারতে ১৮ বছর বয়স্ক যে-কোনাে ভারতীয় নাগরিকের ভােটাধিকার স্বীকৃত।
বাসস্থান
নাগরিক যে এলাকায় বসবাস করেন সেই এলাকা থেকে তিনি তাঁর প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। নির্দিষ্ট ভৌগােলিক এলাকায় বসবাস করাকে ভােটাধিকারের শর্ত রূপে গণ্য করা হয়। একথা বলা যায় যে, সুস্থ নাগরিকরা ভােটদানের অধিকারী। বিকৃত মস্তিষ্ক, আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘােষিত ও দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রত্যেক রাষ্ট্রেই ভােটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। প্রত্যেক রাষ্ট্রে যাদের নাম ভােটার তালিকাভুক্ত হয় তাঁরাই ভােট দিতে পারেন এই ভােটার তালিকা তৈরি করেন নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ। যার নাম ওই তালিকায় থাকে না তিনি সাধারণত ভােট দিতে পারেন না। ভােটার তালিকা নির্দিষ্ট সময় অন্তর সংশােধিত হয়। ভারতে ভােটার তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৪) ভারতের নির্বাচন কমিশনের গঠন আলােচনা করাে।
উত্তর : নির্বাচন কমিশন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে গঠিত। অন্যান্য কমিশনারদের সংখ্যা রাষ্ট্রপতি নির্ধারণ করেন। এদের নিয়ােগ করবার ক্ষমতাও রাষ্ট্রপতির। রাষ্ট্রপতি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও কয়েকজন আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত করতে পারেন। নির্বাচনী গুরুদায়িত্ব স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে পালন করবার জন্য নির্বাচন কমিশনকে যথাসম্ভব শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের যে পদ্ধতি শাসনতন্ত্রে নির্দিষ্ট আছে, মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে কেবলমাত্র সেই পদ্ধতির মাধ্যমে অপসারণ করা যায়। পার্লামেন্টের প্রতি কক্ষে দুর্নীতি বা অযােগ্যতার জন্যে দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে প্রস্তাব গৃহীত হলে ইমপিচমেন্ট পদ্ধতির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে পদ থেকে অপসারণ করতে পারেন। নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য সদস্য এবং আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনারদের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সুপারিশ ব্যতীত পদচ্যুত করা যায় না।
প্রশ্ন ৫) নির্বাচন কমিশনের কার্যাবলি কী কী?
উত্তর : ভারতের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে নির্বাচন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই দায়িত্ব বা কাজগুলি হল :
(i) পার্লামেন্ট, রাজ্য আইনসভা, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনমূলক সংস্থার নির্বাচনের জন্য ভােটার তালিকা প্রণয়ন ও সংশােধন।
(ii) সংবিধান ও আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, পার্লামেন্ট, রাজ্য আইনসভার নির্বাচন পরিচালনা ও তদারক করা।
(iii) নির্বাচনের কর্মসূচি অর্থাৎ দিন স্থির, মনােনয়নপত্র পেশ, প্রত্যাহার ও মনােনয়ন পত্রের বৈধতার পরীক্ষা প্রভৃতির ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের।
(iv) নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়ােজনীয় কর্মচারী নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালদের অনুরােধ করা।
(v) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনী প্রতীক বণ্টন করা।
(vi) কারচুপি, দুনীতি বা নির্দিষ্ট অভিযােগের ভিত্তিতে কোনাে কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত, বাতিল বা পুনর্নির্বাচনের আদেশ দিতে পারে।
(vii) সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্যে রাজনৈতিক দল এবং সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য নির্বাচনী আচরণবিধি (Code of conduct) তৈরি করতে পারে।
(viii) নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মানা হচ্ছে কি না তা তদারকি করার জন্যে কমিশন পরিদর্শক (observer) নিয়ােগ করে।
প্রশ্ন ৬) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের পক্ষে যুক্তিগুলি দেখাও।
উত্তর : (i) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা থাকলে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল ও সংখ্যালঘিষ্ঠ দলগুলি তাদের শক্তি অনুযায়ী প্রতিনিধি পাঠানাের সুযােগ পায় ।
(ii) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থায় প্রতিটি ভােটদাতাকে প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য তাঁর পছন্দ প্রকাশ করতে হয়। এর ফলে একজন ভােটদাতা তাঁর ভােটের মূল্য বুঝতে পারেন। ভােটদাতার রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পায়। নাগরিকের মধ্যে দায়িত্ববােধ সৃষ্টি করে।
(iii) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থায় একটি আসন সংবলিত নির্বাচন ব্যবস্থার ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
(iv) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থায় নির্বাচকমণ্ডলী নিজ পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীর নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ভােগ করে।
(v) মিল-এর মতে, সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থায় নির্বাচনী এলাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হলে বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলি ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রার্থীরুপে স্থির করে। এর ফলে অনেক যােগ্য ব্যক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না অথবা পরাজিত হয়। কিন্তু সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল বা গােষ্ঠী সুযােগ্য প্রার্থী মনােনীত করে।
প্রশ্ন ৭) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিপক্ষে যুক্তিগুলি কী?
উত্তর : (i) রাষ্টবিজ্ঞানী সিজইউই-এর মতে, সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা শ্রেণি স্বার্থমূলক আইন প্রণয়নে উৎসাহিত করে।
(ii) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থায় জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এইরুপ অবস্থায় দেশ বিরােধী দল ও গােষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রত্যেকেই জাতীয় স্বার্থ অপেক্ষা সংকীর্ণ স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়।
(iii) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থায় অনেক সময় কোনাে একটি রাজনৈতিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হলে সমঝােতার মাধ্যমে সরকার গঠিত হয়। এক্ষেত্রে সরকারের মধ্যে স্থায়িত্ব থাকে না।
(iv) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযােগ হল যে, এখানে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে নেতৃত্বের প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়। নির্বাচকমণ্ডলীর সঙ্গে প্রতিনিধির সম্পর্ক গড়ে ওঠে না।
(v) যে সমস্ত দেশে অধিকাংশ মানুষ অজ্ঞ ও অশিক্ষিত সেখানে এই পদ্ধতিকে বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন ৮) সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের বিপক্ষে কয়েকটি যুক্তি দাও।
উত্তর : সার্বিক ভােটাধিকার বর্তমানে স্বীকৃত নীতি হলেও, হেনরি মেইন, লেবন প্রভৃতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এই নীতিকে সমর্থন জানাননি। তাঁদের যুক্তিগুলি হল :
(i) প্রগতি বিরােধী : সকলকে ভােটাধিকার দিলে দেশের অগ্রগতি বাধা পাবে। সাধারণ মানুষ অশিক্ষিত ও অজ্ঞ। বিখ্যাত ঐতিহাসিক মেকলে (Maculay) বলেছেন, “সার্বিক ভােটাধিকার দিলে সভ্যতা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে।”
(ii) শিক্ষাগত যােগ্যতা : রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মিল (Mill) বলেছেন, —যারা অশিক্ষিত তাদের ভােটাধিকার দেওয়া উচিত নয়। কারণ রাজনীতির অ আ ক খ যারা বােঝে না। শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের জ্ঞান না থাকাই স্বাভাবিক। তাই তিনি বলেছেন,—“সার্বিক
ভােটাধিকার দেওয়ার আগে সর্বজনীন শিক্ষা চালু করতে হবে।”
(iii) সম্পত্তিগত যােগ্যতা : যাদের সম্পত্তি নেই, তাদের ভােটাধিকার দেওয়া উচিত নয়। কারণ, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল,—মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করা। সম্পত্তিহীনদের ভােটাধিকার দিলে সম্পত্তির অধিকার বিঘ্নিত হবে।
(iv) করপ্রদানের যােগ্যতা : রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মিল বলেছেন, যারা কর দেয় না, তাদের ভােটাধিকার দেওয়া উচিত নয়। কারণ, তারা ভােটে জিতলে মিতব্যয়ী না হয়ে সরকারি অর্থের অপচয় করবে। তারা জানে বেশি খরচ করলেও তাদের উপর করের বােঝা চাপবে না।
(v) দারিদ্র্যগত অক্ষমতা :মেকলে বলেছেন,—যারা দরিদ্র তাদের ভােটাধিকার দিলে “কিছু অর্ধনগ্ন ধীবর” সভ্যতাকে নষ্ট করবে। তারা বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে। জনতার স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
(vi) পুরুষত্বের যােগ্যতা : কিছু রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে একমাত্র পুরুষরাই ভােটাধিকার ভােগ করবে। নারীদের ভােটাধিকার দেওয়া উচিত নয়। কারণ, তাদের ভােটাধিকার দিলে, গৃহের শান্তি নষ্ট হবে। শিশুরা ঠিকমতাে লালিত পালিত হবে না। নারীরা ধর্মভীরু ও আবেগপ্রবণ, তাই যােগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করতে পারবে না। তা ছাড়াও তাদের শাসন দক্ষতাও কম।
প্রশ্ন ৯) নির্বাচন কমিশনকে কোন কোন দিক থেকে সমালােচনা করা যায়?
উত্তর : ভারতের সংবিধান রচয়িতারা গণতন্ত্র সফল করার উদ্দেশে নির্বাচন যাতে অবাধ সুষ্ঠ, স্বাধীন ও শান্তিপূর্ণভাবে হয় তার জন্য নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা সংবিধানে উল্লেখ করেছেন। সংবিধানের পঞ্চদশ অংশে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে বিশদ ব্যবস্থার উল্লেখ করা হয়েছে। সংবিধান রচয়িতারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত করতে চেষ্টা করলেও সমালােচকরা সন্তুষ্ট হতে
পারেননি। কারণ—
(i) কমিশনের সদস্যদের নিয়ােগ গত যােগ্যতা, কার্যকাল প্রভৃতির ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নেবেন। যেহেতু রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে কাজ করেন, সেহেতু দলীয় সমর্থকদের নিয়ােগের সম্ভাবনা বেশি। তাতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা যাবে না।
(ii) দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাবার পর কমিশনের সদস্যদের অন্য কোনাে চাকরি পেতে বাধা নেই। ফলে ভবিষ্যতে চাকরি পাবার আশায় সরকারি অনুগ্রহ পেতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারবে না।
(iii) কমিশনের কর্মচারী নিয়ােগের ক্ষমতা নেই।
(iv) কমিশনের সুপারিশ এবং পরামর্শ সরকার মানতে বাধ্য নয়। এই সমস্ত কারণে সমালােচকরা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে গণতন্ত্র সম্মত নয় বলে মনে করেছেন। ড. মাহেশ্বরী বলেছেন, “নির্বাচন কমিশন হল ভারতীয় গণতন্ত্রের দুর্বলতম স্তম্ভ।”
Comment

Class XI Political Science

Class XII Political Science

Class 12 Bangla Books Question& Answers